মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং জীবনবোধের বিশিষ্টতা এমন সর্বব্যাপী যে তাঁর এ দিকগুলোকে নিয়ে চর্চা অনেক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকেরা করেছেন। এদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি বিষয় সহজেই চোখে পড়ে – প্রথম, তাঁর ধারণায় ও বীক্ষণে অহিংসার স্থান এবং দ্বিতীয়, তাঁর লেখা “হিন্দ-স্বরাজ” পুস্তিকাটি ও এ পুস্তিকায় নিহিত ধারণার ব্যাপ্তি। তুলনায় গান্ধীর বোধে মেডিসিনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা, দেহ, দেশজ চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কম। ... ...
এসকেলেপিয়াস, আমরা বোধ করি সবাই জানি, প্রাচীন গ্রিসের মেডিসিনের পৌরাণিক দেবতা। তাঁর মন্দিরে যাবার জন্য, অবশ্যই রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে, এই আকুলতা। মন্দির, মঠ, চার্চগুলোতে আর্ত মানুষের নিরাময় করার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত সে আদিম কাল থেকে। ইউরোপের উদাহরণে আবার ফিরে আসব। তার আগে ভারতের প্রথম আয়ুর্বেদ গ্রন্থ তথা শাস্ত্র বলে স্বীকৃত চরক-সংহিতারও সংকলনকালের সময়কালের কিছু আগে পরে (আয়ুর্বেদের সবচেয়ে মান্য গবেষক মিউলেনবেল্ডের মতে এ সময়কাল খুব বেশি হলে ১৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের আগে হতে পারেনা, বা খুব বেশি হলে ১০০ খ্রিস্টাব্দ – মিউলেবেল্ড, A History of Indian Medical Literature, IA, পৃঃ ১১৪) বৌদ্ধযুগে কিছু হাসপাতালের হদিশ পাওয়া যায়। ... ...
বহু প্রতীক্ষার পর যখন ২০১৭ তে এসে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তৈরী হওয়া এইচআইভি ও এইডস আইন ২০১৭ পাশ হয়েছে। এই আইন সারা দেশে ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই কি বলছে আইন... ... ...
লেখাটির মাঝে কিছু সত্য আছে। আবার সত্যকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে লেখকের নিজের মর্জিমাফিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়নি, দুয়েকটি বিষয় এবং প্রধানত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর (“বরিষ্ঠ সম্পাদক” নন, সত্যের খাতিরে বললে) পিটার দোশীর একটি বা দুটি প্রবন্ধকে হাতিয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য গবেষণাপত্র আছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেট, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্য জার্নালগুলোতে। এবং এ জার্নালগুলো কর্পোরেটদের টাকায় নিয়ন্ত্রিত হয়না। এসব জার্নালে স্বাধীন গবেষণাপত্র ছাপা কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের বদান্যতা ছাড়া। যদি বিজ্ঞানের এই স্বাধীন পরিসর না থাকে তাহলে বলা ভালো – প্রপঞ্চময় এ কর্পোরেট বিশ্বে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীন হওয়া সম্ভবও নয়, “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” ফুটিয়ে না দিলে। এখানে একবার স্মরণ করে নেওয়া ভালো – যখন বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত, প্রমাণ বা সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তখন যে হেত্বাভাস বা অনুপপত্তি (অর্থাৎ ভ্রান্ত যুক্তি) সংঘটিত হয়, তাকে যুক্তিবিদ্যায় পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই বা ইংরেজি ভাষায় চেরি পিকিং (Cherry picking) বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই হতে পারে। তবে জনবিতর্কে এই ভ্রান্তি একটি বড় সমস্যা। ... ...
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ধ্বনির মধ্যে হয়তো আশা বেঁচেছিল তখনও। রাস্তার এপাশ ওপাশ দিয়ে, এ গাড়ি ও গাড়ি কাটিয়ে যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল সেই আপৎকালীন যান, রোগীর পরিবারের সদস্যদের মনে প্রায় নিভে আসা সলতের আগুনের মত হয়তো উষ্ণতা ভর করে ছিল, তখনও। দুটো হাসপাতাল ঘোরা হল। শয্যা পেলেন না হৃদরোগে ভোগা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মধ্যে বিষাদ মাখছিল ক্রমশ। ... ...
একটু একটু করে পিছলে যাওয়া মেয়ের স্মৃতি, তারপর শুধু নিশ্ছিদ্র নিকষ আঁধার। একটাই আকুতি শেষ পর্যন্ত: পরিবার টা যেন ভেসে না যায়! সঙ্গে সঙ্গে আমার আরেকটি অনুভূতি হলো, নিজের জীবনে আমি লোকটা protagonist, কিন্তু এই পরিবারের জীবনের চলচ্চিত্রে আমি জীবনের এক অন্ধকার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে থাকা এক চরিত্র। এক মহাজাগতিক উইপোকার ঢিপির অজস্র ক্রসরোডের একটা অকিঞ্চিৎকর মোড়ে এই পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা। ছোট্ট কোণায় আমার জীবন বেঁচেছি, এদের জীবনও তেমনই আরেক কোণায় চলছে। এদের জীবনের ট্র্যাজেডি এরা সবটা দিয়ে অনুভব করছে, আমি তার খানিকটা পারছি। ... ...
কয়েকদিন আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত “হিপোক্রেটিক ওথ” আর নয়। একে প্রতিস্থাপিত করা হবে একেবারে নির্ভেজাল ভারতীয় “চরক শপথ” দিয়ে। এতে একদিকে হয়তো আমাদের নিজস্বতার এক দৃঢ় বিজ্ঞাপন হবে, অন্যদিকে একটি জাতীয়তাবাদী মানসিকতার নবজাগরণ ঘটবে। কিন্তু মুশকিল হল “চরক শপথ” বলে যা বলা হচ্ছে সেটি কর্তিত এবং নবনির্মিত। তাহলে চরক শপথ কী? এ নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হব। ... ...
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়। ... ...
বিশ্বজোড়া অতিমারী এই প্রথম নয়, তবু গত প্রজন্ম ও বিগত মহামারীর থেকে যা কিছু আমরা শিখে থাকি - তা ঠিকমতো প্রয়োগ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এমন দ্রুত-বর্ধনশীল মহানগরগুলির ক্ষেত্রে। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু শেখার আছে, এমনকি ধারাভির বাসিন্দাদের আপৎকালীন ব্যবস্থা থেকেও! যেমন, উগান্ডার কাম্পালাতে মূলত অপারগ বা বয়স্কদের জন্য স্থানীয় উৎপাদকরা একটি অ্যাপের সাহায্যে সাইকেলে জরুরী জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমন সব উদ্যোগের ফলে রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবিকা হারানো, অনাহার, ভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা-বিভ্রাট ও অন্যান্য দুর্ভোগের কোনও যথাযথ হিসাব বা তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার সুদক্ষ ব্যবস্থার অভাব ও অনীহার জন্য। ... ...
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে। ... ...
মেডিকেল কাউন্সিল প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছাপ রেখেছিলেন। ১৯৯৫ সালে এই সংস্থার প্রধান হয়েছিলেন ডাঃ কেতন দেশাই। তাঁর আমলে কলঙ্কের ছাপ আরো গাঢ় হয়ে উঠেছিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত পার্লামেন্টারি কমিট তাঁদের ৯২তম রিপোর্টে তীব্র নিন্দা করেছিলেন এই সংস্থার রীতিনীতি নিয়ে। রিপোর্টে অনেক বক্তব্যের মধ্যে থেকে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা উল্লেখ করা যায়, ১) ইণ্ডিয়ান মেডিকেল রেজিস্টারটি হালনাগাদ করা হয় না বহুকাল। রেজিস্টারে থাকা অনেকেই মারা গেছেন, অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, খাতায় কলমে তাঁরা সবাই আছেন। ২) রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা তারাও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, এবং তাঁদের কারুর কারুর বিরুদ্ধে নিয়মবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগ আছে। ৩) অভিযোগ আছে এরকম লোক জন কেবল এম সি আই র সদস্যপদে বসে আছেন তাই নয়, তাঁদের অপসারণের কোনো ক্ষমতাই নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। পার্লামেন্টারি কমিটি এরকম আরো অনেক কিছুর প্রমাণ পেয়েই সংস্থাটি বিলোপ করার সুপারিশ করেছেন। ... ...
সবার্না গ্রুপের তিনটি ভ্যাকসিন নিয়ে ফেজ থ্রি ট্রায়ালের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে কাজটা করা খুব সহজ ছিল না। আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টই তারা কিনতে পারে নি। বড়দার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কে তাকে যন্ত্র বেচবে? কিউবা করোনাপীড়িত আমেরিকার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর বছর আমেরিকার ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে ইলাম মেডিক্যাল স্কুল থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমেরিকা পাঠাচ্ছে। আর তার প্রতিদানস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস আরো শক্ত করেছে। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময় সম্পর্ক ভালো করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের সময় তার অবনতি হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেন নি। ... ...
গত বছরে যে সব সূচক ধরে মাপা হয়েছিল, এ বছরে তার অনেক ক'টিই পরিত্যক্ত হয়েছে। আবার গত বছর রাখা হয়নি এমন কিছু সূচক এ বছরে এসেছে। আমরা আগে দেখতাম দারিদ্র্যরেখার নীচে অবস্থানকারী মানুষজনদের চিহ্নিত করার সূচক কোনো দুটি পর্বে এক থাকতো না। ফলে আগের বছরের গরিব এ বছরেও গরিব কি না তা বোঝার উপায় থাকতো না। কেবল বোঝা যেত এ বছর, ওঁদের মাপকাঠিতে কারা গরিব। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাতেন এটা উন্নততর সূচক, অতএব অকারণে প্রশ্ন করো না। পরে দেখেছিলাম অমর্ত্য সেন, জঁ দ্রেজ রাও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ... ...
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে। ... ...
"আমরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্য সরকারকে দায়ী করা মোটেই উচিত নয়!” – ভক্তদের এই প্রচার নিশ্চয়ই আপনার মোবাইলস্ক্রিনে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু বার। ভক্তদের চরিত্রই হল অর্ধসত্যর উপর নিজেদের নির্মাণকে খাড়া করা। ওপরের তথ্যটাই যদি আপনি দেশের জনসংখ্যার নিরিখে দেখেন, তাহলে, একদম শুরু, মানে ২০২০-র প্রথম থেকে ৬ মে ২০২১ পর্যন্ত ভারতে ১০ লাখ মানুষ প্রতি (per million) সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা *১৫,৪২৯ / ১৬৮*। বিশ্বে আমাদের স্থান *১১৩ / ১১০* নম্বরে। এই পরিসংখ্যান অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার কতজন সংক্রমিত / মৃত - অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে একবার দেখে নেওয়া যাক। ... ...
সর্বোপরি, আবার একবার বলি- স্টেরয়েড নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না কিন্তু সতর্ক থাকুন। স্টেরয়েড একটি আশীর্বাদ। স্টেরয়েড আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অন্যতম স্তম্ভ। স্টেরয়েডের যুক্তিযুক্ত ব্যবহার অসংখ্য মানুষকে রোগমুক্তি দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে। এবং, এটা ভাবুন- যখন লাভক্ষতির হিসেব করবেন তখন যদি লাভের ঘরে অনেক বেশি জমে তাহলে সামান্য সাইড-এফেক্টের দুশ্চিন্তা ভুলে থাকাই শ্রেয়। দুর্ঘটনা এড়ানোর ভয়ে কে কবে রাস্তায় নামা বন্ধ করেছে? ... ...
শুরুটাও বেশিদিন আগে নয়। প্রথম স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৩০ সাল নাগাদ। তখনও তার নাম স্টেরয়েড হয়নি। প্রথমদিকে মূলত টেস্টোস্টেরন জাতীয় যৌগ ব্যবহার হ'ত। প্রথমে মুখে খাওয়া হ'ত। পরে জানা যায়, মুখে খেলে অধিকাংশটাই লিভারে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন পেশীতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেওয়া আরম্ভ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের মধ্যে শক্তিবর্ধক হিসেবে স্টেরয়েড নেওয়ার চল শুরু হয়। নাৎসী ক্যাম্পগুলোতে যুদ্ধবন্দীদের ওপর স্টেরয়েড প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। শোনা যায়, হিটলার নিজেই নাকি স্টেরয়েড নিতেন এবং তার ফলে তাঁর মধ্যে স্টেরয়েড সাইকোসিসের লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৫৬ সালের ওলিম্পিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অ্যাথলেটরা নিজেদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শারীরিক সক্ষমতা বর্ধক ওষুধ প্রয়োগ করেন এবং খেলায় চোখ টাটিয়ে দেওয়ার মত সাফল্য পান। ১৯৫০ সালে প্রেডনিসোন আবিষ্কার এবং তার বানিজ্যিক উৎপাদন ৫ বছর বাদে। তারপর পরবর্তী ছয় দশকে স্টেরয়েড মডার্ন মেডিসিনের রাজপথ-অলি-গলি চষে বেড়িয়েছে। বর্তমানে মডার্ন মেডিসিনের প্রতিটি সাব-স্পেশালিটির সাথে স্টেরয়েডের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ... ...
মিউকর সংক্রমণ চিরকালই ডায়াবেটিস কিংবা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের কম তাদের মধ্যেই দেখা যেত। এই বছরও যেসব কোভিড রোগীদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগ আছে অথবা মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যেই এই রোগটির সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু এটা বললেই চলবে না, তার কারণ কিছু কোভিড রোগী যাদের বয়স কম, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ নেই, যারা স্টেরয়েড পাননি তাদের মধ্যেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে , যা খুবই বিরল। এ থেকে আমরা এই ধারণা করতে পারি যে, করোনা রোগটি মানুষের শরীরে নিশ্চয়ই এমন বিশেষ কিছু করছে যাতে এই ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে এটাও বলে দেওয়া ভাল যে, সাধারণ মানুষের নাকে এমনিতেই যে মিউকর থাকে তা কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে তাদের এর থেকে কোনো ক্ষতিই হয় না। শুধু তাদেরই হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে সেটা কোভিড হোক বা ডায়াবেটিস হোক বা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজ রোগ হোক বা তাদের এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে যথা স্টেরয়েড বা অন্যান্য ওষুধ যেগুলো কিনা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর তাদের মধ্যেই এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ... ...