তুমি আর নেই সে তুমি….শিরোনামের বক্তব্যের অনুরণনে বলি – হায় ! তুমি আর নেই সে তুমি…। পরিবর্তন বা সহজ কথায় যাকে আমরা বলি বদলে যাওয়া, তা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সত্যকে মেনে নিতে কারোর আপত্তি নেই। “ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল!” ব্যাপারটা অনেকটাই হয়তো এই রকম। আর হেঁয়ালি নয়। বিষয়টি না হয় একটু খুলে বলি।মনে করুন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন ভারতের মানচিত্রের সামনে। আপনাকে বলা হয়েছে ভারতের কোথায় মরুভূমি আছে? মনে মনে আপনি মরুভূমির নামটা একান্তে আওড়াতে আওড়াতে হাজির হলেন পশ্চিম দিকে অনেকটা এলাকা জুড়ে থাকা রাজস্থানে। পৌঁছে গেছেন মরুভূমির হৃদয় জুড়ে থাকা জয়সলমীর–সোনার কেল্লার দেশ। কি! খটকা লাগছে? মরুভূমির বুকে ... ...
খোলা বইয়ের পরীক্ষা এবং কিছু প্রশ্ন… পথ চলিয়েদের কথালাপ দুপুরের আয়েসি সময়টুকু কাটিয়ে খিড়কির দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই একদল স্কুল ফেরতা পড়ুয়ার মুখোমুখি হয়ে যাই। ছুটির পর দলবেঁধে বাড়ি ফিরছে। না , ওদের হাতে ফোন নেই! হয়তো সেই কারণেই মুখে কথার ফুলঝুড়ি ফুটছে মনের আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে! বিধিসম্মত নয় জেনেও আঁড়ি পাতি আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে। – জানিস! এখন থেকে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে ! – ধ্যুস্ ,এমনটা আবার হয় নাকি? – আরে বাবা হয়। সেদিন খবরের কাগজে দেখলাম। এবার থেকে সেন্ট্রাল বোর্ডের ক্লাস নাইনের পড়ুয়ারা বই খুলে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখবে। – বাহ্ ! এতো খাসা বন্দোবস্ত। আমাদেরও কি এভাবে পরীক্ষা দিতে হবে? হলে মন্দ ... ...
শ্রীমান গোপাল ও ফুটো হয়ে যাওয়া আকাশ। গোপাল সত্যিই অতি সুবোধ বালক। আমাদের একেবারে গায়ে গা লাগানো বাড়িতে থাকে। আমাদের প্রতিবেশী বালক গোপাল। সেদিন সকাল থেকেই ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখে দরজা খুলে বাইরে বেরোতেই চোখাচোখি দেখা হয়ে গেল গোপালের সঙ্গে। বর্ষার মরশুমের শুরুর দিকে বৃষ্টি দেখতে এখনও বেশ লাগে। গোপাল আমায় দাদু বলে ডাকে। সুতরাং দুজনের বয়সের বিপুল ফারাক। অথচ কি আশ্চর্য! ওর মতো আমার প্রবীণ মনের বয়সটা এখনও এক ঠাঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে বেশ লাগে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোপাল হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল। মজাও পাচ্ছিল দেদার। দেখতে পেয়ে আমি তাকে বলি – “কি কাণ্ড শুরু হলো বলতো ... ...
প্রযুক্তির নয়া দিগন্ত ও ব্রোমিজিম।বঙ্গ দেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবচন রহিয়াছে – খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে, কাল হলো এঁড়ে গরু কিনে। এই প্রবচনের মর্মার্থ মর্মান্তিক। যে জীবনে তুমি অভ্যস্ত, সেই জীবনের চেনা ছকের বাহিরে কিছু করিয়া বসিলে বিলক্ষণ পস্তাইতে হইবে। আমার ন্যায় প্রবীণ মানুষকেও অবরেসবরে ঈদৃশ জ্বালা সহিতে হয় বৈকি! আমরা যেই সময়ে সেয়ানা হইয়া উঠিবার তালিম লইতেছিলাম, সেই কালটি বর্তমান সময়ের মতো ঘোরতর প্রাযুক্তিক হইয়া ওঠে নাই। অধমের স্মরণে আছে, কলেজ স্তরের পঠনপাঠনের নিমিত্ত কিছু গাণিতিক হিসাবনিকাশ করিতে হইতো। তাহার জন্য মামুলি যন্ত্রগণকের সাহায্য গ্রহণেরও অনুমতি ছিলোনা। কলেজ স্ট্রিটে সদলবলে বিস্তর টহলদারি করিয়া একখানি চটি পুস্তিকা সংগ্রহ করিয়াছিলাম যাহার ... ...
হা মেঘালয়! জো মেঘালয়! এ যেন কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন! ঘটা করে নাম রাখা হয়েছিল মেঘের দেশ – মেঘালয়। সুদূর দক্ষিণ দেশের সাগর থেকে ভেজা বাতাস ভিস্তিওয়ালার মশকের মতো জল ভরে নিয়ে এসে ঢেলে দিত খাসি পাহাড়ের ঢালে। এরই বদান্যতায় নামতো বৃষ্টি – অঝোর ধারায়। সারা পৃথিবীর মানুষজন জানতো এই রাজ্যে বৃষ্টি ঝরানো মেঘেরা দল বেঁধে খাসি পাহাড়ের সবুজ গালিচা বিছানো ঢালে গাভীর মতো চড়ে বেড়ায়। জলের এমন অফুরান জোগান দেখে এক কবি তো বলেই বসলেন – একখানি মেঘ ধার দিতে পার গোবি- সাহারার বুকে? অথচ বিধির কি নির্মম পরিহাস ! মেঘের খাজানা শূন্য যে আজ, মেঘালয়ের বুকে। ওদিকে মরুরাজ্য রাজস্থানে ... ...
ভোলেবাবা পার করেগা …..?? শাস্ত্র মতে শ্রাবণ মাস হলো ভগবান শিবের জন্মমাস। একেবারে সাধারণ আত্মভোলা স্বভাবের জন্য এদেশে ভগবান শিবকে পছন্দ করেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাই ক্যালেন্ডারের পাতা আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণ মাসে পড়তেই তাঁর আপামর ভক্তকুল উদগ্রীব হয়ে ওঠে বাবাকে দর্শন করতে। “ভোলে বাবা পার করে গা, ত্রিশূলধারী পার করেগা”-- হাঁক দিতে দিতে, বাঁক কাঁধে পূত পবিত্র গঙ্গার জল নিয়ে পায়ে পায়ে পৌঁছে যান নাগালের মধ্যে থাকা কোনো শৈবধামে । বাবার মাথায় জল ঢেলে, বাবার শ্রী চরণে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে সেবা চড়িয়ে তৃপ্ত হৃদয়ে স্ব স্ব গৃহে ফিরে যান তাঁরা। এটাই নাকি তাঁদের সম্বৎসরের উজ্জীবন সুধা।কয়েক শতক ধরে এই নিয়মেই ... ...
জান যায়, লেকিন ক্যরিয়ার না যায়! আমরা যে কালে একটু একটু করে বেড়ে উঠছি সে কালে ক্যারিয়ার শব্দটা আমাদের শরীর ও মনের ওপর সেভাবে কখনোই জেঁকে বসেনি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ফলে বাবা - মায়ের লড়াইয়ের আমরা ছিলাম সহযোদ্ধা। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন তেমন হয়তো নয়, ফলে ক্যারিয়ারের বিষয়ে আমরাও সেই বিষয়ে একরকম উদাসীন ছিলাম। এ কালের অভিভাবকদের হ্যাপা অনেক। সন্তান হামাগুড়ি দিচ্ছে দেখলেই একালের বাবা – মায়েরা দাবার বোর্ডে গুঁটি সাজানোর মতো করে সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য ছক কষতে শুরু করেন – কোন্ স্কুলে ভর্তি করা হবে থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের কর্মজীবনের ছবিটি পর্যন্ত আঁকা হয়ে যায় ... ...
মন ভালোর গল্প এখনও রাতের অন্ধকার ফিকে হতে অনেকটাই সময় বাকি। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে গুলাব, গুলাব যাদব। গরমের আঁচ এখনও তেমন প্রখর হয়নি তাঁদের এলাকায়। ছোটবেলায় নানীর মুখে শোনা কথা মনে পড়ে গুলাবের – হোলি পর্যন্ত সাবধানে থাকতে হবে। ঠাণ্ডার আমেজ এখনও বেশ রয়ে যায়। বিস্তর ছেড়ে ওঠার সময় বিলকুল মালুম হয় গুলাবের। পাশেই শুয়ে আছে অভিষেক, গুলাবের এক লৌতা বেটা। নিজে উঠতে উঠতেই বেটা অভিষেকের গায়ে আলতো করে টোকা মারে। তারপর চাপা গলায় ডাকে - উঠ যা বেটা। সেহরি কা ওয়াক্ত নিকল জায়গা। সবকো জাগানা হ্যায় বেটা। কথাগুলো শোনার পর বিছানা লেপ্টে আর পড়ে থাকেনা অভিষেক – পিতাজী সিনিয়র বচ্চন ... ...
প্রার্থনার সুর আজ ভোররাতে বহু দূর থেকে ভেসে আসা এক প্রার্থনার সুর মনকে কেমন আচ্ছন্ন করে ফেললো। অন্ধকার ঘরে কান উঁচিয়ে উৎকীর্ণ হয়ে রইলাম , যদি সেই ভেসে আসা সুরের নিহিত বাণী মর্মে এসে বাজে। খানিকক্ষণ পরে মৃদঙ্গ ও খঞ্জনির বোলচাল স্পষ্ট হতেই বুঝতে পারি এ আমাদের বাংলার আদি ও অকৃত্রিম কীর্তনের প্রভাতী সুর। আর কয়েকদিন বাদেই ঘোষ পাড়ার হরিমণ্ডপে বসবে বার্ষিক কীর্তনের আসর। হয়তো এখন তারই জাগরণের পর্ব চলছে। এই সুর বেলা হলে এমন সুরেলা প্রাণস্পর্শী মনে হতো কিনা জানিনা কিন্তু ভোরের আলোআঁধারির ঐ মায়াঘন মুহূর্তে তা আমার মনকে ছুঁয়ে গেল, মন ভরে উঠলো পরম শান্তিতে। প্রত্যেক প্রার্থনার সুরের মধ্যে ... ...
লা টোমাটিনা থেকে টোম্যাটেরা…এক অপচয়ী উল্লাস। আজ সকালেই বিকাশের কাছ থেকে ১ কিলোগ্রাম টম্যাটো কিনেছি ৪০ টাকায়। বিকাশ আমাদের সবজি দেয়। করোনা মহামারীর সময় থেকেই ভ্যান রিক্সায় সবজির পশরা নিয়ে ফেরি করে বিক্রির চল হয়েছে। সবজি বিক্রেতাদের অনেকেই কাজ হারিয়েছে মহামারীর সময়। সেই কাল উৎরে গেলেও পুরনো কাজে আর ফিরে যাওয়া হয়নি বিকাশের মতো আরও অনেকের। পাল্লায় খানিকটা বেশি টম্যাটো তোলা হয়ে গিয়েছিল। সেই অতিরিক্ত বোঝা নামাতে নামাতে বিকাশ তার চেনা ঢঙে বলে – “কাকা ! দেড় কিলো দিয়ে দেবো? এরপর কিন্তু দাম আরও বাড়বে।” দাম যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। গত সপ্তাহে কিনেছিলাম এক কিলো ২০ টাকায়, তার দু সপ্তাহ আগে ... ...