এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের দিনগুলি — ১৪

    মানব মীরা দে লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ জুলাই ২০২৪ | ১৯৪ বার পঠিত


  • বাড়ির পরিস্থিতি তখন খুব একটা সুবিধের ছিল না। একদিকে আর্থিক সমস্যা, অন্যদিকে ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্কের দূরত্ব। শ্রীকান্ত যখন ক্লাস সেভেনে পড়ত, তখন ঠাকুরদা গত হন। তার এক বছরের মধ্যে ঠাকুমা। তাদের মৃত্যু শ্রীকান্তর ওপর অতটা প্রভাব ফেলেনি, কারণ শ্রীকান্তর বাবা শ্রীকান্তকে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী করে রেখেছিলেন। শ্রীকান্ত পাড়ার কারুর সাথে তেমন ভাবে মিশতে পারত না, খেলতে পারত না—শ্রীকান্তর মা-বাবা, বিশেষ করে বাবা, এই বুঝি ছেলে খেলতে গিয়ে চোট লাগালো, এই বুঝি বন্ধুদের সাথে মারপিট করে হাত-পা ভাঙল! মজার ব্যাপার কোন এক জ্যোতিষী শ্রীকান্তর 'জলে ফাঁড়া আছে' —বলে ভবিষ্যৎ গণনা করেছিলেন! সাধারনতঃ মানুষ কি করবে?—ছেলেকে ভালো করে অন্ততঃ সাঁতারটা শিখিয়ে রাখবে। কিন্তু 'জলে ফাঁড়া আছে' —শুনে আর কোন রিস্কই নেয়নি শ্রীকান্তর বাবা-মা। তারা ভেবেছিলেন সাঁতার শিখতে শিখতে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে! তাই শ্রীকান্তরও সাঁতারও আর শেখা হয়নি!

    তবে শ্রীকান্তর এই নিঃসঙ্গতার কিঞ্চিৎ সমাপ্তি ঘটিয়েছিল বই—বাকিটা স্কুল। বই পড়ার অভ্যাসটা তৈরি করেছিলেন তার মা—বাবাকে সেভাবে বইয়ের প্রতি কোনদিনই আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখে নি সে। তবে হ্যাঁ তার বাবা একটু সিনেমা পাগল মানুষ ছিলেন। অবশ্য সেযুগে এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল ছিল যে সিনেমা দেখে না। হিন্দিতে ধর্মেন্দ্র আর বাংলায় উত্তম কুমার আর উত্তম পরবর্তী যুগে রঞ্জিত মল্লিকের ভক্ত ছিলেন তার বাবা। তাই বইয়ের সাথে সাথে সিনেমার প্রতিও প্রচন্ড আসক্ত হয়ে ওঠে শ্রীকান্ত। জীবনে প্রথম একা একা ‌‌সিনেমা দেখেছিল 'টারমিনেটর টু'—তার আগে অবশ্য বাবা-মায়ের সাথে অনেক সিনেমা দেখেছিল সে। সেযুগে প্রতিটি শহরে সিনেমাপ্রেমিদের নিয়ে একটা করে 'সিনেক্লাব' গড়ে উঠত, তারা প্রতি মাসের যে কোন এক বা রবিবারের সকালের দিকে ‌সিনেমা হল ভাড়া করে মেম্বারদের সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করত—কিছু কিছু সিনেমার জন্য বিশেষ করে ছোটদের সিনেমা হলে মেম্বারদের কিছু ঘনিষ্ঠদের টিকিট দিত। তেমনি বাবার এক বন্ধু টিকিটটা দিয়েছিল। আর সিনেমাটাও ছিল হলিউডের তারপর ইংলিশ ভাযায়—তখনও ডাবিং ব্যাপারটা ভারতীয় চলচিত্রে আসেই নি।

    এই ধরনের সিনেক্লাবের শোটাইম থাকত রবিবার সকালের দিকে ওই ৯টা নাগাদ, আসলে দুপুরে হলের ম্যাটিনি শোয়ের আগে হল ছেড়ে দিতে হত। এখানে একটা ব্যাপার মনে পড়ল আগেকারদিনে যে হিরো বা হিরোইন দর্শকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে যেতেন তাদের 'ম্যাটিনি আইডল' বলা হত—শ্রীকান্তর বার বার মনে হত এটা কেন বলা হয়? পরে দুটো কারণ তার মাথায় এসেছিল—এক, যেহেতু কোন সিনেমার যে কোন দিনের প্রথম শো এমনকি প্রিমিয়ার শো-ও ম্যাটিনিতে হয় তাই, যদিও অনেক হলে তখনকার দিনে মর্নিং শোও চলত, তবুও তার সংখ্যা মুষ্টিমেয়। আর দুই, একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছিল যে ইভেনিং বা নাইট শো-তে যারা আসে তারা ফ্যামিলি নিয়ে আসে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আসে—তারপর সিনেমা দেখার আগে বা পরে খাওয়া-দাওয়া করে বা জিনিসপত্র কেনাকাটা করে—মানে শুধুমাত্র সিনেমা দেখাটা তাদের উদ্দেশ্যে নয়, অনেকগুলো আনন্দের মধ্যে সিনেমা দেখাটাও একটা। কিন্তু ম্যাটিনি শোয়ের দর্শকদের আনন্দটা ঠিক বিপরীত ; তারা শুধুমাত্র সিনেমার আনন্দটাই নিতে আসে—শুধু তাই নয় তখনকার দিনে আজকালকার মত এত মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম বা এত প্রচার ব্যবস্থা ছিল না, খবরের কাগজ, সিনেমার ম্যাগাজিন আর একটু দূরদর্শন আর বেতার এই ছিল প্রচার মাধ্যম। ফলতঃ ম্যাটিনি শোয়ের দর্শকদের সিনেমাটার প্রতি অভিমত অনেক বড় প্রচারের কাজ করত—ইভেনিং ও নাইট শেয়ের অনেক দর্শকই আসত ম্যাটিনি শোয়ের দর্শকদের মতামত জেনেই—ফলতঃ কোন সিনেমা ম্যাটিনি শোয়ের দর্শকদের পছন্দ হওয়াটা খুবই জরুরি ছিল! আর যিনি ম্যাটিনি শোয়ের দর্শকদের নয়নমনি হয়ে উঠতেন, তিনিই হয়ে যেতেন 'ম্যাটিনি আইডল'—যেমন উত্তম কুমার। তার বেশ মনে পড়ে 'বসন্ত-বিলাপ' সিনেমাতে চিন্ময় রায়কে গীতা দে ম্যাটিনি শেয়ের টিকিটই কাটতে দিয়েছিলেন আর সেটা না কেটে চিন্ময় রায় নিজের প্রেমিকার সাথে পুকুরঘাটে বসে বসে, "..তুমি আমাকে বলো উত্তম কুমার , বলো না!..." —খেলা করছিলেন। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন