শ্যামাপ্রসাদ বাংলার রাজনীতিতে নেহাৎই খুচরো একটা বিষয় ছিলেন, প্রভাব কখনোই তেমন বিস্তার করতে পারেননি। ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন হিন্দু মহাসভায়। ঢুকেই নেতা। নেতা হয়েই কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে গেলেন সুভাষের কাছে নির্বাচনী সমঝোতা করতে, এবং ঘাড়ধাক্কা খেয়ে ফিরলেন। সুভাষ বলেছিলেন, এইসব করতে গেলে, দরকারে গায়ের জোরে আটকাবেন। প্রাথমিক সাফল্য বলতে এই। ... ...
কালিগঞ্জে একটা উপনির্বাচন হল। তাতে খুব বেশি বদল হল তা নয়। কিন্তু কিছু জিনিস পরিষ্কার করে বোঝা গেল। টিভিতে দেখবেন, এই একটা উপনির্বাচন নিয়েই হইচই চলছে, সবাই ফেঁড়ে চেঁচাচ্ছেন, তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা গাদা গাদা কথা বলছেন। এইসব সঞ্চালক এবং বিশেষজ্ঞদের কোথা থেকে ধরে আনা হয় জানিনা, তবে এঁরাই কদিন আগে লাহোর করাচিতে জয়পতাকা উড়িয়ে দিয়ে জগৎসভায় ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এছাড়াও একটা বড় কৃতিত্ব হল, আজ পর্যন্ত একটা নির্বাচনেও বিশ্লেষণ, এক্সিট পোল দিয়ে কিছুই মেলাতে পারেননি। তাই এইসবে কান দেবার কোনো কারণ নেই। শুধু ফ্যাক্ট দেখা যাক। ফ্যাক্ট হল বিজেপি গোহারান হেরেছে। ৫০ হাজারের বেশি ভোটে। শুধু তাই নয়, উপনির্বাচনেও, যেখানে ভোট একটু কম পড়ে, তাতেও মার্জিন বেড়েছে। মার্জিন এরকম... ... ...
এই বিভ্রান্তিমূলক তথ্যপ্রবাহের কিছু অংশ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করে। এটা এমন একটা পরিবর্তন, যা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, কারণ ভারতের এমন কিছু সংবাদমাধ্যমের মধ্যে এই বিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যারা আগে নিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত ছিল। খবর প্রকাশে প্রতিযোগিতা এবং অতিরঞ্জিত জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রিপোর্টিং, এই চার দিনের সংঘাতকালীন সময়ে চরমে পৌঁছে যায়, যেখানে সংবাদ উপস্থাপক ও বিশ্লেষকরা পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত দুটি দেশের যুদ্ধের চিয়ার-লিডার হয়ে ওঠেন। কিছু পরিচিত টিভি চ্যানেল যাচাই না করা তথ্য প্রচার করে বা এমনকি সম্পূর্ণ ভুয়া গল্পও প্রকাশ করে, জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার এই প্রাবল্যে। সংবাদমাধ্যমগুলো একটি তথাকথিত পাকিস্তানি পারমাণবিক ঘাঁটিতে ভারতীয় হামলার খবর প্রচার করেছিল, যা নাকি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছিল। তারা হামলার স্থান চিহ্নিত করে বিস্তারিত মানচিত্রও শেয়ার করেছিল। কিন্তু এই দাবিগুলো সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় নৌবাহিনী করাচিতে হামলা চালিয়েছে—এই গল্পও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, কিন্তু পরে তা অস্বীকৃত হয়েছে। ... ...
আরেকটু গভীরে ঢুকে দেখা যাক, কেন দুর্নীতি। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার কোনো ওএমআর শিট পাওয়া যায়নি, ওগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ম মেনেই, এসএসসি বলেছে, আদালতও আংশিকভাবে একমত হয়েছে। এসএসসির সার্ভারে স্ক্যানড কপিও পাওয়া যায়নি। তাহলে দুর্নীতি বোঝা গেল কীকরে? এসএসসির দুই ভেন্ডার, তাদের কাছে আলাদা করে স্ক্যানড কপিগুলো পাওয়া গেছে। মিলিয়েও দেখা হয়েছে। এসএসসিও সেখান থেকেই ডেটা নিত (এটা আইনী না বেআইনী বলা নেই, ধরে নিচ্ছি আইনী বা ধূসর এলাকায় পড়ে)। এই স্ক্যানড কপি এবং এসএসসির সার্ভারে থাকা নম্বর মিলিয়ে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে গরমিল আছে। এই মেলানোর কাজটা এসএসসিই করে কোর্টে দিয়েছে। এর অনেকগুলো সারণী আছে রায়ে। আমি সারসংক্ষেপটা দিলামঃ ১। প্যানেলের বাইরের ১৪৯৮ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২। ৯২৬ জনের র্যাঙ্ক বদলানো হয়েছে। ৩। ৪০৯১ জনের ওএমআরে গরমিল ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে ৬২৭৬ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগ অংশটাই কিন্তু অশিক্ষক কর্মচারী। যেমন, ওই ৪০৯১ এর মধ্যে ২৫২৩ জনই অশিক্ষক।ফলে ২৬০০০ নিয়োগের মধ্যে ৬২৭৬ টা কেসে, যার বেশিরভাগ অংশটাই অশিক্ষক, দুর্নীতি, বেনিয়ম অবশ্যই হয়েছে। ... ...
আরজিকরের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি জানি, এই "শোনা যাচ্ছে"র উৎসগুলো কী। আগস্টের ৯ তারিখ ঘটে ঘটনাটা। পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যাপারটা কোনোমতে শেষ করে, চাপাচুপি দিয়ে দিতে পারলে বাঁচত। আদালতে সেই নিয়ে, ধমকানিও খেয়েছে তারা। সন্দেহের একটা উৎস সেটা। কিন্তু স্রেফ সন্দেহ থেকেই তো "শোনা যাচ্ছে"র উৎপত্তি হয়না। তার জন্য সুনির্দিষ্ট করে কাউকে কিছু বলতে হয়। বা কিছু মালমশলা তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে গোটা চারেক এরকম উৎস তো পাওয়া যায়ই। ১। উৎস এক। চিকিৎসক। ঘটনাটা ঘটে ৯ তারিখ। ময়নাতদন্ত হয়ে যাবার পর, তার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী আগস্টের ১২ তারিখ আনন্দবাজার অনলাইনে বলেনঃ "পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা লিখেছে, তাতে একটা হিউজ পরিমান, প্রায় দেড়শো গ্রামের বেশি লিকুইড স্যাম্পল তারা পেয়েছে, সেটা হয়তো কিছুটা রক্তমাখা সিমেন হতে পারে, কিন্তু এতটা ভারি স্যাম্পল, আমাদের যা মনে হয়, এটা একজনের বীর্য হতে পারেনা।" এর ভিডিও অনলাইনে ছিল এবং আছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল "‘এক জনের পক্ষে সম্ভব নয়’, দাবি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের"। ... ...
ইনফোসিস কার্যত ঘাড়-ধাক্কা দিয়ে কর্মচারিদের বার করে দিল এই কদিন আগে। ট্রাম্পের সরকার এসেই কিছু লাখ সরকারি কর্মচারিকে পদত্যাগ করতে বলেছিল। কদিন আগে আবাপ কয়েকশো কর্মীকে চুপচাপ ছাঁটাই করে দিল। এইগুলো এখন চলবে। এবং আমরা কেউই এর আওতার বাইরে না। নব্বইয়ের দশকের উদারীকরণ যে নতুন কর্মসংস্থান, নতুন দিগন্তের আশা দেখিয়েছিল, সেসব এখন মৃত, উদারীকরণের কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে। এইটা একটা নতুন ব্যাপার। আজ পর্যন্ত, নতুন প্রযুক্তি পৃথিবীতে আসেনি তা নয়, চাকা আবিষ্কার থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পর্যন্ত, এসেই চলেছে। প্রতিটাতেই প্রচুর লোকের কাজ গেছে। চাকা আবিষ্কারের সময়ও আন্দাজ করতে পারি, ঘাড়ে করে মোট বইতেন যাঁরা, তাঁদের কাজ গিয়েছিল, আর তথ্যপ্রযুক্তির অটোমেশনে, ধরুন গাড়ি-কোম্পানির লোকেদের কাজ গিয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিটাতেই নতুন কাজের দিগন্তও খুলে গিয়েছিল। চাকা আবিষ্কারের পর প্রয়োজন হয়েছিল প্রচুর গাড়োয়ান, প্রচুর পশুপালকের। তথ্যপ্রযুক্তিতে অজস্র মানুষ কাজ পেয়েছেন। চাকা পুঁজিবাদের বহু আগে আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু আধুনিক পুঁজিবাদে এই জিনিসটা অভাবনীয় গতি পেয়েছিল। বস্তুত বলাই হত, পুঁজিবাদ টিকে আছে উদ্ভাবনের উপর। একটা করে সংকট আসবে, আর নতুন উদ্ভাবন খুলে দেবে সংকটমুক্তির উপায়। কিন্তু পুঁজিবাদের জন্যও আজকের দিনটা নতুন। এমন একটা প্রযুক্তি আসতে চলেছে, খানিকটা এসেও গেছে, হ্যাঁ, আমি এআই এর কথাই বলছি, যে উদ্ভাবন নতুন কর্মসংস্থানের রাস্তা দেখাবে বলে কেউই বলতে পারছেননা, কর্মসংকোচনটা তো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে, প্রিন্ট মিডিয়া ধীরে-সুস্থে উঠে যেতে চলেছে, টিভি হয়তো আরও কিছুদিন টিকবে, সিনেমার কী হাল হবে কেউ জানেনা। ওটিটি প্লাটফর্মগুলো সংখ্যায় মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। সরকারি চাকরি যাঁরা করেন, একেবারেই নিরাপদ থাকবেন না। সরকারের আয় কমলে বাজে খরচ কমানোর দিকে মন দিতেই হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের লোকেদের আপাতত তেমন বিপদ নেই, এমনিতেই তাঁরা বেশ খারাপ অবস্থায় আছেন, কিন্তু খদ্দেরদের কাজ না থাকলে তাঁরাই বা বেচবেন কাদের। ... ...
১। আগ্রাসী হিন্দুত্বের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চলছে। ২। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড়ো পুঁজির হাতে সম্পদ তুলে দেবার সুবন্দোবস্তো চলছে। ৩। গণতন্ত্রের উপর আঘাত চলছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ইউএপিএ, পিএমএলএ এইসব আইন ব্যবহার বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা হচ্ছে। সাংবাদিক, স্বাধীন মিডিয়ার উপরও আক্রমণ চলছে। ৪। রাজ্যের অধিকারের উপর আঘাত চলছে। বিরোধী-শাসিত রাজ্যদের প্রাপ্য দেওয়া হচ্ছেনা। রাজ্যপালকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫। অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। কর্পোরেট লুট চলছে। অসাম্য ক্রমবর্ধমান। কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা খুব খারাপ। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, ক্রমবর্ধমান। হিন্দুত্বকে পদ্ধতিগতভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। স্বৈরতন্ত্র জোরদার হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে খর্ব করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ ছোটো হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যকে ক্রমশ বেসরকারি দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারতীয় (মিশ্র) সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা হচ্ছে। মিডিয়াগুলোকে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। মহিলা, যুব, দলিত, আদিবাসীদের উপর আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। পরিবেশগত বিপর্যয় আসন্ন। ... ...
ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ মানে সে তো আমার আপনারই টাকা ! এখনো কতদিন নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন ! ... ...
ভারতে ধনী দরিদ্রদের ফারাক ক্রমশ বাড়ছে। ... ...
দুইজন সাদা পোশাকের পুলিশ আমাকে আর জি কর হাসপাতালের একটি হলে নিয়ে যান। সেখানে একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন এবং আজ আদালতে প্রদর্শিত সিসিটিভি ফুটেজ (Mat Exbt. LVII) আমাকে দেখানো হয়। আমি ওই ফুটেজে নিজেকে শনাক্ত করি। এরপর আমাকে সেই কক্ষে বসতে বলা হয় এবং পরে দুই সাদা পোশাকের পুলিশ আমাকে নিয়ে যান। বাইরে এসে দেখি একটি প্রিজন ভ্যান এবং অনেক মিডিয়া ও লোকজন জড়ো হয়েছেন। এটি ০৯.০৮.২০২৪ তারিখের রাত। আর জি কর থেকে আমাকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় আমার ফোন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গ্রহণ করেননি। ... ...