হিন্দি ভাষাটা, তার জন্মলগ্ন থেকেই সাম্প্রদায়িকতা এবং আধিপত্যবাদের ধারক, বাহক এবং জনক। কারণ, হিন্দি আর উর্দু এইদুটো ভাষা আলাদা কিছু না। একই ভাষা। আমি বলছিনা, আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন। আজ থেকে বহু বছর আগে ১৯৪৪ সালে "ভারতের ভাষা ও ভাষাসমস্যা"তে তিনি লিখছেন, ভারতের মুখ্য ১৫ টি ভাষাকে আসলে ১২ টিতে দাঁড় করানো যায়। "(১) হিন্দী ( বা সাধু হিন্দী অথবা নাগরী হিন্দী) এবং (২) উর্দু - এই দুইটী সত্য-সত্য হইতেছে, সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন দুইটী লিপির স্বারা এবং বিদেশী শব্দ আমদানী করিয়া একই ভাষাকে দুইটী আকার দেওয়া মাত্র;"। (পাতা -৮) । প্রসঙ্গত উনি শুধু ভাষাচার্য ছিলেন না, এর ৪ বছর পরে ১৯৪৮ সালে হিন্দি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি লাভ করেন। ... ...
যদুবাবু একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন গুরুচন্ডালির বুলবুলভাজা বিভাগে। না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়ে দেখুন। লিঙ্ক এইখানেঃ https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=32787 লেখাটি পড়ে ভাবলাম লেখাতে অনুল্লেখিত দু-একটি বিষয়ের ওপর আলো ফেলার চেষ্টা করা যেতে পারে। ... ...
কলকেতা, ডায়মন্ড হারবার, রানাঘাট, তিব্বত - সাকুল্যে সওয়া ঘন্টার পথ। পশ্চিম বঙ্গ, দিল্লি-বম্বে-মাদ্রাজ, হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু, আর তারপর সিধে বিলেত-আমেরিকা, সেও সওয়া ঘন্টারই পথ। মাঝে আবার আরব দেশগুলিও আছে, মধ্য-প্রাচ্যের দুবাই-আবুধাবি-সৌদি। ... ...
বাংলা তিনবার ভেঙেছে। প্রথম বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫ সালে। প্রতিবাদে সারা বাংলা জুড়ে রাখিবন্ধন হয়েছিল সেবার। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রাস্তায় নেমেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "রবিকাকা বললেন, সবাই হেঁটে যাব, গাড়িঘোড়া নয়।—রওনা হলুম সবাই গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে। রাস্তার দুধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাত অবধি লোক দাঁড়িয়ে আছে—মেয়েরা খই ছড়াচ্ছে, শাঁখ বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম—যেন একটা শোভাযাত্রা, দিনুও সঙ্গে ছিল, গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে মিছিল চলল—বাংলার মাটি, বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল পুণ্য হউক পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান।" তারপর সেটাই একটা মিছিল হয়ে গেল। যাকেই সামনে পাওয়া যাচ্ছে, তার হাতেই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে রাখি। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে। প্রায় অনাবৃত ঊর্ধাঙ্গে কলকাতার রাজপথে হাঁটছেন রবীন্দ্রনাথ। পাথুরেঘাটা গিয়ে মিছিল যাচ্ছে, বীরু মল্লিকের আস্তাবলে গিয়ে মুসলমান সহিসদের হাতে রাখি পরিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর চললেন চিৎপুরের বড়ো মসজিদের দিকে। মসজিদে যাঁদের পাওয়া গেল, সবাইকে পরানো হল রাখি। তাঁরাও খুশি মনে হেসে রাখি পরেছিলেন সেদিন। এই ঐক্যের তাপে ইংরেজ বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব রদ করতে বাধ্য হয় একটা সময়। ... ...
সমস্ত ইতিহাসের মধ্যে এই একুশে জুলাইয়ের ইতিহাসটাই একদম স্মৃতি থেকে বলতে পারি। তখন ৯৩ সাল। এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়ে গেছে, দাঙ্গা-টাঙ্গাও, হয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোথায় বিজেপি? লোকে বলত, ওসব তো গোবলয়ের অসভ্য কাণ্ডকারখানা, এখানে শুধু সিপিএম-কংগ্রেস। সিপিএম তখনও ৭২-৭৭ এর কংগ্রেসি গুণ্ডামি আর ১১০০ কর্মী খুন হবার কথা নিয়ে ব্যস্ত। এখন যেমন ৩৪ বছর, তখন ছিল ৭২-৭৭। আর কংগ্রেস ভাবত, এত খুন-জখম-ধর্ষণ-টর্ষনের পরেও, এই সিপিএম ব্যাটারা জেতে কীকরে। গনিখান সোজাসাপ্টা লোক ছিলেন। ভোট-টোটের চক্করে না গিয়ে স্টেনগান হাতে নিয়ে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলেছিলেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের ধারণা ছিল লোকে ভোট দিতে পারলেই তিনি জিতবেন। ওইজন্যই ৯৩ সালে বাধ্যতামূলক ভোটার কার্ডের দাবীতে মিছিল ডেকেছিলেন ২১ জুলাই। ... ...
বাঙালিকে মেরে তাড়ানো হচ্ছে গোটা গোবলয় থেকে, চারদিকে গোদি-মিডিয়া আর হিন্দুবীরদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই, অতএব তাঁরা যেটা পারেন, সেটাই শুরু করেছেন, অর্থাৎ গুলবাজি। নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অগ্রণী সৈনিক কর্নেল সুমন দে। কীরকম গুলবাজি, একটু মন দিয়ে পড়ুন। কাল দেখলাম, হাত-পা নেড়ে, গলায় আবেগ এনে টিভিতে বললেন, "২০০৪ সালে রাজ্যসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল বলেছিলেন, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২০০১ এর ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১ কোটি ২০লক্ষ ৫৩ হাজার, যার মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গে অর্ধেকেরও বেশি, ৫৭ লক্ষ" (সংক্ষেপিত, এবং চোখ গোলগোল করাটাও দেখানো গেলনা) । তারপর প্রচণ্ড নাটক করে এর সঙ্গে যোগ করলেন, ২০০১ এই যদি সংখ্যা এই হয়, ভাবুন এখন সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ... ...
এর একটা উত্তর হল বেশ করি। কষ্টিপাথরহীন জীবন কোনো জীবনই নয়। কিন্তু তার চেয়েও একটা বড় কারণ আছে, সেটা হল দেশভাগ। দেশভাগের ইতিহাস যত পড়েছি, তত চমকে চমকে উঠেছি, ভদ্রসমাজের কাণ্ড দেখে। দেশভাগের ইতিহাস বলছে, যথেষ্ট গৌরবোজ্জ্বল অতীতের পরেও বিশেষ বিশেষ সময় বঙ্গীয় ভদ্রলোকরা চোক করে গিয়ে নেহাৎই আকাটের মতো আচরণ করেন। শুধু আকাট হলে সমস্যা ছিলনা, ভয়ঙ্কর বিপজ্জনকও হয়ে উঠেন, ডিলিউশনের রোগি অনেকসময় যেমন নিজের জন্য নিজেই একটা বড় বিপদ, সেইরকমই। ... ...
শ্যামাপ্রসাদ বাংলার রাজনীতিতে নেহাৎই খুচরো একটা বিষয় ছিলেন, প্রভাব কখনোই তেমন বিস্তার করতে পারেননি। ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন হিন্দু মহাসভায়। ঢুকেই নেতা। নেতা হয়েই কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে গেলেন সুভাষের কাছে নির্বাচনী সমঝোতা করতে, এবং ঘাড়ধাক্কা খেয়ে ফিরলেন। সুভাষ বলেছিলেন, এইসব করতে গেলে, দরকারে গায়ের জোরে আটকাবেন। প্রাথমিক সাফল্য বলতে এই। ... ...
কালিগঞ্জে একটা উপনির্বাচন হল। তাতে খুব বেশি বদল হল তা নয়। কিন্তু কিছু জিনিস পরিষ্কার করে বোঝা গেল। টিভিতে দেখবেন, এই একটা উপনির্বাচন নিয়েই হইচই চলছে, সবাই ফেঁড়ে চেঁচাচ্ছেন, তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা গাদা গাদা কথা বলছেন। এইসব সঞ্চালক এবং বিশেষজ্ঞদের কোথা থেকে ধরে আনা হয় জানিনা, তবে এঁরাই কদিন আগে লাহোর করাচিতে জয়পতাকা উড়িয়ে দিয়ে জগৎসভায় ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এছাড়াও একটা বড় কৃতিত্ব হল, আজ পর্যন্ত একটা নির্বাচনেও বিশ্লেষণ, এক্সিট পোল দিয়ে কিছুই মেলাতে পারেননি। তাই এইসবে কান দেবার কোনো কারণ নেই। শুধু ফ্যাক্ট দেখা যাক। ফ্যাক্ট হল বিজেপি গোহারান হেরেছে। ৫০ হাজারের বেশি ভোটে। শুধু তাই নয়, উপনির্বাচনেও, যেখানে ভোট একটু কম পড়ে, তাতেও মার্জিন বেড়েছে। মার্জিন এরকম... ... ...
ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের আফগানিস্তান যাত্রা ... ...
সিনেমা শুরু হয়েছে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড দিয়ে। সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা আমরা সবাই জানি। ঘটনাটা পাঞ্জাবে। সিনেমায় এর সঙ্গে আছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পাঞ্জাবি সৈন্যদের বিপুল কৃতিত্ব এবং বিশ্বাসঘাতকতা। অর্থাৎ ভারতকে স্বাধীনতা না দেওয়া এবং দমনপীড়ন অক্ষত রাখা। বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না, এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। এমনকি অক্ষয়কুমারের হিন্দি সিনেমা হলেও নেই। কিন্তু তারপরই যা পাচ্ছি, যে, শুরু হয়েছে কেলোর কীর্তি, যা বলিউডের কাছে প্রত্যাশিত। একটু গৌরচন্দ্রিকার পরেই মঞ্চে এসে গেছেন জনৈক কৃপাল সিং। তিনি একজন শিক্ষক, এই সিনেমার অন্যতম মুখ্যচরিত্র, এবং তাঁর ছাত্রদের বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করার মতো মহান কাজ করে থাকেন। সঙ্গে এসেছেন উকিল অক্ষয়কুমার। বৃটিশ এই মহান দেশপ্রেমিককে শাস্তি দেবেই, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেবেই, আর অক্ষয়কুমার বৃটিশের প্যান্টুল খুলে দেবেনই, এই হল ব্যাপার। ... ...
গরম এক অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে।সমস্যাটি বৈশ্বিক। গরমের হাত থেকে সাময়িক রেহাই পেতে আমরা, বিশেষ করে নগরবাসী মানুষজন একটা চটজলদি সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছি। আমাদের মনে হচ্ছে একটা এয়ার কন্ডিশনার কে হাতিয়ার করেই আমরা বাজিমাত করবো, জিতে যাব গরমের বিরুদ্ধে এই লড়াই। এয়ার কন্ডিশনার থেকেই আবার নতুন বিপদের সূচনা। এই নিবন্ধ সেই পরিণতির প্রসঙ্গ নিয়ে। ... ...