এটা সত্যি আমি বড় বেশি কাঁদি আশা মৃত হলে কাঁদি অন্যের কান্না দেখে কাঁদি অথচ সেদিন আমার চোখে জল এলো না। তখন দিনের আলো নেভে নেভে সূর্য ছিল না তবু পাঁচ যুবকের চোখে কালো চশমা কঠিন সাদা মুখে বেপরোয়া বোহেমিয়ানা পা গুলো জাপটে আছে ময়লা নীল জিন গায়ে ঢোলা চামড়ার জ্যাকেট এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান ... ...
বড়রাস্তার ধারের মাচানে কয়েকজন ওম নিচ্ছে গুটিসুটি। একপাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা বেঁকেছে ওদিকে এগোলেই গ্রাম- কাঁপতে কাঁপতে কেউ একজন বলে দিল। আমরা গলা ভিজিয়ে বাঁক নিলাম। রাস্তার কাজ হয়নি কোনোদিন অথবা হয়েছিল দায়সারা এখন খারাপ হয়ে গেছে। হোঁচট খাচ্ছি আটকে যাচ্ছি। দেখেশুনে যেতে হচ্ছে। কেউ একজন আসছে টুংটাং টুংটাং। -এখানে ধুমগাঁ কতদূরে? -ওই সাঁকো দেখছেন। ওটা পেরিয়ে বাঁক নেবেন। দুপাশে ক্ষেত। আর একটু গেলে একটা পুরনো মড়া গাছ পাবেন। তাবিজ কবজ গুপ্তরোগ চিকিৎসার চিরকুট চেটানো আছে ওর গায়ে স্থানীয় সংবাদ আছে যুদ্ধের খবর আছে নিখোঁজ আর কে কবে কী করেছিল তার বিজ্ঞাপন। গাছের পাশ দিয়ে যে আলপথ ওটা ধরে এগোলেই গাঁ। ধন্যবাদ জানিয়ে গতি বাড়ালাম। ... ...
এই স্রোত, এই ক্ষয়, এই আয়ু, এই সীমা ওই জল, জানলা খুললেই অনন্ত যুদ্ধক্ষেত্র চিতা এই অক্ষর, মেদ, রক্তমাংসমেদমজ্জাহাড় নিয়ে জুয়ো খেলতে বসে ঘরদোরউঠোনরান্নাঘর মায় সকল আত্মীয়পরিজনপাড়াপ্রতিবেশী হারিয়েছি। ... ...
আমার শৈশব খেলা করে গোমতীর তীরে। নদীতট, ফেরিঘাট, জারুলের বন, পাথর কুড়িয়ে রাখা, হাওয়ার আদর মাখা, উড়ে যাওয়া মেঘেদের অচেনা মনকেমন। জেলে ডিঙি ভেসে চলে অনন্তের দিকে পাখির ডানায় মাখা গোধূলি-আবির, ... ...
আপনি দূরে চলে যাবেন জানালে, দু’একটি স্মৃতিকথা ... ...
এই অকিঞ্চিৎকর কিঞ্চিতের কাছে একটি প্রাগৈতিহাসিক স্বপ্ন / এ পাড়ায় কি আমি একাই জেগে আছি / বা এই গ্রামে বা শহরে বা দেশে বা পৃথিবীতে / খানিকটা ধোঁয়ার মাঝে রাঙা বউ হারিয়ে যাওয়ার আগে / কুয়াশার মাঝে চোখের জ্যোতি হারিয়ে যাওয়ার আগে / ফানুশের পিছনে বাবা হারিয়ে যাওয়ার আগে / যেভাবে হালকা বাতাসে ভেসে উঠেছিল আমাদের সারাৎসার / আর থমথমে রাত্রি যাপন থেকে দেখে ছিলাম / ক্ষমারও এক সীমাবদ্ধতা আছে / সে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারে / এমনকি মহাজাগতিক সময় ... ...
গভীর রাত / অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যাওয়া শহর / রাস্তায় জ্বলতে থাকা আলোগুলো অদ্ভুত ভূতুড়ে / তার মধ্যে ভয়ে কুঁকড়ে / ইতিউতি ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে / এগিয়ে চলা মেয়ে আর গভীর একটা মিছিল / মিছিলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ সেই মেয়ে / অতি সাধারণ ঢঙে প্রশ্ন করে বসে যদি... // আমার বাবা আসলে কেমন? ... ...
আমগাছে ভরা বাড়ির ভিতরে বসে তিরতির করে বুক কাঁপছিল মা মরা রুকুর। / পাশের পুকুরে মাগুরের মাথায় ঘি জমলে ছটফট করছিল জলের মাছ। / / এদিকে আজকের মতো সন্ধ্যা করে এসেছে চারিদিকে। / বাড়ির সকলে গেছে শনিবারের পুজোয়, / ফিরতে অনেক অনেক রাত হবে। / / এমনি সময়ে ভানুমতীর খেল জানা তালেব দা এসে আঁধার ঘর আরো আঁধার করে বসে আছে। / যেন পাহাড়ের কালোমেঘ নেমেছে ঘরের মাথায়। / / তার কালো পুরুষ্টু চেহারা, সারা গায়ে সুন্দর রোম, নাভিতে ঘূর্ণি, কোঁকড়াচুলো, এক হাতে পেতলের বালা, কোমরের তাগায় ফুটো কড়ি বাঁধা আছে। / / রুকু সন্ধে দিয় এল, পরনে গামছা, চায়ের জল চাপিয়ে বসে রইল খালি গায়ে তালেবের কাছে। ... ...
সে-কবিতা কেন লিখে যাচ্ছি আজও এতদিন ধরে তাই ভাবি অনর্থক কেন আহ্বান করছি ধারাপাত শব্দ এযাবৎ অথচ অবাক আমি বুঝিইনি আকাশের দাবি সে-বিকেলে রাস্তার আলস্যে ছাউনির নিচে অপেক্ষা করেছে সাইকেল ... ...
তারুন্য পেরিয়ে এসে এখন আমি জানতে চাই কাকে বলে স্তন, / আর স্তনমন্ডল? / আমার কুকুরগুলো তোমার স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকে / তাকিয়ে থাকে / বরফের ছাদের নিচে; মাকড়শা জাল বিছিয়েছে তোমার স্তনের ত্বকে।/ / আকর্ষণীয় না হোক, তবু আমার শরীর আছে । আমার শরীর থেকে/ তোমার শরীরে পৌছতে/ যে সেতু দরকার তা নির্মাণ করতে আমি মিন্ত্রী পাবো কোথায় ? / / টাকাপয়সা আর সামাজিক সম্পর্কের দাম আছে। কিন্তু আরও সময় নিতে/ আমি রাজি, / লিওনার্দোর মোনালিসা আর বতেরোর মোনালিসা যে আলাদা দুজন/ আলাদা সন্দেহজড়িত মেঘ আর উইনিং কন্ট্রাসেপশান, / এটা স্বীকার করে জানতে চাই/ ... ...
"আষাঢ় মাসের বিকেলে ছোট হল্ট স্টেশনে বসে আছি।আকাশ মেঘলা, লোকজন তেমন নেই।চোখে না পড়ার মতো চা দোকান। পাশে কদমগাছে অজস্র ফুল ফুটে আছে। হঠাৎ দেখি কিছু লোকজন দল বেঁধে প্ল্যাটফর্মে উঠে এল।গ্রাম্যদেশের মানুষ সব।কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। বেশ ঝলমলে জামাকাপড়।বুঝলাম, হাট থেকে ফিরছে। সামনের লোকটির কাঁধে একটা কাপড় জড়ানো খাঁড়া।অল্প কিছু অংশ বেরিয়ে আছে, আলো লেগে অল্প চমকাচ্ছে। কদিন পরে নিশ্চয়ই কোনো জাগ্রত থানে বলির ব্যাপার আছে। ---- " ... ...
ঋতুটি শরৎ এখন পঞ্জিকার পাতায়। বর্ষার আমেজ কাটেনি বুঝি, সারাটি আকাশ কালো করে নামে বৃষ্টি। একটানা ভিজে শালবন, মহুয়ার কিশলয়। সতেজ হয়- লতানো পুঁইয়ের ডগা। এ বর্ষণ দেখার সৌভাগ্য আমার নেই। দূর পরবাসে বসে আমি ভাবি- আহ, কি সহজেই ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম প্রিয় ফুল কদমের কথা...! ... ...
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে। ... ...
অথচ, সেভাবে পাওয়া হলো না আপনাকে! //যৌবন যখন /শৈশব থেকে কৈশোরে ছুটে গেল /প্রৌঢ়ত্বের আকাশে ঘনিয়ে এল /গোধূলি /এগোতে এগোতে /এক দীর্ঘ গভীর /আফসোসের রেখা টানতে টানতে /আপনার দিকে /ছুটে গেছি বারবার... /প্রেমে /প্রত্যাখানে /বিচ্ছেদে /আদরে /শিক্ষায় /অশিক্ষায় /কলঙ্কে /অপমানে /সম্মানে /অসম্মানে /রাতের কান্নায় /সকালের ঘাসফুলে /সুন্দর যখন সুন্দরের চেয়েও সুন্দর /এবং যাপন /যখন একাকী ... ...
সন্ধেবেলা দয়াময়ীর এই কথাটুকু মনে পড়ল দয়াময়ীর দয়াময়ী ছাড়া কেউ নেই। আজানে তখন আকাশ ফেটে গেছে, গলে গলে নামছে অন্ধকারের প্রথম দিককার রঙ। পেয়ারা ফুলের মতো মুখ নিয়ে ও কান পেতে শুনল সরসর করে কোথাও কিছু একটা বাজছে। বোঝা গেল, একেবারে একা একটা তালগাছ মাঠের মাঝখানে হাওয়ায় পাতাদের কাঁপাচ্ছে। ভাত খেতে বসে ওঁর বুক উদাস হয়, একজন কেউ থাকলে ভালো হত। এই এতবড়ো নীলসাদা রঙীন বাড়ি,দেওয়ালে সদ্য চুনকামের গন্ধ বুকে উঠে আসে। চিরকাল মাটির ঘরে, পাতার ঘরে দিন কেটেছে। সরকারি প্রকল্পের একা একা বিধবার মতো ফাঁকা বাড়িতে অস্বস্তি হয়, সন্ধ্যামালতী ফুলের চেয়েও নরম মা দেখে যেতে পারল না এই ঘরদোর। নিজেকে নিজের জল গড়িয়ে নিতে হলে, ভাতের পাতে কাঁচালঙ্কা-নুন বারবার আনতে যেতে হলে ভালো লাগে না। এতো যত্নে করা রান্নাবান্না অর্থহীন হয়ে পড়ে যতোক্ষণ না কেউ সেই খাবার খেয়ে একমুখ হাসিতে তারিফ করে ওঠে। চিংড়ি মাছের মাথার চচ্চড়ি তারিফ না করলেও মুখ তুলে অন্তত বলুক বিচ্ছিরি হয়েছে খেতে, এ রান্না খাওয়া যায় না। পরের দিন সে সব মায়ামমতা ঢেলে এমন মোচাঘন্ট রাঁধবে সেদ্ধ ছোলার তুক কাজে লাগিয়ে যে, কর্তাকে থালা অবধি চেটে খেতে হবে। ... ...
মানুষকে কখনো কখনো শার্দূল হয়ে উঠতে হয় / বাড়িতে তখন পোষ মানানো হচ্ছে / কুকুরের বাচ্চা / পোষ্য এবং পোষক দু'জনেই লোভনীয় / খোঁড়া পা নিয়ে আমার বিপ্লবী জেঠু / শার্দূলকে ভেবে বসছে কুকুর / কুকুর নিজেকে জেঠু ভেবে / সেজে উঠছে অযোধ্যায় যাবে বলে / পোষ্যদের খাদ্য প্রয়োজন / প্রয়োজন সঠিক সময়ে / সঠিক সমস্যা বোঝা / একটা হাড়ের লোভে শার্দূল ছুটছে / পেছনে পা খুঁড়িয়ে জেঠু / হাড় এবং / লোভ এবং / খোঁড়া পা / হো হো করে হেসে উঠছেন / আমাদের প্রণম্য / সন্তোষ রাণা ... ...
গলির শেষ প্রান্তে একসময় বাজত সুরের রজনীগন্ধা গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে, শীতের মিঠে রোদে ছাদে উঠে মেলে দিত ছাপা কাপড়, ছড়িয়ে যেত রেক্সোনা সাবানের চেনা গন্ধ কৈশোর চাইত আরো একটু গায়ের কাছে যেতে ঘেঁষে যেত ঝুঁকে আসা গাব গাছের পাতা কাটা কাটা ছায়ায় বসে ফিসফিস করে কানের কাছে কেউ বলত নিষিদ্ধ গল্প – একের পর এক শীতের চাদরের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা দুধ সাদা হাতে আলতা চুঁয়ে পড়া দেখতে বলত মিঠে ফিনফিনে গলা বলত চাদরে জড়িয়ে রাখা আছে সিন্দবাদের গল্পের ঝুলি আলাদিন হবার প্রলোভন দেখাত দুপুরের ছাদ – ... ...
যারা ভোর-ভোর উঠে স্বাস্থ্যচর্চা করে পার্কে দৌড়ায় ঠিক করে দেখলে আসলে তারা মৃত্যুভয়ে দৌড়ায় একথা লিখেই মনে পড়লো— তুমিও তো ঠিক করে দ্যাখোনি কখনো আমি কেন এভাবে দৌড়ে গেছি তোমার দিকে পড়ে গিয়ে, হোঁচট খেয়ে, আবার হেঁটে গেছি এক বর্ষা আগুনের ভিতর দিয়ে শুধুই তোমার পাবার জন্য! ... ...