আরেকটু গভীরে ঢুকে দেখা যাক, কেন দুর্নীতি। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার কোনো ওএমআর শিট পাওয়া যায়নি, ওগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ম মেনেই, এসএসসি বলেছে, আদালতও আংশিকভাবে একমত হয়েছে। এসএসসির সার্ভারে স্ক্যানড কপিও পাওয়া যায়নি। তাহলে দুর্নীতি বোঝা গেল কীকরে? এসএসসির দুই ভেন্ডার, তাদের কাছে আলাদা করে স্ক্যানড কপিগুলো পাওয়া গেছে। মিলিয়েও দেখা হয়েছে। এসএসসিও সেখান থেকেই ডেটা নিত (এটা আইনী না বেআইনী বলা নেই, ধরে নিচ্ছি আইনী বা ধূসর এলাকায় পড়ে)। এই স্ক্যানড কপি এবং এসএসসির সার্ভারে থাকা নম্বর মিলিয়ে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে গরমিল আছে। এই মেলানোর কাজটা এসএসসিই করে কোর্টে দিয়েছে। এর অনেকগুলো সারণী আছে রায়ে। আমি সারসংক্ষেপটা দিলামঃ ১। প্যানেলের বাইরের ১৪৯৮ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২। ৯২৬ জনের র্যাঙ্ক বদলানো হয়েছে। ৩। ৪০৯১ জনের ওএমআরে গরমিল ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে ৬২৭৬ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগ অংশটাই কিন্তু অশিক্ষক কর্মচারী। যেমন, ওই ৪০৯১ এর মধ্যে ২৫২৩ জনই অশিক্ষক।ফলে ২৬০০০ নিয়োগের মধ্যে ৬২৭৬ টা কেসে, যার বেশিরভাগ অংশটাই অশিক্ষক, দুর্নীতি, বেনিয়ম অবশ্যই হয়েছে। ... ...
আরজিকরের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি জানি, এই "শোনা যাচ্ছে"র উৎসগুলো কী। আগস্টের ৯ তারিখ ঘটে ঘটনাটা। পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যাপারটা কোনোমতে শেষ করে, চাপাচুপি দিয়ে দিতে পারলে বাঁচত। আদালতে সেই নিয়ে, ধমকানিও খেয়েছে তারা। সন্দেহের একটা উৎস সেটা। কিন্তু স্রেফ সন্দেহ থেকেই তো "শোনা যাচ্ছে"র উৎপত্তি হয়না। তার জন্য সুনির্দিষ্ট করে কাউকে কিছু বলতে হয়। বা কিছু মালমশলা তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে গোটা চারেক এরকম উৎস তো পাওয়া যায়ই। ১। উৎস এক। চিকিৎসক। ঘটনাটা ঘটে ৯ তারিখ। ময়নাতদন্ত হয়ে যাবার পর, তার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী আগস্টের ১২ তারিখ আনন্দবাজার অনলাইনে বলেনঃ "পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা লিখেছে, তাতে একটা হিউজ পরিমান, প্রায় দেড়শো গ্রামের বেশি লিকুইড স্যাম্পল তারা পেয়েছে, সেটা হয়তো কিছুটা রক্তমাখা সিমেন হতে পারে, কিন্তু এতটা ভারি স্যাম্পল, আমাদের যা মনে হয়, এটা একজনের বীর্য হতে পারেনা।" এর ভিডিও অনলাইনে ছিল এবং আছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল "‘এক জনের পক্ষে সম্ভব নয়’, দাবি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের"। ... ...
ইনফোসিস কার্যত ঘাড়-ধাক্কা দিয়ে কর্মচারিদের বার করে দিল এই কদিন আগে। ট্রাম্পের সরকার এসেই কিছু লাখ সরকারি কর্মচারিকে পদত্যাগ করতে বলেছিল। কদিন আগে আবাপ কয়েকশো কর্মীকে চুপচাপ ছাঁটাই করে দিল। এইগুলো এখন চলবে। এবং আমরা কেউই এর আওতার বাইরে না। নব্বইয়ের দশকের উদারীকরণ যে নতুন কর্মসংস্থান, নতুন দিগন্তের আশা দেখিয়েছিল, সেসব এখন মৃত, উদারীকরণের কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে। এইটা একটা নতুন ব্যাপার। আজ পর্যন্ত, নতুন প্রযুক্তি পৃথিবীতে আসেনি তা নয়, চাকা আবিষ্কার থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পর্যন্ত, এসেই চলেছে। প্রতিটাতেই প্রচুর লোকের কাজ গেছে। চাকা আবিষ্কারের সময়ও আন্দাজ করতে পারি, ঘাড়ে করে মোট বইতেন যাঁরা, তাঁদের কাজ গিয়েছিল, আর তথ্যপ্রযুক্তির অটোমেশনে, ধরুন গাড়ি-কোম্পানির লোকেদের কাজ গিয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিটাতেই নতুন কাজের দিগন্তও খুলে গিয়েছিল। চাকা আবিষ্কারের পর প্রয়োজন হয়েছিল প্রচুর গাড়োয়ান, প্রচুর পশুপালকের। তথ্যপ্রযুক্তিতে অজস্র মানুষ কাজ পেয়েছেন। চাকা পুঁজিবাদের বহু আগে আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু আধুনিক পুঁজিবাদে এই জিনিসটা অভাবনীয় গতি পেয়েছিল। বস্তুত বলাই হত, পুঁজিবাদ টিকে আছে উদ্ভাবনের উপর। একটা করে সংকট আসবে, আর নতুন উদ্ভাবন খুলে দেবে সংকটমুক্তির উপায়। কিন্তু পুঁজিবাদের জন্যও আজকের দিনটা নতুন। এমন একটা প্রযুক্তি আসতে চলেছে, খানিকটা এসেও গেছে, হ্যাঁ, আমি এআই এর কথাই বলছি, যে উদ্ভাবন নতুন কর্মসংস্থানের রাস্তা দেখাবে বলে কেউই বলতে পারছেননা, কর্মসংকোচনটা তো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে, প্রিন্ট মিডিয়া ধীরে-সুস্থে উঠে যেতে চলেছে, টিভি হয়তো আরও কিছুদিন টিকবে, সিনেমার কী হাল হবে কেউ জানেনা। ওটিটি প্লাটফর্মগুলো সংখ্যায় মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। সরকারি চাকরি যাঁরা করেন, একেবারেই নিরাপদ থাকবেন না। সরকারের আয় কমলে বাজে খরচ কমানোর দিকে মন দিতেই হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের লোকেদের আপাতত তেমন বিপদ নেই, এমনিতেই তাঁরা বেশ খারাপ অবস্থায় আছেন, কিন্তু খদ্দেরদের কাজ না থাকলে তাঁরাই বা বেচবেন কাদের। ... ...
১। আগ্রাসী হিন্দুত্বের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চলছে। ২। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড়ো পুঁজির হাতে সম্পদ তুলে দেবার সুবন্দোবস্তো চলছে। ৩। গণতন্ত্রের উপর আঘাত চলছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে ইউএপিএ, পিএমএলএ এইসব আইন ব্যবহার বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা হচ্ছে। সাংবাদিক, স্বাধীন মিডিয়ার উপরও আক্রমণ চলছে। ৪। রাজ্যের অধিকারের উপর আঘাত চলছে। বিরোধী-শাসিত রাজ্যদের প্রাপ্য দেওয়া হচ্ছেনা। রাজ্যপালকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫। অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। কর্পোরেট লুট চলছে। অসাম্য ক্রমবর্ধমান। কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা খুব খারাপ। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, ক্রমবর্ধমান। হিন্দুত্বকে পদ্ধতিগতভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। স্বৈরতন্ত্র জোরদার হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে খর্ব করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ ছোটো হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যকে ক্রমশ বেসরকারি দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারতীয় (মিশ্র) সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা হচ্ছে। মিডিয়াগুলোকে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। মহিলা, যুব, দলিত, আদিবাসীদের উপর আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। পরিবেশগত বিপর্যয় আসন্ন। ... ...
ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ মানে সে তো আমার আপনারই টাকা ! এখনো কতদিন নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন ! ... ...
ভারতে ধনী দরিদ্রদের ফারাক ক্রমশ বাড়ছে। ... ...
দুইজন সাদা পোশাকের পুলিশ আমাকে আর জি কর হাসপাতালের একটি হলে নিয়ে যান। সেখানে একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন এবং আজ আদালতে প্রদর্শিত সিসিটিভি ফুটেজ (Mat Exbt. LVII) আমাকে দেখানো হয়। আমি ওই ফুটেজে নিজেকে শনাক্ত করি। এরপর আমাকে সেই কক্ষে বসতে বলা হয় এবং পরে দুই সাদা পোশাকের পুলিশ আমাকে নিয়ে যান। বাইরে এসে দেখি একটি প্রিজন ভ্যান এবং অনেক মিডিয়া ও লোকজন জড়ো হয়েছেন। এটি ০৯.০৮.২০২৪ তারিখের রাত। আর জি কর থেকে আমাকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় আমার ফোন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গ্রহণ করেননি। ... ...
বৃন্দা গ্রোভার এবং তাঁর বাহিনী তিলোত্তমার বাবা-মার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। কাল এই মামলা তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন। বিকাশ ভট্টাচার্যের পর এই দ্বিতীয় আইনজীবী। বিকাশকে বাবা-মাই সরিয়েছিলেন বলে শোনা গিয়েছিল, এক্ষেত্রে পাওয়া গেছে বৃন্দার একটা বিবৃতি। পুরো বিবৃতিটা মিডিয়ায় নেই। ব্যক্তিগত সূত্রে পাওয়া। টুকে রাখলাম। খুব বড় ব্যাপার নয় বলে আর ডাবলচেক করিনি। ... ...
নির্বাচনী বন্ডের যে ডেটা প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে আমি আর মৈত্রীশ-দা (মৈত্রীশ ঘটক, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স) বেশ কিছুদিন ধরে নাড়াচাড়া করছি। ইতিমধ্যে আমরা এই ডেটা নিয়ে লিখে ফেলেছি তিনটি লেখা -- দুটি বাংলা, একটি ইংরিজি। বাংলা লেখাদুটি বেরিয়েছে এই সময় সংবাদপত্রে এবং অনুষ্টুপ শারদীয়াতে। ইংরিজি লেখাটি ইন্ডিয়া ফোরামে। এর মধ্যে অনুষ্টুপের প্রবন্ধটি দীর্ঘতম এবং আমাদের মতে তার বিশ্লেষণটি এই তিনটি প্রবন্ধের মধ্যে সবচেয়ে বিস্তারিত এবং গভীর। সেই প্রবন্ধটিই আমরা আরেকবার আমার এই ব্লগের মাধ্যমে আন্তর্জালে রাখলাম মূলত তাঁদের জন্য যাঁরা অনুষ্টুপের শারদীয় সংখ্যাটি সংগ্রহ করতে পারছেন না। লেখাটি বেশ দীর্ঘ, আমার অনুরোধ ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়বেন। পড়লে, আমার বিশ্বাস, ভারতের অর্থনৈতিক রাজনীতি নিয়ে চিন্তার খোরাক পাবেন। ... ...
কেন্দ্রীয় সংস্থায় স্বজনপোষণ বা দুর্নীতির অভিযোগ করলে কী হয়? একটা হাতে-গরম উদাহরণ হল খড়গপুর আইআইটি। এর প্রথম অংশটা মিডিয়ায় বেরিয়েছে, যে, আইআইটির বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইআইটির শিক্ষক সংগঠন "অভূতপূর্ব স্বজনপোষণ"এর অভিযোগ এনেছিল। তাঁরা ধর্ণায় বসেননি, কোনো রাজনৈতিক বা অদলীয় জমায়েতও করেননি, খুবই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রককে। নতুন ডিরেক্টর নিয়োগ হবে সামনের জানুয়ারিতে, তিনি যেন যোগ্য হন, এই ছিল আবেদন। ... ...
কোথা থেকে শুরু করা যায় বলা মুশকিল। ময়নাতদন্ত নিয়ে এত জলঘোলা হয়েছে, সেখান থেকেই শুরু করা যাক। ১১ই সেপ্টেম্বর আনন্দবাজারে নীলোৎপল বিশ্বাস লিখেছিলেন "মৃতার 'পোশাক রহস্য'"। প্রথম পাতার নিচে বড় হেডলাইন ছিল, যার মোদ্দা কথা হচ্ছে, ময়নাতদন্তে মৃতার নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস গায়েব। মাসদুই পরে ১৯শে নভেম্বর আদালত জানাচ্ছেন, যে, ডাক্তার অন্তরা বর্মনের সাক্ষ্যে প্রমাণিত, যে, নিম্নাঙ্গের পোশাক বিলক্ষণ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ফলে ওগুলো গায়েব-টায়েব হয়নি। সহজেই আন্দাজ করা করা যায়, আলাদা করে জমা করার জন্য ময়নাতদন্তে ওটার উল্লেখ নেই। যেকোনো অপরাধ-সাংবাদিকেরই এইটুকু জানা উচিত। নইলে বলতে হবে তিনি সাংবাদিকতা নয়, স্বপনকুমারের মতো রহস্য-রোমাঞ্চ লিখছেন। ... ...