পরিবার -এক অনন্য সামাজিক সংগঠন। পারিবারিক আবহেই একটু একটু করে ব্যক্তি মানুষের সামাজিক হয়ে ওঠা।একটি শিশু পরিবারের মধ্যেই অনেক অনেক ভালোবাসা আর নিরাপত্তাকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। একালে পরিবারের পরিসর অবশ্য আগের তুলনায় অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। যৌথ পরিবার ভেঙে ভেঙে অণুতম পরিবারে পরিবর্তিত হয়েছে হাল আমলে। এরফলে আমাদের পারিবারিক চাওয়া পাওয়ার স্তরেও এসেছে বড়ো পরিবর্তন। এই নিবন্ধ এমনই বদলে যাওয়া সম্পর্কের নব্য রসায়ন নিয়ে। ... ...
এই আত্মজীবনী একইসঙ্গে সাহসী, শৈল্পিক, সৎ, আন্তরিক। ভাষার বহুবর্ণিল প্রকাশধর্মীতা এবং স্বচ্ছতা যা তাঁর প্রথম উপন্যাসের পাঠককে মুগ্ধ করেছিল তা এখানেও অন্তর্লীন। সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর সামাজিক কার্যাবলী এবং প্রতিরোধের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত তীক্ষ্ণতা এবং শ্লেষ। কিন্তু তাঁর ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গীকে মুড়ে রেখেছে মমত্ব এবং আত্মউদাসীনতার এক যুগলবন্দী যা আমাদের প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বইটির প্রতি অনুরক্ত রাখে। ... ...
অতিমারির ভয়ঙ্কর সময়টা হয়তো আমরা সবাই পার হয়ে এসেছি কিন্তু তার প্রভাব সবটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি আমরা তা বোধহয় নয়। অতিমারি আমাদের জীবনের চেনা অভ্যস্ত ছন্দটাকেই বিলকুল বদলে দিয়েছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, সোশ্যাল ডিসটেন্সের পাশাপাশি কর্মজীবনের কাঠামোতেও বদল এসেছে। এই প্রবন্ধে সেই ফেলে আসা কালান্তক সময়ের কয়েকটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মোহন মুদীর মতো মানুষ একটা কঠিন সময়ের প্রতীক। ... ...
কী হয়েছিল ১৬ ই আগস্ট ১৯৪৬ সালে? এর এক মাস আগে পর্যন্ত দাঙ্গা হাঙ্গামার কোনো আঁচ পাওয়া যায়নি। ক্যাবিনেট মিশন তখন ভারতকে টুকরো না করার শেষ চেষ্টা করছে। একটা ঢিলেঢালা ইউনিয়নের প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাব মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মুসলিম লিগ অংশগ্রহণ করবে বলেছে। কিন্তু কংগ্রেস ক্রমাগত টালবাহানা করছে। শেষকালে জুলাইয়ের ১০ এ নেহরু জানালেন, যে, কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকবে বটে, কিন্তু ক্যাবিনেট মিশনের একীকৃত ভারতবর্ষের পরিকল্পনা মেনে নেবার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জিন্না কংগ্রেসের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ডাক দিলেন ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডের। আর কিছু না, সেটা একটা দেশব্যাপী হরতালের ডাক। ... ...
হিন্দি ভাষাটা, তার জন্মলগ্ন থেকেই সাম্প্রদায়িকতা এবং আধিপত্যবাদের ধারক, বাহক এবং জনক। কারণ, হিন্দি আর উর্দু এইদুটো ভাষা আলাদা কিছু না। একই ভাষা। আমি বলছিনা, আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন। আজ থেকে বহু বছর আগে ১৯৪৪ সালে "ভারতের ভাষা ও ভাষাসমস্যা"তে তিনি লিখছেন, ভারতের মুখ্য ১৫ টি ভাষাকে আসলে ১২ টিতে দাঁড় করানো যায়। "(১) হিন্দী ( বা সাধু হিন্দী অথবা নাগরী হিন্দী) এবং (২) উর্দু - এই দুইটী সত্য-সত্য হইতেছে, সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন দুইটী লিপির স্বারা এবং বিদেশী শব্দ আমদানী করিয়া একই ভাষাকে দুইটী আকার দেওয়া মাত্র;"। (পাতা -৮) । প্রসঙ্গত উনি শুধু ভাষাচার্য ছিলেন না, এর ৪ বছর পরে ১৯৪৮ সালে হিন্দি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি লাভ করেন। ... ...
যদুবাবু একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন গুরুচন্ডালির বুলবুলভাজা বিভাগে। না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়ে দেখুন। লিঙ্ক এইখানেঃ https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=32787 লেখাটি পড়ে ভাবলাম লেখাতে অনুল্লেখিত দু-একটি বিষয়ের ওপর আলো ফেলার চেষ্টা করা যেতে পারে। ... ...
কলকেতা, ডায়মন্ড হারবার, রানাঘাট, তিব্বত - সাকুল্যে সওয়া ঘন্টার পথ। পশ্চিম বঙ্গ, দিল্লি-বম্বে-মাদ্রাজ, হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু, আর তারপর সিধে বিলেত-আমেরিকা, সেও সওয়া ঘন্টারই পথ। মাঝে আবার আরব দেশগুলিও আছে, মধ্য-প্রাচ্যের দুবাই-আবুধাবি-সৌদি। ... ...
বাংলা তিনবার ভেঙেছে। প্রথম বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫ সালে। প্রতিবাদে সারা বাংলা জুড়ে রাখিবন্ধন হয়েছিল সেবার। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রাস্তায় নেমেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "রবিকাকা বললেন, সবাই হেঁটে যাব, গাড়িঘোড়া নয়।—রওনা হলুম সবাই গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে। রাস্তার দুধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাত অবধি লোক দাঁড়িয়ে আছে—মেয়েরা খই ছড়াচ্ছে, শাঁখ বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম—যেন একটা শোভাযাত্রা, দিনুও সঙ্গে ছিল, গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে মিছিল চলল—বাংলার মাটি, বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল পুণ্য হউক পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান।" তারপর সেটাই একটা মিছিল হয়ে গেল। যাকেই সামনে পাওয়া যাচ্ছে, তার হাতেই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে রাখি। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে। প্রায় অনাবৃত ঊর্ধাঙ্গে কলকাতার রাজপথে হাঁটছেন রবীন্দ্রনাথ। পাথুরেঘাটা গিয়ে মিছিল যাচ্ছে, বীরু মল্লিকের আস্তাবলে গিয়ে মুসলমান সহিসদের হাতে রাখি পরিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর চললেন চিৎপুরের বড়ো মসজিদের দিকে। মসজিদে যাঁদের পাওয়া গেল, সবাইকে পরানো হল রাখি। তাঁরাও খুশি মনে হেসে রাখি পরেছিলেন সেদিন। এই ঐক্যের তাপে ইংরেজ বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব রদ করতে বাধ্য হয় একটা সময়। ... ...
সমস্ত ইতিহাসের মধ্যে এই একুশে জুলাইয়ের ইতিহাসটাই একদম স্মৃতি থেকে বলতে পারি। তখন ৯৩ সাল। এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়ে গেছে, দাঙ্গা-টাঙ্গাও, হয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোথায় বিজেপি? লোকে বলত, ওসব তো গোবলয়ের অসভ্য কাণ্ডকারখানা, এখানে শুধু সিপিএম-কংগ্রেস। সিপিএম তখনও ৭২-৭৭ এর কংগ্রেসি গুণ্ডামি আর ১১০০ কর্মী খুন হবার কথা নিয়ে ব্যস্ত। এখন যেমন ৩৪ বছর, তখন ছিল ৭২-৭৭। আর কংগ্রেস ভাবত, এত খুন-জখম-ধর্ষণ-টর্ষনের পরেও, এই সিপিএম ব্যাটারা জেতে কীকরে। গনিখান সোজাসাপ্টা লোক ছিলেন। ভোট-টোটের চক্করে না গিয়ে স্টেনগান হাতে নিয়ে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলেছিলেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের ধারণা ছিল লোকে ভোট দিতে পারলেই তিনি জিতবেন। ওইজন্যই ৯৩ সালে বাধ্যতামূলক ভোটার কার্ডের দাবীতে মিছিল ডেকেছিলেন ২১ জুলাই। ... ...
বাঙালিকে মেরে তাড়ানো হচ্ছে গোটা গোবলয় থেকে, চারদিকে গোদি-মিডিয়া আর হিন্দুবীরদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই, অতএব তাঁরা যেটা পারেন, সেটাই শুরু করেছেন, অর্থাৎ গুলবাজি। নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অগ্রণী সৈনিক কর্নেল সুমন দে। কীরকম গুলবাজি, একটু মন দিয়ে পড়ুন। কাল দেখলাম, হাত-পা নেড়ে, গলায় আবেগ এনে টিভিতে বললেন, "২০০৪ সালে রাজ্যসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল বলেছিলেন, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২০০১ এর ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১ কোটি ২০লক্ষ ৫৩ হাজার, যার মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গে অর্ধেকেরও বেশি, ৫৭ লক্ষ" (সংক্ষেপিত, এবং চোখ গোলগোল করাটাও দেখানো গেলনা) । তারপর প্রচণ্ড নাটক করে এর সঙ্গে যোগ করলেন, ২০০১ এই যদি সংখ্যা এই হয়, ভাবুন এখন সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ... ...
এর একটা উত্তর হল বেশ করি। কষ্টিপাথরহীন জীবন কোনো জীবনই নয়। কিন্তু তার চেয়েও একটা বড় কারণ আছে, সেটা হল দেশভাগ। দেশভাগের ইতিহাস যত পড়েছি, তত চমকে চমকে উঠেছি, ভদ্রসমাজের কাণ্ড দেখে। দেশভাগের ইতিহাস বলছে, যথেষ্ট গৌরবোজ্জ্বল অতীতের পরেও বিশেষ বিশেষ সময় বঙ্গীয় ভদ্রলোকরা চোক করে গিয়ে নেহাৎই আকাটের মতো আচরণ করেন। শুধু আকাট হলে সমস্যা ছিলনা, ভয়ঙ্কর বিপজ্জনকও হয়ে উঠেন, ডিলিউশনের রোগি অনেকসময় যেমন নিজের জন্য নিজেই একটা বড় বিপদ, সেইরকমই। ... ...
শ্যামাপ্রসাদ বাংলার রাজনীতিতে নেহাৎই খুচরো একটা বিষয় ছিলেন, প্রভাব কখনোই তেমন বিস্তার করতে পারেননি। ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন হিন্দু মহাসভায়। ঢুকেই নেতা। নেতা হয়েই কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে গেলেন সুভাষের কাছে নির্বাচনী সমঝোতা করতে, এবং ঘাড়ধাক্কা খেয়ে ফিরলেন। সুভাষ বলেছিলেন, এইসব করতে গেলে, দরকারে গায়ের জোরে আটকাবেন। প্রাথমিক সাফল্য বলতে এই। ... ...