এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সার্স-কোভ২ ভাইরাসও সম্ভবত আমাদের সঙ্গে অনেক দিন থাকবে: পিটার পিওট (৩)

    অনুবাদঃ স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৮ মার্চ ২০২০ | ৪৪১৫ বার পঠিত
  • ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতন সার্স-কোভ২ ভাইরাসও সম্ভবত আমাদের সঙ্গে অনেক, অনেক দিন থাকবে:
    ভাইরাস-শিকারী পিটার পিওট এর সঙ্গে আলাপচারিতা ~ তৃতীয় পর্ব


    সার্স-কোভ২ ভাইরাসের সঙ্গে আগামী দিনগুলোর বিষয়ে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পিটার পিওট টেডমেড ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টরের করা ভাইরাসের উপর ১০০ টি প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
    << প্রথম পর্ব | << দ্বিতীয় পর্ব

    ৬৯)  লোকে তাহলে কি ধরণের রোগলক্ষণের বিষয়ে সজাগ থাকবে?
    কাশি হল এক নম্বর লক্ষণ।


    ৭০) আক্রান্ত লোকদের সনাক্ত করার বাবদে  জ্বর কি একটা ভাল উপায়?
    জ্বর খুব বেশি হলে সেটা উদ্বেগের ব্যাপার এবং চিকিত্সার দরকার। তবে যেমন ধরুন বিমানবন্দর বা অন্য চেকপয়েন্টে শুধু জ্বর মেপে সংক্রমণ আছে কিনা পরীক্ষা করলে আদতে প্রচুর সংক্রামিত লোক ছাড়া পেয়ে যায়।


    ৭১) চীনের হাসপাতালে যাদের ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে ধরা পড়েছে,  তাদের শতকরা কত ভাগ লোকের জ্বর ছিল না?
    চীনের করোনভাইরাস রোগীরা যখন হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁদের প্রায় ৩০ শতাংশের কোনও জ্বর ছিল না।


    ৭২) কোন দেশে এই রোগের সংক্রমণ একেবারে চুড়ায় পৌছলে আর তারপর একবার নতুন কেসের সংখ্যা কমতে শুরু করলে,  আবারও কি নতুন ভাইরাসটি সেই দেশে ফিরে আসতে পারে?
    আমরা  গুটিবসন্ত বা পোলিও কে তাড়ানোর জন্য যে পরিমাণ কাজ করেছি, তেমনটা না করলে SARS-CoV2 সম্ভবত কখনোই আমাদের ছেড়ে যাবে না।


    ৭৩) মানে দীর্ঘ মেয়াদে এই নতুন করোনা ভাইরাস তাড়ানোর একমাত্র উপায় হল পৃথিবীর সব মানুষকে ধরে টিকা দেওয়া?
    সত্যিই জানি না। জনসংখ্যা-ভিত্তিক ব্যবস্থা কাজ করতে পারে, তবে টিকাটা দরকার আর যতক্ষণ ভাইরাস একই রকম থাকে, খুব বেশি নিজের বদল না ঘটায়, ততক্ষণ টিকা ভাইরাস ঠেকানোর জন্য বেশ কাজের একটা উপায়ও।


    ৭৪) অন্যান্য অনেক ভাইরাসকে যেমন আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখেছি, নতুন ভাইরাসটিও কি তেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে?
    জানি না, তবে সম্ভাবনা কম। SARS-CoV2 ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে জাঁকিয়ে বসেছে। এটা এখন আর শুধু চীনের সমস্যা নয়; সম্ভবতঃ শুধু চীনেই নয় আরও প্রায় ১০০টা দেশে হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন যারা সংক্রামিত তবে এখনও তাঁদের পরীক্ষা করা হয়নি। SARS-CoV2, মরসুমী ফ্লু ছড়ানো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতোই, সম্ভবত আমাদের সাথে অনেক, অনেক দিন থাকবে।


    ৭৫) নতুন ভাইরাসটি কি ঢেউএর মত কমবে-বাড়বে  বা কিছু সময় বাদ দিয়ে দিয়ে চক্রাকারে আবার ফিরে আসবে?  যদি ফিরে আসে, তবে কখন?
    আবারও, আমরা জানি না, তবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সম্ভবত, যদিও এই প্রাথমিক পর্যায়ে, কিছুই নিশ্চিত নয়। ১৯১৮ সালে মহামারী ফ্লু  তিনটে ঢেউ এর মত সারা পৃথিবীকে আক্রমণ করেছিল। স্কুল, কারখানা ফের চালু হওয়ার সাথে সাথে চীনে নতুন ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। তবে সত্যি কি হচ্ছে সেটা না দেখা পর্যন্ত আমরা জানি না যে SARS-CoV2 ঠিক কেমন আচরণ করবে।


    ৭৬) আগামী মাসগুলোতে আমরা যদি একটা "সৌভাগ্যজনক" বিরতি পাই, তাহলে সেই "সৌভাগ্য"টা ঠিক কেমন ধারা হবে?
    উষ্ণ আবহাওয়া রোগের বিস্তারকে হয়ত কমিয়ে দিতে পারে যদিও আমাদের কাছে এখনও তেমন কোনও প্রমাণ নেই। সিঙ্গাপুরে, যেখানে ইতিমধ্যে ১২০ টা কেস পাওয়া গেছে আর যেখানে পৃথিবীর অন্যতম সেরা COVID-19 নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটা নিরক্ষরেখা থেকে মাত্র ৭০ মাইল দূরে – কাজেই অন্ততঃ এই ক্ষেত্রে উষ্ণ জলবায়ু ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করতে পারে নি। হতে পারে যে SARS-CoV2 ধীরে ধীরে একটা কম-মারাত্মক চেহারা নেবে, যেমনটা ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুর ক্ষেত্রে হয়েছিল,  যাতে এর থেকে কম লোক মারা যায়। তবে আমি তার উপর নির্ভর করব না। কাজ-করবে এমন একটা বা একসঙ্গে কয়েকটা ওষুধের উপর ভিত্তি করে একটা চিকিৎসা খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বার করতে পারলে সেটা একটা দারুণ খবর হবে। সৌভাগ্য বলতে সেরকম একটা কিছু বুঝব।


    ৭৭) COVID-19-র থেকে বেশি ঝুঁকি যাঁদের, তাঁদের কি যে কোন জায়গাতেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা একই রকম?
    দুর্ভাগ্যক্রমে, মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটা নির্ভর করে আপনি পৃথিবীর কোথায় আছেন তার উপর। যদি দরকারে একটা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-ওলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা হয়, আশা করছি তেমন সুবিধা অনেক লোকেই পান, তাহলে শ্বাস-সহায়ক যন্ত্রের দৌলতে আর কম কম গৌণ সংক্রমণের জন্য মৃত্যুর হার অনেক কম হবে।  


    ৭৮) কি করে জানব যে আমি ওই কম-আক্রান্তের দলে থাকব নাকি আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে?
    নিশ্চিত হয়ে জানবেন না। তবে ৭০ এর উপর বয়স হলে বা কোন পুরোন অসুখ থাকলে, আপনার গুরুতর অসুস্থতার, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়। আমরা কেবল সম্ভাবনার কথাই বলতে পারি, কারণ আমরা এখনও COVID-19 সম্পর্কে যথেষ্ট জানি না।


    ৭৯) আমার কি COVID-19 হতে পারে ভেবে চিন্তা করা উচিত? পিটার, আপনি নিজে কতটা চিন্তিত?
    আপনি যদি বেশি-ঝুঁকির দলে না থাকেন, তবে খুব বেশি চিন্তা করার নেই। তবে যেহেতু এটা জানা নেই যে কোন বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের ফলাফল কেমন হবে, তাই আমি সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যা যা দরকার সবই করব। আমাদের সকলেরই আগামী কয়েক বছরে এই সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, ঠিক যেমন আমরা কেউই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সর্দি বা ফ্লু এড়িয়ে চলতে পারি না। সুতরাং প্রথম লক্ষণ দেখা দিলেই আমাদের বাড়িতে থাকার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।



    ২০২০ সালের ১৭ মার্চ, মঙ্গলবার জম্মুতে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে সাবধানতা হিসাবে একজন কর্মী ট্রেনের কোচকে জীবাণুমুক্ত করছেন। AP

    ৮০) এই যে বলছেন আমাদের সবারই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে, তার মানে কি?
    আমি বলতে চাইছি যে সব মানুষ-ই অন্য মানুষের সঙ্গে সময় কাটায়, তাই আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে জড়িত - এবং ভাইরাসগুলো সবসময়ই সংক্রমণ করতে চাইছে। তবে, আমি বুদ্ধি করে সাবধান হব আর সেই সঙ্গে অত্যধিক চিন্তা করব না। তাতে কোন উপকার হবে না।


    ৮১) সবারই যদি সংক্রমণ হবে, তাহলে এত এড়ানোর চেষ্টা কেন?
    যদি আমি এক্ষুনি সংক্রমিত হই, তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল আর সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে পারব। আমরা সংক্রমণ ছড়ানোর গতিটা কমাতে চাই, মানে নতুন কেস ও মোট কেসের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাই, যাতে আমাদের হাসপাতালগুলো খুব বেশি আক্রান্তদেরও কোন চাপ ছাড়াই চিকিৎসা করতে পারে  বা তখনই নজর দেওয়া দরকার এমন সব অন্যান্য অসুখের রোগীদের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিতে না হয়।


    ৮২) দেখা যাচ্ছে যে লোকেরা অসুখ থেকে সেরে ওঠার পরেও সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। এটা কি সত্যি?
    আমরা জানি না, যদিও সেরে ওঠার কিছুদিন পরেও এরকম হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। পুরোপুরি নিশ্চিত নই। আরও গবেষণা প্রয়োজন।


    ৮৩) একবার ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে গেলে, আপনি কি হাম বা মাম্পসের মত সারাজীবনের জন্য  প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়ে যাবেন?
    আবারও বলছি যে এখনও এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।


    ৮৪) স্পষ্টতই,  যারা একবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন,  COVID-19 এর বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধক্ষমতা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কি সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ? কেন?
    এই প্রশ্নটা টিকা তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একটা ভাইরাস, যেটা নিজেকে পালটে পালটে ফেলছে না, তার  বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের নিরাপত্তাদায়ক রোগপ্রতিরোধের প্রতিক্রিয়ার উপর টিকাগুলো নির্ভর করে। আর স্পষ্টতই যাঁদের সহজে সংক্রমণ হতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে কমবে।


    ৮৫) নতুন ভাইরাসটি কি ফ্লুর মতো মরসুমী?
    SARS-CoV2-তে কোনও মরসুমী বদল হচ্ছে কিনা বা লক্ষ লক্ষ লোকের মাধ্যমে ছড়াতে ছড়াতে কিভাবে কোটি কোটি নতুন ভাইরাসের কণা চেহারা বদল করছে, তা দেখার জন্য যথেষ্ট সময় আমরা এখনো পার করি নি।


    ৮৬) আচ্ছা তাহলে কি এই ভাইরাস নিজের চেহারা বদলে নতুন রোগলক্ষণ সহ নতুন চেহারা ধরতে পারে?
    আমরা একদম জানি না। তাই যদি হয়,  তাহলে সেই রূপান্তরিত SARS-CoV2র  সংক্রমণ বন্ধ করতে আবার নতুন টিকা লাগবে।


    ৮৭) যদি ভাইরাসটা প্রাকৃতিকভাবেই বদলে যেতে পারে, তার মানে কি এটা আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বা উল্টোদিকে, কম মারাত্মক হয়ে যেতে পারে?
    হ্যাঁ, দুটোই সম্ভব। এটা একটা নতুন ভাইরাস, সুতরাং কিভাবে পালটে পালটে যেতে পারে তা নিয়ে আমাদের কোনও ধারণা নেই।


    ৮৮) যদি করোনাভাইরাস এমনই একটা বিপদ হয় সেটা সহজে পিছু হটবে না, তবে আমার নিজের আর আমার পরিবারের জন্য সেটা কি কোন বিশেষ অর্থবহন করে?
    তার মানে আমরা সকলেই এর মোকাবিলা করতে শিখব এবং সবাই সাবধান হয়ে চলছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হব। পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দরকার-অদরকার সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হওয়া উচিত।


    ৮৯) শুনেছি ভাইরাসটি কাউন্টারটপে ৯ দিন বাঁচতে পারে। সত্যি?
    এটা সম্ভব যে SARS-CoV2  কোন কোন তলের উপর বেশ কিছুক্ষণ টিঁকে থাকতে পারে, তবে আমরা জানি না যে সেটা কতক্ষণ।


    ৯০) আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় মহামারীটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরে ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারী। সেই মহামারীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা শুধু বদলে গিয়েছিল – সেটা কোনও নতুন ভাইরাস ছিল না। SARS-CoV2 কীভাবে সেই রূপান্তরের সঙ্গে তুলনীয়?
    SARS-CoV2 ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর মতোই সংক্রামক এবং প্রায় একই রকম মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেটা সময়ই বলতে পারবে। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আজকের উন্নত বিশ্বে যেমন চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেই ১৯১৮ সালে তার ধারেকাছেও কিছু ছিল না, ব্যাকটিরিয়া থেকে হওয়া নিউমোনিয়ার চিকিত্সার জন্য কোনও অ্যান্টিবায়োটিকও ছিল না, যা কিনা মৃত্যুর একটা বড় কারণ ছিল।



    2020 সালের 17 মার্চ, মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে একটি পরিবারের সদস্যরা নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে সাবধানতা হিসাবে সুরক্ষাদায়ক মাস্ক পরে স্কুটারে চেপে যাচ্ছেন। AP

    ৯১) এমন কি কোনও সম্ভাবনা আছে যে এটা একটা বিশাল মিথ্যা আশঙ্কা – আমরা পরে এই গ্রীষ্মের কথা ভেবে বলব যে "বাহ, আমরা সকলেই ফালতু ঘাবড়িয়েছিলাম!"
    না। COVID-19 ইতিমধ্যে ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে এবং এটি অত্যন্ত সংক্রামক। কার্যত প্রতিদিন আরও বেশি দেশের থেকে আরও বেশি বেশি করে অসুস্থতার খবর আসছে।  ভবিষ্যতে হতে পারে ভেবে দেওয়া কোন মহড়া নয় এটা। এক্কেবারে বাস্তব।


    ৯২) বিশ্বাস করা শক্ত যে হঠাৎ একটা সত্যিই নতুন ভাইরাস, যা মানুষ আগে কখনও দেখেনি, এসে লক্ষ লক্ষ লোককে সংক্রামিত করতে পারে। শেষ কবে এমন হয়েছে?
    SARS ও MERS নতুন ছিল - তবে তারা এত ব্যাপকতা পায় নি। এইচআইভি পৃথিবীর কাছে নতুন ছিল-  ৭ কোটি মানুষকে সংক্রামিত করেছে - তার মধ্যে ৩.২ কোটি মানুষই এইচআইভি মহামারীতে মারা গেছে।


    ৯৩) এইচআইভি ধনী দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলিকে বেশি প্রভাবিত করে। নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রে কি তা সম্ভবত সত্য হবে?
    হ্যাঁ একদম। আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলির মৃত্যুর হার অনেক কম হতে চলেছে কারণ তাদের উন্নততর জলযোজন ব্যবস্থা,  শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিপূরক সরঞ্জাম, সংক্রমণ ঠিকমত সামলানো ও এই জাতীয় ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত। স্বল্প-সঙ্গতির দেশগুলো, যাদের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের জন্য এটা সম্ভবত একটা বিশাল  সমস্যা। আফ্রিকার অনেক দেশ এতে প্রচন্ড ঝুঁকির মুখোমুখি হবে। আর একদমই সঙ্গতি নেই যে দেশগুলোর, তাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা খুব প্রবল।


    ৯৪) এটা শুনে মনে হচ্ছে যে মোদ্দা কথা হল আপনি খুব বেশি আশাবাদী নন।
    সাধারণভাবে বললে, আমি অবশ্যই আশাবাদী তবে একই সাথে এর মধ্যে খুবই অস্বস্তি হওয়ার ও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অনেক কিছুও আছে। আমি বুঝতে পারছি যে লোকজন ভয় পাচ্ছে, বিশেষত যদি তারা এক বা একাধিক উচ্চ-ঝুঁকির দলে থাকে। তবে ভালো খবর হল, আমরা ইতিমধ্যেই পৃথিবী জুড়ে সহযোগিতার দিকটা, বিশেষত বিজ্ঞান ও চিকিত্সার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও ভালো হচ্ছে বলে দেখছি। সরকারগুলির মধ্যে আরও স্বচ্ছতা দেখছি। চীনে বর্তমানে অসুস্থের সংখ্যা দ্রুত কমছে, তবে সেটা পালটে যেতে পারে। আর,  যেমন ধরুন, আমরা চিকিত্সার খুব দ্রুত উন্নতি দেখছি।


    ৯৫) আপনি বলেছেন যে এখানে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।  আপনার এই নতুন ভাইরাসটিকে নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ কি?
    ঠিকভাবে সামলানো না হলে, করোনভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া খুব দ্রুত যে কোনও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর সাধ্যাতীত চাপ তৈরি করবে। আর যাঁদের সত্যি সত্যি চিকিৎসা দরকার তাঁদের চিকিৎসা পাওয়া আটকে যাবে।  আরেকটা চিন্তা হ'ল অত্যধিক প্রতিক্রিয়া এবং ভয় একটা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে, যা অন্য ধরণের দুর্ভোগের কারণ হয়। তাই এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা খুব কঠিন।


    ৯৬) আর, আমরা কিভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকব?
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শহরে যারা সবে সবে পরীক্ষা শুরু করছে, তাদের থেকে প্রচুর “নতুন” কেস রিপোর্ট করা হবে, মৃত্যুর সংখ্যা , বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে, ক্রমশঃ বাড়বে। এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। বাস্তবে অবশ্য তারা প্রায়ই "নতুন" কেস না;  আগেই ছিল, প্রথমবার সামনে আসছে।


    ৯৭) আপনি কি দেখে উত্সাহ পাচ্ছেন?
    ১. আধুনিক জীববিজ্ঞান অসম্ভব দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
    ২. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ সারা পৃথিবী জুড়ে জনস্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা ছাড়াও উচ্চস্তরের সরকারী নেতারাও এই বিপদটির প্রতি নজর দিয়েছেন। 
    ৩. আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই ভাইরাসটাকে আলাদা করে ফেলতে পেরেছিলাম আর তাড়াতাড়ি এটার সিকোয়েন্সও বুঝে ফেলেছি।
    ৪. আমার বিশ্বাস যে শীঘ্রই আমরা একটি চিকিত্সা পেয়ে যাব।
    ৫. আশা করছি একটা টিকাও পাব।
    ৬. এটা সত্যই আধুনিক যোগাযোগের যুগ। যতক্ষণ আমরা জাল ও বিপজ্জনক খবরের মুখোশ খুলে দিতে পারব, ততক্ষণ এই যোগাযোগব্যবস্থা আমাদের সাহায্য করবে।


    ৯৮) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য কতটা প্রস্তুত?
    এই মহামারীর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল। অন্যান্য উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতেও তাই। আমরা সকলেই চীনের অভূতপূর্ব গণ-পৃথকীকরণ থেকে উপকৃত হয়েছি যা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়েছে। আগে থাকতেই তৈরি থাকার জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই গুরুতর কেসগুলো ঠিক ভাবে সামলাতে পারবে।


    ৯৯) আপনি কাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত?
    কম-সঙ্গতিসম্পন্ন দেশগুলিকে নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন। প্রতিটি মৃত্যু একটা দুঃখের ব্যাপার। যখন আমরা বলি যে,  আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড়ে ১% থেকে ২% করোনভাইরাসের জন্য মারা যাবেন,  সে সংখ্যাটা কিন্তু অনেক। আসলে দশ লক্ষ লোকের ১% মানেও তো ১০,০০০ জন আর বিশেষতঃ প্রবীণদের জন্য আমি খুবই উদ্বিগ্ন। তবে ৯৮% -৯৯% লোক এর থেকে মারা যাবে না। মরসুমী ফ্লু প্রতিবছর হাজার হাজার আমেরিকানকে মেরে ফেলে – তাও আমরা আতঙ্কিত হই না – যদিও আমাদের আসলে ফ্লুর বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ও সকলেরই প্রতি বছর ফ্লু’র নিশ্চিতভাবে টিকাকরণ হওয়া দরকার। আমরা যেমন মরসুমী ফ্লু’র সঙ্গে বেঁচে থাকতে শিখেছি, তেমনই আমার মনে হয় যে যতক্ষণ না একটা টিকা বের হয়, ততক্ষণ আমাদের করোনা ভাইরাসের উপস্থিতিতেই সাধারণভাবে জীবন কাটাতে শিখে নেওয়া দরকার।


    ১০০) ভবিষ্যতে কি আরও মহামারী হবে?
    অবশ্যই হ্যাঁ। এটা আমাদের মনুষ্য জীবনের অংশ,  “ভাইরাস প্ল্যানেটে” টিঁকে থাকারও বটে। একটা চলতেই থাকা লড়াই। আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি আরও উন্নত করতে হবে।  মানে মহামারীর প্রস্তুতির বাবদে  যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগের জন্য প্রতিশ্রুতি দিতে হবে আর একটা বিশ্ব দমকলবাহিনী তৈরি করতে হবে, পরের বার বাড়িতে আগুন লাগার আগেই।



    একজন কাশ্মীরি স্বেচ্ছাসেবক মার্চ ১৮, ২০২০, বুধবারে  কাশ্মীরের শ্রীনগরে জি. বি. পন্থ চিলড্রেন হাসপাতালের বাইরে মাস্ক বিতরণ করছেন AP

    টেডমেড ফাউন্ডেশনের সম্মতিতে দি টেলিগ্রাফ অনলাইনে পুনর্প্রকাশিত এই সাক্ষাত্কারটি https://www.thetedmedfoundation.org-এও পাওয়া যাবে


    পিটার পিওট সম্পর্কে
    পিটার পিওট লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ডিরেক্টর, এটি জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা, স্নাতকোত্তর গবেষণা এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।
    ফিনান্সিয়াল টাইমস তাঁর সম্বন্ধে বলেছে "বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত 'ভাইরাস শিকারী' "। প্রফেসর পিওট ১৯৭৬ সালে জাইরেতে ইবোলা ভাইরাসটির আবিষ্কর্তাদের মধ্যে একজন। তিনি ১৭টি বই আর ৬০০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বই এর মধ্যে আছে ২০১২ সালে WW Norton থেকে প্রকাশিত  'No Time to Lose' নামের ওঁর স্মৃতিকথা, যেটা ফরাসী, ডাচ, জাপানি এবং কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত, আর আছে 2015 সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত 'AIDS between science and politics'।


    টেডমেড ফাউন্ডেশন সম্পর্কে
    টেডমেড ফাউন্ডেশন (TEDMED) একটি পাবলিক দাতব্য সংস্থা। এঁরা সারা বছর ধরে স্বাস্থ্য ও চিকিত্সার উপর কাজ করা সারা পৃথিবীর মানুষদের সাহায্য করেন। এঁদের উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির  সকল ধারার মানুষের গভীর অন্তর্দৃষ্টিকে বিশেষ বিশেষ সমস্যার সমাধানে কাজে লাগানো যাতে আমাদের পৃথিবীটা আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।

    (শেষ)
    দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার থেকে অনুমতিক্রমে অনূদিত।
    << প্রথম পর্ব | << দ্বিতীয় পর্ব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ মার্চ ২০২০ | ৪৪১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একলহমা | ২৯ মার্চ ২০২০ ২০:০৬91876
  • আগের বারের কথাই আবারও বলি - দামী সাক্ষাৎকার। খুব জরুরী কাজ করা হয়েছে এই লেখাটি প্রকাশ করে। দক্ষ, ঝরঝরে অনুবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
  • Rajkumar Raychaudhuri | ৩০ মার্চ ২০২০ ১০:৫৭91885
  • দারুণ লাগল। কোন কথা হবে না।
  • I | 162.158.***.*** | ৩১ মার্চ ২০২০ ০০:৫৯91895
  • খুব ভালো সাক্ষাৎকার। তেমনি ভালো অনুবাদ।
    তবে SARS COV-2 এর নির্ণায়ক পরীক্ষা নিয়ে বোধ হয় তেমন পরিষ্কার করে কিছু বলা হয় নি। নাকি আমিই মিস করে গেলাম?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন