এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের দিনগুলি — ১০

    মানব মীরা দে লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২২০ বার পঠিত
  •  
    নির্বানের পরিস্কার বক্তব্য ছিল, "যে যে কোন স্কুলে যেতে পারে—কিন্তু  শিবনাথে আমি অবশ্যই যাব, আর টিমে আমার সঙ্গে কোন দু'জন যাবি দেখে নেই।"
     
    স্যারেরা নিয়ম করে দিয়েছিলেন ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত সব স্কুলকে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করতে হবে কিন্তু টিম ভাগ করে নিতে হবে তিন দিনের মধ্যে সব স্কুল কভার করতে হবে। সক্রিয় ভাবে পনেরজন ছাত্র পুজোয় সরাসরি যুক্ত ছিল। প্রথমে সংখ্যাটা ছিল নয়;পড়ে ক্লাস ইলেভেনের ছাত্ররা স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালে আরো ছয়জনকে যুক্ত করা হয়। তাই তিনজন করে পাঁচটা দলে ভাগ করা হয়েছে। ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়া মোট নয়টি রেল স্টেশন—মোট স্কুল সংখ্যা প্রায় পঁয়তাল্লিশ—পাঁচটা টিম তিনদিনে সেটা করার করবে। তখনই অনির্বান নিজের মনের ইচ্ছার কথা বাকিদের জানায়। কারণ অবশ্যই একটা ছিল। অনির্বান নাগ-স্যারের কাছে বাংলা পড়ত—ওর ব্যাচে নয়নতারা নামের একটা মেয়েও পড়ত। নয়নতারা ছিল ভাটপাড়ারই শিবনাথ গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী। ব্যাচে পড়তে গিয়ে ওদের নাকি চোখে চোখে কথা হত—যদিও এটা অনির্বানের এক তরফা বক্তব্য,শ্রীকান্তরা নয়নতারার কাছে থেকে কোনদিনও এই বিষয়টির সত্যতা উদ্ধারের কোন সৎ সাহস কোনদিনও করিনি। অবশ্য সে যুগের সব ছাত্ররাই কেমন যেন মনে করত যে কোন না কোন তার সহপাঠির সাথে তার গোপনে চোখে চোখে কথা চলছে।—আশা করা যায় অনুরূপ ভুল ধারনার বশবর্তী ছাত্রীরাও ছিলেন। আর দুর্ভাগ্যের বা সৌভাগ্যের বিষয় অন্ততঃ নিরানব্বই শতাংশ সেই চোখে চোখের কথা চোখেই সীমাবদ্ধ থেকেছে আজীবন। খুব কম চোখ ছেড়ে ওষ্ঠে এসেছিল।
     
    সূর্য বলে উঠেছিল, "একা তোরই বউ আছে শিবনাথে তাই তে?"
     
    এখানে আরেকটি বিষয় খুব মজার ছিল সে যুগে অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকে ছেলেদের কারুর কাউকে পছন্দ হলেই হল—সে তার বউ আর তার বন্ধুদের বৌদি হয়ে যেত—সে হতেই পারে মেয়েটি তার সাথে জীবনে একবারই মাত্র কথা বলেছিল; তাও হয়তো ব্যাচে পড়তে এসে বই বা কলম বা পেনসিল চেয়েছিল। অনির্বানের ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনই ছিল। সূর্যকে অনির্বান বলে, "আমি তো একা যাব বলছি না।"
     
    সূর্য বিরক্তিসহ বলে, "মিনসে, ওটা ওর স্কুল, বাড়ি নয়—এমন করছে যেন ওটা ওঁনার শ্বশুড়বাড়ি!–যত সব বালামো!!"

    শ্রীকান্ত বলে ওঠে, "সে হিসেবে ওটা ভাস্বরেরও শ্বশুড়বাড়ি।"

    একটা বেশ মজার ব্যাপার হল, সে সময় শ্রীকান্তদের ক্লাসে ভাস্বরই এমন একজন এগিয়ে থাকা মানুষ ছিল যে প্রেম করত—ওই চোখে চোখে কথা বলার স্পিরিচুয়াল ভাবাবেগজনিত একতরফা প্রেম নয়, রীতি মত রতিক্রিয়াযুক্ত প্রেম—যদিও সেটা ওই ওষ্ঠমিলন ও শরীরে শরীরে হাল্কা ছোঁয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল, তাও বছরে এক-আধবার, নতুবা সারা বছর হাতে হাতে আর চোখে চোখ। সে সময় এমন অনেক প্রেম দেখা যেত যা ওইটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকত। এর বেশি এগোতে ছেলেরা ভীত ও মেয়েরা সংযত থাকত। কারণ তথনও পর্যন্ত আজ একজন কাল আরেকজনের তত্ত্ব আসেনি—ইরফান হাসমি তখনও নায়করূপে অবতীর্ণ হতে বছর দশেক দেরি ছিল—হলিউড শব্দটা তখনও অত জনপ্রিয় হয় নি, ইংরেজি সিনেমা বলেই বেশি জনপ্রিয় ছিল, তখনও ভি.সি.ডি অর্থাৎ বাক্স ক্যাসেটই ছিল ব্যক্তিগত ইচ্ছানুযায়ী বাড়িতে সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম, আবার সব বাড়িতে ভি.সি.আর-ও থাকত না—অবস্থাপন্ন হাতে গোনা কিছু কিছু বাড়িতে থাকত—বাকিরা ইচ্ছা হলে বা অনুষ্ঠানে ভাড়া করে নিয়ে এসে সিনেমা দেখত। ভি.সি.ডি ক্যাসেট কিন্তু সবাইকেই—সে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ক্যাসেট লাইব্রেরীর দোকান থেকেই ভাড়া করতে হত। তখন হিরো বলতে সৎ, কর্মনিষ্ঠ, মহান, একটি মাত্র নারীর প্রতি আসক্ত কাউকে ভাবা হত, হিরোইন বলতে ব্যাকগ্রাউন্ডে থিম মিউজিক বাজত—"ভালা হো বুড়া হো, মেরা পতি মেরা দেবতা হ্যায়"-জাতীয় গান—অ্যান্টি হিরোর তত্ত্ব তখনও বাজারে আসেনি—যদিও সে বছরই শাহরুখ খানের বাজীগর ও তার কিছুদিন আগের ডর-এর মাধ্যমে অ্যান্টি হিরোর তত্ত্ব আসতে আসতে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে শুরু করেছে—কিন্তু ততটাও জনপ্রিয় হয় নি যে সবাই সে রকম হাবভাব নেবে। তখন প্রেম মানেই ছেলে-মেয়ে সবাই একে অপরের সাথে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত পীড়িত হবার কথা ভেবে ভেবে মনে মনে পুলকিত হত।

    ভাস্বরের আবেগহীন প্রতিবাদ, "ও তোদের লাগে ও রকম। আমার লাগে না। আমি তো ডাইরেক্ট বাড়ি যাই। এই তো গতকালই গেছিলাম—কেউ ছিল না ওর বাড়ি। আমায় ফোন করল, আমি চলে গেলাম।"

    অতনু থার্মোকল কাটতে কাটতে বলে, "ন্যাকা।"

    সূর্য রঙিন মার্বেল পেপার কাটছিল, হাতের কাজ রেখে বলে, "বল্ না গুরু গিয়ে কি হল?"

    ভাস্বর চোখ মেরে বলে, "কি আবার হবে? হল—যা হবার —আজ তো আবার যাব।"

    সূর্য উত্তেজিত হয়ে বলে, "কেন?! আজও বাড়িতে কেউ নেই বুঝি? (ভাস্বর সন্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে) —ওসব ছাড় কাল কি হল বল্ না!?"
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন