গঙ্গা এই কুসুমবনী কোলিয়ারিতেই কাজ করে। সে পছন্দ করে রিমিল নামের একটি মেয়েকে। গঙ্গার বন্ধু মঙ্গলও রিমিলকে চায়। রিমিলের সঙ্গে এদের দুজনেরই সম্পর্ক ভাল, সে বোঝে এরা দু-জনেই তাকে ভালবাসে। কিন্তু সে নিজে যে কাকে বেশি চায় সেটা বুঝতে পারে না। গঙ্গা কাজের ছেলে, ভাল বাঁশি বাজায়, তবে মদ খেলে তার আর কোন কিছুই খেয়াল থাকে না। মঙ্গলের দায়িত্ববোধ আছে, একটা ছোট দোকান চালায়। তবে সে বড্ড বেশি আবেপ্রবণ যেটা মাঝে মাঝেই সমস্যা তৈরি করে। গঙ্গা আর মঙ্গলের মধ্যে এক দিন জোর ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে কে রিমিলকে কে বিয়ে করবে তাই নিয়ে। শেষে তারা ঠিক করে রিমিল নিজেই জানাক কাকে সে বিয়ে করবে, তার সিদ্ধান্ত দুজনেই মেনে নেবে। রিমিল দুই দিন সময় চায়। তার পর এক সন্ধ্যায় তাদের দু’জনকেই ডেকে জানায় ওদের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া তার পক্ষে খুবই কঠিন ছিল, তবু একটা সিদ্ধান্তে সে পৌঁছেছে। এটাও জানায় সে আশা করে এর ফলে গঙ্গা আর মঙ্গলের সম্পর্কে কোন চিড় ধরবে না। দুই বন্ধু এই কথা মেনে নিলে রিমিল বলে সে ঠিক করেছে গঙ্গাকে বিয়ে করবে। ... ...
“সে দিন কফি শপে আমি খুব বাজে বিহেভ করেছিলাম। তার পরেও আজকে ক্রাইসিসের সময়ে আপনি চলে এলেন, থাকছেন। হসপিটালের ঝামেলার পরেও…” “কফি শপের ইনসিডেন্টের জন্য আপনি আগেই অ্যাপোলোজাইজ করেছেন। আবার বলি, আমি কিছু মনে করিনি ম্যাডাম। আপনি এমনিতেই চাপে আছেন, তার ওপর সেদিন রাতে কিছু কথা বলে আমি আরো স্ট্রেস অ্যাড করেছি। অ্যাজ ইয়োর হাজব্যান্ড’স ডক্টর, আমার নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা উচিৎ ছিল।” বিনীতার ফের মনে পড়ে গেল সেদিন তাদের বাড়ি মোবাইল ফোন ফেলে গিয়েছিল ডাক্তার। সেটা ফেরত নিতে এসে তাদের বাড়ির ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রনীল তাকে বলেছিল, “আমার মনে থাকে শুধু সেগুলোই যার সঙ্গে আপনি জড়িত।” ফের মুখ খুলল ইন্দ্রনীল, “আমার মনে হচ্ছে সেদিন এটাও বলেছিলাম যে লজ্জা, ঘৃণা, ভয় আমার নেই, কথায় কনট্রোল থাকে না। ফলে অনেক সময়েই সমস্যা তৈরি হয়।” সামান্য সময় চুপ করে থেকে বিনীতা উত্তর দিল, তবে সেটা ডাক্তারের আগের কথার। “আমার হাজব্যান্ডের ডাক্তার বলে আমি অ্যাপোলোজাইজ করিনি। আমার ব্যবহার খারাপ ছিল বলেই করেছি।” এবার ইন্দ্রনীল একটু চুপ করে থাকে। বুক কেসের ওপর রাখা অরুণাভর পরিবারের ছবির দিকে তাকায়। তারপর তাকায় বিনীতার দিকে। “একটা কথা বলি ম্যাডাম, আমি যেটা আপনাকে সেদিন রাতে বলেছি, সেটা আমার ফিলিং, আর প্রফেশনকে আমি ফিলিং-এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। আপনার কোন ক্ষতি জ্ঞানত আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবু চাইলে আপনারা ডাক্তার চেঞ্জ করে ফেলতে পারেন।” ... ...
বিনীতার মোবাইল বাজছে। ইন্দ্রনীল নিশ্চয়, নাহ - গায়ত্রী। “হ্যালো?” “দাদার ডাক্তারের নাম ইন্দ্রনীল বিশ্বাস তো?” “হ্যাঁ, কেন?” “ওনাকে নিয়ে আজ হসপিটালে কিছু একটা হয়েছে।” “কী হয়েছে?” উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল বিনীতা। “এক এমএলএ-র আত্মীয় ওনার পেশেন্ট ছিল, সে আজ মারা গেছে। তাই নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। টিভিতে দেখাচ্ছে।” সেই জন্যই কি ফোন ধরছিল না ইন্দ্রনীল! ‘না ধরলেও চিন্তা করবেন না’ এই কথার সাথে হাসপাতালের ঝামেলার কোনও যোগ আছে না কি! “কী হয়েছে? ওনাকে মারধর করেছে? হাসপাতালে ভাঙচুর হয়েছে?” “না, তবে জোর হল্লাবাজি হয়েছে। হাসপাতাল বলেছে তাদের কোনও দোষ নেই। যে কোনও তদন্তের মুখোমুখী হতেও তারা রাজী।” বিনীতা টের পেল আর একটা কল আসছে তার ফোনে, এক ঝলক তাকিয়ে দেখল - ইন্দ্রনীল। ... ...
ওদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে জোরে, টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। অরুণাভ হাঁটতে হাঁটতে এসে গেছে মাইনের কাছে। বড় বড় গাছগুলো একটু একটু দুলছে, উড়ছে শুকনো পাতা আর ধুলো, আর সেই সঙ্গে কয়লার গুঁড়ো। একটা লোডেড ডাম্পার চলে গেল কনভেয়র বেল্টের দিকে। অরুণাভ তাকায় নিচের মাইনের দিকে। হুইল লোডার দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা, নড়ছে না। বর্ষা কালে জল জমে গেলে ওই লোডারগুলোর সামনের বাকেট অংশটা দিয়ে ঠেলে সরানো হয় মাটি, জমা জল একটা নির্দিষ্ট খাতে বইয়ে মাইন থেকে যতটা সম্ভব সরিয়ে দেওয়ার জন্য। অরুণাভকেও সরে যেতে হবে এক দিন ওই জলের মত, এই সব হাওয়ায় উড়ে যাওয়া পাতার মত। ... ...
মেঘের মধ্যে ভাসতে থাকা কোটি কোটি ওই বরফ-বিন্দুগুলোও চায়ের পাতার মতো মেঘের স্তূপের মধ্যে ওঠানামা করতে থাকে। ব্যাপারটা বোঝা গেল কিছুটা?” ... ...
কলকাতার ট্রামের সাথে অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ । তার বহু কবিতায় ট্রামের অনুষঙ্গ উঠে এসেছে অবধারিত ভাবে । যে ট্রামলাইন ধরে অজস্র বার হেঁটে গেছেন, সেই ট্রামলাইনেই ট্রামের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন অন্যমনস্ক কবি । সেই আঘাত আর সামলে উঠতে পারেননি । শেষ পর্বে তাই কবি ও ট্রাম । যখন লিখেছিলা্ম তখন ও তিনটে রুটে ট্রাম চলত টিম টিম করে । আর এখন তো তার মৃত্যু ঘন্টা বেজে গেল । ... ...
স্কুলজীবনের শেষ বেলায় ট্রাম ছিল রোজকার বাহন । সকাল -বিকেলের সেই যাতাওয়াতে লেখা হত অনেক গল্প । এইবারের পর্বে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর এক দল কিশোর-কিশোরীর গল্প । ... ...
১৯৮০ এর শেষের বছরগুলোতে ট্রামে করেই স্কুল যাতাওয়াত ছিল । বেহালা থেকে বালিগঞ্জ । ২৭ নং আর ২৪/৩৭ ! তখন ঐ রুটে স্কুল কলেজের সবাই ঝেঁটিয়ে ট্রামেই যেত । ট্রামে বসার জায়গা পাওয়া যেতনা । পাদানী থেকে ঝুলত প্রায় লোকজন । এখন সে কথা মনে করলে অবিশ্বাস্য লাগে । একটা প্রজন্মের অনেক গল্প তৈরি হত ঐ যাওয়া আসাতে । ... ...
বিদিশার বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে তন্ময় ভাবে এই সেই দেহ যার মনের খবর না জেনে ক্ষণিকের দুর্বলতায় নিজের মত করে পেতে গিয়ে খোয়া গিয়েছিল তার প্রেম। ... ...
এই পর্বে পঞ্চাশের দশকের এক পয়সা ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলনের শেষ কিস্তি । ... ...
ধপাস করে সোফায় বসে পড়ল বিনীতা, তার হাতে এখন একটা প্লাস্টিকের ফোল্ডার, তাতেই রয়েছে সুপ্রিয়া ম্যাডামের দেওয়া প্রশ্নপত্র। সেটা আর নিজের ব্যাগটা পাশে রাখল সে। কী করবে, কী বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। নেশা হয়ে গেলে গাড়ি চালিয়ে ফিরবে কী করে? এখানে তাদের খাওয়ার কথা ছিল, খিদেও পেয়েছে অল্প, কিন্তু এখন খাওয়াটারই বা কী হবে? রঙিন বাইরে রয়েছে, তাকে তোলার কথা ছিল ফেরার সময়ে; সেটারই বা কী করা যাবে? কতটা মদ খেয়েছে অরুণাভ? বেশি তো খায় না কখনই। তার স্বামীর মধ্যে যে সব বদল দেখছে গত কয়েক মাসে, এটাও কি তার মধ্যেই পড়ে? কিন্তু ডাক্তারই বা কী করে মদ খাওয়া অ্যালাও করল? ... ...