এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সিরিয়ালচরিতমানস

    Riddhiman Basu লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ জুলাই ২০১৭ | ৩০৯২ বার পঠিত
  • ‘একটি বনেদি বাড়ির বৈঠকখানা। পাত্রপক্ষ ঘটকের সূত্রে এসেছে সেই বাড়ির মেয়েকে দেখতে। মেয়েকে আনা হল। বংশপরম্পরা ইত্যাদি নিয়ে কিছু অবান্তর কথপোকথনের পর ছেলেটি চাইল মেয়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে। যেই না বলা, অমনি মেয়ের দাদার মেজাজ সপ্তমে। ছুটে গিয়ে বন্দুক এনে পাত্রের দিকে তাক করল।’
    ভাবছেন ৫০ বা ৬০-এর দশকের কোন গল্প? আজ্ঞে না, এই একবিংশ শতাব্দীরই, এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতেই। বাংলা মেগাসিরিয়াল-এর দৃশ্য এটি। এখনকার বাংলা ধারাবাহিকে এই ধরনের ‘অবাস্তবতার’-ই জয়জয়কার।

    শুরুটা কিন্তু এ রকম ছিল না। ছোটবেলায় দূরদর্শনে দেখা কিছু সিরিয়ালের কথা মনে আছে।
    ‘তেরো পার্বণ’- বাংলায় সম্ভবত প্রথম সিরিয়াল। যার বিশেষ কিছু মনে নেই। শুনেছি বেশ ঝকঝকে প্রযোজনা ছিল। মনে আছে বিভূতিভূষণের গল্প অবলম্বনে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’-এর কথা। এই সিরিয়ালে মনোজ মিত্রের অভিনয় অনবদ্য। বিশেষভাবে মনে পড়ে ‘যদি এমন হত’ সিরিয়ালটির কথা। এতে প্রত্যেক সপ্তাহে নতুন গল্প থাকত। প্রত্যেক গল্পেরই দু’রকম পরিণতি দেখান হত – একটি পরিণতি যদি গল্পটি এক রকম ভাবে এগোয় তা হলে এবং তার পরে দেখানো হত আসলে কী হল। এ ছাড়াও মনে আছে রবি ঘোষ অভিনীত ‘টেনিদার কান্ডকারখানা’–র কথা।
    তখন সিরিয়াল বলতে আমরা সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানই বুঝতাম। জাতীয় দূরদর্শনে হিন্দি সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও এটাই সত্যি ছিল। তারপর ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি দূরদর্শনে এল মেগাসিরিয়াল -- মানে সপ্তাহে একদিনের বদলে রোজ একই সময়ে প্রচারিত ধারাবাহিক। হিন্দির দেখাদেখি বাংলাতেও এমনটাই শুরু হয়ে গেল। শুরুর দিকের মেগাসিরিয়ালগুলি (বাংলা এবং হিন্দি) গুণগত মানের দিক দিয়ে পূর্বসূরিদের মতো না হলেও, মোটের ওপর মন্দ ছিল না।
    এরপর প্রাইভেট চ্যানেল আসার সঙ্গে সঙ্গেই এইধরনের ধারাবাহিকের সংখ্যা বাড়তে লাগল। নতুন শতকের সঙ্গে শুরু হল এক নতুন যুগ। এল একতা কাপুর-এর ‘soap operas’। এরপর থেকেই হিন্দি মেগাসিরিয়ালের মান ক্রমশ পড়তে থাকল। সেই সময়ের হিন্দি সিরিয়াল-এর ব্যাপারে নাসিরুদ্দিন শাহ্‌ মন্তব্য করেছিলেন, ‘Todays TV serials are like a very bad version of the 80’s commercial cinema’ । এমন সহজ উপায়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ধারাবাহিকের ফরমুলা পেয়ে বাংলা চ্যানেলগুলিও লোভ সামলাতে পারল না। হিন্দির অনুকরণে বাংলাতেও এই ধরনের মেগাসিরিয়াল তৈরি হতে লাগল।
    আজ, সেই সময়ের থেকে বছরদশেক পরে, হিন্দি সিরিয়াল কিছুটা হলেও সেই চক্র থেকে বেরিয়ে আশার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি দেখতে গেলে, বাংলা সিরিয়ালের মান তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাংলা মেগাসিরিয়াল ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা বুঝতে গেলে আমাদের এই সিরিয়ালগুলির কয়েকটি বৈশিষ্টের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। যথা:
    ১) Time-Warp । বেশির ভাগ বাংলা সিরিয়ালে একধরনের ‘Time – warp’ – এর অনুভূতি হয়। লেখার শুরুতে যে উদাহরণ দিয়েছি, সেরকম নজির ভুরি ভুরি। এক সিরিয়ালে বাড়ির কর্তীর মেয়ের নাচ করায় আপত্তি, এতে নাকি তাদের বনেদি বাড়ির সন্মানহানি হয়। অথচ বাস্তবে আমরা এ রকম মনোভাব আজকের দিনে অন্তত দেখিনে। বরং ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ ধরনের রিয়ালিটি শো-তে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে তাদের সেলেব্রিটি বানানোর হিড়িকই বেশি চোখে পড়ে। আবার আরেক সিরিয়ালের শাশুড়ির তার বউমার লেখাপড়া করায় আপত্তি। বর্তমান সময়েও আদ্যিকালের ঢঙে কথা বলা ইত্যাদি তো আছেই। এ ছাড়া বেশিরভাগ সিরিয়ালেই মধ্যযুগীয় রীতিনীতি ও কুসংস্কার, মাঝে মাঝে শাঁখা-সিঁদুরের দিব্যি জাতীয় ডায়লগ, মহাপরিচালক ‘স্বপন সাহা’র মাণিকখন্ডগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়। এর উল্টো উদাহরণ, মানে ইতিহাসভিত্তিক কাহিনীতে আধুনিক জীবনের অঙ্গও ঢুকে পড়ে। ১৯৭০-৮০-র দশকের পটভূমিতে এক সিরিয়ালে কলকাতায় এক বনেদি বাড়িতে বেশির ভাগ পুরুষ চরিত্রকে বাড়িতে ‘Collared T-Shirt’ পরতে দেখেছিলাম। এই ধরনের পোশাক ৯০-এর দশকে ‘Globalization’ – এর আগে শুধু কলকাতা কেন, সারা ভারতে কোথাও পাওয়া যেত কি না, সন্দেহ আছে।
    ২) Dress Code । সিরিয়ালের সব চরিত্ররাই বাড়িতে ২৪ ঘণ্টাই সেজেগুজে থাকে। তা সে যত গরমই হোক না, ছেলেদের ভাল পাজামা-পাঞ্জাবি আর মেয়েদের দামি শাড়ি, মেকআপ – লিপস্টিক ইত্যাদি থাকবেই। আবার শীতকালে কারুর গায়ে গরম জামা দেখা যায় না। বসার ঘর, রান্নাঘর, এমনকী শোবার ঘরেও একই Dress Code।
    সিরিয়াল নির্মাতারা যে বঙ্গীয় সাজপোশাকের মর্যাদার ব্যাপারে খুবই যত্নবান (যতই কৃত্রিম লাগুক সেটা), এটা মানতেই হবে।
    ৩) অ-নারীবাদ। বর্তমান সময়ে যতই নারীচেতনা জেগে উঠুক, ‘Women’s Day’ পালন করা হোক, ‘Feminism’ নিয়ে আন্দোলন হোক, মেগাসিরিয়ালে তার ছিটেফোঁটাও মেলা ভার। সেখানে এখনও ভাল মেয়ে মানে সাবেকি নারী, যারা বিয়ের পর শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পরার কথা মনেও আনে না, যারা প্রচুর যোগ্যতা সত্ত্বেও বিয়ের পর কখনও স্বনির্ভর হতে চায় না। এই একবিংশ শতকেও তাদেরকে শশুরবাড়ির যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য পরীক্ষা দিতে হয়।
    আর খারাপ মেয়ে হচ্ছে যারা মডার্ন, সংস্কার মানে না, কেরিয়ারিস্ট, সব রকম পোশাকই পরে, ইংরেজিতে কথা বলে ইত্যাদি। বাংলার ঘরে ঘরে এমন মগজ ধোলাই চলা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনক ভাবে কোন নারীবাদী সংগঠনের এই নিয়ে প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। হিরোইনরা এক রকম হলেও মেয়ে ভিলেনরা অবশ্য এক রকম হয় না। তারা কখনও দজ্জাল শাশুড়ি, কখনও কূটিল বৌমা, কখনও নায়কের আবিবাহিত অথবা ডিভোর্সি বোন, কখনও বা তার প্রাক্তন (মডার্ন) প্রেমিকা। সব সিরিয়ালে এক বা একাধিক খলনায়িকা থাকবেই। বাস্তবে সংসার মাত্রেই কি এত মহিলা নেগেটিভ চরিত্র মেলে ?
    ৪) গান্ধীগিরি । সিরিয়ালের ভাল চরিত্ররা সবাই মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত। খলনায়ক/নায়িকারা যতই অন্যায় করুক, এরা সদা ক্ষমাশীল। খারাপদের ভাল করলে তারা একদিন শুধরে যাবে, এমন স্থির বিশ্বাস নিয়েই তারা দিন কাটায়। দু:খের বিষয়, শয়তানেরা শয়তানি করেই যায়, আর সিরিয়ালও অনন্তকাল চলতে থাকে। এ রকম ‘One Dimensional’ চরিত্র বাস্তবে অথবা নাটক, নভেল, সিনেমায় খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। মহাভারতে দুর্যোধন অথবা সেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ চরিত্রের মধ্যেও কিছু ভাল দিক ছিল, আবার যুধিষ্ঠীর অথবা কিং লিয়ার- এর ও দোষত্রুটি ছিল। কিন্তু সিরিয়ালের ভাল-রা শুধুই ভাল, আর খারাপ-রা নিরন্তর খারাপ।
    এবার সিরিয়ালের দৈর্ঘ্য প্রসঙ্গে আশা যাক।
    ১) মহাকাব্যিক। মহর্ষি বাল্মীকি অথবা বেদব্যাস তো একটি করে মহাকাব্য রচনা করেই ক্ষান্ত হয়েছিলেন। গ্রীক মহাকবি হোমারও সর্বসাকুল্যে দু’টি মহাকাব্য লিখতে পেরেছিলেন। কিন্তু এখনকার সিরিয়াল লেখকেরা এক সাথে অসংখ্য মহাকাব্য রচনা করতে সিদ্ধহস্ত। প্রত্যেকটি মেগাসিরিয়ালই এক একটি মহাকাব্য। অসংখ্য চরিত্র, প্রচুর উপকাহিনী, অনেক পুরুষ ধরে চলা ঘটনাবলি ইত্যাদি মহাকাব্যের সমস্ত উপকরণই সিরিয়ালে মজুত। নেই শুধু কাহিনীর পিছনে উপলব্ধি, দর্শন, শিক্ষা, অথবা বাস্তব জীবনে তার প্রযোজ্যতা । এক মহীয়সী মহিলা লেখিকা আছেন, যিনি বিভিন্ন চ্যানেলে বহু সিরিয়াল এর কাহিনী লেখেন। একটু লক্ষ করলে বোঝা যাবে, সব গল্পই মোটামুটি একই, বড়জোর একটু উনিশ-বিশ। চরিত্রের নাম বয়স সময়কাল ইত্যাদিই শুধু আলাদা। অবশ্য অন্য সিরিয়াল লেখকরাও এর ব্যাতিক্রম নন।
    ২) গোরুর রচনা । অনেক সিরিয়াল হিন্দি সিনেমার গল্পের অনুকরণে শুরু হয়। কখনও বা মৌলিক ধারণার উপর ভিত্তি করেও শুরু হয়। যেভাবেই সিরিয়াল শুরু হোক, তার শেষ ঠিক কীভাবে বা কবে হবে, তা স্বয়ং ভগবানও জানেন না। এই সিরিয়ালগুলি শুরুতে যতই আলাদা লাগুক, কিছুদিন পরে ঘুরে ফিরে সেই একই পারিবারিক গল্প নামক গরুর রচনাতে এসে ঠেকে। এই গরুর রচনায় একটি একান্নবর্তী বনেদি পরিবার থাকে, তাদের বিশাল ব্যাবসা (বাস্তবে না হলেও, সিরিয়ালে বাঙালি ব্যাবসাদারের রমরমা দেখে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র নিশ্চয় যারপরনাই খুশি হতেন) আর দেশজোড়া সন্মানও থাকে। এই পরিবারে শাশুড়ি-বৌ অথবা ভাইদের মধ্যে কলহ অথবা ব্যাবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে রেষারেষি নিয়েই মূলত গল্প (বলা ভাল মেলোড্রামা)। কয়েকটা ব্যাপার অবধারিত। যেমন, প্রত্যেকের অন্তত দুটো করে বিয়ে (কখনও কখনও তারও বেশি), কারুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে হলে তার ঘরে বা ব্যাগে দামি জিনিস ঢুকিয়ে (অবাস্তব লাগলেও) তাকে চোর প্রতিপন্ন করা, যত্রতত্র ‘Freeze Shot’ –এর ব্যাবহার (ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমল গান্ধার’ ছবির এক গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে ‘Freeze Shot’ –এর কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। মেগাসিরিয়ালের কল্যাণে এই ‘Freeze Shot’ এখন খেলো হয়ে উঠেছে), চূড়ান্ত মেলড্রামা, একই কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করা ইত্যাদি। সিরিয়ালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, এখানে কেউ কোনোদিন মরে না। কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রী সিরিয়াল ছেড়ে দিতে চাইলে, তার চরিত্রকে তাৎক্ষণিক মেরে ফেলা হয়; আবার কিছুদিন পরেই সে ‘Plastic Surgery’ করে নতুন মুখ (অর্থাৎ নতুন অভিনেতা) নিয়ে ফিরে আসে। ইংরেজিতে প্রবাদ আছে ‘Great Minds Think Alike’। এই কথা সিরিয়াল লেখক-লেখিকাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক সত্য।
    ৩) আবহসঙ্গীত । এই সব নাটকীয় বা অতিনাটকীয় গল্পের সঙ্গে তাল রেখে ‘Background Music’ না হলে চলে না। তাই ক্লাইমাক্সের মুহূর্তে কান ঝালাপালা করে, ডায়লগকে ঢেকে দিয়ে, বেসুরো গলায় ক্লাসিক্যালের তান-সরগম অথবা ‘ধিন-তা-না-না’ তারানা বেজে ওঠে। শুধু নাটকীয় মুহূর্তেই নয়, যে কোনও সময়েই, কারণে-অকারণে এরকম আবহসঙ্গীত সহ্য করতে হয়। অবশ্য এই ধরনের মৌলিক কম্পজিশন ছাড়াও সিরিয়ালের আবহসঙ্গীতে ‘ব্যাটমান ট্রিলজি’তে ‘Hans Zimmer’ -এর, কিম্বা ‘ডোর’ সিনেমাতে সলিম সুলেমানের থিম মিউজিক অহরহ শোনা যায়। ভাগ্য ভাল, এঁরা বাংলা সিরিয়াল দেখেন না, নয়তো যে কোনও দিন সিরিয়াল নির্মাতাদের কোর্টে হাজিরা দিতে হত। সব সিরিয়ালের সুরকার এক কি না জানা নেই, তবে এই ‘Background Music’- এর ব্যাপারেও প্রত্যেক সিরিয়ালের মধ্যে বিস্তর মিল।
    ৪) ভাষা । গল্প অথবা আবহসঙ্গীতের ব্যাপারে কল্পনাশক্তির অভাব থাকলেও, কিছু কিছু সিরিয়ালে ভাষার ব্যাপারে বিশদ কল্পনাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এক সিরিয়ালে বাংলা কথাকে মুখ বেঁকিয়ে উচ্চারণ করে, এবং প্রত্যেক কথার সঙ্গে ‘টো’ যোগ করে এক অভিনব আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষার উদ্ভাবন করা হয়েছে। আরেক সিরিয়ালে বাংলার সঙ্গে কিছু ওড়িয়া কথা মিশিয়ে না-বাংলা, না-ওড়িয়া এক জগাখিচুড়ি কথ্য ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। শুনেছি ‘James Cameron’ –এর ‘Avatar’ সিনেমার জন্য ভাষাবিদ ‘Paul Frommer’ সৃষ্ট ‘Navi Language’- এর ব্যাকরণ বই প্রকাশ হয়েছে। সিরিয়াল নির্মাতারাও এই ধরনের কিছু ভাবতে পারেন। তাতে টিআরপি বাড়বে বই কমবে না।
    বাংলা মেগাসিরিয়ালের এরকম আরও অজস্র বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা (বা মুণ্ডপাত) করা যেতেই পারে, কিন্তু তাতে এই লেখাও সিরিয়ালের মতোই অনন্তকাল চলবে। তাই সে চেষ্টা করছি না। গুটিকতক মেগাসিরিয়ালে হয়তো এই সব নিয়মের ব্যাতিক্রম ও দেখা যায়, তবে গড় হিসেবের মধ্যে সেগুলো আসবে না। এ বাদেও সাহিত্যনির্ভর কিছু সিরিয়াল ভাল হয়েছে বা হচ্ছে, যদিও তা সংখ্যায় খুবই কম। আরও দুঃখের বিষয়, এই ধরনের ভাল সিরিয়াল টিয়ারপিতে তথাকথিত মেগাসিরিয়ালের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ঘরে ঘরে টিভি পৌঁছে যাবার ফলে দর্শকের গুণগত মান যে অনেক পড়ে গেছে, তাতে সন্দেহ নেই। এই সব অবাস্তব মেগাসিরিয়ালের রমরমা হয়তো সেই কারণেই।

    এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন, এই ভাবে কতদিন চলবে। দর্শকের রুচি না বদলালে, এই ধরনের মেগাসিরিয়াল বন্ধ হওয়া মুশকিল। অনেক দর্শকই এখন এই একঘেয়ে আর নিম্নমানের মেগাসিরিয়াল দেখে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা মেগাসিরিয়াল প্রেমিকদের তুলনায় কম। ভবিষ্যতে বাড়লেই মঙ্গল।
    শোনা যাচ্ছে, হিন্দি সিরিয়ালেও এখন ইংরেজির অনুকরণে ‘সিজন’ ফরম্যাট চালু হচ্ছে। এই ফরম্যাটে বছরে কয়েকটি নির্দিষ্ট সংখ্যক এপিসোড দেখান হয়; আবার পরের বছর নতুন সিজন শুরু হয়। সিরিয়ালের টিয়ারপি-র ওপর ভিত্তি করে ঠিক হয় ক’টা সিজন তৈরি হবে। এই ধরনের সিরিয়াল প্রোডিউস করে বড় বড় ফিল্ম স্টুডিও গোষ্ঠী। এই ফরম্যাটেই আমরা ‘I Claudius’ - এর মতো ঐতিহাসিক ধারাবাহিক, ‘Fringe’ –এর মতো কল্পবিজ্ঞানমূলক সিরিজ , ‘Blackadder’ –এর মতো স্যাটায়ার বা হাস্যকৌতুকের সিরিয়াল পেয়েছি। এ বাদেও, দেখতে গেলে হিন্দিতে এখন ফামিলি ড্রামার বাইরে অন্য রকম প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।
    হিন্দির অনুকরণে বাংলাতেও এই ধরণের বদল আসবে, এটাই একমাত্র আশা করা যেতে পারে। আগামী দশ বছরে আমরা এইসব উর্বরমস্তিষ্ক সিরিয়াল নির্মাতাদের হাত থেকে রেহাই পাবো কি না, তা সময়ই বলবে। এই সম্ভাবনা বাদ দিলে বাংলায় মৌলিক ভাবে দারুণ কিছু হবার আশা ছেড়ে দেওয়াই ভাল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ জুলাই ২০১৭ | ৩০৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৫:৩৭61263
  • 'সেই সময়ের হিন্দি সিরিয়াল-এর ব্যাপারে নাসিরুদ্দিন শাহ্‌ মন্তব্য করেছিলেন, ‘টোদয়্স ট সেরিঅল্স অরে লিকে অ ভের‌্য বদ ভের্সিওন ওফ থে ৮০’স োম্মেিঅল িনেম’ । এমন সহজ উপায়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ধারাবাহিকের ফরমুলা পেয়ে বাংলা চ্যানেলগুলিও লোভ সামলাতে পারল না। হিন্দির অনুকরণে বাংলাতেও এই ধরনের মেগাসিরিয়াল তৈরি হতে লাগল।
    আজ, সেই সময়ের থেকে বছরদশেক পরে, হিন্দি সিরিয়াল কিছুটা হলেও সেই চক্র '

    --

    একমত। কিন্তু কালপ্রিট কি খালি প্রাইভেট চ্যানেলই?
    সরকারি চ্যানেলেও কিন্তু অবস্থা অনেকদিন তথৈবচ। হিন্দিটা বললাম। ডিডি বান্গ্লায়। সিরিয়াল কেমন কী হয় কিছুই জানিনা, ভাবতে গিয়ে দেখলাম।
  • de | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৯:২১61264
  • লেখাটা ভালো - কিন্তু এসব জিনিস মানুষ দেখে কেন? দ্যাখে বলেই তো চলে - না দেখলেই বন্ধ হয়ে যাবে -

    তার মানে এই জিৎ বা দেব বা স্বপন সাহার মতো এই ট্র্যাশগুলোরও সিলেক্টিভ দর্শক আছে -
  • কান্তি | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ১০:০৭61265
  • একটি সংবাদ শুধু এখানে দিতে চাই।একটি অতি খ্যাত চ্যানেলের সমস্ত সিরিয়ালের সর্বাংগীন বিন্যাসের বর্তমানে যিনি প্রধান রূপকার তিনি একক নির্বাচনে বর্তমানে এই বাংলার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন।
  • S | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ১০:২২61266
  • সপ্তাহে ৫-৬-৭ দিনের মতন গল্প নেই, আর সেই গল্প নিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা অসম্ভব। অতেব গাঁজাখুড়ি গপ্প আর ততোধিক খারাপ স্ক্রিপ্ট।

    লোকে দ্যাখে কারণ উপায় নেই। দৈনিক মনোরন্জনের প্রায় একমাত্র (সস্তাও) উপায় টিভি। খেলা নেই, খবর নেই, রিয়েলিটি নাচ-গান-হ্যা হ্যা নেই, অতেব সিরিয়াল চলে। হিন্দিও তথৈবচ। ইংরাজী দ্যাখার মতন অবস্থা নেই। তাই দ্যাখে।

    ছোটো পরিবার, প্রাইভেসি বেশি - অতেব পরিবারের মধ্যে কথা কম। প্রতিবেশিদের সাথে আলাপ নেই, আত্মীয়রাও দুরে, বন্ধু কমে গেছে, সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সোশাল লাইফ নেই। সবার পক্ষে গুরুতে আশার উপায় নেই। অতেব সন্ধ্যার পর থেকে নিস্চুপ জীবনে একমাত্র আওয়াজ আনে টিভি। ভালো বই পড়ে বা গান শুনে কেন লোকে সময় কাটায় না - সেসব তাত্বিক কথা আলোচোনার বাইরেই রাখছি।
  • de | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ১১:২৭61267
  • ইংরাজী সিরিয়ালগুলো তো এমন হয় না- এইটা দেখেচেন নাকি কেউ - আমার বেশ ভালো লেগেছে - হাই-স্কুল বুলিয়িং নিয়ে -

    https://www.netflix.com/in/title/80117470>
    <http://www.imdb.com/title/tt1837492/
  • S | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ১২:১৬61268
  • হুম দেখেছি। কিন্তু এরাও তো আরেকটা সিজন নিয়ে আসছে। পপুলার ভিউ সেটার বিরুদ্ধে। আমারো মনে হয়েছে দরকার ছিলোনা - দেখা যাক আর কি কি দেখায়। এতো ইয়ঙ্গ কাস্ট দিয়ে এতো ভালো অভিনয় ভাবাই যায়্না। আর ঠিক হাই স্কুল বুলিয়িঙ্গ নয় - বরন্চ বলা যায় স্ক্যান্ডাল - খুবই রিয়েলিস্টিক রিপ্রেজেন্টেশন।

    যাইহোক। ইংরাজী সিরিয়ালের এপিসোড সংখ্যা খুব কম হয় (সিজন প্রতি ২৪ বা আরো কম), আউটডোর শুটিঙ্গের সুযোগ (পড়ুন ফান্ডিঙ্গ), আর ব্যাপক কম্পিটিশন - চ্যানেল গুলো বাদ দিয়েও শুধু নেটফ্লিক্স, হুলু, অ্যামাজন প্রাইমের জন্যেও প্রচুর সিরিয়াল তৈরী হয়। আর পেমেন্ট ভাবা যায়্না। তাই খুব ভালো কাজ হয়েছে বিগত কয়েক বছরে - প্রভুত উন্নতি হয়েছে - ভ্যারাইটিও বেড়েছে। আর খুব বড় অডিয়েন্স, ফলে ভ্যারাইটিও প্রচুর - নইলে ডেক্সট্রারের মতন সিরিজ তৈরী করতো না কেউ।

    বরন্চ সিনেমার মান একটু নেমেছে - শুধু সুপার হিরো(ইন) সিনেমা তৈরী হচ্ছে।

    হিন্দি সিরিয়ালের কেসও খুব ভালো নয়। সম্প্রতি করন ওয়াহি এই নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছে। পারলে পাকিস্তানের সিরিয়াল দেখতে পারেন। জিন্দেগী গুলজার হ্যায় নাকি দারুন - দেখা হয়নি - তুলে রেখেছি।
  • S | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৭ ১২:২৮61269
  • "শুনেছি ‘James Cameron’ –এর ‘Avatar’ সিনেমার জন্য ভাষাবিদ ‘Paul Frommer’ সৃষ্ট ‘Navi Language’- এর ব্যাকরণ বই প্রকাশ হয়েছে। সিরিয়াল নির্মাতারাও এই ধরনের কিছু ভাবতে পারেন। তাতে টিআরপি বাড়বে বই কমবে না।"

    সিরিয়ালে হয়েছে তো। ডোথ্রাকি শেখার বই আছে।

    ইংরাজী সিরিয়াল এখন সিনেমার থেকেও যোজন কোষ এগিয়ে গেছে। যেধরনের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছে ওরা, আর স্ক্রিপ্টের যা কোয়ালিটি তেমন কোয়ালিটি সিনেমাতেও দুর্লভ।

    বাংলা সিরিয়ালের সাথে ইংরাজী সিরিয়ালের তুলনা করা ঠিক হবেনা, বরন্চ বাংলার আগের সিরিয়ালের থেকে কেন উন্নতি হলোনা সেইটাই পোশ্নো। হিন্দিতেও তাই। বুনিয়াদ, হাম লোগ, দুসরে কেভাল, সার্কাসের পরে এই হাল হয় কি করে সেইটাই ভাবার।
  • পাই | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৮61270
  • বুঝভুম্বল কি এটা চাইছিলেন ?

    আচ্ছা, ঋদ্ধিমান, হিন্দি সিরিয়াল অন্যরকম কোনগুলো হচ্ছে ? আমার দেখা বেশ কম, দেখার মধ্যে বেশিরাভাগই বেশ খারাপ,বাংলা সিরিয়ালগুলো যেসবের জেরক্স আর কি, কিন্তু এর মধ্যে দুটো বেশ অন্যরকম লেগেছিল। মেরা বহু রজনীকান্ত ( এখন আর হয় কি না জানিনা), অন্যটা মে আই কামিন ম্যাডামজি। এইটিতে কিছু কিছু এপিসোড বা জিনিস ভুলভাল লাগলেও , ওভারল, আইডিয়া, ডায়লগ, অভিনয়, সবই বেশ অন্যরকম। জানে ভি দো ইয়ারো ঘরানা মনে পড়ে যায়।
  • জি | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৫:৫৭61271
  • সিরিয়াল একদমই দেখিনা। ছোটবেলায় 'জাঙ্গল বুক' যত মন দিয়ে দেখতাম বড় হয়ে সেই একাগ্রতা দেখাতে পেরেছিলাম শুধু জিন্দেগি চ্যানেল খুলে। 'জিন্দেগি গুলজার হ্যায়' আর 'শিখান' বেশ ভাললেগেছিল। এখানকার হিন্দি সিরিয়ালের মত আজগুবি নাগিন সিরিয়াল নয়, গোটা তিরিশের কাছে এপিসোড। অহেতুক টেনে আবর্জনার স্তুপ বানানোর মানসিকতা নেই। ইংলিশ সিরিয়াল গুলোর মতো গল্প টু দ্য পয়েন্ট আবার তাদের মতো নেক্সট সিজন এর কনসেপ্ট ও নেই।
  • jindegi | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৭ ১১:৩৬61272
  • jindegi chyaanel to ekhan analaain haye gechhe. okhaane dekhaano praay sab turki, iukren, saauth koriyaa, braajiler siriyaalagulo aamaar besh bhaalo legechhe. paakistaani gulo inDiyaan kaman siriyaaler cheyeo baaje. hindite 'aadhe adhoore' naame ekaTaa siriyaal hat, puro aa shirt dashaker siririyaalagulor mat.
  • jindegi | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৭ ১১:৪৬61273
  • জিন্দেগি চ্যানেল তো এখন অনলাইন হয়ে গেছে। ওখানে দেখানো প্রায় সব তুর্কি, ইউক্রেন, সাউথ কোরিয়া, ব্রাজিলের সিরিয়ালগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে। পাকিস্তানি গুলো ইন্ডিয়ান কমন সিরিয়ালের চেয়েও বাজে। হিন্দিতে 'আধে অধূরে' নামে একটা সিরিয়াল হত, পুরো আশির দশকের সিরিরিয়ালগুলোর মত। এখানে সব পাবেন।
  • Riddhiman Basu | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৫:১০61274
  • এই লেখাটি বছর দুয়েক আগেকার। সেই সময় মনে হচ্ছিল যে হিন্দি সিরিয়াল হয়ত এই চক্র থেকে বেরনোর ছেষ্টা করছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা দুরাশা ছিল। ডিডি বাংলায় কিছু পুরনো সিরিয়াল টেলিকাস্ট করে, সেগুলো ভালই। ইংরাজি সিরিয়াল এর সঙ্গে তুলনা করতে চাইনি, তবে এটাই বলছিলাম যে ওগুলোর থেকে একটু 'inspiration' তো নিতে পারে। আসলে এই রদ্দি মাল গুলো দিব্বি চলে যাচ্ছে, তাই কারও কোন হেলদোল নেই।

    আমরা একটা চেষ্টা করছি, জানিনা কতদুর সফল হবে। তবে এইসব দেখে যে সাধারণ মানুষ বিরক্ত, সেটুকু বোঝাতে পারলেও অনেক। এই লেখায় অ-নারীবাদ এর বিষয় এবং তার প্রভাব নিয়ে মূলত আমাদের পিটিশন।
    সই ও শেয়ার করে সমর্থন করুন।
    https://www.change.org/p/information-and-cultural-affairs-ministry-stop-promoting-misogyny-and-rape-culture-in-bengali-soaps?recruiter=251687296&utm_source=share_petition&utm_medium=copylink&utm_campaign=share_petition
  • pi | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৫61275
  • বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা লেখা ছিল , রইল। আর হুচির একটা পোস্ট পড়ে মনে পড়ল।
    http://eisamay.indiatimes.com/editorial/post-editorial/cinema-can-play-a-strong-roll-on-woman-empowermet-issue-/articleshow/55664367.cms

    সেটা পড়ে কিছু প্রশ্ন জেগেছিল, সেগুলোও রইল।

    বোলান গাঙ্গুলির লেখাটা পড়তে পড়তে কয়েকটা কথা মনে হল। লিখেই ফেলি।
    বিজ্ঞাপন আর বিপণনের যুক্তিতে সিরিয়ালে যদি এইসব দেখানো হয়, সেই যুক্তি পুরোপুরি খাটেনা বোধহয়। কারণ বিজ্ঞাপনেও, বাংলা বিজ্ঞাপনেও মেয়েদের এতোটা এইভাবে সাংসারিক কূটকচা৯প্রাণা কিম্বা বলিপ্রদত্ত ক'রে দেখানো হয়না বা তার হিন্ট দেওয়া হয়না। হয়ইনা বলছিনা, কিন্তু সিরিয়ালের এক্সটেন্টে না।
    এই যে লেখা হয়েছে, স্বামীসোহাগিনী ও শ্বশুরবাড়ির নয়নের মণি হয়ে 'ভাল' বৌ হয়ে ওঠাটাই মেয়েদের জীবনের পরম ব্রহ্ম করে দেখানো হয়, মেয়েদের নিজেদের অন্য কিছু পারা থাকলে, সে চাকরি পড়াশুনা গান খেলা, যে যেটা ভাল পারে, সব তুচ্ছ করে, সেটা প্রায় ঠিকই। খেলা প্রসঙ্গে মনে পড়লো, একটি সিরিয়াল দেখে একটু আগ্রহ জেগেছিল, একটি ব্যাডমিণ্টন খেলোয়াড় মেয়ের কাহিনি। বিয়ের পরেও , শ্বশুরবাড়ির প্রাথমিক বিরোধিতা সত্ত্বেও তার আর তার বরের ইচ্ছে আর জেদে খেলা চালিয়ে চাম্পিয়ন হবার গল্প। মানে গল্পটা এরকমই ভেবেছিলাম। হ্যাঁ, ঘটনা অনুযায়ী এটাই বলা চলে। কিন্তু ( সিরিয়ালের গোদাত্ব, ন্যাকামি, অতিমেলোড্রামা, দুর্বল চিত্রনাট্য সংলাপ, এসব ত্রুটি বাদ দিয়েই বলছি) , ব্যাপারটা প্রোজেক্ট করা হল কীভাবে ? না, এত কিছুর পরেও সে কিন্তু সংসারের সব কাজ করছে, অন্য সব বাইরে না বেরোনো লোকজনের চেয়েও বেশিই করছে, এবং সেই ভাবেই সকলের মন জয় করে খেলার অনুমতি যোগাড় করছে আর তারপরেও তাই করছে, খেলার উপরেও সাংসারিক কূটকচা৯ সত্য । প্রোটাগনিস্টের ভূমিকা এরকম হলে তো এটাই খাওয়াতে চাওয়া হচ্চে মনে হয়, এটাই হয়, সেই বাস্তবতা প্রোজেক্ট করার থেকে আলাদা সেটা। যেন এটা হওয়াটাই দস্তুর, সেই ভ্যালু ইন্জেক্ট করা।
    গোয়েন্দা গিন্নিও তাই। গিন্নিমার ভূমিকায় কোন ত্রুটিমাত্র নেই, যতই গোয়েন্দাগিরি থাক না কেন, তাই ধইন্য ধইন্য।
    বা অবস্থাপাকে কমবয়সে বিয়ে হয়ে তারপর দারুণ পড়াশুনা করছে, কিন্তু, নাঃ, রান্নাবান্না সংসারের কাজ , সে সবার আগে। অথচ সে কাজের জন্য অন্য লোক নাই বা রাখার সুযোগ নাই, এমন না।
    কোন ঘরের কাজেই প্রায় ছেলেদের শেয়ার করার কোন গল্প নাই। মেয়েরা বাইরের কাজ করলে , অন্য কিছু পারসু করলে যে দুজনের উপরেই সংসারের কাজের সমান দায় বর্তায় , সে গল্প নাই।
    তবু বলব, কিছুটা হলেও অন্যদের থেকে মন্দের ভাল। তাও তো মেয়েরা ঘর সংসারের বাইরে অন্ততঃ কিছু করছে, করতে চাইছে, পারছে বলে দেখানো হচ্ছে। বাকিগুলো তো একেবারেই ভয়াভ, ঐ বোলানদির লেখায় যেমন বলা আছে।
    যদিও এইগুলোতেও চাকরি করে নিজের বা সংসারের জন্য রোজগারের গল্প প্রায় দেখিইনি। সেটা মোটামুটি অনুপস্থিত। একটি সিরিয়াল বাদে। সেখানে এই পরিবারে সব মেয়ে। কেউ বিধবা, কেউ ডিভোর্সি, তাদের মেয়েরা। তারা রোজগার করে, নিজেরা ব্যবসা করে সংসার চালায়। খোরপোষও নেয়্না। সম্পত্তিও নাই। বিধবা দিদা প্রেম করে আবার বিয়ে করলেন ইঃ। স্মার্ট ঝকজহ্লে না হলেও এবং অন্যদিকে নানা উচ্চকিত নাটকের বাড়াবাড়ি এবং শেষমেশ গতে পড়ে গেলেও তাও কিছুটা চেষ্টা চোখে পড়েছিল।
    তবে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, বেশ কিছু কেস দেখলাম, খুব ফুলে ফেঁপে ওঠা ব্যব্সার রাশ মেয়েদের হাতে। এটার কোন বিশেষ কারণ আছে কিনা জানিনা।
    আমি হয়তো অনেক সিরিয়াল দেখিনি, তাই অন্য কোন ট্রেণ্ড বা আরো ব্যতিক্রম আছে কিনা কানিনা। দেখেছি কয়েকটিই, এগুলো স্টাডি করতে মজা লাগে বলে। কিন্তু তার মধ্যেই প্যাটার্ন দেখা যায়।
    আর মেয়েদের ইসু বাদ দিয়েও সব মিলিয়ে আরো বাজে ব্যাপার হল, বেশিরভাগ সিরিয়ালের উচ্চকিত স্টুপিডিটি এবং স্মার্টমেসের অভাব। উইটের অভাব, যেগুলো বিজ্ঞাপনে আবার বেশ ভাল মতন মাত্রায় থাকে। মেয়েদের প্রশ্ন বাদ দিয়ে, এই প্রশ্নটা তাহলে থেকেই যায়, বাজার কোনটা খায় বা চায়, উইট না স্টুপিডিটি ? স্মার্টনেস না গ্যাদগেদেগদোগদোপানা?
    বাকিদের কী মনে হয় ?
  • pi | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯61276
  • আজ হুচির করা পোস্টটাও রইল।

    "পহেরাদার পিয়া কি" বন্ধ হল। জি-বাংলা, স্টার জলসার সিরিয়ালগুলো নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে এরকম কোন দাবী করা যায় না? অজস্র মানুষ বিনোদনের একমাত্র উপকরণ হিসেবে এগুলো গিলতে বাধ্য হচ্ছেন। এগুলোর ফলও সাধারণ অসহায় মানুষই ভুগবেন। যাঁরা এই সিরিয়ালগুলোর গল্প লেখেন, পরিচালনা করেন, অভিনয় করেন তাঁরা যখন কোন দায়িত্বজ্ঞানেরই পরিচয় দিতে পারলেন না, তখন নাহয় সাধারণ মানুষই এগিয়ে আসুক।
  • পাই | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৬61277
  • পাহারাদার পিয়া না কী একটি হিন্দি সিরিয়াল ব্যান হয়েছে। মূল কারণ বোধহয় বাচ্চা একটি ছেলের সাথে কোন কিশোরী বা যুবতীর প্রেম দেখিয়েছে ( আমি সিরিয়ালটি দেখিনি, একটি ট্রেইলর বাদে).

    ব্যান নিয়ে আমার একটা অন্য সমস্যা আছে, কিন্তু সে বাদে, এই নিয়ে কী মত?
    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10155513007263463&id=693808462

    রূপবান কন্যার গল্প শুনেছি এম্নিই, ব্যান হওয়া সিরিয়ালওও নাকি সেই গল্পের আধারে ছিল বলে কোথাও পড়লাম। তাহলে সেই গল্প কি ব্যান করার দাবি আসবে? বা রাধাকৃষ্ণের গল্প? গোপিনীদের সাথে কানাইয়ের লীলাকাহিনি?
    ব্যানের কথাও নাহয় বাদ দিলাম, প্রশ্ন হল, এগুলো পড়লে অস্বস্তি হয়না, দেখলে হয়?
    একটু মতামত জানতে চাই। আমি।নিজেও খুব জোরালো মতামত তৈরি করতে পেরেছি, এমন না।

    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10155513007263463&id=693808462
  • S | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫61278
  • অফিসিয়ালি বোধয় ব্যান হয়নি। চাপে পরে তুলে নিয়েছে।
  • S | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬61279
  • আর রূপবান কন্যার গল্পটা একটু অন্যরকম।
  • pi | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২০61280
  • সিরিয়াল আর গল্প কতটা কী অন্যরকম?

    আর আমি তোলার জন্য চাপের কথাই বলছি।
  • S | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২৭61281
  • গল্পটা যতটুকু জানি তা হলো সহজাদা তখন কয়েক মাসের শিশু। কিন্তু সিরিয়ালে তা নয়। এখানেই সমস্যা। দুটৈ ইউটিউবে আছে, দেখে নিলে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
  • pi | ***:*** | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৯61282
  • দেখতে হবে। কিন্তু আমি যেটা দিলাম, সেটাতো রাধা কৃষ্ণ। সেই নিয়ে কী মত ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন