এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের দিনগুলি — ১২

    মানব মীরা দে লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ জুলাই ২০২৪ | ২৩০ বার পঠিত
  •  
    প্তাহের তিনদিন করে টিফিনের পর পুজোর আয়োজন চলত। মূলতঃ ডেকরেসানের দিকেই নজর দেওয়া হত। প্লান ছিল ঠিক পুজোর চারদিন আগে থেকে প্রতিমা সজ্জার কাজে হাত দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী কাজ দ্রূতই হচ্ছিল। অমল-স্যারের আঁকা ছবিকে কেন্দ্র করে নিমন্ত্রণের কার্ড ছাপানো হল। যথারীতি পাঁচটি টিমে সবাইকে ভাগ করা হল, প্রতি টিমে তিনজন করে। শ্রীকান্ত, অনির্বান আর সূর্য এক টিমে পড়ল। আর অনির্বানের পূর্ব নির্ধারিত অনুরোধ রাখত শ্রীকান্ত আর সূর্য নৈহাটি-কাঁকিনাড়ার স্কুলের নিমন্ত্রণের ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
     
    কাঞ্চন-স্যার আর অমল-স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লটারীর মাধ্যমে পাঁচ টিমের অঞ্চল নির্ধারণ করবেন। মোট নয়টি স্টেশন আর টিম পাঁচটি—ব্যারাকপুর সদর শহর হওয়াতে স্কুলের সংখ্যা বেশি, তাই ব্যারাকপুর বাদে দুইটি দুইটি করে স্টেশনের দায়িত্ব প্রতিটি টিমকে দেওয়া হবে। আর একটি টিম শুধু ব্যারাকপুরকে নিয়ন্ত্রণ করবে—আর ব্যারাকপুরকে যে টিম নিয়ন্ত্রণ করবে সেই টিম খড়দহ মিশনে নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে যাবে—খড়দহতে শুধুমাত্র মিশন স্কুলকেই নিমন্ত্রণ করা হত।
     
    সেদিন টিফিনের পর যথারীতি ওরা কর্মশিক্ষার ঘরে বসে কাজ করছে—কাঞ্চন স্যার খাতা নিয়ে এসে বললেন চেয়ারে। বললেন, "আয় আজ টিমটা ভাগ্ করে নি। তোরই বল্ কে কোন টিমে থাকবি?—কিন্তু মাথায রাখবি একটা টিমে তিনজনের বেশি নয়। আর এই টিম অনুযায় আমার পুজোর বাকি কাজগুলোও ভাগ করে নেব।"
     
    শ্রীকান্ত বলে, "স্যার সেটা কি রকম?"
     
    স্যার বিশ্লেষণ করেন, "ধর্ টিম‌-এ পুজোর ফলমুল কেটে সাজানোর, পুজোর নৈবিদ্যাদি সাজানোর বা ঠাকুরমশাইকে ঠিক সময় এনে পুজোটা করাবার দায়িত্বে থাকল। আবার টিম-বি স্কুলের সবত্র আলপনা করল। আবার টিম-সি প্রতিমাসজ্জা ও পুজোর আগের দিনের বাকি মন্ডপসজ্জার কাজ করল। টিম-ডি খাওয়ার জাগয়া আর স্কুল পরিস্কার পরিচ্ছনের দায়িত্বে থাকল। আর টিম-ই পুরো ব্যাপারটায় রিজার্ভ টিম হিসেবে রইল। যখন যে টিমের সাহায্য লাগবে তখনই তারা সেই টিমকে হেল্প করবে। এমন কি প্রয়োজনে টিম-ইর তিনজনই ভাগ হয়ে অন্য টিমে গিয়ে কাজ করতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে এই ভাবে টিমে ভাগ হয়ে আমরা শুধুমাত্র নিমন্ত্রণের সময়, পুজোর আগেরদিন আর পুজোর দিনই কাজ করব। বাকি সময় আমরা পুরোপুরি একটাই টিম হিসেবেই কাজ করব। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টিম-ই বাদে কোন টিম অন্য কোন টিমের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। আর টিম-ই আমার আর অমল-স্যারের পরামর্শ ছাড়া কোন টিমের হয়ে কাজ করবে না। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় টিম-ডি বাদ অন্য সব টিম খাবার পরিবেশন করবে। আশা করি বুঝতে কারুর কোন অসুবিধা নেই?—থাকলে এক্ষুনি বল্?"
     
    প্রথমে শ্রীকান্তরা সবাই তিনজন তিনজন করে দল গঠন করল। তারপর কাঞ্চন-স্যার কাজ অনুযায়ী দলে নাম দিলেন—শ্রীকান্তদের দল টিম-ই হল, অর্থাৎ ওরা রিজার্ভ টিম মানে সর্ব ঘটে কাঁঠালী কলা হল। এবার স্যার ছোট ছোট চিরকুটে 'এ', 'বি', 'সি' লিখলেন ওই অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মত। এবার লটারীর মাধ্যমে কোন টিম কোথায় যাবে ঠিক করা হবে। কাঞ্চন-স্যার বললেন, "তাহলে প্রথমে ব্যারাকপুর দিয়েই শুরু করা যাক।"
     
    বলে স্যার পাঁচটা চিরকুটের একটা তুলে নিলেন। চিরকুটতে কোন টিমের নাম লেখা আছে দেখলেন, তারপর শ্রীকান্তদের টিম-ই-এর উদ্দেশ্যে বললেন, "তোরা যাচ্ছিস্ ব্যারাকপুর।"
     
    ব্যস্ আর কি অনির্বানের মন ভেঙে গেল। মন যদি কাঁচের তৈরি হত তাহলে সেদিন হয়তো অনির্বানের বুকের ভেতর থেকে ঝরাম্ ঝরাম্ আওয়াজ শোনা যেত! কষ্ট জর্জরিত দৃষ্টি নিয়ে সূর্য আর শ্রীকান্তর দিকে তাকাল। কিন্তু শ্রীকান্ত আর সূর্য চুপ রইল। অনির্বানের দু'চোখ বেয়ে জল বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কোন টিমকে কোন কোন অঞ্চলের স্কুলে যেতে হবে কাঞ্চন-স্যার সব টিমকে সেটা বুঝিয়ে দিলেন। তখনই শ্রীকান্ত বলে ওঠে, "স্যার, কিন্তু এতে একটা সমস্যা আছে!"
     
    কাঞ্চন-স্যার প্রশ্নবাচক ভঙ্গিতে শ্রীকান্তর দিকে তাকিয়ে ভ্রূ নাচান।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন