এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪২৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debasis Bhattacharya | ১২ মার্চ ২০২৩ ২৩:২৬517334
  • winklaughcheeky
     
    অন্যদের কথা জানিনা, আমি আছি। ক'দিন ব্যস্ত ছিলুম। 
  • লাকু | 115.187.***.*** | ১২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫২517335
  • ওকে। তবে আবার শুরু হোক 
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ মার্চ ২০২৩ ০০:০৫517336
  • আসলে, অবান্তর তথ্য ও যুক্তির ভিড় দেখলে কিঞ্চিৎ হতাশ লাগে। যুক্তি এগোচ্ছে না, শুধু একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে বুঝতে পারলে যুক্তি-তথ্য-প্রমাণের পরিশ্রমসাধ্য নির্মাণকে পণ্ডশ্রম মনে হয়। যাই হোক, ফিরে আসব। 
  • লাকু | 115.187.***.*** | ১৩ মার্চ ২০২৩ ০১:২৯517340
  • যুক্তি না এগোলে আপনার হতাশ লাগে না হতাশ লাগে যখন আপনার পুঁজিবাদকে ডিফেন্ড করার যুক্তিগুলো হাটের মাঝে উলঙ্গ হয়ে যায়। ভ্যাকসিন এর পোস্টেও তাই হয়েছিল এখানেও শেষে সেটাই হল এবং সেটাই হওয়ার ছিল। কী আর করা যাবে, যুগে যুগে এটাই হয়ে এসেছে 
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ মার্চ ২০২৩ ০২:৩২517341
  • আধুনিকতার খোঁজে,

    আমার শেষ কথাগুলোর জবাব দিতে গিয়ে আপনি যা যা বলেছেন, তার থেকে ছোটোখাটো অপ্রধান মন্তব্যগুলো বাদ দিয়ে প্রধানগুলো বেছে একটা ওয়ার্ড ফাইলে কপি-পেস্ট করে দেখলাম, প্রায় আড়াই হাজার শব্দ! তাতে বিস্তর তথ্য আমদানি করেছেন, এবং অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু, বললে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন না যে, তার প্রায় সবই সম্পূর্ণ অবান্তর। আমার মনে হচ্ছে, আপনি ঠিক কী প্রমাণ করতে চান, এবং ঠিক কোন কোন তথ্য থেকে কোন যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় সে 'প্রমাণ' নির্মিত হতে পারে, সে সব ব্যাপারে আপনি বোধহয় নিজে খুব একটা স্বচ্ছ নন। 

    ওই আড়াই হাজার শব্দের অনেকটাই আপনি খরচা করেছেন ফ্যাসিবাদের এক শিশুপাঠ্য মার্ক্সীয় ব্যাখ্যান রচনায়। এই ব্যাখ্যানটি পড়ে হাসব না কাঁদব, বুঝলাম না। এটি আমাকে শোনানোটা কেন আপনার কাছে জরুরি মনে হল, তার কারণ সম্ভবত এই যে, আপনি ভেবেছেন আমি আপনাকে বিজেপির সমর্থক বলে দোষারোপ করছি। মোটেই করিনি, আপনি বিজেপির সমর্থক নন এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। আমি আশা করেছিলাম, আপনার যুক্তি আপনাকে দিয়ে বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতা করিয়ে নিচ্ছে --- এইটা আপনাকে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারলেই বুঝি আপনি সজাগ হয়ে ভাববেন, তাইতো, আমি যা নই তা মনে হচ্ছে কেন, তবে কি আমার যুক্তিতে কোথাও ভুল হচ্ছে? হায়, কোথায় কী, আপনি তার বদলে বিজেপি-সমর্থনের দোষ খণ্ডাতে ব্যস্ত হয়ে ফ্যাসিবাদের এক শিশুপাঠ্য মার্ক্সীয় ব্যাখ্যান ফেঁদে বসলেন! কী কাণ্ড! আরে, আমি আপনাকে বিজেপি সমর্থক সাব্যস্ত করাতে, বা আপনার সেই রকম মনে হওয়াতে, আপনার যে খুব খারাপ লেগেছে, এইটা একবার মুখ ফুটে বলে দিলেই তো সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিতাম!
     
    আপনার পরিষ্কারভাবে বোঝা প্রয়োজন, আপনি বিজেপি সমর্থক কিনা সেটা এখানে এক অতি গৌণ প্রশ্ন। যদি সত্যিই তা হয়েও থাকেন, তাতে আপনার সব কথা আপনা থেকে মিথ্যে হয়ে যাবেনা, ঠিক যেমনটি, বিজেপি-সমর্থনের অভিযোগ থেকে মুক্ত হলেই আপনার সব কথা আপনা থেকে সত্যিও হয়ে যাবেনা। আপনি রাজনৈতিকভাবে যারই সমর্থক হোন, আপনার প্রতিটি কথার সত্যাসত্য বা যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতার আলাদা প্রমাণ লাগবে।
     
    ফ্যাসিবাদের যে ব্যাখ্যানটি হাজির করেছেন, সেটা তো এমনিতে মন্দ না। এই যে ধরুন, শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে লোকজন পুঁজিপতিদের প্রতি খেপে উঠছে, আর পুঁজিপতিরা চালাকি করে ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ঘৃণাকে জাগিয়ে তুলে নিজেদের দিক থেকে ঘৃণাটাকে সরিয়ে অন্য একটা শত্রু খাড়া করে দিচ্ছে --- চমৎকার ব্যাখ্যা সন্দেহ নেই। কিন্তু, এত চমৎকার ব্যাখ্যা করলেন, আর এই সোজা জিনিসটা দেখতে পেলেন না যে, ওই ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিথ্যে ও অযৌক্তিক ঘৃণাটা আগে থেকেই নিশ্চয়ই সাধারণ লোকের ছিল, না হলে পুঁজিপতিরা সেটা কাজে লাগাতে পারত না! ওই প্রাচীনকাল থেকে বয়ে আসা মিথ্যে আর অযুক্তিকেই তো বিজ্ঞান আর যুক্তি দিয়ে কমব্যাট করতে হয়, যাতে মানুষে মানুষে অকারণ ঘৃণা আর বিদ্বেষ কমে যায়, লোক ঠকানো ঘৃণা আর হিংসার রাজনীতির পরিসর কমে আসে। একটু কষ্ট করে ভেবে দেখবেন, ব্যাপারটা একদম সহজ। সোজা জিনিসটাকে অবান্তর প্রসঙ্গ টেনে জটিল করেন কেন খামোখা?
     
    আপনার কাছে অনুরোধ, এই ‘আমার দোষ নয়, ওর দোষ’ মার্কা আর্গুমেন্টের শিশুসুলভ প্যারাডাইম থেকে বেরিয়ে আসুন, নৈর্ব্যক্তিক ও  প্রাপ্তবয়স্ক-সুলভ সত্য-অসত্য, যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতা ভিত্তিক প্যারাডাইম-এ ঢুকে পড়ুন। যত তাড়াতাড়ি এটা পারবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনার আর্গুমেন্ট অর্থহীনতার দশা থেকে মুক্ত হয়ে উঠবে।

    ডিটেনশন ক্যাম্পের প্রসঙ্গটি আপনার অযৌক্তিক আর্গুমেন্টের এক আদর্শস্থানীয় দৃষ্টান্ত। আপনি ডিটেনশন ক্যাম্প যত দেখেছেন সবই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে দেখেছেন, তাই পুঁজিবাদকেই তার ‘কারণ’ ঠাউরেছেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি টাকওয়ালা যত লোক দেখেছেন তার সবই নাকওয়ালাও, সেখান থেকে থেকে কি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, নাকই টাকের কারণ? নিশ্চয়ই আসেন না, কারণ আপনি জানেন যে এমন যুক্তি হাস্যকর, যেহেতু এমন লোকও বিস্তর আছে যাদের নাক আছে অথচ টাক নেই। 
     
    ঠিক একইভাবে এবং একই কারণে, পুঁজিবাদ আর ডিটেনশন ক্যাম্পের সমীকরণও হাস্যকর। আপনি বলতে পারেন, কেন মশায়, ডিটেনশন ক্যাম্পের লোকেদের দিয়ে নামমাত্র খরচে উৎপাদন করিয়ে নেওয়া যাবে, ফলে সেটা করার জন্য পুঁজিপতিদের উৎসাহ তো থাকবেই! হ্যাঁ, তা থাকতেই পারে, কিন্তু একই জিনিস টাকের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। যেমন টাকে চুল গজানোর ওষুধ বিক্রি করার জন্য মিথ্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতে পারে, এবং তার জন্য টেকো লোকেদেরকে ব্যবহার করা হতে পারে। 
     
    টাকের সঙ্গে পুঁজির ঘৃণ্য গোপন আঁতাতটা দেকেচেন্তো? আমিও দেকিচি মোয়ায়! কিন্তু, তার ওপর ভিত্তি করে কি এতদুর সিদ্ধান্ত টানা ঠিক হবে যে, পুঁজিবাদই টাকের কারণ? 
     
    অনুগ্রহ করে ভেবে দেখবেন একটু!
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ মার্চ ২০২৩ ০৪:১৮517343
  • আধুনিকতার খোঁজে,
     
    মানুষের সমাজ-ব্যবস্থা পুঁজিবাদ দিয়ে শুরু হয়নি, আবার, পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার সময়ে হঠাৎ সম্পূর্ণ নতুন এক গুচ্ছ জিনিস আকাশ থেকে পড়ে গোটা পুরোনো সমাজকে এক লপ্তে বাতিলও করে দেয়নি। পুরোনো সমাজ যা দিয়েছে, মূলত সেই জিনিসগুলোকে নিয়েই নতুন সমাজকে চলতে হয়, তার সঙ্গে নতুন উপাদান এবং উদ্ভাবনও থাকে কিছু। পুঁজিবাদ তো আর এ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে না! 
     
    ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত-লিঙ্গ এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধ্যানধারণাগুলো বহু প্রাচীনকাল থেকে বয়ে আসছে, তার রূপ যুগে যুগে পাল্টাচ্ছে, আবার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েও যাচ্ছে। প্রতিটি সমাজই এগুলোকে খানিকটা মোকাবিলা করে, খানিকটা পাল্টে নেয়, আবার তার সঙ্গে এক রকমের সম্পর্কেও আবদ্ধ হয়। বলা বাহুল্য, পুঁজিবাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাইই। পুঁজিবাদ ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত-লিঙ্গ ইত্যাদির সঙ্গে নানা অম্ল-মধুর সম্পর্কে আবদ্ধ, কিন্তু তা থেকে প্রমাণ হয়না যে পুঁজিবাদ এগুলোর সৃষ্টিকর্তা। 
     
    এক সময়ে নবজাতকের কুষ্ঠি তৈরি ও ভাগ্যবিচার করে নানা বিধান দেবার দায়িত্ব ছিল পরিবারের কুলগুরু বা পুরুতমশায়ের, এখন আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা ওভাবে হয়না। এখন আমরা যেভাবে কিছু পারিশ্রমিক দিয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা উকিল বা অ্যাকাউন্ট্যান্টের চেম্বারে গিয়ে পরামর্শ নিই, ঠিক একই ভাবে জ্যোতিষীর চেম্বারেও চলে যাই। অনেকে আবার ভাগ্যগণনা করতে বিজ্ঞানের দোহাই দেয়, এমনকি কম্পিউটারের সাহায্যও নিয়ে থাকে। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের রীতি অনুযায়ীই যে আমরা এসব করি, তাতে তো আর সন্দেহ নেই। কিন্তু, তার ওপর ভিত্তি করে যদি সিদ্ধান্ত করি যে, জ্যোতিষ ব্যাপারটাই আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের সৃষ্টি, তাহলে যে ভুলটা হবে, 'রেস' বস্তুটিকে আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টি বলে দাবি করলে ঠিক একই ভুল হবে। 
     
    'রেস'-এর ধারণাকে উনিশ শতকে যখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা হল, তখন তার যা চেহারা দাঁড়াল সেটা আগে কখনও ছিল না --- তাইই তো হবে --- বলাই বাহুল্য। কিন্তু, ধারণাটিকে আমরা আপত্তিকর বলে মনে করি কেন বলুন তো? তাতে একটি মানব গোষ্ঠীকে অন্য আরেকটির তুলনায় জৈবিকভাবে (এবং সেইহেতু বংশপরম্পরায়) নিকৃষ্ট সাব্যস্ত করা হয়, এবং সেই নিকৃষ্টতা দিয়ে এক গোষ্ঠীর ওপর আরেক গোষ্ঠীর শোষণ ও আধিপত্যকে ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করা হয়, সেইজন্যে তো? 
     
    তাইই যদি হয়, তো নিঃসন্দেহে এ ধ্যানধারণা বহু প্রাচীন, এবং ভারত ও ইউরোপ উভয় জায়গাতেই এর অস্তিত্ব ছিল। আমি ইতিমধ্যে কথা না বললেও একটা লিঙ্ক পোস্ট করে তা পড়ে দেখার অনুরোধ করেছিলাম, তাতে পঞ্চদশ শতকে এ ধরনের ধ্যানধারণার নির্দিষ্ট দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা বোধহয় কেউই পড়ে দেখেননি। যাই হোক, ওটা তো মধ্যযুগের দৃষ্টান্ত, কিন্তু প্রাচীন কালের দৃষ্টান্তও আছে অবশ্যই। ভারতে তাকে যেভাবে ধর্মতাত্ত্বিক সমর্থন জুগিয়ে শক্তপোক্ত সামাজিক দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে তার কোনও জবাব নেই, কিন্তু প্রাচীন গ্রিসেও তার ধারেকাছের দৃষ্টান্ত আছে। হ্যাঁ, দাসত্ব অবশ্যই বংশগত ছিল, ভারতে এবং সর্বত্রই। 
     
    প্লেটো-র রচনায় দুই দার্শনিকের সংলাপে উঠে আসে, ঈশ্বর দার্শনিককে তৈরি করেছেন সোনা দিয়ে, রাজা-রাজড়াদেরকে রুপো দিয়ে, কারিগরদেরকে ব্রোঞ্জ দিয়ে এবং দাসেদেরকে লোহা দিয়ে। অর্থাৎ, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অবস্থান নির্ধারিত হচ্ছে তার শরীরের উপাদানের উৎকর্ষ (বা অপকর্ষ) দিয়ে। এ উৎকর্ষ-বিচার চরিত্রে জৈবিক, বলা বাহুল্য।‌ কল্পনাকে সামান্য প্রসারিত করলেই বুঝতে পারবেন, হিন্দুশাস্ত্রে যেভাবে বলা হয়েছে, ব্রহ্মার মাথা থেকে ব্রাহ্মণ, হাত থেকে ক্ষত্রিয়, পেট থেকে বৈশ্য এবং পা থেকে শূদ্র --- প্লেটোর সংলাপের ওই অংশটি তার খুবই কাছাকাছি। 
     
    এ রকম অনেক পাবেন, এবং এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা আছে। 
  • guru | 103.2.***.*** | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১০:৫৩517350
  • @দেবাশীষ বাবু @আধুনিকতার খোঁজে 
    @রাধার কানাই @অন্যানোরা 
     
                       অনেক ধন্যবাদ খুব সুন্দর ভাবে অনেক কিছু নতুন প্রকাশ করার জন্য | আসলে অনেকদিন নানা কারণে এই ফোরামে আসা হচ্ছেনা |
     
    এই মুহূর্তে আসলে আমি আধুনিকতার সঙ্গে অর্থনীতির বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে ভাবছি | মূল্যবৃদ্ধির কারণে কি আধুনিকতা প্রভাবিত হতে পারে ? কি ভাবে হবে ?? মূল্যবৃদ্ধির কারণে কি মানুষের সামাজিক সম্পর্ক তারতম্য হতে পারে ?
     
    দাসপ্রথা ও বর্ণব্যবস্থা নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে | মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে কি বর্ণব্যবস্থা নামক অমানবিক ব্যাপারটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ?
     
      তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে আধুনিকতার ক্ষেত্রে তারতম্য বৈষম্য এইসব নিয়েও ভাবছি | নীলাকান্তন স্বামীর "উত্তর বনাম দক্ষিণ ভারতের" উপর বইটি নিয়ে ভাবছি | একটি ইসু যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটি হলো সাব ন্যাশনালিজম | নীলাকান্তন স্বামীর মতে যেহেতু কোস্টাল ভারতে বিশেষ করে কেরল তামিল নাড়ু এইসব এলাকাতে সাব ন্যাশনালিজম বেশি সেহেতু সেখানে আধুনিকতার প্রভাব খুবই বেশি গোবলয়ের সঙ্গে তুলনা করলে |
     
    অপনাদের এইসব ব্যাপার নিয়ে মতামত জানতে পারলে খুবই ভালো হতো | কিছু তথ্য সারণি দিলে আরো ভালো হয় ডিবেট করা জন্য |
  • guru | 103.2.***.*** | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১১:০০517351
  • @দেবাশীষ বাবু @আধুনিকতার খোঁজে 
    @রাধার কানাই @লাকু @অন্যানোরা 
     
    নীলাকান্তন স্বামীর "উত্তর বনাম দক্ষিণ ভারতের" উপর বইটি নিয়ে এইখানে খুব সুন্দর একটি মনোজ্ঞ youtube লিংক শেয়ার করলাম | অনেক তথ্য আছে এখানে যেইগুলো খুবই ইন্টারেষ্টিং | আপনাদের এই নিয়ে মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম |
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:০৮517353
  • এই বইটি পড়া নেই। ফলত, এ ব্যাপারে তেমন অর্থপূর্ণ কিছু বলতে পারব বলে মনে হয়না। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২০ মার্চ ২০২৩ ০৪:০৮517643
  • দেবাশিসবাবু, আপনি আরও কিছু বক্তব্য রাখবেন বলেছিলেন মনে আছে। শোনার অপেক্ষায় আছি কিন্তু।
  • Debasis Bhattacharya | ২০ মার্চ ২০২৩ ১২:০৮517658
  • কেউ জবাব দিচ্ছেন না তো। বলার তো অনেক কিছু আছেই। যাই হোক, চেষ্টা করছি শেষ পর্বটা তাড়াতাড়ি লিখে ফেলে আপলোড করে দেবার। ইতিমধ্যে আপনার কিছু প্রশ্ন থাকলে, এখানে রাখুন। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ১২:২৪517740
  • @দেবাশিস দা , পুরো আলোচনাতে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছিল সেগুলো অন্য আলোচনার স্রোতে চাপা পড়ে গেছে। আমি এককাজ করি , দেখি সেগুলোকে একজায়গায় করা যায় কিনা। কারণ , সেই প্রশ্নগুলো অন্য অনেকে করলেও ওগুলো জানার ইচ্ছে আমারও 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৫517742
  • [১] 
     
    বিষয়ের তালিকাটা এবার নামিয়ে দিই, সবাই একমত হতে পারেন কিনা দেখুন।
     
    (১) আধুনিকতা কি, প্রাগাধুনিক সময়ের তুলনায়, বেশির ভাগ মানুষকে আগের চেয়ে বেশি বিপন্ন করে তুলেছে, অতি অল্প কিছু মানুষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ধনী ও ক্ষমতাশালী বানাবার বিনিময়ে?
     
    (২) আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের মধ্যে কি কোনও ক্ষমতা-তান্ত্রিক হিংস্রতা অন্তর্নিহিত আছে?
     
    (৩) ঔপনিবেশিকতা, যুদ্ধ, গণহত্যা, দাস-ব্যবসা, পরিবেশীয় বিপর্যয় এবং ইউরোপ-কেন্দ্রিকতা কি আধুনিকতার অনিবার্য ও অপরিহার্য উপাদান?
    ( এটা দেবাশিসদা বলবেন বলে স্যাম আপ করে রেখেছিলেন।  )
     
     
    [২] 
     
    ভক্তি আন্দোলন এবং লোকায়ত দর্শন নিয়ে চর্চা করতে হবে বইকি! কিন্তু, আমার একান্ত ধারণা, সেটা কোনও মতেই আধুনিক বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদির বিকল্প নয়। বস্তুত, এই দ্বিতীয়োক্ত ধারণাগুলোর সঙ্গে পরিচয় না থাকলে প্রথমোক্ত দুটির তাৎপর্যই বোঝা যাবেনা, ঠিক যেমনটি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হবার আগে আমরা নিজেরাই ওগুলোর গুরুত্ব বুঝতাম না। 
     
    তবে, এসব কথায় পরে আসছি, আগে তো আপনার আগের কথাগুলোর জবাব দিই! 
    ( এটা নিয়েও দেবাশিসদা কিছু বলবেন বলেছিলেন )
     
     
    [৩] 
    দেবাশিসবাবু, জনসংখ্যার অপটিমাইজেশন প্রয়োজন কিনা সেই বিষয়ে আপনার বিস্তারিত মতামত শুনতে চাই।
    (&/ এর প্রশ্ন )
     
    [৪]
     
    দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নিয়ে আমার বক্তব্য যদি বলতেই হয়, তো সবিস্তারে বলতে হবে। একে তো আমি এই মুহূর্তে আসন্ন বইমেলার কারণে ভয়ঙ্কর ব্যতিব্যস্ত, আর তার ওপরে আমার ধারণা, এ আলোচনায় এখন পুরোপুরি ঢুকে গেলে তাতে মূল আলোচনাটি ঘেঁটে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। ফলত, একটু দ্বিধায় আছি। দেখা যাক। 
     
    (এটা আমার প্রশ্ন ছিল , দেবাশিসদা অবকাশ হলে বলবেন বলেছিলেন। )
     
     
    [৫] 
    ১৯৮০ কি ১৯৮১ থেকে ২০০০ ---মোটামুটি এই সময়টা, এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাই বলুন, বিজ্ঞানচেতনাই বলুন, অসাম্প্রদায়িকতার চর্চাই বলুন, এমনকি সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে নিতান্ত দরিদ্র মানুষের আত্মমর্যাদাবৃদ্ধির চর্চা(অন্যায় সুযোগ নেবো না, খয়রাতি নেবো না, পরিশ্রম করে অর্জন করে খাবো)---এসব যেভাবে হয়েছে, তার পরবর্তীকালে সেটা টানতে যে পারা গেল না সেটা কি অনিবার্য ছিল? মানে কিছুকাল আগে কেউ বললেন এর পরে দুনিয়ার দরজা খুলে গেল, বহু অপর্চুনিটি এল। তাহলে তো শিক্ষাদীক্ষা, বিজ্ঞানচেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা --এইসব বেড়ে ওঠার কথা ছিল! কিন্তু বাস্তবে উল্টোপথের দিকে এরকম ঠেলা খেল কেন? এইরকম এত কুসংস্কার, এত জাতপাত হিন্দুমুসলমান, অজস্র অনলাইন অফলাইন গ্রুপে গ্রুপে রোয়াকে রোয়াকে এইসব নিয়েই দিনরাত গুলজার চলছে ---এইরকম একটা জিনিস কী করে সম্ভব হয় ওই অতখানি সাধনার যুগের পরে?

    (এটা &/ এর প্রশ্ন , কিন্তু এটা নিয়ে দেবাশিসদার মতামত জানতে আমিও ভীষণ আগ্রহী )
     
     
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৬517743
  • স্যাম আপ -->সাম আপ
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪২517744
  • @গুরু বাবুর অনেকগুলো প্রশ্নই বাকি ছিল , তাই ওগুলো আলাদা করে দিচ্ছি। 
     
    [৬] 
    "আধুনিক রাষ্ট্র নানা বিচিত্র স্বার্থে ধর্মের সাথে আপোস করে থাকে, এবং ধর্মকে ব্যবহারও করে থাকে। এক্ষেত্রেও যদি তেমন দরকার পড়ে, করতে পারে না তা নয়। তবে, তেমন দরকার পড়বার কথা না। ধর্মের দোহাই না দিলে জন্মহার বাড়ানো যাবে না, অবস্থা বোধহয় এতটা খারাপ নয়। অন্তত, সব জায়গায় নয়।"
     
    আমি খুব খুশি হবো যদি আপনি একটি উন্নত আধুনিক দেশের উদাহরণ দিতে পারেন যেইখানে ধর্মের সাহায্য না নিয়ে জন্মহার বাড়ানো হয়েছে | আমার সামনে ইসরায়েলের উদাহরণ আছে যেখানে ধর্মবিশ্বাস বেশি থাকার কারণে এখনো জন্মহার ইউরোপীয় দেশগুলোর থেকে অনেক বেশী |  আপনি যদি অন্য কোনো উদাহরণ দেখতে পারেন যেখানে কোনো সেক্যুলার দেশ ধর্মকে ব্যবহার না করে জন্মহার বাড়াতে পেরেছে আমি খুবই খুশি হবো |
     

     
     
    https://lawliberty.org/forum/the-fecundity-of-faith/
     [৭] 
    আচ্ছা বর্তমান সময়ের পার্স্পেক্টিভে বাংলাতে কল্পবিজ্ঞান গল্পের কোন কোন থিম আপনার মনে হয় প্রাসঙ্গিক হতে পারে ?
     
                                 আমার তো মনে হয় ডিস্টোপিয়া ও প্যারালাল ইউনিভার্স এই দুটো থিম এখন খুবই প্রাসঙ্গিক | আমরা যেহেতু এর আগে ভারতে বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করেছি অনেকটাই কাজেই আমার মনে হয় ডিস্টোপিয়া খুব প্রাসঙ্গিক একটি থিম হতে পারে | আপনার কি মনে হয় এই ব্যাপারে ?
     
    [৮] 
     দেবাশিসবাবু আমি কিছু তথ্য পেয়েছি যেহেতু তা ভারতের রাজ্য ভিত্তিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের উপরে নির্ভরশীল |
    সারণি ১ 
     
    অন্ধ্রপ্রদেশ (1.7) কেরালা (1.8) তামিল নাড়ু (1.8) ওডিশা (1.8) পাঞ্জাব (1.6) পশ্চিমবঙ্গ (1.6) মহারাষ্ট্র (1.7) কর্ণাটক 1.7)
     
    সারণি ২ 
    বিহার (3) উত্তর প্রদেশ (2.6) রাজস্থান (2) মধ্যপ্রদেশ (2) 
     
    আমার সারণি ১ রাজ্যগুলো ভারতে অলরেডি জন্মহার নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পেয়েছে কিন্তু সারণি ২ গোবলয় রাজ্যগুলো এখনো জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করেনি | কিন্তু আগামী কয়েকবছরে যেহেতু সারণি ২ গোবলয় রাজ্যগুলো জনসংখ্যার জন্য দিল্লিতে বেশি সংখ্যক MP পাঠাতে পারবে কাজেই তারাই দেশের সমস্ত রিসোর্সে ও পলিসি নিয়ন্ত্রণ করবে |
     
    সারণি ১ রাজ্যগুলোকে মোটামুটি ভারতীয় নিরিখে কিছুটা আধুনিক বলা যেতে পারে কিন্তু সারণি ২ গোবলয় রাজ্যগুলো তাদের যেহেতু দিল্লীতে অনেক বেশি প্রভাব কাজেই তারা চাইলেই ভারতের কিছুটা আধুনিকতা অগ্রসর রাজ্যগুলোকেও তাদের রিগ্রেসিভ ও নেগেটিভ ইনফ্লুয়েন্স ছড়িয়ে দিতে পারে যেমন আমরা বর্তমানে কর্নাটকে টিপু সুলতান কে নিয়ে বিজেপি অপপ্রচারের ক্ষেত্রে দেখতে পারছি | আমার মতে এই প্রবণতা আরো বাড়বে ভবিষ্যতে |
     
    কোলকাতাতে অলরেডি আমরা জোড়াসাঁকো এলাকাতে রাজস্থানি দেবতা খাটু শ্যামের জন্মদিন পালন ও সেন্ট্রাল মেট্রো এলাকাতে অবাঙালী রানা প্রতাপের মূর্তি দেখছি যেটি আমি মনে করি সর্বতো ভাবেই আধুনিকতার পরিপন্থী | তবে কি ডেমোগ্রাফিক কারণে  বাংলাতে আধুনিকতা গোবলয়ের হাতেই শেষ ?
     
    কি বলেন আপনি দেবাশীষ বাবু ?

    (Guru babur prosno)

    guru,
     
    যেগুলো দিলেন সেগুলো কি জনসংখ্যাবৃদ্ধির চূড়ান্ত হার, নাকি অশোধিত জন্মহার? যদি অনুগ্রহ করে একটু পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করেন, আর, এখানে তথ্যসূত্রের লিঙ্ক দেন বা অন্য কোনও উৎস জানিয়ে দেন, খুব ভাল হয়।
     (debases dar reply)

    জন্মহার নিয়ে কিছু লিংকস আমি নিচে শেয়ার করছি | motamuti সবকটি লিংক এক কথাই বলছে | জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে কাউবেল্ট এর তুলনাতে অনেক কম ভারতের মাপকাঠিতে প্রগতিশীল আধুনিকতার দিকে অগ্রসর রাজ্যগুলো যেমন কেরালা;তামিলনাড়ু পাঞ্জাব বাংলা ইত্যাদি |
     
    https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_states_and_union_territories_of_India_by_fertility_rate
    https://www.indiabudget.gov.in/economicsurvey/doc/stat/tab818.pdf
    https://www.findeasy.in/indian-states-by-fertility-rate/
    https://timesofindia.indiatimes.com/india/in-7-charts-indias-fertility-rate-drops-to-2-0-according-to-latest-national-family-health-survey/articleshow/91373789.cms
    https://rbidocs.rbi.org.in/rdocs/Publications/PDFs/13T_1911202227C0613B6D4A4DA9879BA0C0A991F59A.PDF
     
                      আমি বর্তমানে আর এস নীলাকান্তন এর লেখা "নর্থ vs সাউথ " বইটি পড়ছি | এখানে অনেক সুন্দর তথ্য আছে |
    আমি চেষ্টা করবো ভবিষয়তে এর থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য শেয়ার করতে |
     
                        কয়েকটি বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি |
     
    ১ | কেরালা;তামিলনাড়ু এইসব রাজ্যগুলো আধুনিকতার দিক থেকে দেখলে যেমন নারীশিক্ষা ফিমেল লেবর পার্টিসিপেশন রাতে শিশু পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্য বিশেষতঃ যেমন কাউবেল্ট এর থেকে অনেক এগিয়ে | এইব্যাপারটির কারণ কি কি ? তবে কি পশ্চিমী আধুনিকতা আসলে কাউবেল্ট কোনোদিনই মেনে নেবেনা যেইভাবে কেরালা;তামিলনাড়ু মেনে নিয়ে এগিয়ে গেছে ? কারণ কি ?
    ২ | পশ্চিমবঙ্গে ৯০ দশকের পর থেকেই আধুনিকতার মনোভাবে ভাটার টান যা তাকে সামাজিক ও আর্থিক ভাবেও অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে অথচ দেশভাগের সময়ে পশ্চিমবঙ্গের আধুনিকতার দিক থেকে ও আর্থিক প্রগতির দিক থেকে বর্তমানের কেরালার সমকক্ষ ছিল | এর কারণ কি ? আমার মনে হয় এই প্রশ্নটির আলোচনা করলে আমরা অনেকটাই এগিয়ে যাবো আমাদের আধুনিকতা নিয়ে আলোচনাতে |
    | বর্তমানে হয়তো সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ব্যাপার যেটি সেটি হচ্ছে যে কাউবেল্টএর দিল্লীর গদির উপরে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ যিহেতু তার ডেমোগ্রাফিক তাকে অনেক বেশি MP দিয়েছে | এখন এই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাউবেল্ট তার মতকরে একটি ন্যারাটিভ তৈরী করছে বাদবাকি আধুনিক ভাবে অগ্রসর রাজ্যগুলোর জন্য | আমরা এখন দেখছি কর্ণাটকের মতো উন্নত রাজ্যেও আসন্ন নির্বাচনে মূল ইস্যু চাকরী স্বাস্থ্য দুর্নীতি পলিউশন নয় টিপু সুলতান !!!! কাশ্মীর বা আসামে ২০১৯ এর পরে কি হচ্ছে আমরা সবাই জানি | orthat এখন কাউবেল্ট তার ডেমোগ্রাফিককে হাতিয়ার করে দিল্লির গদি নিরঙ্কুশভাবে ছিনিয়ে নিয়ে বাদবাকি অগ্রসর রাজ্যগুলোকেও একটা হেজিমনি চাপিয়ে দিতে চায় | এটাকে আধুনিকতার খোঁজে হয়তো "ব্রাহ্মীনিক কালচারাল হেজিমনি " বলবেন আমি বলি "হিন্দিসেন্ট্রিক কালচারাল কলোনিয়ালিজম " |  
    অর্থাৎ এইদেশে আধুনিকতা পুরোপুরি মুছে যেতে বসেছে কাউবেল্টএর আধিপত্যবাদের জন্য | তাহলে কি আমাদের আধুনিকতা নিয়ে আশাবাদের আদৌ জায়গা আছে ? 
     
    এই উপরের বিষয়গুলোতে আপনার মতামত জানার অপেক্ষাতে রইলাম | আপনি সময় নিয়েই গুছিয়ে  লিখুন | আমার  কোনো তাড়াহুড়া নেই |
     
    | আরেকটি জিনিস মাথাতে এলো | আচ্ছা ৯০ দশকের পর থেকেই কাউবেল্টএর "হিন্দিসেন্ট্রিক কালচারাল কলোনিয়ালিজম " যেটি আমরা ছোটবেলাতে দূরদর্শনে রামায়ণ মহাভারত দেখা থেকে শুরু করেছি উপলব্ধি করতে , কি বাংলাতেও যে আধুনিকতার অনুসন্ধিৎসুতার যে ঘরানাটি ছিল তাকে চিরতরে নির্মূল করে দিয়েছে ? অর্থাৎ ভারতের বর্তমানে যে মেইনস্ট্রিম ন্যারাটিভ অর্থাৎ "হিন্দিসেন্ট্রিক কালচারাল কলোনিয়ালিজম " সেটি পশ্চিমবঙ্গেও কি বাঙালির নিজস্ব অনুসন্ধিৎসুতার সংস্কৃতিকেও গ্রাস করেছে যার ফলেই কি এই বাঙালির আধুনিকতার চেতনায় পতন যেটি আপনি উল্লেখ করেছেন ?
     
    যেমন ধরুন আপনি হয়তো ছোটবেলাতে রাদুগা বা ভস্তকের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী পড়ে বেড়ে উঠেছেন কিন্তু এখন বাচ্চারা মোবাইলে ছোটা ভীম দেখে বেড়ে উঠেছে| এইধরণের পরিবর্তনের ফলেও কি বিঘ্নিত হচ্ছে আধুনিকতার চেতনা ?

    (tarpor abar guru babur reply . tarpor a rei alochona ta egoyni)
     
    [৯] 
    এই মুহূর্তে আসলে আমি আধুনিকতার সঙ্গে অর্থনীতির বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে ভাবছি | মূল্যবৃদ্ধির কারণে কি আধুনিকতা প্রভাবিত হতে পারে ? কি ভাবে হবে ?? মূল্যবৃদ্ধির কারণে কি মানুষের সামাজিক সম্পর্ক তারতম্য হতে পারে ?
     
    দাসপ্রথা ও বর্ণব্যবস্থা নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে | মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে কি বর্ণব্যবস্থা নামক অমানবিক ব্যাপারটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ?

     
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৫517745
  • @দেবাশিসদা 
     
    যেকটা প্রশ্ন বা আলোচনা করবেন বলে বাকি ছিল , কিন্তু আলোচনার ফ্লো তে আর হয়নি সেগুলো একজায়গায় করে দিলাম। আপনি অবকাশ পেলে ধীরে ধীরে হলেও এগুলোর ওপর কিছুটা আলোকপাত করতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ সকলকে। 
  • &/ | 107.77.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৬517759
  • অনেক ধন্যবাদ রা কা।  প্লীজ আলোকপাত করুন দেবাশিসবাবু 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫০517760
  • @আধুনিকতার খোঁজে বাবু আলোচনায় আসছেন না ,নাহলে ওঁর বক্তব্যগুলো নিয়েও কিছু বলার ইচ্ছে ছিল।ভালো আলোচনা এগোচ্ছিলেন উনি।  এমনই অবস্থা , ওঁর আলোচনার সময়টাতেই আমি আসতে পারিনি। 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫২517761
  • সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব বলে মনে হয়না, তবে কয়েকটা তো চেষ্টা করবই। বিশেষ করে যেগুলোকে সেন্ট্রাল কোশ্চেন বলে মনে করি। একটু সময় দিন প্লিজ। 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫৫517762
  • রাধার কানাই,
     
    আধুনিকতার খোঁজে হয়ত এখন ব্যস্ত আছেন, হয়ত কিছু পরে আবার এসে পড়বেন। কিন্তু, ইতিমধ্যে যা বলেছেন, সে নিয়ে বলতে অসুবিধে কোথায়? মানে, যদি কিছু বলার থাকে, সেক্ষেত্রে। 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫৭517763
  • ওহো, প্রশ্নগুলোকে আবার গুছিয়ে সামনে হাজির করার জন্য ধন্যবাদটা দিতে ভুলে গেছিলাম। দুঃখিত, রাধার কানাই! 
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.162.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:২২517765
  • অনেকদিন বাদে এসে দেখলাম বেশি কিছু কথা এগোয়নি। অবিশ্যি দেবাশিসবাবু আমাকে দুই খন্ডে কিছু কথা বলেছেন। প্রথম খন্ডে তাঁর অনবদ্য শ্লেষ দিয়ে আর দ্বিতীয় খন্ডে বেশ ভালোবেসে আমাকে বুঝিয়েছেন। (যেমন করে শিশুদের করা হয়ে থাকে আর কি! :-)) কিন্তু দেখলাম কাস্ট-ক্লাস-রেস --সব কেমন ঘেঁটে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে তার মানে কিছু আলোচনা বাকি থেকে গেল। সেটা আপাতত তোলা থাক। আমাকে আবার কিছুদিন নির্বাসনে যেতে হবে। এছাড়া আগে গুরু, &/, আর রাধার কানাইবাবুর উত্তর পাওয়া উচিত। দেবাশিসবাবুর জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে ওঁরা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। আমি না হয় পরে এসে আবার আমার আলোচনাগুলো শুরু করবো।  
     
    পুনশ্চ:পুঁজিবাদ আলবাত টাক পড়ার কারণ মোয়াই। দ্যাকেননিকো? ওই যে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন! 
     
    (গুলামের দেবাশিসবাবুকে অনুকরণের অক্ষম চেষ্টা মাত্র। গুস্তাখি মাফ!! :-))   
     
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:৩২517766
  • @আধুনিকতার খোঁজে বাবু 
    আপনি পুনরায় আলোচনায় ফিরে পেয়ে খুব ভাল লাগল। এর আগে অংশগ্রহণ করতে পারিনি বলে দুঃখিত। আগামীকাল ডিটেনশন ক্যাম্প আর বাস্তুসমস্যা নিয়ে আপনি যা বলেছেন , তার সমর্থনেই কিছু বলার চেষ্টা করব। সাহস করে। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৩517767
  • আপনি পুনরায় আলোচনায় ফিরে পেয়ে --> আপনাকে পুনরায় আলোচনায় ফিরে পেয়ে
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.162.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:৪০517768
  • রাধার কানাইবাবু 
    অবশ্যই বলবেন আপনার কথা। আমরা তো এভাবেই সমৃদ্ধ হই। আমি আগ্রহ নিয়ে থাকবো। আর একটু অনিয়মিত থাকবো হয়তো। তবে এবার থেকে খেয়াল রাখবো। কিছুদিন সত্যিই নির্বাসনে ছিলাম। :-) আর অসামান্য খাটনি দিয়ে সাম আপ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৬517782
  • রুশ বিপ্লবের পর অনেক কিছুই পাল্টেছিল, কিন্তু লেনিনের টাকের বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি, এইটা সবাইকে খেয়াল করতে বলব।
  • guru | 115.187.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:১৭517784
  • @রাধার কানাই 
     
                         অনেক অনেক ধন্যবাদ আবার নতুন করে প্রশ্নগুলো ধরিয়ে দেবার জন্য | একেবারেই ভুলে গেছিলাম | তাছাড়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আর আসা হচ্ছিলো না এই ফোরামে | অন্য নানা জিনিস পড়ছি এখন | এছাড়াও নানা ব্যাক্তিগত কারণে ব্যাস্ত থাকার ফলে বড়ো একটা এই টুইটাতে আস্তে পারছিলামনা |
     
                       @আধুনিকতার খোঁজে / @দেবাশিসবাবু / @রাধার কানাই 
     
                         অনেক সুন্দর আলোচনা হয়েছে অনেক রকম বিষয়ে যেইগুলো বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক | কেউ একজন লিখেছিলেন যে নব্বই দশকের আগে বাংলার মানুষের আধুনিকতা সম্পর্কে ধ্যান ধারণা আর চেতনা একেবারেই অন্য রকম ছিল আর বর্তমানে সেইটাতে একটি বেশ বড়ো রকম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে | আমার নিজের একটি অনুভূতি হচ্ছে যে কোথাও না কোথাও আমাদের বাঙালির জাতীয় সেলফ-এস্টিম (এর ঠিকঠাক বাংলা করতে পারলামনা কেউ করে দিলে ভালো হবে ) খুবই নিচে চলে গেছে এবং নব্বই দশকের পরে এই ব্যাপারটি অনেকটাই বেড়েছে | একারণেই হয়তো বাঙালী আর আগের মতো আধুনিকতার সঙ্গে নিজেকে আইডেন্টিফাই করতেই পারছেনা |
     
      হয়তো আধুনিকতার সংজ্ঞা (আমি এইখানে একটি জার্মান শব্দ ZEITEGIST ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারলামনা আধুনিকতার সংজ্ঞা বোঝাতে , আপনারা নিজস্ব শব্দ প্রয়োগ করতেই পারেন ) আগের থেকে অনেকটাই পাল্টে গেছে | আমাদের ছোটবেলা কেটেছে টিনটিন ও রোভার্সের রয় পড়ে সেখানে এখন ছোটরা পড়ছে ও দেখছে ছোটা ভীম ও এই ধরণের কিছু | কাজেই তাদের কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা অন্য রকম হবেই | যেমন ধরুন আমাদের ছোটবেলাতে টিপু সুলতান নামক ঐতিহাসিক চরিত্রটিকে যথেষ্ট দেশপ্রেমিক বলেই জানতাম কিছু হিন্দি সিরিয়াল যেমন ভারত এক খোঁজের দৌলতে বর্তমানে এই চরিত্রটিরও অনেক রকম পুনর্মূল্যায়ন হয়েছে যেইরকম চিত্রণ আমাদের ছোটবেলাতে ভাবতেও পারতামনা | কে বলতে পারে আজথেকে ১০ ১৫ বছর পরে রামমোহন বিদ্যাসাগরের বা সতীদাহ বিধবা বিবাহের ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন হবে কিনা রাজনীতির পটপরিবর্তন হলেই ! 
     
    আপনাদের মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম | 
     
     
                                 
  • Debasis Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৫517786
  • এই মুহূর্তে এখানে আপনার মূল প্রশ্নগুলো নিয়ে মতামত দিচ্ছি না, তবে জার্মান 'ৎসাইটগাইস্ট' (Zeitgeist) কথাটার বানানটা বোধহয় এইরকম হবে, অর্থাৎ মাঝের 'e'-টা হবেনা। ওটা শুধু আধুনিকতা বোঝায় না, যে কোনও যুগেরই নিজস্ব ধর্ম বোঝাতে কথাটার ব্যবহার হতে পারে। বাংলায় হয়ত 'যুগধর্ম' গোছের একটা কিছু মানে খাড়া করা যেতে পারে। 
     
    জার্মান ভাষায় Zeit মানে সময়, আর geist মানে অনেকটা ইংরিজি 'স্পিরিট'-এর মত, বাংলায় বলা যায় 'সারসত্তা'। তবে, ইংরিজিতে যেমন 'স্পিরিট' শব্দটা ভূত-প্রেত অর্থে ব্যবহৃত হয়, তেমনটা জার্মান ভাষাতেও হতে পারে। আপনি তো হরর সাহিত্য ও সিনেমার সঙ্গে পরিচিত, সেখানে 'পল্টারগাইস্ট' শব্দটা নিশ্চয়ই বহুবার পেয়েছেন। 
  • guru | 115.187.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৬517787
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
     
                          অনেক ধন্যবাদ | আসলে এই শব্দটি খুব সম্ভবতঃ রিচার্ড ডকিন্স এর বইতেই পড়েছি অনেক দিনে আগে | কোন প্রসঙ্গে তা মনে পড়ছেনা এতদিন পরে |
  • Debasis Bhattacharya | ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৫517788
  • হতেই পারে যে, আপনি যেখানে দেখেছেন, সেখানে হয়ত ডকিন্স ওই কথাটা ওই অর্থেই ব্যবহার করেছেন। তবে, এর আভিধানিক অর্থ এই রকম :
     
     
    আমার ধারণা, অন্যান্য অভিধানের এর সমর্থন পাবেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন