এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • গাছপালা অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর পশুপাখি -- বুখাননের চট্টগ্রাম

    ফিরোজ আহমেদ
    আলোচনা | সমাজ | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১৯৫০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • কলোনির গাছপালা, প্রাণীজগৎ নিয়ে কী ধারণা ছিল প্রভুদের? চমৎকার একটি ছবি পাওয়া যাবে এই লেখায়।

    ১.

    বাংলাদেশে আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং জনজাতি বিষয়ে সম্ভবত সবচেয়ে পুরোনো বিবরণ মিলবে ফ্রান্সিস বুখাননের দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় সফরের অভিজ্ঞতায়। ১৭৯৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফ থেকে একটা দায়িত্ব নিয়ে এই অঞ্চলে আসেন তিনি; ডুলি, ঘোড়া, নৌকা আর পদব্রজে ২ মার্চ থেকে যাত্রা শুরু করে ওই বছরেরই ২০ মে পর্যন্ত এলাকাটিতে তাঁর সফরের কাল। বিবরণ শুরু করেছেন লক্ষ্মীপুর থেকে; ফেনি, নোয়াখালী, মিরশ্বরাই, সীতাকুণ্ডু, রামু, চকরিয়া, বাজালিয়া, শুলক, বরকল- এসব নাম দেখি তাঁর বিবরণে। কেউ যদি বাংলাদেশের এই অঞ্চলের বৃক্ষরাজির একটা মানচিত্র করতে চান, কিংবা চান অঞ্চলটিতে বাঙালিদের বসতির সামান্য সূচনার খবর মিলছে এ্মন একটা সময়ে সেখানকার অন্যতর জনগোষ্ঠীগুলোর তত্ত্বতালাশ ও গবেষণা করতে, উইলিয়াম ভ্যান শেনডালের সম্পাদনায় Francis Buchanan in Southeast Bengal (1798): His Journey to Chittagong, the Chittagong Hill tracts, Noakhali and Comilla গ্রন্থটি অবিকল্প।

    প্রকৃতি ও জনগোষ্ঠীর বিবরণের বাইরে এই ভ্রমণ কাহিনীটির অন্য একটি তাৎপর্যও আছে। ফ্রান্সিস বুখাননের সৎ, সরল, জ্ঞানগর্ভ এবং নিষ্ঠাপূর্ণ ও অনাড়ম্বর এই দিনপঞ্জিটি একইসাথে আদিম একটা অরণ্যসঙ্কুল জনপদকে মুনাফার চোখ দিয়ে দেখার অকপট বিবরণও। এই বিবরণটিকে পাঠ করা যেতে পারে প্রকৃতিকে দেখার আধুনিকতাবাদী ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির একটা সূচনা হিসেবে, যার ধারবাহিকতা কম বেশি আজও অব্যাহতই আছে। 

    এই দৃষ্টিভঙ্গিতে যা কিছুকে নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় না, তা অপ্রয়োজনীয়। বৈচিত্রের চাইতে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি করা। এমনকি বৃক্ষ ও প্রাণীকূল এই মুনাফার সামনে উৎপাত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বুখানন ব্যক্তিগতভাবে মানুষ হিসেবে কিন্তু লোভী বা পরশ্রীকাতর নন, বরং সহানুভূতিশীল, উদার এবং সজ্জন। 

    প্রকৃতি বিষয়ে তার এই দৃষ্টিভঙ্গিটি ঊনিশ শতকের আধুনিকতাবাদী বিশ্ববীক্ষার একটিই একটি উদাহরণমাত্র। চালাক-চতুর বাঙালির বিপরীতে সরল অনাড়ম্বর আদিবাসীদের পিছু হটা নিয়েও তার সহানুভূতি প্রকট। সমাজবিজ্ঞানীর প্রজ্ঞা নিয়ে তিনি তহশিলদারের জমি আত্মসাৎ বা জনগোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ ঘাত-প্রতিঘাতগুলোকে দেখবার চেষ্টাই করেছেন।



    ২.



    ১৭৯৮ সালে বুখানন যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে যাচ্ছেন, তার মাত্র বছর দশেক আগে ১৭৮৪ সালে চট্টগ্রামের সীমান্ত ঘেষা আরাকান নামের তখনকার স্বাধীন রাজ্যটিকে দখল করে নিয়েছে বার্মা। এই দখলদারিত্বের সূত্রে শরণার্থী মানুষগুলোর উপস্থিতির কারণে বাংলার দক্ষিণপূর্ব এই অঞ্চলটির প্রাচীন অরণ্যে মানুষের বসতি ও কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির একটা চিত্র আমরা এখানে পাই। তবে বার্মার এই আরাকান জয়ের আগেই এখানকার পাহাড়গুলোতে এই আদিবাসী জাতিগুলোর দীর্ঘকালীন বসতি ছিল, ছিল চট্টগ্রামের উপকূলেও, তারও উল্লেখ আছে এই বইটিতে। 

    বুখাননের বর্ণনা অনুযাযী এমনকি ফেনী, কুমিল্লা আর মিরশ্বরাই এলাকাতেও বাঙালি কৃষকদের তুলনায় ত্রিপুরা এবং আরো তিনটি জাতির আধিক্য ছিল। মাছ ধরা আর নৌচালনায় পারদর্শী রাখাইনদের সমুদ্র উপকূলবর্তী বসতিও আরাকানে বার্মার আগ্রাসনের আগে থেকেই ছিল। 

    তবে পাহাড়গুলোতে উৎপাদনী কার্যক্রম প্রধানত জুম চাষ আর তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভর হওয়ার কারণে এই জনসংখ্যা কখনোই খুব বেশি বাড়েনি। এছাড়াও পানির অভাব বহু পাহাড়ে জনবসতিকে অসম্ভব করেছিল, লবণ আর অন্যান্য অত্যাবশ্যক পণ্যবিরল অঞ্চলগুলোকে বুখাননও জনবিরল বলেই জানতে পেরেছিলেন। পাহাড়গুলোর জনসংখ্যা তাই বুখাননের সফরের বহুকাল পরও সীমিতই ছিল।

    আরাকান থেকে জীবন রক্ষা করতে পালিয়ে আসা মার্মা ও মুসলমানদের চাইতেও সংখ্যার দিক দিয়ে বসতিস্থাপনকারীদের বড় জোয়ার আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরই কল্যাণে। ব্রিটিশ বন্দোবস্তে অরণ্য সাফ করে জমি পত্তনি, ভূমি বন্দোবস্ত এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষির একটা বিস্তার ঘটে। জনসংখ্যার এই বৃদ্ধির পরও কিন্তু এই পার্বত্য-প্রকৃতি তার রহস্যঘেরা গাম্ভীর্য নিয়ে অটুট দাঁড়িয়ে ছিল। 

    তবু এই ভূপ্রকৃতি অচিরেই পুরোপুরি বিরান হয়ে যেতে পারত বুখাননের এই সফরেরই কল্যাণে। কেননা, কেবল নিছক পর্যটকই বুখানন ছিলেন না, তাঁর সফরের ভিন্ন একটা উদ্দেশ্যও ছিল।



    ৩.



    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বুখাননকে দায়িত্ব দিয়েছিল এই অঞ্চলে মশলা আবাদের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য। আধুনিককালে শীতলকরণ যন্ত্রের আবিষ্কার এবং তারও আগে পশুখাদ্যের বৈজ্ঞানিক চাষবাসের কল্যাণে মশলার সেই রমরমা বাণিজ্য বহুকাল আর নাই, কিন্তু এক সময় মশলার বাণিজ্যের ওপর দখলদারিত্ব নিয়ে ইউরোপীয় জাতিগুলো একের পর এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ইউরোপে তখন শীতকালে পশুকে খাওয়াবার মতো কিছু না থাকায় গরমকাল থাকতে থাকতেই গবাদিপশু জবাই করে ফেলা ছাড়া গত্যন্তর থাকতো না। 

    এই বিপুল মাংসকে প্রথমত সংরক্ষণের জন্য, দ্বিতীয়ত এই শুঁটকিকৃত মাংস রান্নার সময়ে গন্ধ আড়াল করার জন্য ইউরোপ-জুড়ে মশলার চাহিদা ছিল প্রচুর। মশলার প্রধান উৎস ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার মালাক্কা অঞ্চল পর্তুগীজ হয়ে তখন নেদারল্যান্ডের দখলে। তখনো সেখানে ইংরেজদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনো বাংলায় তাঁর সদ্য দখল করা দেওয়ানির হিসাব-নিকাষ নিয়ে ব্যস্ত, রাজস্ব বাড়াবার জন্য নতুন নতুন খাত তারা খুঁজছে, মাত্র কয়েক বছর হলো ১৭৯২ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে ইজারা দেওয়া হয়েছে বাংলার সিংহভাগ ভূমি, চেষ্টা চলছে আরো নতুন নতুন কী কী রাজস্ব খাত পাওয়া যায়। বুখাননকে তাই বলা হয়েছে বাংলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অনুসন্ধানে যেতে, যদি মশলা চাষের উপযুক্ত ভূমির খোঁজ মেলে!

    ফলে বুখাননের পুরো দিনপঞ্জী জুড়েই সতর্ক পাঠক একজন জরিপকারীর নজর দেখতে পাবেন। যে কোনো পাহাড় দেখামাত্র বুকাননের প্রথম চিন্তা এই পাহাড়ে কোন নির্দিষ্ট মশলাটির আবাদ সম্ভব! অঞ্চলটিকে তার নিজস্বতা দিয়ে নয়, বুখানন বিচার করছেন মশলার বা এই জাতীয় বাণিজ্যিক উদ্ভিদ আবাদে তাঁর সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা দিয়ে। তাই কোন পাহাড়ের মাটির গড়ন কেমন, বাতাস কোন দিক দিয়ে আসে, বৃষ্টির তীব্রতার হাত থেকে পাহাড়ের কোনদিকের ঢালে গাছগুলোকে লাগানো যেতে পারে অথবা যেখানে মাটি উর্বর হলেও পানির উৎস দূরে, সেখানে কিসের আবাদ হতে পারে – বৈজ্ঞানিকের এই যুক্তিনিষ্ঠ মন নিয়েই বুখানন তাঁর দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ভ্রমণ কাহিনীটি লিখেছেন, প্রতিটি পাহাড়ের দিকে তাকিয়েছেন আধুনিক কৃষিবিদের চোখ দিয়ে, যে কৃষিবিদ্যা তখনও মুনাফাকেই একমাত্র বিধেয় হিসেবে চিনতে অভ্যস্ত। বৈচিত্র রক্ষা, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, প্রকৃতির সাথে মানিয়ে চলতে শেখার সূত্রপাত সেই 'আধুনিকতা'য় তখনও ঘটেনি।



    ৪.



    ঊনিশ শতকের উন্নয়নের ধারণায় 'প্রয়োজনীয়তা'র সংজ্ঞাটির সাক্ষাত মিলবে বুখাননের দিনপঞ্জির ১৫ এপ্রিলের ভুক্তিটিতে, সেখানে 'অপ্রয়োজনীয়' ও 'ক্ষতিকর' শব্দদুটির ব্যবহার বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য:

    "পাহাড়ের বড় অংশটিই ঢেকে আছে অপ্রয়োজনীয় ঝোপঝাড়ে; অবশ্য অনেকগুলোকে পরিষ্কার করে কাঁঠাল আর আমের গাছ লাগানো হয়েছে, সেগুলো বেড়েও উঠছে ভালোভাবেই... কোনোই সন্দেহ নেই যে এসব পাহাড় পরিষ্কার করে ফেললে অঞ্চলটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও এটা ভালো সমাধান হবে এমনটা বিশ্বাস করবার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই আমার মনে হয়। এই পাহাড়গুলোর বড় অংশে বর্ষাকালে খুব ভালো গোখাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব, আর বিবিধ উপকারী সবজির আবাদও করা যেতে পারে। কোন কোন জায়গায় গর্জন, জারুল আর অন্যান্য কাঠের গাছ লাগানো যেতে পারে, কিন্তু যে সব ছোটখাট ঝোপঝাড় ক্ষতিকর প্রাণীদের আশ্রয় দেয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বাষ্পনিশ্বাস নির্গত করে, সেগুলোকে সাবধানে অপসারণ করতে হবে। আমার সামান্যই সন্দেহ আছে যে ট্রিফোলিয়াম এম ইনডিকা এই পাহাড়গুলোতে সুপ্রচুর ফলবে, আর ভালো একটা গোখাদ্যের ফলনও মিলবে।'

    অর্থাৎ শুধু পাহাড়গুলো চাষের আওতায় আনলেই চলবে না, সব ঝোপঝাড়ও কেটে ফেলতে হবে, কেননা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়। কেননা সেখানে স্থান নেয় নানান বুনো জানোয়ার। এই প্রাণীরা ফসলে ভাগ বসায়, কিংবা মাংসাশী হলে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপরই হামলা চালায়। পাহাড়ে কোনো বুনো প্রাণীর প্রাকৃতিক আশ্রয় থাকা চলবে না।

    পাহাড়ের মতোই সেই একই ভাবনার নমুনাই আমরা দেখতে পাবো উপকূলীয় অরণ্যের বেলাতেও। উপকূলীয় এই শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদেরা এমনিতেও তখন মারা পড়ছে খাড়ি দিয়ে আসা জোয়ারের লোনা জল বন্ধ করায়, কিন্তু যেটুকু বাকি আছে, সেগুলোও কেটে ফেলার তাগিদ দিচ্ছেন বুখানন। এভাবেই ৯ এপ্রিলের ভুক্তিতে রামুর উপকূলে গজিয়ে ওঠা 'অপ্রয়োজনীয়' সুন্দরী গাছদের জন্যও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বুখানন, নোনা জোয়ারের আগমনে সেগুলোর একটা বড় অংশের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সন্তোষও প্রকাশ করছেন : "(উপকূলে) সুন্দুর (সুন্দরী), রুনা এবং অন্যান্য সুন্দরবন্দ (সুন্দরবনীয়) উদ্ভিদের প্রাচুর্য। যদিও জোয়ারের পানি আসা খাঁড়িগুলোর মুখ বন্ধ করে দেওয়াতে এই সামুদ্রিক উৎপন্নগুলো দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এমনকি যেখানে ধানের আবাদ করার জন্য সেগুলো কেটে সাফ করা হয়নি, সেখানেও তারা মরে যাচ্ছে। তারপরও এখনো অনেক চমৎকার সব ভূমি সাফ করা বাকি আছে..."

    একইভাবে '(এডগং এ)পাহাড়ের মাটি খুবই অনুর্বর, কিন্তু চমৎকার সব বৃক্ষে ভরা। বেশ কটি ছোট ছোট নির্মল পানির ঝরনা পশ্চিমদিকে গিয়েছে, আর ধলির ছড়া আর খালী ছড়া নামে দুটো ঝরনার তীরে কিছু সমতল ভূমি আছে যেগুলো এখনো সাফ না করা হলেও আবাদের আওতায় আনা সম্ভব।'

    শুধু মশলাই নয়, জরিপকারীর পেশাদার চোখ দিয়েই এভাবে বুখানন পরিকল্পনা করেছেন পাহাড়ে অন্য সব আবাদেরও সম্ভাবনা। কৃষি আর বসতির বিস্তারের সুপারিশ তাই তার বিবরণীতে পাতার পর পাতায় বারংবার এসেছে। ৫-৮ মে তারিখে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোর বর্ণনায় বলা হচ্ছে 'দারুচিনি আবাদের উপযুক্ত পরিস্থিতি এখানে আছে বলে আমার ধারণা, কেননা ঝরনাসমৃদ্ধ বালুময় মাটি এই বৃক্ষটি চাষের জন্য অনুকূল বলে বলা হয়।'

    মে ৪ তারিখে রাঙ্গুনিয়ার জুম চাষ দেখে তাঁর মনে হচ্ছে : 'বিভিন্ন সময়ে এগুলোতে জুম চাষ হয়েছে, ফলে মাটি নিশ্চিতভাবেই উৎকৃষ্ট। দেখে তো মশলা আবাদের চেষ্টা করার জন্য দারুণ উপযুক্ত বলেই মনে হয়।' রাঙ্গুনিয়াতে তিনি একটা পাহাড়ী নদীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যেটি তখন ছিল কুমীরে পূর্ণ!

    উর্বর জমি আর লবণচাষ এবং মাছের জন্য তখনো খ্যাত মহেশখালীর কথাও বুখানন বলেছেন, দ্বীপটিতে এর মাত্র কয়েক বছর আগেও বুনো হাতির বিচরণ ছিল, সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন। দ্বীপের শেষ হাতির পালটি বুখাননের উপস্থিত হওয়ার মাত্র কয়েকবছর আগেই ধৃত হয়, হাতির বাণিজ্যিক মূল্যও তখন ভালোই ছিল বলে আমরা জানি। ফসলের অনিষ্টকারী হাতির পাল থেকে দ্বীপটি ইতিমধ্যে মুক্ত হওয়ায় এ বিষয়ে ফ্রান্সিস বুখাননকে তাই কষ্ট করে কোনো পরামর্শ দিতে হয়নি।

    ৫.

    জুম চাষে পাহাড়ের ক্ষয় হয় না এই বোধ তাঁর মতো একজন বৈজ্ঞানিক মন সম্পন্ন পর্যবেক্ষকের অগোচরে থাকেনি। কিন্তু পাহাড়টাকে রক্ষা করাটাকে তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়েছে, ক্ষয় রোধের চাইতে পাহাড়ে সম্ভাব্য বাণিজ্যের তাগিদটাই যেহেতু তখন প্রবল। যে জমিগুলো খুব খাড়া, আবাদ কিংবা বসতি সম্ভব নয়, তা নিয়েও বুখাননের ভাবনা আছে। তার ভ্রমণ কাহিনীর ১৯ এপ্রিলের বর্ণনায় আমরা দেখি :

    'পাহাড়গুলো যেখানে খুব খাড়া, সেখানে জুম চাষের দুটো সুবিধা আছে: জমি খোঁড়ার ঝামেলাটা এড়ানো যায়, আর মাটি উপড়াতে হয় না বলে, আর গাছের শেকড়গুলো দ্বারা মাটি সুরক্ষিত বলে বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যায় না। কিন্তু জুমে জমির অপচয়ের কথা আর জুমচাষিদের অনিশ্চিত পরিস্থিতির বিপরীতে ভাবলে এই দুটি সুবিধা তুচ্ছ মনে হয়। স্বাভাবিক চাষের পক্ষে পাহাড় খুব বেশি খাড়া হলে, আমরা মনেই করি সেগুলোকে গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।'



    ৬.



    এভাবে, বুখাননের পরিকল্পনায় পুরোনো আদিম অরণ্য দুটো কারণে রাখা যাবে না। প্রথমত, সেটা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক নয় কোম্পানির কাছে। যত ইজারা, যত ভূমি বন্দোব্স্ত, তত বেশি বাড়তি খাজনা। ফলে নগদ অর্থকরী কিছু ফলছে না এমন যেকোনো ভূমি ব্যবস্থাপনাই এহেন বণিকের চোখে অপচয়। অন্যদিকে, অরণ্য মানেই তো পশুদের আশ্রয়, যারা ফসলের ক্ষতি করে কিংবা গবাদিপশু বা মানুষের ওপর হামলা চালায়। ফলে এদের আশ্রয় দেয়, এমন কিছু থাকতে পারবে না। উদ্ভিদবিষয়ক যাবতীয় জ্ঞান এবং কৃষিবিজ্ঞান সেখানে বাণিজ্যের জ্ঞানের পরিপূরক মাত্র, তাদের স্বাধীন কোন অস্তিত্ব নেই। ১৪ মের ভুক্তিতে বুখানন লিখছেন:

    'যেকোনোভাবেই হোক, পাহাড়গুলোকে পরিষ্কার করে ফেলতেই হবে, তারপর সেখানে পাওয়া যাবে পশুখাদ্য, সেখানে আর কোনো হিংস্র পশু আশ্রয় পাবে না, এগুলো বর্তমানে এখানে প্রচুর পরিমাণে আছে বলে বলা হয়; যদিও এগুলোর বিপদকে অনেকখানিই বাড়িয়ে বলা হয় বলেই আমার বিশ্বাস।'  

    আর এমনকি জনসংখ্যা কম থাকাটাও একটা সমস্যা বুখাননের চোখে; যত মানুষ যত এনে ফেলা যাবে, যত বসতি বাড়বে, তত বাড়বে এই পত্তনি। তত খাজনা আসবে কোম্পানির তহবিলে। মানুষ যত বাড়বে, খাজনাও তত বাড়বে। একারণেই 'জ্যামাইকার মত' আদর্শ ঘনবসতির পত্তন চান বুখানন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে, এবং মন্তব্য করছেন যে এখানকার মাটি চমৎকার হলেও অধিবাসীরা তার সামান্যই ব্যবহার করতে পারছেন। যেমন, এপ্রিল ২৯ তারিখের বিবরণে রাঙামাটির কাজুলাঙ নদীর মুখে ছোট ছোট টিলা দেখে বুখাননের অনুভূতি:

    'এই গ্রামের আশপাশের মাটি চমৎকার, তবে স্থানীয়রা এর সামান্যই ব্যবহার করে, কেবল কিছু জায়গায় তারা সুপারি লাগিয়েছে... আমরা যতই এগোলাম, এলাকাটা সীতাকা ঘাটের মতই নিচু পাহাড় দিয়ে গঠিত; আর সেখানকার মতই পাহাড়ের মধ্যবর্তী সমতল ভূমিগুলোতে তুলনামূলকভাবে জনবসতিও বেশ ভালো, কেননা, জুম চাষীর জন্য পাহাড়ই সবচে উপযুক্ত, যেটা এখানে চাষের একমাত্র পদ্ধতি। জ্যামাইকাতে আমার দেখা সবচে ভালো কিছু নিষ্কর জমির মত হুবহু একইরকম এই জেলাটা, আর একই পদ্ধতিতে আবাদ করা হলে সহজে আর সুপ্রাচুর্যে বহু হাজার অধিবাসীর ভরণপোষণ করতে পারবে।'



    ৭.

    বণিকের মন ভূমি থেকে দ্রুত মুনাফা চায়। শুধু খাঁটি পেশাগত বণিক নন, প্রশাসন কিংবা আর যেকোনো সূত্রেও ক্ষমতাবানও দ্রুতই বণিক বনে যেতে পারেন, যদি যথা সুযোগ মেলে। আর বণিকের চোখ দিয়েই যখন দেশকে, মাটিকে, পাহাড়কে ক্ষমতাধর সকলে দেখেন, পরিণতি কী হয়, তাই আমরা পাহাড়ে নিত্য দিনই দেখছি। 'ন্যাড়া আর মাটি খোঁড়া' পাহাড়গুলোই নিত্য ধসে পড়েছে, এই বাক্যটা শুনলে আমাদের স্মৃতিতে ভাসে বুকাননের সেই অপ্রয়োজনীয় ঝোপঝাড় সাফ করে ফেলার বাসনার কথা। বৃক্ষের শিকড় বৃষ্টির পানি ধরে না রাখলে কোনো পাহাড়ি ঝর্ণারই আর অস্তিত্ব থাকত না, পানির অভাবেই একসময় সকল কৃষির কঠিনতর হয়ে যাওয়ার কথা। শুধু তাই না, শুষ্ক মাটির উর্বর অংশটুকুকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে বাতাস, দ্রবীভূত করে দ্রুতই উধাও করে দেবে পানিও। শিকড়গুলোই যে মাটিকে ধরে রাখে, এই তথ্য যে বুকাননের জানা ছিল, ওপরের জুম চাষ সম্পর্কিত একটি উদ্ধৃতিতে তার নমুনা আছে। কিন্তু সেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির বিবেচনা বণিকের মন করতে রাজি হবে না। এক পাহাড় ধসে গেলে আরেক পাহাড়ে যাবে সে, তারপর আরেকটা, যতক্ষণ না শেষ পাহাড়টাও ধসে পড়ে... আর বুনো প্রাণীর দাম তো তার কাছে কানাকড়িও নেই।

    অবশ্য এই জনপদের মানুষের কপাল ভালো, বুকাননের সুপারিশ কিংবা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রকল্প তখন বাস্তবায়নের প্রয়োজন পড়েনি। ওলন্দাজরা ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়ায় বুখাননের এই সফরের বছর দশেক পরই মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মশলা-অঞ্চলগুলোর ওপর ব্রিটিশদের আধিপত্যের সূচনা হয়। এছাড়া ইউরোপে কৃষিবিজ্ঞানের অগ্রগতি পশুখাদ্যের উন্নতি আনায় শীতে আর গবাদিপশুকে মেরে ফেলতে হতো না। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় মসলা নিয়ে আর মরিয়া হতে হয়নি তাদের। সব মিলে আরাকান সীমান্তে মসলার চাষের বিস্তারের দরকার পড়েনি তখন আর। কিন্তু একটু অন্যরকম হলেই শত বছর আগেই সীমান্তের এই পাহাড়গুলো সম্পূর্ণ ন্যাড়া হয়ে গিয়ে শুষ্ক শীতের বাতাসে মাটির অগ্রভাগটুকু হারিয়ে, সম্পূর্ণ উর্বরতাহীন হয়ে, প্রতি বৃষ্টিতে গলে গলে ধস নামিয়ে বিলীন হয়ে যেতে পারত।



    ৮.

    ইতিহাস একবার আমাদের রক্ষা করেছে, ঘটনাপ্রবাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে প্রবল শক্তিশালী কোম্পানি রাজের হাত থেকে পাহাড়গুলোকে। এখন আমরা নিজেরাই মালিক, নিজেরা তাকিয়ে আছি একই রকম ক্ষুধাতুর বণিকের দৃষ্টি নিয়ে, আমাদের নিজের ভূমি, নিজের পাহাড়ের দিকে। অজস্র পাহাড়ের স্বাভাবিক বৃক্ষগুলোকে কেটে রোপণ করেছি ইউক্যালিপটাস আর একাশিয়া কিংবা মেহগনি। গড়ছি ছাউনি, কাটছি পাহাড়ের গোড়া, সমতল ভূমির মতো করে আবাদ করছি বাণিজ্যিক সবজি ও ফল, আগাছা দমনের নামে বড় অংশের মাটিকে ঝোপঝাড়হীন করে উন্মুক্ত করে ঠেলে দিয়েছি বর্ষায় কাদা হয়ে গলে পড়া আর শীতের বাতাসে উড়ে যাওয়ার পরিণতিতে। এমনকি আস্ত জনগোষ্ঠীর বসতি উচ্ছেদ করে গড়ে তুলছি বাণিজ্যিক পর্যটন প্রকল্প, মানুষগুলোকে ঠেলে দিচ্ছি অনুর্বর, পানিহীন বসবাসের অযোগ্য পাহাড়ে! 

    আর এইসব কাজের মধ্য দিয়ে উর্বরতা ক্ষয় পেলে ঢালছি সার, ঢালছি কীটনাশক। শুধু কি তাই! পাহাড়ে ঠেলে দিচ্ছি বাংলাদেশের সমতলভূমির অসহায় ভূমিহীনদের, আরো, আরো ভেতরে। দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হচ্ছে এমন সংবাদ : 'এক চতুর্থাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, ৬১ শতাংশ ঝর্ণা শুকিয়ে গেছে, ভূতাত্ত্বিক গঠন নষ্ট করে সড়ক নির্মাণ, পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি নির্মাণ।' ভিত্তি হারানো, ঝোপঝাড়হীন পাহাড় তাই প্রতিবছরের বৃষ্টিতে কাদার স্তূপ হয়ে গলে গলে পড়ছে। সমূহ বিপর্যয় থেকে তাদের এইবার বাঁচাবে কে—জেগে ওঠা মানুষ ছাড়া?

    আধুনিক ও প্রয়োজনীয় এবং অনাধুনিক ও অপ্রয়োজনীয় এই দুই বর্গে প্রকৃতিকে বিচার করার চোখ নিয়ে বুখানন যে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাজির করেন, সেখানে প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতির কোন মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। যেমনটা আমরা দেখেছি, জুম চাষে পাহাড়ের ভূমি ক্ষয় হয় না এটা তার পর্যবেক্ষণে ধরা পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এই পাহাড়ের ভূমিক্ষয়জনিত বিপুল ও স্থায়ী লোকসানের চিন্তা তার মনে কোন দুর্ভাবনা জাগায়নি। ১৯৮০ দশকে আফ্রিকার কেনিয়া, জিম্বাবুয়ের মত দেশে হাতি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলছিল বৈধ-অবৈধ শিকার আর অরণ্য উজাড়ের ফলে, এবং পর্যটকদের যথেচ্ছাচারের কারণে। টাকা যদিও অর্থনীতিতে এভাবে যুক্ত হতো, প্রকৃতির স্থায়ী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছিল বহুগুন বেশি হারে। আফ্রিকার যে দেশগুলো প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যটনকে বিকশিত করতে পেরেছে, সেই দেশগুলোই আবিষ্কার করেছে প্রকৃতিকে যথাসম্ভব হস্তক্ষেপমুক্ত রেখেই বহুগুন বেশি উপার্জন করা সম্ভব। 

    প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কারও সুনাম শুনতে পাই, আদিম সব অরণ্যকে তারা সফলভাবে রক্ষা করেও বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। সেখানে তারা অরণ্যের মাঝে কোন দরদালান, পাকা কাঠামো নির্মাণ করতে দেয়নি; চেষ্টা করেছে তার স্বাতন্ত্র্য, নীরবতা আর গাম্ভীর্য রক্ষা করতে। আর এই কারণেই সারা পৃথিবীর পর্যটকেরা সেখানে ভীড় করছেন, কোন কোন দেশে দেখা গিয়েছে প্রকৃতিকে ধ্বংস করবার চাইতে তাকে রক্ষা করাটা এমনকি পর্যটনের আয়ের বিবেচনাতেও বহুগুন লাভজনক।

    সত্যি বলতে কী, প্রকৃতি রক্ষার জন্য এই সুরক্ষার মাঝেই অধিকতর মুনাফার যুক্তিটা তুলতে রীতিমতই লজ্জা ও সংকোচ করছে, কিন্তু এটাও যদি একটা সফল যুক্তি হয় আমাদের টিকে থাকা শেষ আদিম অরণ্য ও পাহাড়গুলোকে রক্ষা করবার, তাই তাদের দোহাই-ই দিতে হচ্ছে। পাহাড়ে বড় বড় পর্যটনকেন্দ্র বা সরাইখানার আসলেই প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন তার বৈচিত্র আর আর স্বাতন্ত্রকে অক্ষুণ্ন রাখাকেই অঞ্চলটিকে নিয়ে যে কোন পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখা। আর প্রয়োজন সেখানকার মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য আর অন্য সব সেবার মান ভালো করা। সেই দায়িত্বটা আমরা কতটুকু পালন করছি?  ১৮৭৪ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ইউলিসিস এস গ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের বুনো মোষের পালকে ধ্বংস করবার লজ্জাজনক একটা ভূমিকা পালন করে এখনও ইতিহাসের ধিকৃত একজন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। মার্কিন প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে গ্লানি নিয়ে পড়ানো হয় জেনারেল ফিলিপ শেরিডানের কথা, যিনি রেড ইনডিয়ানদের দমন করতে সব বুনো মোষকে মেরে ফেলার আবেদন জানিয়েছিলেন। একটা বুনো মোষের মৃত্যু মানে একজন রেড ইনডিয়ানের অপসারণ, এই ছিল সোজা হিসাব। সভ্যতা মানে অন্যের দৃষ্টান্ত দেখে শেখা, আমরা শিখবো তো?

    [লেখাটি টিবিএস নিউজ ডট নেটে প্রকাশিত]


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১৯৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Anindita Roy Saha | ২৫ নভেম্বর ২০২০ ২০:১৬100649
  • অর্থনৈতিক ইতিহাস আর পরিবেশচেতনার সমন্বয় এই লেখাটি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পড়লাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। 


    স্বার্থ আর মুনাফা সকল উন্নতি আর সাফল্যের কারণ- অর্থনীতির এই বহু প্রচলিত ধারণাটি আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছিল যে এসবের ওপরও  আছে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সহাবস্থান ইত্যাদি অনেক কিছু ধারণা । নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই তার প্রয়োজন । এই ভুলে যাবার মাশুল আজ সমগ্র পৃথিবী দিচ্ছে ।


    কেনিয়ার হাতির প্রসঙ্গে উঠে আসে আরেকটি ধারণা- কমন প্রোপার্টি রিসৌর্স বনাম প্রাইভেট প্রপার্টি রিসোর্স। সর্বসাধারণের সম্পত্তি হাতির  চোরাশিকার বন্ধ করার জন্য আইন করে ব্যক্তিগত মালিকানা দেয়া হয়েছিল যাতে ইজারামালিক হাতির রক্ষনাবেক্ষন করে । এটি বেআইনি হাতি শিকার বন্ধ করতে কার্যকরী হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ একটি বৃহৎ প্রাকৃতিক স্বার্থরক্ষায় সাফল্যের উদাহরণ। রাষ্ট্র, আইন,নাগরিক চেতনা এইসব কিছু পরিস্থিতি অনুযায়ী নানাভাবে মিলে মিশে হয়তো সমাধান সম্ভব।

  • বিপ্লব রহমান | ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৫০100669
  • "ইতিহাস একবার আমাদের রক্ষা করেছে, ঘটনাপ্রবাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে প্রবল শক্তিশালী কোম্পানি রাজের হাত থেকে পাহাড়গুলোকে। এখন আমরা নিজেরাই মালিক, নিজেরা তাকিয়ে আছি একই রকম ক্ষুধাতুর বণিকের দৃষ্টি নিয়ে, আমাদের নিজের ভূমি, নিজের পাহাড়ের দিকে। অজস্র পাহাড়ের স্বাভাবিক বৃক্ষগুলোকে কেটে রোপণ করেছি ইউক্যালিপটাস আর একাশিয়া কিংবা মেহগনি। গড়ছি ছাউনি, কাটছি পাহাড়ের গোড়া, সমতল ভূমির মতো করে আবাদ করছি বাণিজ্যিক সবজি ও ফল, আগাছা দমনের নামে বড় অংশের মাটিকে ঝোপঝাড়হীন করে উন্মুক্ত করে ঠেলে দিয়েছি বর্ষায় কাদা হয়ে গলে পড়া আর শীতের বাতাসে উড়ে যাওয়ার পরিণতিতে। এমনকি আস্ত জনগোষ্ঠীর বসতি উচ্ছেদ করে গড়ে তুলছি বাণিজ্যিক পর্যটন প্রকল্প, মানুষগুলোকে ঠেলে দিচ্ছি অনুর্বর, পানিহীন বসবাসের অযোগ্য পাহাড়ে! " 


    ফিরোজকে ধন্যবাদ শাসকের আদিমতম শোষণের কলোনিয়াল হ্যাংওভারটিকে হাতেনাতে শনাক্ত করার। আরও লেখ। 


    বাংলাদেশের আদিবাসী, পরিবেশ ও উপনিবেশিক আমল থেকে চলমান শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি, গুরুতর লেখা। 


     শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সুন্দরবনও পড়েছে একই নগদ মুনাফা অর্জনের শোষণের কবলে। এ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দীর্ঘতম শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, ইউনেস্কো ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের মতামত উপেক্ষা করেই বন ঘেঁষে বাগেরহাট জেলার রামপালে নির্মাণ করা হয়েছে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। 


    তবে আশার কথা, পাহাড় ও সমতলে এসব শোষণের বিরুদ্ধে শানিত প্রতিবাদ জারি আছে, এছাড়া আর বাঁচার উপায় কী? 


  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন