অতিমারির ভয়ঙ্কর সময়টা হয়তো আমরা সবাই পার হয়ে এসেছি কিন্তু তার প্রভাব সবটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি আমরা তা বোধহয় নয়। অতিমারি আমাদের জীবনের চেনা অভ্যস্ত ছন্দটাকেই বিলকুল বদলে দিয়েছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, সোশ্যাল ডিসটেন্সের পাশাপাশি কর্মজীবনের কাঠামোতেও বদল এসেছে। এই প্রবন্ধে সেই ফেলে আসা কালান্তক সময়ের কয়েকটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মোহন মুদীর মতো মানুষ একটা কঠিন সময়ের প্রতীক। ... ...
সমস্ত ইতিহাসের মধ্যে এই একুশে জুলাইয়ের ইতিহাসটাই একদম স্মৃতি থেকে বলতে পারি। তখন ৯৩ সাল। এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়ে গেছে, দাঙ্গা-টাঙ্গাও, হয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোথায় বিজেপি? লোকে বলত, ওসব তো গোবলয়ের অসভ্য কাণ্ডকারখানা, এখানে শুধু সিপিএম-কংগ্রেস। সিপিএম তখনও ৭২-৭৭ এর কংগ্রেসি গুণ্ডামি আর ১১০০ কর্মী খুন হবার কথা নিয়ে ব্যস্ত। এখন যেমন ৩৪ বছর, তখন ছিল ৭২-৭৭। আর কংগ্রেস ভাবত, এত খুন-জখম-ধর্ষণ-টর্ষনের পরেও, এই সিপিএম ব্যাটারা জেতে কীকরে। গনিখান সোজাসাপ্টা লোক ছিলেন। ভোট-টোটের চক্করে না গিয়ে স্টেনগান হাতে নিয়ে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলেছিলেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের ধারণা ছিল লোকে ভোট দিতে পারলেই তিনি জিতবেন। ওইজন্যই ৯৩ সালে বাধ্যতামূলক ভোটার কার্ডের দাবীতে মিছিল ডেকেছিলেন ২১ জুলাই। ... ...
বাঙালিকে মেরে তাড়ানো হচ্ছে গোটা গোবলয় থেকে, চারদিকে গোদি-মিডিয়া আর হিন্দুবীরদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই, অতএব তাঁরা যেটা পারেন, সেটাই শুরু করেছেন, অর্থাৎ গুলবাজি। নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অগ্রণী সৈনিক কর্নেল সুমন দে। কীরকম গুলবাজি, একটু মন দিয়ে পড়ুন। কাল দেখলাম, হাত-পা নেড়ে, গলায় আবেগ এনে টিভিতে বললেন, "২০০৪ সালে রাজ্যসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল বলেছিলেন, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২০০১ এর ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১ কোটি ২০লক্ষ ৫৩ হাজার, যার মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গে অর্ধেকেরও বেশি, ৫৭ লক্ষ" (সংক্ষেপিত, এবং চোখ গোলগোল করাটাও দেখানো গেলনা) । তারপর প্রচণ্ড নাটক করে এর সঙ্গে যোগ করলেন, ২০০১ এই যদি সংখ্যা এই হয়, ভাবুন এখন সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ... ...
এর একটা উত্তর হল বেশ করি। কষ্টিপাথরহীন জীবন কোনো জীবনই নয়। কিন্তু তার চেয়েও একটা বড় কারণ আছে, সেটা হল দেশভাগ। দেশভাগের ইতিহাস যত পড়েছি, তত চমকে চমকে উঠেছি, ভদ্রসমাজের কাণ্ড দেখে। দেশভাগের ইতিহাস বলছে, যথেষ্ট গৌরবোজ্জ্বল অতীতের পরেও বিশেষ বিশেষ সময় বঙ্গীয় ভদ্রলোকরা চোক করে গিয়ে নেহাৎই আকাটের মতো আচরণ করেন। শুধু আকাট হলে সমস্যা ছিলনা, ভয়ঙ্কর বিপজ্জনকও হয়ে উঠেন, ডিলিউশনের রোগি অনেকসময় যেমন নিজের জন্য নিজেই একটা বড় বিপদ, সেইরকমই। ... ...
শ্যামাপ্রসাদ বাংলার রাজনীতিতে নেহাৎই খুচরো একটা বিষয় ছিলেন, প্রভাব কখনোই তেমন বিস্তার করতে পারেননি। ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন হিন্দু মহাসভায়। ঢুকেই নেতা। নেতা হয়েই কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে গেলেন সুভাষের কাছে নির্বাচনী সমঝোতা করতে, এবং ঘাড়ধাক্কা খেয়ে ফিরলেন। সুভাষ বলেছিলেন, এইসব করতে গেলে, দরকারে গায়ের জোরে আটকাবেন। প্রাথমিক সাফল্য বলতে এই। ... ...
কালিগঞ্জে একটা উপনির্বাচন হল। তাতে খুব বেশি বদল হল তা নয়। কিন্তু কিছু জিনিস পরিষ্কার করে বোঝা গেল। টিভিতে দেখবেন, এই একটা উপনির্বাচন নিয়েই হইচই চলছে, সবাই ফেঁড়ে চেঁচাচ্ছেন, তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা গাদা গাদা কথা বলছেন। এইসব সঞ্চালক এবং বিশেষজ্ঞদের কোথা থেকে ধরে আনা হয় জানিনা, তবে এঁরাই কদিন আগে লাহোর করাচিতে জয়পতাকা উড়িয়ে দিয়ে জগৎসভায় ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এছাড়াও একটা বড় কৃতিত্ব হল, আজ পর্যন্ত একটা নির্বাচনেও বিশ্লেষণ, এক্সিট পোল দিয়ে কিছুই মেলাতে পারেননি। তাই এইসবে কান দেবার কোনো কারণ নেই। শুধু ফ্যাক্ট দেখা যাক। ফ্যাক্ট হল বিজেপি গোহারান হেরেছে। ৫০ হাজারের বেশি ভোটে। শুধু তাই নয়, উপনির্বাচনেও, যেখানে ভোট একটু কম পড়ে, তাতেও মার্জিন বেড়েছে। মার্জিন এরকম... ... ...
এই বিভ্রান্তিমূলক তথ্যপ্রবাহের কিছু অংশ মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রবেশ করে। এটা এমন একটা পরিবর্তন, যা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, কারণ ভারতের এমন কিছু সংবাদমাধ্যমের মধ্যে এই বিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যারা আগে নিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত ছিল। খবর প্রকাশে প্রতিযোগিতা এবং অতিরঞ্জিত জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রিপোর্টিং, এই চার দিনের সংঘাতকালীন সময়ে চরমে পৌঁছে যায়, যেখানে সংবাদ উপস্থাপক ও বিশ্লেষকরা পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত দুটি দেশের যুদ্ধের চিয়ার-লিডার হয়ে ওঠেন। কিছু পরিচিত টিভি চ্যানেল যাচাই না করা তথ্য প্রচার করে বা এমনকি সম্পূর্ণ ভুয়া গল্পও প্রকাশ করে, জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার এই প্রাবল্যে। সংবাদমাধ্যমগুলো একটি তথাকথিত পাকিস্তানি পারমাণবিক ঘাঁটিতে ভারতীয় হামলার খবর প্রচার করেছিল, যা নাকি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছিল। তারা হামলার স্থান চিহ্নিত করে বিস্তারিত মানচিত্রও শেয়ার করেছিল। কিন্তু এই দাবিগুলো সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় নৌবাহিনী করাচিতে হামলা চালিয়েছে—এই গল্পও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, কিন্তু পরে তা অস্বীকৃত হয়েছে। ... ...
আরেকটু গভীরে ঢুকে দেখা যাক, কেন দুর্নীতি। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার কোনো ওএমআর শিট পাওয়া যায়নি, ওগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ম মেনেই, এসএসসি বলেছে, আদালতও আংশিকভাবে একমত হয়েছে। এসএসসির সার্ভারে স্ক্যানড কপিও পাওয়া যায়নি। তাহলে দুর্নীতি বোঝা গেল কীকরে? এসএসসির দুই ভেন্ডার, তাদের কাছে আলাদা করে স্ক্যানড কপিগুলো পাওয়া গেছে। মিলিয়েও দেখা হয়েছে। এসএসসিও সেখান থেকেই ডেটা নিত (এটা আইনী না বেআইনী বলা নেই, ধরে নিচ্ছি আইনী বা ধূসর এলাকায় পড়ে)। এই স্ক্যানড কপি এবং এসএসসির সার্ভারে থাকা নম্বর মিলিয়ে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে গরমিল আছে। এই মেলানোর কাজটা এসএসসিই করে কোর্টে দিয়েছে। এর অনেকগুলো সারণী আছে রায়ে। আমি সারসংক্ষেপটা দিলামঃ ১। প্যানেলের বাইরের ১৪৯৮ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২। ৯২৬ জনের র্যাঙ্ক বদলানো হয়েছে। ৩। ৪০৯১ জনের ওএমআরে গরমিল ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে ৬২৭৬ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগ অংশটাই কিন্তু অশিক্ষক কর্মচারী। যেমন, ওই ৪০৯১ এর মধ্যে ২৫২৩ জনই অশিক্ষক।ফলে ২৬০০০ নিয়োগের মধ্যে ৬২৭৬ টা কেসে, যার বেশিরভাগ অংশটাই অশিক্ষক, দুর্নীতি, বেনিয়ম অবশ্যই হয়েছে। ... ...
আরজিকরের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি জানি, এই "শোনা যাচ্ছে"র উৎসগুলো কী। আগস্টের ৯ তারিখ ঘটে ঘটনাটা। পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যাপারটা কোনোমতে শেষ করে, চাপাচুপি দিয়ে দিতে পারলে বাঁচত। আদালতে সেই নিয়ে, ধমকানিও খেয়েছে তারা। সন্দেহের একটা উৎস সেটা। কিন্তু স্রেফ সন্দেহ থেকেই তো "শোনা যাচ্ছে"র উৎপত্তি হয়না। তার জন্য সুনির্দিষ্ট করে কাউকে কিছু বলতে হয়। বা কিছু মালমশলা তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে গোটা চারেক এরকম উৎস তো পাওয়া যায়ই। ১। উৎস এক। চিকিৎসক। ঘটনাটা ঘটে ৯ তারিখ। ময়নাতদন্ত হয়ে যাবার পর, তার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী আগস্টের ১২ তারিখ আনন্দবাজার অনলাইনে বলেনঃ "পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা লিখেছে, তাতে একটা হিউজ পরিমান, প্রায় দেড়শো গ্রামের বেশি লিকুইড স্যাম্পল তারা পেয়েছে, সেটা হয়তো কিছুটা রক্তমাখা সিমেন হতে পারে, কিন্তু এতটা ভারি স্যাম্পল, আমাদের যা মনে হয়, এটা একজনের বীর্য হতে পারেনা।" এর ভিডিও অনলাইনে ছিল এবং আছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল "‘এক জনের পক্ষে সম্ভব নয়’, দাবি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের"। ... ...