নিশ্চুপে সাঁতরায় স্মৃতির অতলে সহসা উদ্বেল হয়, উঠে আসে, ঘাই মারে অবিশ্রান্ত ধারাজলে চেতনা লুপ্ত হলে ভুলে থাকা ঘ্রাণ ভেসে আসে, ডেকে নেয় আদিম কুহক মায়ায় মেতে উঠি যাত্রা শুরু, জাদুকর খুলিয়াছে মুঠি ... ... ...

নদীর পথে শহর জনপদ নদীর পথ রূদ্ধ পদে পদে অন্ধকারে ক্লান্ত পথবাসী ঘুর্ণি জলে মিশছে হতশ্বাস রাত্রি নামে এবং নামে ভোর পলির পাঁকে প্রাচীন জলযান নদীর জলে মানুষ তার শোক ভাসিয়ে দিয়ে ফিরেছে জনপদে ... ...

তোমাদের গায়ে কি বারুদের গন্ধ আছে? নখের ফাঁকে রূপালি গুঁড়ো? ধুয়ে নিয়ে চাই আমি, নতুন করে বসতে চাই রঙীন কাঁচে ... ...

মেনকা তোমার মেয়েটিও জানি ছেলেপুলে কোলে নিয়ে কৈলাস ছেড়ে পৌঁছুবে দূর, বন্ধুর পথ দিয়ে। ... ...

শুধু অপেক্ষায় রয়েছি এখনও কারো ছায়া কুড়িয়ে নিতে অন্যজন আসেনা কখনও। ... ...

পুজো এখন এখানে ফুরিয়ে গিয়েছে তবু ব্যাকইয়ার্ডের সকাল বাতাসে হঠাৎ শরতে শিউলির ঘ্রাণ ... ...


এটা সত্যি আমি বড় বেশি কাঁদি আশা মৃত হলে কাঁদি অন্যের কান্না দেখে কাঁদি অথচ সেদিন আমার চোখে জল এলো না। তখন দিনের আলো নেভে নেভে সূর্য ছিল না তবু পাঁচ যুবকের চোখে কালো চশমা কঠিন সাদা মুখে বেপরোয়া বোহেমিয়ানা পা গুলো জাপটে আছে ময়লা নীল জিন গায়ে ঢোলা চামড়ার জ্যাকেট এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান ... ...

বড়রাস্তার ধারের মাচানে কয়েকজন ওম নিচ্ছে গুটিসুটি। একপাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা বেঁকেছে ওদিকে এগোলেই গ্রাম- কাঁপতে কাঁপতে কেউ একজন বলে দিল। আমরা গলা ভিজিয়ে বাঁক নিলাম। রাস্তার কাজ হয়নি কোনোদিন অথবা হয়েছিল দায়সারা এখন খারাপ হয়ে গেছে। হোঁচট খাচ্ছি আটকে যাচ্ছি। দেখেশুনে যেতে হচ্ছে। কেউ একজন আসছে টুংটাং টুংটাং। -এখানে ধুমগাঁ কতদূরে? -ওই সাঁকো দেখছেন। ওটা পেরিয়ে বাঁক নেবেন। দুপাশে ক্ষেত। আর একটু গেলে একটা পুরনো মড়া গাছ পাবেন। তাবিজ কবজ গুপ্তরোগ চিকিৎসার চিরকুট চেটানো আছে ওর গায়ে স্থানীয় সংবাদ আছে যুদ্ধের খবর আছে নিখোঁজ আর কে কবে কী করেছিল তার বিজ্ঞাপন। গাছের পাশ দিয়ে যে আলপথ ওটা ধরে এগোলেই গাঁ। ধন্যবাদ জানিয়ে গতি বাড়ালাম। ... ...

এই স্রোত, এই ক্ষয়, এই আয়ু, এই সীমা ওই জল, জানলা খুললেই অনন্ত যুদ্ধক্ষেত্র চিতা এই অক্ষর, মেদ, রক্তমাংসমেদমজ্জাহাড় নিয়ে জুয়ো খেলতে বসে ঘরদোরউঠোনরান্নাঘর মায় সকল আত্মীয়পরিজনপাড়াপ্রতিবেশী হারিয়েছি। ... ...

আমার শৈশব খেলা করে গোমতীর তীরে। নদীতট, ফেরিঘাট, জারুলের বন, পাথর কুড়িয়ে রাখা, হাওয়ার আদর মাখা, উড়ে যাওয়া মেঘেদের অচেনা মনকেমন। জেলে ডিঙি ভেসে চলে অনন্তের দিকে পাখির ডানায় মাখা গোধূলি-আবির, ... ...

আপনি দূরে চলে যাবেন জানালে, দু’একটি স্মৃতিকথা ... ...

এই অকিঞ্চিৎকর কিঞ্চিতের কাছে একটি প্রাগৈতিহাসিক স্বপ্ন / এ পাড়ায় কি আমি একাই জেগে আছি / বা এই গ্রামে বা শহরে বা দেশে বা পৃথিবীতে / খানিকটা ধোঁয়ার মাঝে রাঙা বউ হারিয়ে যাওয়ার আগে / কুয়াশার মাঝে চোখের জ্যোতি হারিয়ে যাওয়ার আগে / ফানুশের পিছনে বাবা হারিয়ে যাওয়ার আগে / যেভাবে হালকা বাতাসে ভেসে উঠেছিল আমাদের সারাৎসার / আর থমথমে রাত্রি যাপন থেকে দেখে ছিলাম / ক্ষমারও এক সীমাবদ্ধতা আছে / সে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারে / এমনকি মহাজাগতিক সময় ... ...

গভীর রাত / অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যাওয়া শহর / রাস্তায় জ্বলতে থাকা আলোগুলো অদ্ভুত ভূতুড়ে / তার মধ্যে ভয়ে কুঁকড়ে / ইতিউতি ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে / এগিয়ে চলা মেয়ে আর গভীর একটা মিছিল / মিছিলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ সেই মেয়ে / অতি সাধারণ ঢঙে প্রশ্ন করে বসে যদি... // আমার বাবা আসলে কেমন? ... ...

আমগাছে ভরা বাড়ির ভিতরে বসে তিরতির করে বুক কাঁপছিল মা মরা রুকুর। / পাশের পুকুরে মাগুরের মাথায় ঘি জমলে ছটফট করছিল জলের মাছ। / / এদিকে আজকের মতো সন্ধ্যা করে এসেছে চারিদিকে। / বাড়ির সকলে গেছে শনিবারের পুজোয়, / ফিরতে অনেক অনেক রাত হবে। / / এমনি সময়ে ভানুমতীর খেল জানা তালেব দা এসে আঁধার ঘর আরো আঁধার করে বসে আছে। / যেন পাহাড়ের কালোমেঘ নেমেছে ঘরের মাথায়। / / তার কালো পুরুষ্টু চেহারা, সারা গায়ে সুন্দর রোম, নাভিতে ঘূর্ণি, কোঁকড়াচুলো, এক হাতে পেতলের বালা, কোমরের তাগায় ফুটো কড়ি বাঁধা আছে। / / রুকু সন্ধে দিয় এল, পরনে গামছা, চায়ের জল চাপিয়ে বসে রইল খালি গায়ে তালেবের কাছে। ... ...

সে-কবিতা কেন লিখে যাচ্ছি আজও এতদিন ধরে তাই ভাবি অনর্থক কেন আহ্বান করছি ধারাপাত শব্দ এযাবৎ অথচ অবাক আমি বুঝিইনি আকাশের দাবি সে-বিকেলে রাস্তার আলস্যে ছাউনির নিচে অপেক্ষা করেছে সাইকেল ... ...


তারুন্য পেরিয়ে এসে এখন আমি জানতে চাই কাকে বলে স্তন, / আর স্তনমন্ডল? / আমার কুকুরগুলো তোমার স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকে / তাকিয়ে থাকে / বরফের ছাদের নিচে; মাকড়শা জাল বিছিয়েছে তোমার স্তনের ত্বকে।/ / আকর্ষণীয় না হোক, তবু আমার শরীর আছে । আমার শরীর থেকে/ তোমার শরীরে পৌছতে/ যে সেতু দরকার তা নির্মাণ করতে আমি মিন্ত্রী পাবো কোথায় ? / / টাকাপয়সা আর সামাজিক সম্পর্কের দাম আছে। কিন্তু আরও সময় নিতে/ আমি রাজি, / লিওনার্দোর মোনালিসা আর বতেরোর মোনালিসা যে আলাদা দুজন/ আলাদা সন্দেহজড়িত মেঘ আর উইনিং কন্ট্রাসেপশান, / এটা স্বীকার করে জানতে চাই/ ... ...

"আষাঢ় মাসের বিকেলে ছোট হল্ট স্টেশনে বসে আছি।আকাশ মেঘলা, লোকজন তেমন নেই।চোখে না পড়ার মতো চা দোকান। পাশে কদমগাছে অজস্র ফুল ফুটে আছে। হঠাৎ দেখি কিছু লোকজন দল বেঁধে প্ল্যাটফর্মে উঠে এল।গ্রাম্যদেশের মানুষ সব।কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। বেশ ঝলমলে জামাকাপড়।বুঝলাম, হাট থেকে ফিরছে। সামনের লোকটির কাঁধে একটা কাপড় জড়ানো খাঁড়া।অল্প কিছু অংশ বেরিয়ে আছে, আলো লেগে অল্প চমকাচ্ছে। কদিন পরে নিশ্চয়ই কোনো জাগ্রত থানে বলির ব্যাপার আছে। ---- " ... ...

ঋতুটি শরৎ এখন পঞ্জিকার পাতায়। বর্ষার আমেজ কাটেনি বুঝি, সারাটি আকাশ কালো করে নামে বৃষ্টি। একটানা ভিজে শালবন, মহুয়ার কিশলয়। সতেজ হয়- লতানো পুঁইয়ের ডগা। এ বর্ষণ দেখার সৌভাগ্য আমার নেই। দূর পরবাসে বসে আমি ভাবি- আহ, কি সহজেই ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম প্রিয় ফুল কদমের কথা...! ... ...