এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের দিনগুলি - ২

    মানব মীরা দে লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ জুন ২০২৪ | ৩২৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •  
    রস্বতী পূজা বাঙালীর জীবনের প্রথম ঈশ্বরারাধনা। পরবর্তী জীবনকালে বাঙালী ধীরে ধীরে অর্থহেতু লক্ষী পূজা, গৃহশান্তি হেতু নারায়ণ পূজা, মানত করে কালী পূজা-দুর্গা পূজা, শনিবার শনিবার বারের ঠাকুর পূজা, অবাঙালী বন্ধুর সংস্পর্শে এসে গনপতি পূজা বা ধনতেরসে কুবের পূজা করলেও অফিসিয়ালি বাঙালী জীবনের প্রথম পূজা সরস্বতী পূজা তা সে বাঙালী পড়াশুনাতে ভালোই হোক আর খারাপই হোক বা পড়াশুনা করুক বা না করুক। শ্রীকান্ত যখন ক্লাস নাইনের ছাত্র তখন কনভেন্ট বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর এত রমরমা ছিল না। তখন কনভেন্ট বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার সৌভাগ্য হত একমাত্র বড় ব্যবসায়ী বা ওই আই.পি.এস-এর সন্তানদের। বড় ডাক্তার বা অধ্যাপকদের পছন্দ ছিল রামকৃষ্ণ মিশন বা মঠের স্কুল। অবশ্য কার সন্তানকে কে কোথায় পড়াবেন সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। শ্রীকান্ত পড়ত বাংলা মিডিয়ামে, ভাটপাড়ার নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক পাঠশালায়। পাঠকরা বলতেই পারেন বড় ব্যবসায়ী বংশের সন্তান হয়ে সে কেন বাংলা মিডিয়ামে পড়েছে। — আসলে তার জন্মের পর অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে, সে এখন নাইনে পড়ে ফলে এই দীর্ঘ সময়কালের মধ্যে দত্তদের একান্নবর্তী পরিবার ও ফুলে-ফেঁপে ওঠা ব্যবসা টুকরো টুকরো হয়ে অনুপরিবারে ও বেশির ভাগ ব্যবসা প্রায় শূন্যে রূপান্তরিত হয়েছিল। আর শ্রীকান্তর বাবার তত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না যে ছেলেকে দামী কোন ইংলশি মিডিয়াম বা কনভেন্ট স্কুলে ভর্ত্তি করাবেন। তবে নবকৃষ্ণ কিন্তু হেলি-তেলি স্কুল ছিল না। সেযুগের জেলার সেরা স্কুলগুলোর একটি ছিল। মাস্টারমশাইরা ছিলেন অনেকটা নারিকলের মত—বাইরে থেকে যতটা কঠোর অন্দরে ততটাই তুলতুলে নরম! ছাত্ররা যেন বাড়ি থেকে বাবার সহাচর্য্য ছেড়ে স্কুলে এসে একসাথে ত্রিশজন  পিতৃতুল্য মহামানবের সান্নিধ্যে আসত! আর ছিলেন লৌহদৃঢ় কঠিন মানসিকতা সম্পন্ন হেড মাস্টারমশাই দুর্গাশঙ্কর বসু! এখনকার ফাইভ-জি যুগের ছাত্র বা ছাত্রীরা কি বুঝবে সেযুগের স্যারেদের ক্রোধ-ভালবাসা-স্নেহের কথা। এখন তো তাদের কাছে স্যার মানে ইন্টারনেটের ভিডিও ক্লাসের ওপারে থাকা ব্যক্তি — যার সাথে তাদের মানসিক সম্পর্ক দশমিক শতাংশে হিসেব করতে হয়। তাদের স্যারের রাগ মানে 'গার্জিয়ান কল' আরো ভালো করে বলতে গেলে 'প্যারেন্টস্ কল' – শ্রীকান্তদের সময়কালের স্যারেরা অভিভাবক বা গার্জিয়ান বা প্যারেন্টস্ কারুর অপেক্ষা করতেন না কারণ সেযুগে স্কুলে স্যারেরাই ছিলেন ছাত্রদের প্রকৃত অভিভাবক। গার্লস স্কুল অর্থাৎ মেয়েদের স্কুলের ক্ষেত্রেও শিক্ষিকারাও এই মন্ত্রেই দীক্ষিতা ছিলেন। সেযুগে শিক্ষিকারা ছাত্রীদের 'ম্যাম্' বা 'ম্যাডাম্' ছিলেন না ছিলেন 'দিদিমনি' বা 'দিদি' বা আরো ছোটো করে নামের সাথে 'দি'। সে যাই হোক, আমরা ফিরে আসি শ্রীকান্তর স্কুলে—এ হেন নিয়মকানুনে কঠোর নবকৃষ্ণ পাঠশালা ছিল শ্রীকান্তর স্কুল, এই স্কুল শুধু মাত্র শ্রীকান্তর জীবনের আটটা বছর জুড়ে ছিল তাই নয় যখন আমরা পরবর্তী সব পর্বে যখন যাব তখন দেখব স্কুল শ্রীকান্তর জীবন জুড়ে আছে। শ্রীকান্ত কতবার আমাকে বলেছে, "আমার বাবা আর যাই ভুল করুন না কেন আমার জীবনে স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আর সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। যেটা আমার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।"

    শ্রীকান্তর স্কুলের নিয়ম ছিল সকাল সাড়ে দশটায় স্কুলে ঢোকা আর সেই পৌনে চারটেয় ছুটি হলে বের হওয়া। মাঝে টিফিনে বাড়ি যাওয়া একদম নয়। টিফিন নিয়ে আসতে হবে। তখনকার দিনে এটা তেমন ভাবে অন্য স্কুলে করা হত না। অন্য অনেক স্কুলে সে সময় টিফিন খেতে কাছাকাছি যে সব ছাত্রের বাড়ি তারা বাড়ি গেলেও যেতে পারত — বিষয়টা সম্পূর্ণ ছাত্রদের ও তাদের বাড়ির ওপর নির্ভর করত। এখন তো কোন স্কুলই আর টিফিনে স্কুল থেকে বের হতে দেয় না; কিন্তু তখন নবকৃষ্ণতে তাই হত। স্বভাবতই শ্রীকান্তর মত নবকৃষ্ণের বেশির ভাগ স্টুডেন্টরাই জানত না যে দুপুরে স্কুলের বাইরের পরিবেশটা কেমন হয়!? বা স্কুল চলাকালীন স্কুলটাকে বাইরে থেকে কেমন লাগে!? অন্য ছুটির দিনের মত লাগে নাকি আলাদা লাগে?

    আর শুধুমাত্র সরস্বতী পূজার প্রস্তুতির জন্য বাছাই করা কিছু ছেলেই পূজার প্রস্তুতি সংক্রান্ত কাজের জন্য স্কুলের বাইরে স্কুল চলাকালীন যেতে পারত। আর সে বছর ক্লাস ইলেভেনের দাদাদের কাছ থেকে একরকম জোর করে, আন্দোলন করেই পুজোর দ্বায়িত্ব ক্লাস নাইনের ছেলেরা ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল সূর্য, রাজা, সুধীর, পিকু, অনির্বান ও শ্রীকান্ত। আসলে প্রতিটি স্কুলেরই একটা অলিখিত নিয়ম হল সরস্বতী পুজোর দ্বায়িত্ব মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে ক্লাস নাইনের ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে ক্লাস ইলেভেনের ছেলেরা পালন করবে। এখন সমস্যা হল সেই বছরই নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পরিবর্তিত হয়েছে। ফলতঃ নিয়ম অনুযায়ী শ্রীকান্তদের নয় পুজোর দ্বায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল ক্লাস ইলেভেনের দাদাদের, স্কুলকর্তৃপক্ষও ও ক্লাস ইলেভেনের স্টুডেন্টরাও এব্যাপারে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বেঁকে বসল শ্রীকান্তরা। শুরু হল আন্দোলন — সরস্বতী পুজোর দ্বায়িত্বের অধিকারের আন্দোলন!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন