আর এই দৃষ্টিকোন থেকেই সম্ভবত ইসলাম-পূর্ববর্তী আরব উপদ্বীপের ভাষাগত পরিস্থিতির উপর পশ্চিমা আরব-তাত্ত্বিকদের মতামতে বড় ধরণের গরমিল দেখা যায়। অধিকাংশ পশ্চিমা আরব-তাত্ত্বিকদের মতে, জাহিলিয়ার অন্ধকার যুগে গোত্রগুলোর দৈনন্দিন কথ্যভাষার সাথে কোরান ও কাব্যসাহিত্যের ভাষার একটি প্রণিধানযোগ্য পার্থক্য ছিল। পরবর্তী ধরণটিকে সাধারণত আখ্যায়িত করা হত ইসলাম-পরবর্তী উপভাষা বা ‘পোয়েটিকো-কোরানিক কোইন’ হিসেবে। আর আরব সম্প্রদায়গুলোর মুখের কথ্যভাষাকে ফেলা হত ‘ইসলাম পূর্ববর্তী’ উপভাষার শ্রেণীতে। আর উপরোক্ত তাত্ত্বিকদের ভাষ্য অনুসারে, এই কণ্ঠ নিঃসৃত উপভাষাগুলো ইতিমধ্যেই হারাতে শুরু করেছিল ধ্রুপদী আরবীর অল্পস্বল্প বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে, কারক সমাপ্তির মত বিষয়গুলোতে। ... ...
বক্ষবিভাজিকা নিয়ে এত হুজ্জুতি স্রেফ মনুষ্যসমাজেই দেখা যায়। হামলে দেখা হোক, নিন্দে করা হোক বা দেখানো। সে অবশ্য মনুষ্যপ্রজাতি অনেক ক্ষেত্রেই একমেবাদ্বিতীয়ম। এর আগে কেউ জামাকাপড়ও পরেনি, পরমাণু বোমও বানায়নি। কিন্তু তার পরেও জিনিসটা জৈবিকভাবেই রহস্যজনক। কারণ দুখানা জিনিস কোন যুক্তিতে এরকম, কেউ জানেনা। এক হল পুরুষের যৌনাঙ্গ। সেটা এতটাই বাইরে, এতটাই অরক্ষিত যে আক্রমণের লক্ষ্য। ওই জন্যই খেলতে গেলে আলাদা করে গার্ড নিতে হয়, '... তে ক্যাঁত করে লাথি মারব' এই সব প্রবাদের জন্ম হয়েছে। জায়গাটাকে এতটাই দুর্বল করে রেখে বিবর্তনের নিরিখে পুং দের কী লাভ হয়েছে কে জানে। কিন্তু সেটা আপাত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে না। আজকের বিষয় হল মহিলাদের বুক। সেটাও সম্পূর্ণ উদ্ভট অপ্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার। দুগ্ধগ্রন্থির জন্য অত জায়গা লাগেনা। শিম্পাঞ্জি কি গরিলা, কারো স্তন অত বড় না। গরু তো লিটার-লিটার দুধ দেয়। অনুপাতে তারও আকার বেশ কম। ... ...
একথা অনস্বীকার্য যে আজকের ইসলামি দুনিয়ায় সঠিক বৈজ্ঞানিক মনোভাব এবং যুক্তিবাদের চর্চায় ঘাটতি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শ্লথতা এবং কূপমণ্ডুকতার পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কায়েমী শক্তির মেলবন্ধন । অথচ অতীতে সমস্ত ধর্ম,সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান থেকে শেখার মনোভাব দেখিয়েছেন ইসলামি পণ্ডিতরা।সবাই পাশ্চাত্যের সংজ্ঞা অনুযায়ী সেকুলার হবেন না, সাংস্কৃতিক কারণেই তা সম্ভব নয় এটা আমাদের বুঝতে হবে। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে, যুক্তিবাদ এবং আবেগের মধ্যে কিছুটা সমন্বয় এবং যেখানে সেই সমন্বয় সম্ভব নয় সেখানে তাদের নিজস্ব স্বাধীন ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। ... ...
১৬ জুন, সকাল ৭.৩০! স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং বাকি শিক্ষকদের কাছ থেকে আশীর্বাদ আর শুভেচ্ছা নিয়ে মিছিল শুরু করল নালেডি হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা! তারা যাবে অরল্যান্ডো স্টেডিয়ামে। এসেম্বলিতে সমবেত মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস পথে থাকার জন্য কিছুক্ষণ আগেই সতর্ক করে দিয়েছে তাদের স্কুলের ছাত্র তথা অ্যাকশন কমিটির প্রথম চেয়ারপার্সন টেপেলো মোটোপেনিয়েন। সকাল ৮টা নাগাদ অরল্যান্ডো অভিমুখী নালেডি স্কুলের মিছিলে যোগ দিল মরিস আইজ্যাকসন হাই স্কুল আর ফেফেনি জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের হাজার দুয়েক ছাত্রছাত্রীও! অনেক ছাত্রছাত্রীই জানত না যে ১৬জুন মিছিল হবে, কিন্তু স্কুলে এসে যখন তারা জানতে পারে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে যোগ দিয়েছিল তারা। আর যারা মিছিলের কথা জানত, তারা? স্কুলের একমাত্র ইউনিফর্মটা কেচে ধুয়ে ইস্তিরি করে পরে আর ধুলোমলিন জুতোজোড়া পালিশ করে যথাসম্ভব ধোপদুরস্ত হয়ে মিছিলে হাঁটতে এসেছিল সেই সব উজ্জ্বল কিশোর কিশোরীরা! ... ...
কুপার কোম্পানির টার্গেট ক্রেতা ছিলেন ব্যাচেলর গ্রাহকরা। সমকালীন নানা পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায় কুপার কোম্পানির তাদের নবজাতক পণ্যটির জন্য বানানো নানা মজাদার বিজ্ঞাপন, যাঁর একটির এক ছবিতে লং জনস পরিহিত ছিন্নবোতাম বেচারামুখ এক উদাস ব্যাচেলর আর অন্যটিতে বোতাম আর সেফটিপিনের ঝঞ্ঝাটবিহীন নতুন কুপার অন্তর্বাসে এক ঝকঝকে ব্যাচেলর। এর সঙ্গে লেখা ছিল, ‘যে সমস্ত যুবক অবিবাহিত এবং সিঙ্গেল, যারা জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে নিতে পারবেন না, এ জামা তাদের জন্যই!’ চলুন, একটু ফিরে দেখা যাক আট থেকে আশি, কচি মেয়ে থেকে বুড়ো দাদু সক্কলকে অন্যতম প্রিয় পোশাক টি-শার্টের ইতিহাসকে! ... ...
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাণিজ্যমেলার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মোটামুটি ১৪৭৮ সাল থেকে নিজস্ব বইয়ের সম্ভার নিয়ে শরতের সময় ১সপ্তাহের জন্য এই মেলায় আসতে শুরু করেন বই ব্যবসায়ীরা। ছাপানো বইয়ের সেই আদ্যিকালে অবশ্য বই ছাপানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত সমস্ত ধাপগুলোর কোন আলাদা কেন্দ্র বা ভাগ বিভাজন হয়নি। তাই নিজস্ব কর্মচারী আর শ্রমিকদের সাহায্যে গোটা প্রক্রিয়াটিকে সামলাতেন ১জন বই মুদ্রকই। অর্থাৎ সেকালে বইয়ের মুদ্রকই হতেন বইয়ের প্রকাশক আর বই বিক্রেতাও। ... ...
উনিশশো একাত্তর সনের ৬ই মে, সেই মানিককিশোর সত্তর বছর বয়সে জীবন্ত বলি হলেন বলিহার বাজারের সেই চালাঘরটিতে, যেখানে টিনের চাল বেয়ে নামত সুরের বৃষ্টি, ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজিয়ে দিত চালার তলায় আশ্রয় নেয়া ভাগ্যবান শ্রোতাদের! হয়ত বড় ভালবাসতেন চালাঘরটিকে, সে কারণেই সেই চালাঘরের যূপকাষ্ঠেই অগ্নিস্নান করে সেদিন অমরলোকে পৌঁছে গিয়েছিলেন শহীদ মানিককিশোর, সপ্তাকাশ জুড়ে তখন বেজেই চলছিল কোন ধ্রুপদী রাগ! ... ...
"সাদাকো মাত্র বারো বছর বয়সে মারা গেছিল। নিশ্চয়ই ও আরেকটু খেলতে চেয়েছিল, আরেকটু পড়তে, আরেকটু খেতে, ওর বন্ধুদের সঙ্গে আরেকটু গল্প করতে চেয়েছিল...আরও কত্তো কিছু করতে চেয়েছিল ও! কিন্তু সে সব কিছুর স্বাদ নেওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছিল ওর জীবন। ইচ্ছেগুলো, স্বপ্নগুলো সত্যি করার সুযোগ পাবে না বলে কত যে কষ্ট হতো সাদাকোর...!" সাদাকো সাসাকির দাদা মাশাহিরো যখন লেখেন এমন কথা লেখেন, তখন তাঁর শব্দের ভাঁজে ভাঁজে দেশকালসময়সীমানা সব পেরিয়ে আবারও কেমন যেন একাকার হয়ে যায় বড়োদের বাঁধিয়ে দেওয়া প্রতিটা অনর্থক যুদ্ধ আর অনন্ত হিংসায় বলি হতে থাকা অগুনতি অগুনতি শৈশব-কৈশোর! আজ ক'ঘন্টা পর আমাদের অনেকেই যখন উৎসবের রাজপথে হাঁটব, সেসময় আগুনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিছু দূর এক দেশে বেবাক থেঁতলে যাবে আরও কিছু অমলিন প্রাণ! আজকের এই লেখা অসময়ে ঝরে যাওয়া বা যেতে থাকা পৃথিবীর এমন প্রতিটি প্রাণের জন্য... ... ...
এটা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান তো নয়। এ তো সবাই করতে পারে। যে কোন ধর্মের লোক তার নিজের মতো করে তার পূর্বপুরুষদের কথা মনে করতেই পারে। আমাদের পূর্বপুরুষরা তৃপ্তি পাবেন কিনা জানি না, আমি তো নিশ্চিত পাব। ... ...
যুদ্ধ হচ্ছে, যুদ্ধ হবেও । আজকাল দু'তরফের সমর্থনে অজস্র যুক্তি-কুযুক্তি-প্রতিযুক্তি শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে সব গুলিয়ে যায়! এলোমেলো মনের ভেতর আজকের নিহত-আহত-ক্ষতিগ্রস্ত প্যালিস্টিনীয় আর ইসরায়েলি শিশুদের আতঙ্ক আর অসহায়তার সঙ্গে কেমন করে যেন একাকার হয়ে যায় কোন ১৯৪৭ এর দেশভাগজনিত দাঙ্গায় সব হারানো শিশুদের কান্না আর অনপনেয় ক্ষতবোধ। ইতিহাস বা রাজনীতির ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়ের সমস্ত হিসেব নিকেশের বাইরে, যুদ্ধ-দাঙ্গা-সন্ত্রাসের ভাগাভাগি ভেঙে, দেশ কাল সময়ের সমস্ত গন্ডি পেরিয়ে অগুনতি-অগুনতি অপাপবিদ্ধ, অনপরাধ শিশুর দেহমনের অন্তহীন যাতনার অন্ধকারই জীবনের বুকে মৃত্যুর মতো একমাত্রতম সত্যি হয়ে জেগে থাকে। আর কিচ্ছু নয়।। ... ...
সেই কোন মহাকাব্যের যুগের যশোমতী হয়ে রানি সুগন্ধা, দিদ্দা কিংবা কোটার প্রশ্নাতীত ঔজ্জ্বল্যের সামনে কিছুটা আবছা হয়ে থাকা সেই সকল সফল নারীদের কাহিনীও সংক্ষেপে ধরা রইল এই লেখাটির মধ্যে….।মহাকাব্যের যুগের রানি যশোবতী থেকে সুগন্ধা, দিদ্দা, কোটা রানির প্রশ্নাতীত ঔজ্জ্বল্যের সমুখে বিস্মৃতা মধ্যযুগের গুল খাতুন আর বিবি হাউরাদের মতো একের পর এক দাপুটে মেয়ে কখনও নিজেরাই সিংহাসনে বসে, কখনও বা কোন রাজার সহযোগিনী হিসেবে এক সুদীর্ঘ সময়কাল জুড়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজনীতিকে। পড়তে গিয়ে দেখেছি, এঁরা প্রত্যেকে একেক জন মূর্তিমতী আনকোরা আবিষ্কার। সব দিক থেকেই বড্ড আকর্ষণীয় এই মেয়েদের কথা সবার জন্য লেখার ইচ্ছেও ছিল অনেকদিন। যতটুকু খোঁজ পেয়েছি, তার বাবদে বলতে পারি মহারানি দিদ্দা সম্পর্কে খবরের কাগজে লিখিত ফিচার আর ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ভয়ানক বাংলা অনুবাদ ব্যতিরেকে আমাদের মাতৃভাষায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের কাশ্মীরি রাজনীতির অবিস্মরণীয় মেয়েদের বিষয়ে সম্ভবত এই প্রথম লেখা হল। ... ...
২৬ বছর বয়সকালে নিজের কাশ্মীর রাজ্যের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য "চরণহীনা" দিদ্দাকে বিবাহ করলেন কাশ্মীররাজ ক্ষেমগুপ্ত। কাশ্মীরে এসে দিদ্দা যে দিকে তাকান, দেখেন তিনি কেবলই শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত। দেখেন অত্যাচারী, দুশ্চরিত্র ক্ষেমগুপ্তের বকলমে রাজপাট চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী তথা ক্ষেমগুপ্তের অন্যতমা রানি চিত্রলেখার পিতা ফাল্গুন। কিন্তু প্রবল বুদ্ধিমত্তার জোরে দ্রুত বাকি সকলকে সরিয়ে ক্ষেমগুপ্তের ওপর নিজের একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করলেন দিদ্দা। কাশ্মীরি রাজনীতিতে শুরু হল "দিদ্দার যুগ''...। ... ...
যশোবতীর পরে কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেছিলেন রানি সুগন্ধা, রানি দিদ্দা, রানি কোটা। এর পাশাপাশি নাবালক রাজাদের অভিভাবিকা হিসেবে স্বাধীনভাবে রাজ্যচালনা করেছিলেন আরও অনেক হিন্দু এবং মুসলমান নারীও। তবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের স্বীকৃতি সত্ত্বেও বিতস্তা তীরের জটিল রাজনীতিতে নারীদের এগোনোর পথ সুগম হয়নি কোনদিন। তবু তাঁরা দৃপ্তপদে এগিয়েছেন আর সকল প্রতিস্পর্ধার মুখোমুখি নির্ভীক দাঁড়িয়ে বুঝে নিয়েছেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার। যশোবতীর বহু শতাব্দী পরেকার হলেও উৎপল বংশের রানি সুগন্ধার কাহিনীও বলে যায় সেই একই কথা…। ... ...
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, "কাশ্মীরের ভূমি স্বয়ং পার্বতী। কাশ্মীর রাজ হলেন শিবের অংশ। রাজকর্তৃত্ব মন্দ হলেও মঙ্গলকামী জ্ঞানী মানুষের তাঁকে অবজ্ঞা করা অনুচিত। পুরুষের যে চোখগুলি নারীকে সুখভোগ্য পণ্য মনে করে তাঁর দিকে অসম্মানসূচক দৃষ্টিপাত করত, তারাই তাঁকে প্রজাদের দেবীস্বরূপা মাতা হিসেবে গ্রহণ করল।" এই উক্তির সূত্র ধরে আসুন এই লেখায় আমরা ভূস্বর্গ কাশ্মীরের মহাপরাক্রমশালিনী শাসিকাদের কাহিনী পাঠ করে দেখি। ... ...
কিন্তু গপ্পো না হলেও, মোটা দাগের ঘটনাবলীও কম রোমাঞ্চকর নয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ৫৪ সালেই ঘটে আরও এক কান্ড। সিনেমা নিয়ে নেহরুর ধারণা এবং তাতে সোভিয়েত মদতের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর আগে থেকেই সেই ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিনেমা হবে, কিন্তু তাতে শ্রমিক-কৃষক সংক্রান্ত 'বাম' ধারণা গুঁজে দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে এই ঘরানার প্রথম দিকের একটা ছবি রিলিজ করেছিল, যার নাম আওয়ারা। এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন, খাজা আহমেদ আব্বাস, যিনি একাধারে আইপিটিএর লোক, নেহরুর খুবই ঘনিষ্ঠ, ক্রুশ্চেভের সঙ্গে ভুল রাশিয়ানে আড্ডা দেন, গ্যাগ্যারিনে মহাকাশ থেকে ফিরলে যেকজন প্রথম দেখা করেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং সর্বোপরি ৪৮ সালের পার্টি-লাইনে বিরক্ত - এই প্রকল্পের পক্ষে আদর্শ। তিনি এবং রাজকাপুর দুজনেই "আওয়ারা" সিনেমাটাকে "প্রগতিশীল" বা "ভবঘুরে জন্মায়না, তৈরি করা হয়" জাতীয় আখ্যা দিয়েছিলেন সে সময়। এবং বস্তুত চিনে এক ঝটিকা-সফর সেরে এসে আব্বাস এই সিনেমায় হাত দেন। এর পরের বছরই তিনি বানান রাহি। আওয়ারা ছিল হিট এবং রাহি ফ্লপ। ... ...
কেশকর তো রেডিও থেকে হিন্দি সিনেমাকে বহিষ্কার করলেন, কিন্তু গ্ল্যামার-শিল্পপতিরা কি ছেড়ে দেবার লোক? খোদ কংগ্রেসেই উল্টোদিকের জোরালো মত ছিল। তার পুরোধা ছিলেন সদাশিব পাতিল। তিনিও মারাঠি, খাস বোম্বের লোক, এবং আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ। পাতিলকে নিয়ে গুচ্ছের কথা শোনা যায়, যেমন, ভারতে 'ব্রিফকেস রাজনীতি'র জনক, বা সিআইএর সরাসরি এজেন্ট। কিছু পরোক্ষ সাক্ষ্যও আছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য বলা কঠিন। সত্য হলেও ব্রিফকেসওয়ালারা তো লিখে রেখে যাবেনা, বা সিআইএ সেইসব নথি খুলেও দেবেনা। যেগুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য, তা হল, তিনি বোম্বের উচ্চকোটি মহল এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। এবং তৎকালীন বোম্বে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। খোদ সিআইএর খুলে দেওয়া নথিতেই একাধিকবার পাতিলকে বোম্বে কংগ্রেসের বস, বা বোম্বের পার্টি বস, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলা অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতের মিল ছিল, এও কার্যপ্রণালী থেকে দেখতেই পাওয়া যায়। ... ...
নেহরুর নীতির রূপরেখা ঠিক কেমন ছিল, আজ এতদিন পরে আন্দাজ করা অসম্ভব। তবে অনেক পরে আশির দশকে রাষ্ট্রীয় দূরদর্শনের সম্প্রচারের ঘরানা দেখে, ব্যাপারটার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায়। সরকারি দূরদর্শনে, সেই সময়েও জনপ্রিয় সিনেমার জন্য বরাদ্দ ছিল সপ্তাহের সামান্য কিছু অংশ। বাকি সঙ্গীত এবং সিরিয়াল, সবাইকেই একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি টপকে আসতে হত। ভাষার প্রশ্নে হিন্দির ভাগ অবশ্য অনেক বেশি ছিল, বস্তুত সার্বজনীন বাধ্যতামূলক হিন্দিশিক্ষার চলই দূরদর্শন থেকে, নেহরু জমানায় হিন্দির এত প্রাধান্যের কথা আদৌ ভাবা হয়নি, সেটা বেতারের কার্যক্রম দেখলেই বোঝা যায়। এবং কেশকরের সময় সিনেমা আর ক্রিকেট মূলত বন্ধ করে দেবার অভিমুখেই এগোনো হচ্ছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ছিল এই, যে, যদিও হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল, পুঁজিপতিদের দেওয়া হয়েছিল খোলা মাঠ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য তৈরিরও কোনো নীতি ছিলনা, আধিপত্যের সূচনাও তখনই হয়েছিল, কিন্তু তার পরেও সেই আধিপত্যের রূপরেখা আজকের মতো করে নেহরু কল্পনা করেননি। বরং তথাকথিত 'আঞ্চলিক' ভাষার সম্প্রচারে জোর দেওয়া হত। 'ভারতীয়' এক বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল সংস্কৃতি এবং সঙ্গীতে। সিনেমাকে করে তোলার ইচ্ছে ছিল জনমুখী। সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি সহই, হিন্দির আধিপত্য সত্ত্বেও, হিন্দি-বলিউড-ক্রিকেট কেন্দ্রিক আজকের যে দানবীয় ব্যবস্থা, তা ভারতের সূচনাবিন্দুতে অকল্পনীয় ছিল। ... ...
৫১ সালের নির্বাচনের অন্যতম বিষয় ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন। নেহরু এবং প্যাটেল সেই সময় সেটা প্রয়োজন মনে করেননি। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই, যেটা প্রথম দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে। তেলুগুদের জন্য পৃথক অন্ধ্র রাজ্যের দাবী ছিল আগেই। কিন্তু কেন্দ্র তাতে রাজি হয়নি। গান্ধিবাদী শ্রীরামালু এই দাবীতে অনশন করেছিলেন, কিন্তু নেহরু-প্যাটেল-সীতারামাইয়ার তৈরি কমিটি, নতুন রাজ্য নির্মাণে অস্বীকৃত হয়। ফলে শ্রীরামালু আবার অনশন শুরু করেন ৫২ সালের অক্টোবর মাসে। এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন ডিসেম্বর মাসে। এর আগে এইভাবে মারা গিয়েছিলেন যতীন দাশ। ... ...