হলধর পোল্লের ভালোমানুষীর জন্যে মালতীর যে গর্ব ছিল মনের মাঝখানে, সেই ভিত আজ নড়ে উঠল। আসলে হলধর পোল্লে কি আহাম্মক নয়? ... ...
জাগতিক নিয়মে সব শোক সন্তাপই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থিতিয়ে আসে। তাৎক্ষণিক আর্দ্র আবেগ ও মেঘমেদুর সহানুভূতি, বাস্তবের রৌদ্রে শুকিয়ে আসে যত দিন যায়। ... ...
ভাগ্যাহত ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে কোথাও যেন অদৃশ্য এক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ... ...
কিভাবে যে কপাল পোড়ে - ছিঁড়েখুঁড়ে যায় জীবনের স্বপ্নজাল..... ... ...
অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন। নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায়, আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি। নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি। মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল ‘তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি ‘না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত। মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবেরি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে। আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়। আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের শারদীয়া সংখ্যার ছবিগুলো দেখি বরং। ... ...
চারদিকে এমন অশান্ত অস্থির সময়ে মধুর বাতাস বয়ে আনুক সকলের চিত্তে... ... ...
২২শে এপ্রিল ২৫ এর পহেলগামে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে নিখুঁত এবং নিশ্চিত আঘাত হানার জন্যে ভারত মাত্র চোদ্দদিন সময় নিয়েছে প্রস্তুতির জন্যে। সরাসরি রণাঙ্গনে নামার আগে এই যুদ্ধ প্রস্তুতির কথাই চিন্তা করেছিলেন যুধিষ্ঠিরও। বনবাস এবং অজ্ঞাতবাসের তের বছরে ধৈর্য ধরে নিখুঁত পরিকল্পনা করেছিলেন - কী ভাবে যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করা যায়। সেই আলোচনাই করেছি - মহাভারতের বন পর্ব থেকে। ... ...
একদিন সুযোগ পেয়েও যাই। ছোটমামারা তখন ফেরত চলে গেছে, দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা গেছে পুর্বাশায় মেজমামার বাড়ী। সেদিন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট্ট খাট থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি। দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি। তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই। সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়। এই বছরের ঠাকুর ঠাকুরঘরে থাকে। এগুলো মূর্তি ছবি নয়, এগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই। তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি আর মনে মনে বলি, যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত মিথ্যে বলে, এতবার অন্যায়ভাবে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখে, সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম। ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি করি না। ওদের উত্তরাধিকার আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না। ... ...
২২শে এপ্রিল ২৫ এর পহেলগামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারত কী পদক্ষেপ নেয়, তার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। যতদিন গেছে - ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামরিক শক্তির তুচ্ছতা নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমের প্রতিটি শাখায়। জনগণেশ বারবার বলেছে - এত অপেক্ষার কী আছে - ভারত তো নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারে বিরুদ্ধ দেশকে। দীর্ঘ পনেরদিন অপেক্ষার পর ভারত সরকার দুর্দান্ত আঘাত হেনেছে। পাকিস্তানের সীমানার বাইরে থেকেই ভারত নটি জঙ্গী ঘাঁটি বিধ্বস্ত করেছে মোট একুশটি মিসাইলের আঘাতে। অর্থাৎ নিখুঁত এবং নিশ্চিত আঘাত হানার জন্যে ভারত মাত্র চোদ্দদিন সময় নিয়েছে প্রস্তুতির জন্যে। সরাসরি রণাঙ্গনে নামার আগে এই যুদ্ধ প্রস্তুতির কথাই চিন্তা করেছিলেন যুধিষ্ঠির। বনবাস এবং অজ্ঞাতবাসের তের বছরে ধৈর্য ধরে নিখুঁত পরিকল্পনা করেছিলেন - কী ভাবে যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করা যায়। সেই আলোচনাই করেছি - মহাভারতের ... ...
এতগুলো কথা গুছিয়ে বলতে বিনীতাকে শান্ত থাকতে হয়েছে, নিজের ইমোশন চাপা দিয়ে রাখতে হয়েছে, আর আগে কয়েকবার নিজের মনে মনে বলে রিহার্সাল দিয়ে নিতে হয়েছে। মেয়ে প্রশ্ন করল “বাবা আর আসবে না?” উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না বিনীতা, গায়ত্রী বলল, “বাবা হয়তো আর আসবে না, কিন্তু আমরা সবাই তো আছি। আমরা সবাই তোমার কাছে থাকব, তোমার পাশেই থাকব।” এইবার বিনীতা বলল, “বাবা কত ভিডিও করেছেন সেগুলো দেখব আমরা, বাবার কত বই আছে সেগুলো পড়ব।” রঙিন চুপ করেই রইল। বিনীতার মনে পড়ল অরুণাভর লেখা চিঠিতে মেয়ের কথা - “রঙিনকে ব’লো আমার কাজ ফুরিয়ে গেছে তাই চলে গেছি।” এগুলো মেয়েকে বলতে গিয়েও বলল না সে, “কাজ ফুরিয়ে যাওয়া” ব্যাপারটা সে কী ভাবে নেবে জানা নেই। আর এই ধারণা ও পরে কার ওপর কেমন ভাবে প্রয়োগ করবে সেটাও অজানা। ... ...
ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ। দুনিয়া বদলাচ্ছে। ইউরোপীয়রা একের পর এক ভূখণ্ড দখল করছে।ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া—তাদের কাছে তখন ‘সভ্যতা’ মানে আধুনিকতা, বিজ্ঞান, শিল্প, জাতীয়তাবাদ।আর মুসলিম দুনিয়া? ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে। এক সময় যে অটোমান সাম্রাজ্য ইউরোপের দরজায় কড়া নেড়েছিল, সেই সাম্রাজ্য তখন নিজেকে টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। মিশর, পারস্য, উত্তর আফ্রিকা, ভারত—যেখানেই তাকানো যায়, দেখা যাচ্ছে পরাধীনতা, বিক্ষোভ, আত্মসমালোচনা। এই পটভূমিতেই মুসলিম সমাজের কিছু মানুষ ভাবতে শুরু করলেন—কেন আমরা পিছিয়ে গেলাম? এবং এখন কী করণীয়? ... ...