এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অভয়া কান্ড ও বর্তমানে বাঙালি মেয়েদের অভয়া কান্ড ও বর্তমানে বাঙালি মেয়েদের আর্থ সামাজিক অবস্থা 

    Koushik Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ আগস্ট ২০২৫ | ১৭৪ বার পঠিত
  • "অভয়া " কান্ডের এক বছর হয়ে গেল। বিচার ব্যবস্থা জনপ্রিয় হিন্দি ছবির সংলাপের "তারিখ পে তারিখ" ই হয়ে যাচ্ছে। অভয়া তাঁর কর্মস্থলে নির্যাতিতা ও খুন হয়ে ছিলেন। অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণ্য ব্যাপার। যদিও বর্তমানের বাঙালি মেয়েদের অবস্থা এর থেকে কি খুব আলাদা কিছু? আমি মূলত: শহুরে মধ্যবিত্ত শিক্ষিতা চাকরি - বাকরি করা মেয়েদের নিয়েই আলোচনা করব। "বিন্দু তে সিন্ধু দর্শন" বলে একটি বাংলা প্রবাদ আছে, সেই জন্য কোনও একজনের জীবন  উন্মোচিত করলে সব মেয়েদেরই প্রকৃত আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির আভাস পাওয়া যাবে। অনিচ্ছাকৃত মিলের জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। বেশ কয়েকটি পর্ব লাগবে।
     
    ধরা যাক, তিনটি মেয়ে একই বয়সী, টুম্পা, রুম্পা ও ফুলকি। এঁরা সবাই সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। মফস্বলের একটি নামী মেয়েদের স্কুলের ছাত্রী। সবাই পড়াশুনায় মনোযোগী,তবে এদের মধ্যে ফুলকি একটু বেশীই মেধাবী। ক্লাস ইলেভেন এ উঠে টুম্পা ও রুম্পার বয়ফ্রেন্ড যোগাড় হয়ে গেল। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও মেধাবী হয়েও ফুলকির শিকে ছিঁড়ল না! মনে মনে বেশ রাগ হতে শুরু করলো। তাঁরা তিন জনে একই দাদার কাছে পল সায়েন্স ( রাষ্ট্র বিজ্ঞান) পড়ে, সেই দাদার এক বন্ধুর সঙ্গে প্রায় জোর করেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো ফুলকি। বয়ফ্রেন্ড তাঁর থেকে ১৩ বছরের বড়, বেশ একটা গার্জিয়ান গার্জিয়ান ভাব, বেশ বাবা বাবা, অনেক কিছুতেই "না"। বেশ ভালো লাগতে শুরু করলো তাঁর। ছোট্ট শহরের মধ্যেই এ কোনায় ও কোনায় ডেটিং। একদিন ফুলকির বাবা দেখে ফেললেন। বাড়ি ফিরতেই শুরু হয়ে গেল জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর এত বড় (কাকার বয়সী) ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক..... জুটলো বেদম মার!  যদিও সমবয়সী প্রেমিক হলে কি হতো তা ফুলকির জানা নেই।
    এখানে ফুলকির পরিবারের ইতিহাস খানিকটা উল্লেখ না করলেই নয়। সম্ভ্রান্ত কুলীন কায়স্থ পরিবার, গ্রামে বেশ জমি - জমা ও ছিল তাঁদের। কিন্ত চাকরি সূত্রে তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামী দাদুকে কলকাতায় চলে আসতে হয়। তিনি এক উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ দাবি করেন নি। ফুলকির বাবা চাকরির সূত্রে এই মফঃস্বল শহরে আসা এবং বাসা বাঁধা। তিনিও এক আধা - সরকারি সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ঠাকুরদাই ছোটবেলায় ফুলকির মেন্টর ছিলেন।দাদুর বড় আদরের নাতনি। তিনিই ফুলকিকে আগলে রাখতেন বাবা - মার বকা - ঝকার হাত থেকে। সেই দাদু একদিন মারা গেলেন। তাঁর আগে ফুলকির হাতে তুলে দিয়ে গেলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নথি যা আমৃত্যু সে আগলে রেখেছিল। তাঁর বাবা ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী, সামাজিক ও বন্ধুবৎসল। যদিও তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অসম্ভব খারাপ ব্যবহার করতেন। যখন তখন গায়ে হাত তোলা, ঝি - চাকর সবার সামনে অসম্মানজনক কথা বলা ইত্যাদি। একমাত্র দাদুই পারতেন ছেলে কে সামলাতে। বড় হয়ে ফুলকি নিজেই এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করত। কিন্তু তাঁর একটি মাত্র ভাই যে মায়ের স্নেহের বেশির ভাগের দাবি দার ছিল সে কখনই এসব ব্যাপারে মুখ খুলতো না বা একে স্বাভাবিক ভাবেই নিত।
    এতে করে ফুলকির ক্রমশঃ তাঁর বাবার থেকে দূরত্ব তৈরি হলো। যদিও সেইই বাবার বেশী আদরের ছিল। পড়াশুনায় মনোযোগী ও মেধাবী ফুলকি যথাবিহিত ভালো ফল করে চলছিল। গোটা স্কুলে তাঁর বেশ নাম ডাক ছিল, রবীন্দ্রজয়ন্তীই হোক বা স্বাধীনতা দিবস পালন কি সরস্বতী পুজো বা স্পোর্টস সব অনুষ্ঠানেই সে মূল উদ্যোক্তা। তাই দিদিমনিদের নয়নের মণি। এভাবেই একদিন স্কুল জীবন শেষ হলো ও শুরু হলো কলেজ লাইফ। এমন সুন্দরী কলেজে ভর্তির হবার পর থেকেই সব দাদাদের নজর পড়ল। শুরু হলো সাইকেল ( তখনও বাইকের যুগ শুরু হয় নি) পিছনে পিছনে গিয়ে বিরক্ত করা। এমনকি রক্ত দিয়ে লেখা চিঠি !! সে আর তাঁর প্রেমিক মিলে ঠিক করলো ব্যাপার টি আর গোপন রাখা যাবে না। কিন্ত এদিকে বাবার ভয়। তখন ফুলকি ঠিক করলো ছোটবেলার বন্ধু দের কাছ থেকে মতামত নেবে। টুম্পা আর রুম্পার সম্পর্ক তাঁদের পরিবার মেনে নিয়েছে। তিন বন্ধুতে এক চিন্তন শিবিরে বসলো। রুম্পা কোনও সুচিন্তিত মতামত দিতে পারলো না। টুম্পা ওকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল "তুই কি ওকে সত্যি সত্যি ভালবাসিস?" এর উত্তরে ফুলকি বলল "এখন সবার কাছে জানাজানি হয়ে গেছে আমি পিছিয়ে আসবো কি করে"। বুঝুন অবস্থা সামাজিক ট্যাবু কি রকম শক্তিশালী। যাইহোক সিদ্ধান্ত হলো যে বাবার কাছে সরাসরি বলা হবে। একদিকে মনে দ্বিধা বাবাকে নিজের বিয়ের কথা বলবো, অন্যদিকে সামাজিক ভয় এতদিন একজনের সঙ্গে ঘুরে এখন আবার বাবার দেখা ছেলের সাথে বিয়ে? আবার না বললে কলেজের ওই রোমিওদের পাল্লায়? কত রকমের সংকট একটা মানুষের কাছে আসতে পারে!!! শেষ পর্যন্ত সাহস করে বাবাকে সে বলল " আমি ওকে ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না!, তুমি অহেতুক অন্য সমন্ধ দেখো না!" তাঁর বাবা অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়লেন, তাঁর আদরের সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েকে উপযুক্ত পাত্রের হাতে তুলে দেবেন -- সরকারি চাকুরে, এক ছেলে, ধুমধাম করে অনুষ্ঠান কোনও স্বপ্নই বাস্তব হলো না। মেয়ে এ কাকে পছন্দ করলো ছেলেটি প্রায় ১৩ বছরের বড়, বংশ মর্যাদায় তাঁদের থেকে অনেক নিচু মাহিস্য, এমন কিছুই করে না যে আত্মীয় স্বজনদের কাছে বলার মতো শেষ পর্যন্ত দেখতেও কোনও দিক থেকেই মেয়ের ধারে কাছেও নেই। মেয়ের যখন পছন্দ তখন তো আর কিছুই করার নেই। তাঁর বাবা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। এদিকে ফুলকির অবস্থাও তথৈবচ। যে বাবাকে এতদিন ভয় করে এসেছে তাঁর এই কান্না তাঁকে শুধু অপ্রস্তুত নয় গভীর ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।
     
    ক্রমশঃ 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manali Moulik | ১১ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৫৪733240
  • অপূর্ব সুচিন্তিত রচনা। চলতে থাকুক। এই জিনিসটি খুব মুশকিলের বিষয়, বান্ধবীদের অতি কেয়ারিং (বিরক্তিকর) বয়ফেন্ড দেখে নিজেকে অসফল ভাবা। শুনেছি, দেখেছি,পড়েছি কতো উজ্জ্বল ছাত্রীর জীবন এই কারণে ধ্বংস হয়েছে। তাই নিজের ওপর ভরসা রেখে 'পথের দাবী' র গিরীশ মহাপাত্রের স্মরণ নেওয়াই ভালো,  
    "পরধর্ম ভয়াবয় ! "
  • স্বাতী রায় | 2001:4490:4051:b77d:a589:ed:461e:***:*** | ১২ আগস্ট ২০২৫ ০০:১৪733242
  • এই গল্পটা exactly কোন সময়ের? ২০২৫ নাকি ১৯৮০ ? 
  • Manali Moulik | ১২ আগস্ট ২০২৫ ০০:২১733244
  • বয়ফ্রেন্ড* (পূর্বের মন্তব‍্যে টাইপ ভুল হয়েছে)
  • Koushik Chatterjee | ১২ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৫733250
  • ১৯৯০ - ২০০০ সালের মধ্যে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন