কেন সরানো হল, এইটা খুঁড়তে গিয়েই বেরিয়ে আসে কেউটে। ওয়্যারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লেখাটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, অমিত মালব্য স্বয়ং। এবং সেই কারণেই, মেটা, আর কিছু না দেখেই, ছবিসহ লেখাটিকে সরিয়ে দেয়। এটিই একটিমাত্র ঘটনা নয়, ওয়্যার জানাচ্ছে, যে, কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই, মালব্য একাই ৭০৫ খানা লেখা রিপোর্ট করেন। সব কটাকেই অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কীসের জোরে মালব্য এগুলো করতে পারেন? কারণ, তিনি, একজন 'বিশেষ ব্যবহারকারী', বা তথাকথিত XCheck ব্যবহারকারী। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইতিপূর্বেই জানিয়েছিল, যে, এই ব্যবহারকারীরা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। তাঁরা 'সাদা তালিকাভুক্ত'। অতএব যা খুশি লিখতে পারেন, নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে। এবং, দেখাই যাচ্ছে, তাঁরা অবলীলায় অন্যের লেখাও উড়িয়ে দিতে পারেন। ওয়্যারের দাবী এরকমই।
শুধু দাবী হলে, সেও একরকম হত। ওয়্যার হাতেকলম সাক্ষ্যও পেশ করে এই ব্যাপারে। তারা ইনস্টাগ্রামের ভিতরের রিপোর্ট জোগাড় করেছে বলে জানায় প্রতিবেদনে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এই বিশেষ লেখাটির ক্ষেত্রে, অমিত মালব্য রিপোর্ট করেছিলেন। এবং তিনি XCheck অধিকার প্রাপ্ত বলে সেটাকে কোনো সরেজমিন দেখাশুনো ছাড়াই অবলীলায় উড়িয়ে দেওয়া হয়। ওয়্যারের সাইট থেকে সেটা ভিতরের রিপোর্টের প্রতিলিপি এখানে দেওয়া হলঃ
"
1663587735000 - Reported by user: {pk: 30038280187, is verified: true, has check: true}
1663587780000 - Skipped auto-moderation. Reason: Reporting user has XCheck privileges
1663587792000 - Flagged under Nudity or sexual activity - Sharing private images
1663587851000 - Review not required. Reason: Reporting user has XCheck privileges
1663587876000 - Review denied. Notify user @cringearchivist
1663587901000 - Report accepted. Notify user @amitmalviya
"
এই বিস্ফোরক প্রতিবেদনের পর, আন্তর্জাতিক মহলে নাড়াচাড়া পড়ে যায়। যা হওয়াই স্বাভাবিক। মেটার 'নীতি সংযোগ অধিকর্তা' অ্যান্ডি স্টোন আসরে নামেন। তিনি তাইই বলেন, যা এতদিন ধরে মেটা বহুলক্ষ বা বহুকোটি ব্যবহারকারীকে জানিয়ে এসেছে। অর্থাৎ, এইসব 'বিশেষ ব্যবহারকারী' বলে কিছু হয়না। সবই যন্ত্রের কারবার। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্তটাই করা হয়েছে। এবং এই ব্যাপারে যে দলিল ওয়্যার দেখিয়েছে, তা জাল।
https://twitter.com/andymstone/status/1579645448276840448?s=20&t=S-Kh3UM-bDvrsFIM41MFFAমজা হয় এর পর। ওয়্যার এর জবাবে গত কাল, আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে, সরাসরি স্টোনের একটি মেলই প্রকাশ করে দেওয়া হয়। ওয়্যারের দাবী অনুযায়ী, মেলটা মেটার আভ্যন্তরীন এবং উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের পাঠানো হয়েছিল। তাতে তিনি খুব আহত হয়ে প্রশ্ন করেছেন, যে, ভিতরের দলিল ফাঁস হল কীকরে? এবং দলিলের লিংকও দেওয়া আছে, যা, ওয়্যারের প্রতিবেদনের লিংক।
এই মেলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওয়্যার যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, সেটাও তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়েছে। ক্লিক করে দেখে নিতে পারেনঃ
https://thewire.in/tech/meta-andy-stone-email-xcheck?wvideo=l6arnmphh4 তৃতীয় পক্ষের বিশেষজ্ঞদের দিয়েও ব্যাপারটা যাচাই করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
ওয়্যারের দাবী যথার্থ হলে, ব্যাপারটা কী ভীষণ বিপজ্জনক, আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের হাত ধরে মেটা, সম্ভবত ৯০% ভারতীয়ের কাছে পৌঁছে গেছে। এবং নিজেদের এরা বাকস্বাধীনতা, এবং সামাজিক ন্যায়ের ধর্মযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে, যে মতাদর্শে বিশ্বজুড়ে বহু মানুষকে প্রভাবিত করতেও সক্ষম হয়েছে। যেমন, ন্যায়বিচারের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে এরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরিয়ে দিয়েছে সামাজিক মাধ্যম থেকে। কিন্তু এখন, এতদিনের সন্দেহের পর, যদি, সত্যিই দেখা যায়, কিছু লোক, স্রেফ রাজনৈতিক কারণে, গোটা সামাজিক মাধ্যম জুড়েই অতিরিক্ত এবং অপার ক্ষমতা পেয়ে চলেছেন, তাহলে প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, সামাজিক মাধ্যম ন্যায়বিচারের পরাকাষ্ঠা নয়, বরং নির্দিষ্ট মতাদর্শের প্রচার ও প্রসারে, এবং বাকিদের কণ্ঠরোধ করতেই ব্যস্ত, আর সমস্ত একনায়কের মতো। ইতিপূর্বের সব একনায়কদের সঙ্গে এদের একটাই তফাত, তা হল, এদের হাতে আছে বিপুল ক্ষমতা, যা রোম থেকে চিলে পর্যন্ত, আজ পর্যন্ত কোনো একনায়ক অর্জন করতে পারেননি।
ওয়্যারের দাবীর পরে, ফেসবুকের জবাব অবশ্য এখনও আসেনি। দেখা যাক, তারা কী উত্তর দেয়।
--