পুরুষার্থ (২) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২২৯৪ বার পঠিত
ঋষভ লক্ষ্য করেছে, ভাল স্মৃতি মন ভাল করে। ভাল স্মৃতির অভাব তার পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে নেই। প্রয়োজনের থেকে বেশিই আছে। তবে সব ভাল স্মৃতিকে রোমন্থন করতে ইচ্ছা হয় না। খালি একটা স্মৃতি আছে যেটাকে মন্থন করা যায়, যার সবটা মনে নেই, হয়তো সবটা সে বোঝেনি। হয়তো একটু ধোঁয়াশা ছিল, অতএব সেই ধোঁয়াশার পিছনের বস্তুটিকে নিজ মাধুরী দিয়ে সাজানো যায়। যা করার সময় বা সাহস সেই চারবছর আগে হয়নি, এখন করা যায়, কল্পনায়। সেইজন্য হয়তো এই ধোঁয়া ধোঁয়া স্মৃতিটার রোমন্থনযোগ্যতাটা একটু বেশি!
পুরুষার্থ (৩) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১০ জুলাই ২০২১ | ১৯৫৯ বার পঠিত
জেট ল্যাগ হলে, বা জ্বরজারি হলে, মাঝরাতে অনেক সময় এরকম বাজে ভাবে ঘুম ভাঙে। এরকম বাজে একটা স্বপ্ন আসে, ঘাম দেয়। ঘুম ভাঙারপর মানুষ টের পায় না সে কোথায় আছে। ঋষভ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যেখানে ওর ঘুম ভাঙল জায়গাটা কোথায়? ওর কলকাতার বাড়ি, না আমেরিকার বাড়ি, না কি হাম্পির হোটেল। হোটেলের খাট থেকে তো বাঁ দিক দিয়ে নামার কথা, এখানে তো মনে হচ্ছে উল্টোটা। স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন হাত-পা বাঁধা! ঋষভ শুনেছিল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে একটা কিছু হয়- মানুষ ভাবে সে জেগে আছে- কিন্তু হাত-পা ঘুমন্ত মানুষের মত অচল!
পুরুষার্থ (৪) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৭ জুলাই ২০২১ | ১৮৬৬ বার পঠিত
ঋষভের মনে হয়েছিল ঐদিন ও হেরে গিয়েছিল, আর রেশমী জিতেছিল। কারণ ঋষভের একটা গর্ব ছিল, যে দক্ষতা নিয়ে ও দুটো আলাদা আলাদা জগৎকে সামলায়- সেটা নিয়ে। ও যেভাবে কাছের মানুষের ছোট ছোট জিনিসগুলোর যত্ন নেয়, তা আর কেউ পারবে না- সেটা নিয়ে। গর্ব ছিল যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলায় সেই নিয়ে। গর্বের জায়গাটা ভেঙে যাওয়া একটা চুড়ান্ত গ্লানি আর হতাশার বিষয়। রেশমী ঐ গর্বের জায়গাটাই ভেঙে দিল। ঋষভ একবার ভেবেছিল বলবে "ভালো তো অন্য কাউকে বাসিনি, সমস্ত লোভ লিপ্সা বাড়ির বাইরেই রেখে এসেছি", কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি!
পুরুষার্থ (৮) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ১৩৯৭ বার পঠিত
ঋষভ গাড়ি চালাতে চালাতে সারথিকে দেখছিল। আবার ঐ এক কথা ঋষভের মাথায় খেলল- টাকা পকেটে থাকলেই সব পাওয়া যায় না। হঠাৎ তার মনে হল- অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়না সেগুলো পাবার জন্যই মানুষ আরও দিশাহারা বোধ করে। হঠাৎ করে মনে হয় অর্থের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। নিজের সামাজিক অবস্থানটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। হঠাৎ করে মনে হয় নিজের সামাজিক অবস্থানটাও গুরুত্বহীন। অর্থগুলো মূল্যহীন মনে হয়, আর পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হয়।
পুরুষার্থ (৭) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৭ আগস্ট ২০২১ | ১৩৯১ বার পঠিত
মিনিট দশেক পর এক জেলে এসে হাজির হল, দা হাতে। ঋষভের খুব হতভম্ব লাগছিল- মাছের জায়গায় মানুষ দেখে জেলে কী ভাববে, আর কিছু জিজ্ঞেস করলে ঋষভই বা কী উত্তর দেবে। তবে সে কিছু জিজ্ঞেস করল না, ঋষভ শুধু চোখমুখ দিয়ে আকুতি করল। দা হাতে নিয়ে জেলে কিছুক্ষণ ঋষভকে দেখল। দা দেখে ঋষভের ভয় লাগছিল। জেলে আর ঋষভ একে অপরের ভাষা বিশেষ বুঝবে না, তাই প্রশ্নোত্তরের বিশেষ সুযোগ নেই। জেলে বিশেষ প্রশ্ন না করেই জাল ছাড়িয়ে দিল। তার জালে মাছের বদলে মানুষ ধরা পড়লে তারও বিশেষ লাভ নেই- ছাড়িয়ে দিলেই তার পক্ষে কাজের কাজ। ঋষভ অনাবৃত দেহে বুক হাত দিয়ে চেপে বেরিয়ে এল। সংকোচ হচ্ছিল। জেলে মুচকি হেসে তার পিঠের ঝোলা থেকে কী একটা বের করে ঋষভের গায়ে ছুঁড়ে দিল। ঋষভেরই শার্ট।
পুরুষার্থ (৯) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৮ আগস্ট ২০২১ | ১৩৬৪ বার পঠিত
সারথির কথা শুনে ঋষভ ভেবেছিল, এই হোম-স্টের মালিক বিনোদ স্যার খুব রাশভারী রাগী একজন মানুষ হবেন। যখন দেখা হল দেখল উনি মোটেই ওরকম নন, আবার খুব আলাপী মানুষও নন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। রিসেপশনে ম্যানেজারের চেয়ারে ম্যানেজার অর্থাৎ সারথির বদলে বিনোদ স্যার বসে, একটা অনেক ছবি-টবি আঁকা চকচকে টি-শার্ট পরে – মানে ঐ বয়স হয়ে গেলে লোকের খুব রঙীন হবার শখ হয় – আর সারথি ওঁর ঘাড়ে-কাঁধে-পিঠে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। ঋষভ মনে মনে বলল – আমেরিকায় মালিক যদি ম্যানেজারকে দিয়ে এই কাজ করায়, ওখানকার লেবার আইন অনুযায়ী রীতিমতো কোর্টে একটা মামলা হয়ে যেত! সারথি অবশ্য কাজটা হাসিমুখে করছে!
পুরুষার্থ (১০) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২২৩৯ বার পঠিত
বিনোদ স্যার ঋষভকে বললেন, ফোর্ট কোচিতে প্যালেস আর পর্তুগিজ যুগের বাড়িঘর দেখে আসতে। সুন্দর সুন্দর বিখ্যাত কেরালা মুরাল পেন্টিং আছে প্যালেসে। ঋষভ একাই বেরিয়ে পড়ল। প্যালেসের দেয়ালে রামায়ণ পেইন্ট করা – রঙ ফিকে হয়ে গেছে – তবে অদ্ভুত সুন্দর। ভেবে অবাক হল – বাড়ির দেয়ালে রামায়ণ নিয়ে কিছু মানুষ বাস করত।
ফোর্ট কোচির সমুদ্রপাড়ে চাইনিজ ফিশিং নেট দেখতে দেখতে সে ভাবছিল, বছর দুয়েক আগে হয়তো মঞ্জুনাথের বিয়ে হয়ে যায়, সারথি কেরালা চলে আসে। তারপর মঞ্জুনাথের ছেলে হয়, সেই জন্য হয়তো সারথি ওর সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়। কপাল ফাটে। আবার পুরনো এবং পছন্দের ক্লায়েন্ট ডঃ শ্রীধরের সাথে হয়তো ও সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় নূতন লোক অর্থাৎ বিনোদ স্যারকে পাবার পর। আর বুড়োর পয়সার তো কোনো অভাব নেই। তবে এগুলো সবই ‘হয়তো’। সব জুড়ে জুড়ে গল্প সে নিজেই বানাচ্ছে, তাও সেই লোকটাকে নিয়ে যার সত্যি মিথ্যার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।
পুরুষার্থ (১১) : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০২১ বার পঠিত
প্লেন একটু একটু করে রাতের আকাশে উঠল। আজ পূর্ণিমা। রাত্রি আটটার ধূসর কমলা রঙের একথালা চাঁদ আকাশে! তলায় দেখতে পেল, সমুদ্রের পাড় দেখা যাচ্ছে, আর আলো-অন্ধকারের বিন্যাসটা দেখে ব্যাকওয়াটারের অস্তিত্বটাও বোঝা যাচ্ছে। সমুদ্র আর ব্যাকওয়াটারের মাঝে কত কত গ্রাম। কোনও একটা গ্রাম হয়তো কুজিপল্লি। তলার কোনও একটা বিচে শুয়ে আছে সে আর সারথি! বালির মধ্যে থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে কুড়িয়ে সে মালা গাঁথছে একের পর এক, আর পড়িয়ে দিচ্ছে সারথির বুকের উপর। পূর্ণিমার চাঁদে জল চকচক করছে, সেই জলে ওরা ভেসে বেড়াচ্ছে – না, শান্ত তুঙ্গভদ্রা নদীর কোরাকল ভেলা নয়, দোল খাওয়া সমুদ্রের মাঝে মেছো নৌকায়। প্রতিবারই সারথি তার হাতে একটা জিনিস তুলে দেয়, কল্পনার রসদ, নতুন নতুন কল্পনার রসদ। কল্পনা কল্পনাই, কল্পনা সারথির মতনই মিথ্যা বলে, কল্পনা সারথির মতনই মন ভোলানো গল্প বলে, কল্পনাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে!
রাশিয়ায় জাতিভিত্তিক গণউচ্ছেদের ইতিহাস : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : ইতিহাস | ০১ মার্চ ২০২২ | ৬৭৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪০
নূতন সোভিয়েত সরকারের জাতি-উচ্ছেদ নীতি কিন্তু পুরোনো জার শাসিত রুশ সাম্রাজ্যেরই ধারাবাহিকতা।
ঊনবিংশ শতকেই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উচ্ছেদের সূচনা হয়। সেই যুগে রাশিয়ার সামরিক পরিসংখ্যানবিদরা রীতিমত এই নিয়ে গবেষণা করে স্ট্রাটেজি বানাতেন – কোথা থেকে কাকে সরানো উচিত! যেটা পাওয়া যায়, সেটা হল “অবিশ্বাসযোগ্যতার ভৌগোলিক অভিমুখ”। এই কাজের জন্য মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় – স্লাভিক (রুশ এবং সমজাতীয় ভাষাগোষ্ঠীগুলি) ও অ-স্লাভিক (পশ্চিম ইউরোপীয়, মধ্য এশীয়, ইহুদি, ও ককেশাস পর্বতীয় জাতিগুলি)। তারপর কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে কাদের অনুপাত কীরকম – তার ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়। তারপর হত অবিশ্বাসযোগ্য অঞ্চলগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য বানানোর প্রক্রিয়া – মূলত রুশিকরণের মাধ্যমে।
কর্মক্ষেত্রে যৌন সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০২ জুলাই ২০২২ | ২০৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ: ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে। দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে। তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়?
পায়েসের বাটি : সুদীপ্ত পাল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ১৬৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শিখা পায়েসের বাটিটা নিয়ে ছাদে উঠল। দোতলা বাড়ির ছাদ। চিন্তিত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে, একবার পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে, সবদিক নজর করে শেষে পায়েসের বাটিটা সে ছাদের পাঁচিলে রাখল। তারপর গলার মঙ্গলসূত্রটা চেপে ধরে কি যেন ভাবা শুরু করল। পাশের বাড়ির ছাদে সপ্তর্ষি, বছর চোদ্দর ছেলে হবে, হাতে খাতা, মুখে পেন। খাতা উল্টেপাল্টে দেখছে আর পাশে বসে থাকা পায়রাটাকে কীসব পড়ে শোনাচ্ছে। ছেলেটি একঝলক শিখাকে দেখল, শিখা সেটা খেয়াল না করে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এল।