তিয়াসা, শুধুই তোর জন্য
মেঘলা দিন হলেই বাবানের মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। কেন এমন হয় ? এর উত্তর অবশ্য ঠিকঠাক জানা নেই তাঁর। তিয়াসাকে এই কথা বললেই বলে, “তোর যত আজব ভাবনা। মেঘলা দিন হলো গুমোট গরমের দিন। তুই টের পাসনা?” বাবান কোনো উত্তর দেয়না। সে জানে তাঁর একান্ত ভাবনার সাথে তিয়াসা কখনোই একমত হবে না। সমান্তরাল রেখার মতো যেন তাঁদের অবস্থান। যত ভাব, তত খুনসুটি।
অনেকদিন পর আজ নদীর দিকে আসা হলো বাবানের। খুব ছোটোবেলা মায়ের সঙ্গে বিকেলে এদিকটায় ঘুরতে আসত সে। তখন অবশ্য অনেক ফাঁকা ছিল জায়গাটা । মা নদী দেখতে খুব পছন্দ করতো। বাবান আপত্তি করলে মা বলতো - “নদী দেখলে মন ভালো হয়। কত পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে বলতো এই নদী ! কত মানুষের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনার সহভাগী হয়ে নদী বয়ে চলেছে। নদীর কুলু কুলু করে বয়ে চলার মধ্যেই যে তার গল্প গুলো লুকিয়ে আছে । মন দিয়ে কান পাতলে ঠিক শুনতে পাবি ।” আজ মনউদাসী মেঘলা দিনে তাই রূপসা নদীর সঙ্গে কথা কইতে আসা।
লালু সাউয়ের কাঠগোলাটাকে বাঁয়ে রেখে ঢালু পথ ধরে খানিকটা নেমে গেলেই নদীর তীরে পৌঁছে যাওয়া যায়। বাবান সে ভাবেই নেমে আসে। অনেকদিন পর এখানে এসে সত্যিই মনটা ভালো লাগে।
মনে মনে ভাবে এখন তিয়াসা সঙ্গে থাকলে বেশ হতো। নদী পাড়ের নরম মাটিতে সাইকেলের চাকার দাগ দেখে কেননা জানি আলপনার কথা মনে হয় তাঁর। সেবার লক্ষ্মী পুজোয় তিয়াসাদের বাড়িতে গিয়েছিল বাবান। তিয়াসার মা সোনালী কাকিমা ঘর জুড়ে কেমন সুন্দর আলপনা দিয়েছেন।ভারি ভালো লাগে বাবানের। সোনালী কাকিমা সব সময় ওর পোষাকি নাম ধরে ডাকেন
–পুণ্যশ্লোক। সেদিনও তাঁকে দেখে হাঁক দিয়ে ওঠেন ।
– তিয়াসা,দ্যাখ পুণ্যশ্লোক এসেছে। ওঁকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা। আমি স্বপ্নাদের বাড়ি থেকে আসছি। তুমি বাবা,প্রসাদ না খেয়ে যেওনা যেন। আমি এক্ষুনি ফিরবো।
দরজা খুলে সামনে এসে দাঁড়ায় তিয়াসা। নতুন শাড়িতে কেমন লক্ষ্মীঠাকুর মনে হয় তাঁকে।
– “কিরে আজকাল তোকে দেখিনা কেন রে? কী করিস সারাদিন?চল ছাদে যাই”। তিয়াসার সপাট প্রশ্ন।
একটু গুটিয়ে যায় বাবান। তারপর মৃদু হেসে বলে – ইচ্ছে করলেই দেখা পাওয়া যায়। তুইতো আজকাল বাড়িই থাকিস না। কি সব আন্দোলন গড়ে তুলতে এ পাড়া সে পাড়ায় জনসংযোগ করে বেড়াস্ ।
– “তুইও আয় আমাদের সঙ্গে। তোকে তো কেউ বারণ করেনি !” তিয়াসার গলায় কি একটু অভিমান ঝরে পড়ার ইঙ্গিত?
– “দাঁড়া, একটু ভেবে দেখি।”
– “দেখ বাবান ! ওহ্ থুরি, পুন্যশ্লোক বাবু , আপনি যতক্ষণ ধরে ভাববেন, ততক্ষণে আমাদের রূপসা নদী দিয়ে অনেক অনেক জল গড়িয়ে যাবে । নদীটার হাল দেখেছিস্ ? তোর আর কি? ছুটিতে বাড়ি এসেছিস। দুদিন বাদে কাজের জায়গায় ফিরে যাবি। ভুলে যাবি সব ।আমাদেরতো এখানেই থাকতে হবে।” তিয়াসা চাপ বাড়ায়।
– “না, আমার ও কিছু বলার আছে।”
– “বল, তোকে বাঁধা দিচ্ছে কে?”
– “তুইতো রূপসাকে খুব ভালোবাসিস। আর আমি তোকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসি। তাই আমি এই ভরা চাঁদ আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছি “ছোটবেলার বন্ধু তিয়াসার জন্য একটি নদী কিনবে ভেবেছে বাবান” । রূপসা তুমি কি রাজি আছো ?” বাবানের কন্ঠে উত্তেজনা।
– “এ তুই কী বললি? তুই আমার জন্য, শুধু আমার জন্য একটা নদী কিনবি?” গলায় মৃদু কাঁপন।
– “হ্যাঁ, হ্যাঁ কিনবো। আমার তিয়াসার জন্য আমি সব করতে পারি। রূপসা রাজি হলে ওকেই কিনে দেবো তোর জন্য।”
এরপর আর কোনো কথা হয়না। দূরে নদী চরের দিক থেকে কেবল একটা ল্যাপউইঙ্ ডেকে ওঠে- “বাবান, ডু ইট নাউ।”
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।