কলেজ শেষ করার আগে এ দেশে কাজ করার ছাড়পত্র হাতে এল।
কর্পোরেটে কাজ করার ইচ্ছে/ সুযোগ/ খোঁজ কিছুই ছিল না। কাকতালীয়ভাবে একজনের সাথে পরিচয় হল। সে আরেক গল্প। পরে কখনো কেউ শুনতে চাইলে বলব। যাই হোক, যার সঙ্গে পরিচয় হল তিনি একটি ছোট সংস্থায় কাজ করেন –নেপাল থেকে এসে এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা এখন - এটুকুই জেনেছিলাম। আমার সঙ্গে আলাপ খুব অদ্ভুতরকম কিছু যোগাযোগসহ। কিছুক্ষণ কথা বলে জানতে চাইলেন যে আমি ওঁদের অফিসে কাজ করতে চাই কিনা। মাইনে খুব কম। অফিসের কিছু কাগজ/ চিঠিপত্র, কিছু ব্যাঙ্কের কাজ এসব সামলানোর কাজ। আমিও তেমন কিছু না বুঝেই রাজি হয়ে গেলাম।
সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা করে ২ সপ্তাহ কাজ করার পর শুনলাম যে আমি চাইলে সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করতে পারি। রাজী হলাম। এর ৩ সপ্তাহ পর জানলাম আমি চাইলে সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারব। রাজী হলাম!
এখন কথা হল – আমি কী কাজ করছি আর কেনই বা এত কম সময়ে আমার কাজের সময় বাড়ছিল। আমি কাজ শুরু করার বেশ কিছুদিন পরে বুঝতে শুরু করলাম যে আমার অফিস কী কাজ করে। কিন্তু স্পষ্ট ধারণা নেই। আমার অফিসের নামের মধ্য দিতেই অতি সহজে বোঝা যায় যে আমাদের কাজ হচ্ছে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন নিয়ে। কিন্ত আমি যে সব কাজের মধ্যে ছিলাম, এগুলো দিয়ে আর বাকি কর্মসূচী বোঝার কোন উপায় ছিল না। অফিসে আমি আর ঐ ভদ্রমহিলা তথা আমার বস তথা কোম্পানির এক্জিকিউটিভ ডিরেক্টর – এই দুজনই শুধু নিয়মিত যেতাম। আরেকজন ছিল আমেরিকান। সেও আসত নিয়মিত। তবে আমাদের সময় আলাদা । মাঝে মাঝে একটু সময়ই শুধু দুজনের দেখা হতো। আমার সময় ছিল সকাল ৭টা থেকে। প্রথম প্রথম তো সকাল ৮টা/৯টায় বেরিয়ে যেতাম অফিস থেকে। রোজ যেতামও না। ও আসত ১১টায়। যেহেতু এ দেশে মেয়েকে নিয়ে একা থাকি তাই আমি এমন সময়েই সব বাইরের কাজ করি যতক্ষণ আমার মেয়ে স্কুলে থাকে। আরেকজনকে দেখতাম অনিয়মিত। সবসময় ট্র্যাডিশনাল জামাকাপড় পরেন, মাথায় পরিপাটি হিজাব। আলাপ হলে জানতে পারলাম উনি ইরাকি অ্যাসাইলি। আমার সঙ্গে ওঁর প্রথম যেদিন দেখা ততদিনে আমার এক মাসের ওপর কাজ করা হয়ে গেছে। মাঝে ২/৩ বার আরেকজনকেও দেখলাম। এরপর আর দেখলাম না। শুনলাম হঠাৎ করে ওঁর বাবা মারা গেছেন। ৩/৪ মাস আসবেন না। কুর্দিস্তান গেছেন নিজের দেশে।
আমার তখনো কৌতূহল যে এদের আসল কাজটা ঠিক কী আর কিভাবে হয়।
খুব কম সময়ের মধ্যেই আমার কাজের সময় বাড়তে বাড়তে কাজের পরিমাণ আর ধরণও পাল্টাতে থাকল। একদিন আমার বস আমার হাতে কিছু ফাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন যে ওখানে কিছু প্রোগ্রামের ডিটেল দেওয়া আছে যেগুলো নিয়েই এই অফিসের কাজ। তাহলে পুরো ব্যাপারটা দাঁড়ালো –
ছোট্ট একটি অফিস।
পাঁচজন কাজ করি।
পাঁচ দেশের লোক।
পাঁচজনই মহিলা।
আমি দু'মাসের মধ্যেই সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা করে কাজ করতে শুরু করে দিলাম। এর পেছনে কয়েকটি কারণ – প্রথম পরিচিতা আমেরিকান কলিগ অন্য রাজ্যে চলে গেছে। ইরাকি কলিগ সবসময়ই part timer হিসেবে কাজ করেন। পরিবারের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করার জন্য বেশি সময় কাজ করতে পারেন না। আর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল আমার সঙ্গে একটি নতুন গোষ্ঠীর পরিচয়। সে ঘটনাটা বলছি।
একদিন অফিসে শুনছি আমার তিন সহকর্মী কথা বলছেন উইকএন্ডের একটা কাজ নিয়ে। একজন বলছেন “প্রিন্টার নিতে পারলে ভাল।” আরেকজন বলছেন “আমরা তো ভাষাও বুঝব না। আমাদের তো ল্যাপটপই নিতে হবে তাহলে। স্ক্যান করার সুযোগও থাকতে হবে…..”
আমি কিছু না বুঝেই বললাম “আমি যেতে পারি? আমি সব সাথে নিয়ে যাব।”
বস শুনে বললেন “সুকন্যা যাক। একটু সাহা্য্য হয়ে যাবে সব কাগজপত্র একসাথে করতে।”
কিচ্ছু না বুঝে, না জেনেই চলে গেলাম। জিপিএসে ঠিকানা দেওয়া। যেই জিপিএস জানাল যে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি – আমি দেখলাম এক অন্য আমেরিকা। নানা কারণে আমেরিকার অনেক রাজ্যে থেকেছি/ঘুরেছি – কিন্তু এর সাথে আর কোন জায়গার মিল নেই। কেমন যেন একটু মলিন, অগোছালো, গরীব। চারদিকে যেন অন্যরকম ছাপ। কেমন একটা নিজের দেশ, নিজের ফেলে আসা কিছু পরিচিত জায়গার মত। রাস্তার পাশে, ঘরের সামনে জামাকাপড় শুকোচ্ছে, বাচ্চারাও অন্যরকম ভাবে খেলছে। লোকজনদের চলাফেরা- বাড়িঘরের চেহারা আলাদা! পুরো এলাকাটাই অন্যরকম। আমার এত বছরের দেখা আমেরিকার সাথে মিল নেই। গাড়ি পার্কিং এ রেখে বসে আছি ভেতরে। বেরুতে ভরসা পাচ্ছি না। কেমন একটা অনুভূতি। মলিন আমেরিকা। পুরনো গন্ধ। দু:খ মেশা বাতাস। কেন যে আমার এমন লাগছে – আমি জানিনা। এই জায়গা নিয়ে কিছুই জানিনা। কোন সহকর্মী কিছু বলেও নি আগে থেকে। ওরা তখনো এসে পৌঁছায়নি। আমি হঠাৎ দেখি একজন বোরখা পরা কিন্তু মুখ দেখা যায় মেয়ে, সঙ্গে বছর দুয়েকের বাচ্চা।
আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে ওঁকে পরিষ্কার বাংলায় পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম “তুমি বাংলা বোঝ?”
উত্তর এল “ জ্বি আপু!! তুমি কেমনে বুঝতে পারলা?” এর উত্তর আমি নিজেই এখনো খুঁজি। সেই মুহূর্ত থেকেই আমি ওদের আপু।
এখন থেকে আমি ওদের ছদ্মনাম ব্যবহার করব। আমরা যারা সরাসরি communityতে কাজ করি/করেছি, ওঁদের অনেক ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হয়। আমরা অনেক সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করি। নানান স্তরে অনুমতি ছাড়া কথা, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারি না। ফেলে আসা জীবনের ট্রমা ওঁদেরও ছাড়তে চায় না দু' পাঁচ দশ বছরে, বা সারা জীবন - তাই ওঁরাও একটু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আমি তাই নামহীন কিছু টুকরো জীবন লিখে যাব।
আমিনা: “জ্বি আপু!! তুমি কেমনে বুঝতে পারলা?”
আমি: “জানিনা! সত্যিই আমি জানিনা!!”
“তোমরা সবাই বাংলা বল?”
আমিনা: “না আপু। আমরা রোহিঙ্গা। কেউ বাংলা বোঝে/বলে। বেশিরভাগ বলে রোহিঙ্গা ভাষা। কেউ কেউ বার্মিজ বলে আর কিছু মানুষ মালয়শিয়ার ভাষা বলে।”
আমি কেমন একটা হয়ে গেলাম। এ কী করে সম্ভব? আমি কী করে বুঝতে পারছি ওদের! কয়েকমিনিটের মধ্যে নানা বয়সের মানুষ আমার সামনে। আমিনা জোরে জোরে সবাইকে বলছে “আমাদের জন্য আপু আইসে। আমাদের আর সমস্যা নাই। আপু আমাদের সব কথা বুঝে।” রোহিঙ্গা দোভাষীর খুব আকাল। কেস ম্যানেজার, রিসেটলমেন্ট এজেন্সি গুলোর সঙ্গে কাজ চালানো ওদের জন্য খুব কঠিন। আর যা সর্বত্র হয়, এঁদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে কেউ না কেউ মুখিয়ে থাকে।
একসাথে সবাই কথা বলতে শুরু করল। আমি কিছুই আর বুঝতে পারি না।
সুরা নামের এক মহিলা হাউ হাউ করে কেঁদে কি যে বলল আমি এক বর্ণও ধরতে পারলাম না।
একটি বাচ্চা মেয়ে পরিষ্কার ইংরেজীতে আমায় বলল “My would be mother in law wants to talk to you but she got so emotional that she can’t speak now. Please wait for her.”
আমি তো অবাক!ও এত ভাল আমেরিকান উচ্চারণের ইংরেজী বলছে কী করে?
ওর নাম সা-বি। উত্তর পেলাম “আমাকে আর আমার দিদিকে কাকার সাথে আমেরিকায় পাঠিয়ে দিয়েছে যখন আমার বয়স সাত। আমি এই বছর হাই স্কুল থেকে পাশ করব।”
আমি শুনে খুব খুশী হয়ে বললাম “কোন কলেজে যাবে?”
সা বি ইংরেজীতে (ও শুধু মালয়েশিয়ার ভাষা আর ইংরেজী জানে): “আমার বর আর হবু শ্বশুর পছন্দ করবে না কলেজে যাওয়া!”
আমি: “এ কী বলছ? একদিকে তোমার বর, আরেকজনকে হবু শ্বশুর শাশুড়ী - কিভাবে সম্ভব!”
উত্তর : “আমার তো ১৮ বছর হয়নি - তাই আইনত বিয়ে হয়নি। কিন্তু ইসলামিক নিয়মে বিয়ে হয়ে গেছে কারণ আমার বাচ্চা হবে।”
মাথা আমার এমনিতেই গুলিয়ে গেছিল, এর মধ্যে এই যুক্তি তো কিছুই বুঝলাম না উল্টে আরো ঘেঁটে গেল।
শুধু বুঝতে পারলাম যাঁদের অধ্যে কাজ করতে চলেছি তাঁদের পৃথিবীটা আমার কাছে অচেনা, অনেক কিছু চিনতে, জানতে শিখতে হবে আমাকে।
আমরা কাজ করি জর্জিয়ার আটলান্টা শহরে। ইউনাইটেড নেশনসের এজেন্সিগুলির মাধ্যমে যখন শরণার্থীরা আমেরিকায় আসেন, তখন সারা দেশে মোট ন'টি রিসেটলমেন্ট এজেন্সি তাঁদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে। সেই ন'টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের মত আরো কিছু ছোট ছোট সংস্থা কাজ করে। নতুন মানুষ নতুন জায়গায় এসে পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে যা যা সহায়তা লাগতে পারে, তার সবই আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও কম্যুনিটির প্রয়োজন, অভাব অভিযোগ সরকারকে জানানোও আমাদের কাজ।
আমাদের সংস্থা যেসব উদ্বাস্তু ও শরনার্থী কম্যুনিটির মধ্যে কাজ করেন, তাদের মধ্যে আছেন রোহিঙ্গা, আফ্গান, সিরিয়ান, কুর্দ। এছাড়াও চাদ, ঘানা, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও আসা অল্প কিছু মানুষ। তাদের সবার আলাদা সংস্কৃতি, আলাদা চাহিদা, আলাদা সমস্যা, নিজেদের মধ্যে আলাদা দ্বন্দ্ব। কেউ সোজা দেশ থেকে এসেছেন, কেউ নানান দেশের রিফিউজি ক্যাম্পে পাঁচ দশ বছর ঘুরে ঘুরে, মনুষ্যেতর জীবন কাটিয়ে এসেছেন। তাঁদের মধ্যেও আবার একই ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তু ও মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রবল অসদ্ভাব, প্রাণ হাতে নিয়ে জোড়াতাপ্পি কাঠের ভেলায় সমুদ্রে ভেসে পড়ার সময়ও ধর্ম, ভাষার ছুতোয় হানাহানির গল্প শুনি। তবে আমি অসদ্ভাবের গল্প শোনাতে বসিনি, এত কিছুর পরও মানুষ বেঁচে থাকে, অন্য মানুষের বন্ধু হয়। আর আমাদের কাজের প্রাথমিক শর্তই জাজমেন্ট আর ব্যক্তিগত আবেগকে দূরে সরিয়ে রাখা। সহজ কাজ না যদিও, তাই রিফিউজি রিসেটলমেন্ট কর্মীদের নিয়মিত সাইকলজিক্যাল কাউন্সেলিং করাতে হয়, চারদিকে এত জীবন এবং এত হাহাকারের ইতিহাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি - ২০২০
মুনিরা: বুবু, আমার তো চাকরি নাই। আমার চার ছেলে। বাড়ি ভাড়া তো দিতে পারি নাই। আমার তো কোভিড হইল।
আমি: ঠিক আছে। দেখছি কী কী করা যায়। তোমার বর কই?
মুনিরা: ও তো আইয়ে নাই বুবু। দেশে আটকাইয়া গেসে। তার তো নাম ওঠে নাই।
- তুমি এই চার ছেলে নিয়ে একা! কীভাবে সামলাও? কাজে যাও কি করে? কতদিন হল এ দেশে আছ? নিয়ম জানো তো যে এখানে বড়দের ছাড়া বাচ্চাদের ঘরে রাখা যায় না একা?
- জানি আপু। রশিদা রাখে বাচ্চাদের। আমি ৫ ডলার কইরা দেই।
- তার মানে রোজ ২০ ডলার! তোমার রোজ কত রোজগার হয়?
- রোজ ৮৫ ডলার মত । ৫ ডলার শেয়ার করি গাড়ির জন্য। আমরা ৫ জন একসাথে যাই। নাইট শিফ্ট এ কাজ করি।
- তাহলে তোমার রোজ ২৫ ডলার খরচা। বাকি থাকে ৬০ ডলার। মাসে অন্তত ১২০০ ডলার হাতে রাখতে পারো। ভালই তো। তা, বাড়ি ভাড়া কত?
- ৮০০ ডলার। কারেন্ট আর গ্যাস ভাড়া ১৫০ ডলারের মত। ইন্টারনেট ৫০ ডলার। মোবাইল ২৫ ডলার।এরপরে বুবু ছেলেরার নানা খরচ - জুতা, জামাকাপড় , অসুখ বিসুখ , ওষুধ এসব নানাকিছু তো আসেই।
- ফুড স্ট্যাম্প আর মেডিকেড আছে তো? আর, কোভিডের জন্য তো চাকরি যেতে পারে না! তুমি ছুটি পেয়েছ। মাইনে তো ঢুকবে।
- আসে বুবু। তবে কুলায় না।
আমার আবার মাথায় জট পাকিয়ে যায় নানা হিসেব। যাই হোক। এখন আমি যেটা করতে পারি সেটা তো আগে করি!
১) লিজিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে আরো কিছুদিন সময় চেয়ে নেওয়া মুনিরার জন্য। তা না হলে একবার যদি লিগাল নোটিস চলে আসে, কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে।
২) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুনিরার জন্য এমারজেন্সি রেন্টাল অ্যাসিস্টেন্স ফাইল করা। অ্যাপ্রুভ হতে ৪/৫ দিন সময় লাগে।
৩) আনএম্প্লয়্মেন্ট বেনেফিটের জন্য তাড়াতাড়ি সব কাগজপত্র জমা করা। আমার অভিজ্ঞতা বলছে যে এক মাসের মধ্যেই ওকে কাজ থেকে নোটিস দেবে। আর ওর যা শারীরিক অবস্হা - আগামী কয়েক মাস ও কাজ করতেও পারবে না। নিজের গাড়ি নেই। কোভিড আক্রান্তকে কেউ চাইলেও সাহায্য করতে পারবে না। উল্টে আমাকেই এখন কম্যুনিটিতে জানাতে হবে ও সতর্ক করতে হবে যে কেউ যাতে মুনিরার পরিবারের কাছে না আসে!
৪) কোভিড কেয়ার প্রোভাইডারদের কাছে ওর নাম নথিভুক্ত করতে হবে যাতে ও আর ওর বাচ্চারা সঠিক যত্ন পায়।
৫) ওর বাড়ীতে গরম খাবার, শুকনো খাবার, দুধ, মাছ, ডিম, হালাল মাংস, বাচ্চাদের খাবার, ফল - এসব পাঠানোর জন্য অ্যাপ্রুভাল জোগাড় করা।
ব্যবস্থা হওয়ার পর মুনিরা বললো তুমি আল্লাহর দূত বুবু। আমি ভাবলাম যদি আমার ভক্ত বন্ধুকুলকে শোনাতে পারতাম এ লাইন।
মে মাসের শুরু - ২০২০
তখন কোভিড তুঙ্গে। কেউ জানিনা কিভাবে এর থেকে মুক্তি। কেউ বেরোত না। আমার অফিস থেকেও নির্দেশ যাতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখি। কিন্তু রোজ ফোন আসে - আপু/বুবু/দিদি/ ম্যাডাম/ সিস্টার - অনেক সম্বোধন, অনেক সমস্যা।
মে মাসের শুরুতে কম্যুনিটি ভিজিটে গেলাম। প্ল্যান হল গাড়ি থেকে নামব না। বাড়ির সামনে গিয়ে ফোনে ডাকব, দূর থেকে দেখা করব।আটটি পরিবারকে আগে থেকে জানিয়ে রেখেছি আমি কবে আসব। ওরাও লম্বা লিস্ট দিয়ে দিল যে কার কি লাগবে।
কারো ডায়াপার, কারো বেবি ওয়াইপস, কারো রান্নার বাসন তো কারো জামাকাপড়, কম্বল, বেডিং, ফার্নিচার, সাবান, বাচ্চার খাবার - নানান রকম। করোনার কল্যাণে ঘরে ঘরে নানান সমস্যা। সবার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনেফিট শুরু হয়নি, যাদের চাকরি যায়নি কিন্তু আওয়ার কমে গেছে তাদের আরো সমস্যা। প্রায় সবারই একাধিক ছোট বাচ্চা। আমি অফিস খুলে স্টোর থেকে গাড়ি বোঝাই জিনিসপত্র নিয়ে চললাম।
হাসিনার বাড়ির সামনে গাড়ি থামালাম। মুনিরা, সুরা, হাসিনা, আমিনা, খুরশিদা - আরো কত কত সব বিরাট দল বেঁধে আমার গাড়ীর সামনে!! আমি কাচ না নামিয়েই ফোন করলাম - “দূরে যাও! এ কী কাণ্ড! তোমরা এত লোক একসাথে কেন? কোভিডের মধ্যে? কী কাণ্ড! মুনিরা, তোমার তো এই কোভিড হল! দ্বিতীয় টেষ্টের ফল ও তো পজিটিভ!!! “
অনেক হইচইয়ের পর সবাই হাতে হাতে জিনিসপত্র নামিয়ে নিল - এখানে রোহিঙ্গা কম্যুনিটিতে হাসিনা নেতৃস্থানীয়া। ওঁর বাড়ি থেকে সবাই সব নিয়ে যাবে।
হাসিনার ডাকে গাড়ির দরজা খুলে বেরোতে হলো, মাস্ক, ফেসশিল্ড, গ্লাভস পরে টরে। বড় এক প্যাকেট ধরিয়ে বললো, এইগুলি তোমার। হাসিনা বাংলা বলে না। বলে রোহিঙ্গা। আমি নোয়াখালি, সিলেটি, চাটগাঁইয়া ডায়ালেক্ট জানার কল্যানে কাজ চালিয়ে নিই। রোহিঙ্গা ভাষার সঙ্গে চাটগাঁইয়ার খুব মিল।
একটা একটা প্যাকেট খুলছি - কারো বাগানের কাঁচা লংকা, কারো বাগানের ঢেঁড়স, লাউ, চালকুমড়া, শাক, ধনে পাতা, শশা, ডাঁটা, বেগুন - সাথে কিছু টিফিন বক্স।
এই ভালবাসা ফেলে আসা যায়?
ভয়ে ভয়ে গাড়িতে তুললাম।
বাড়ী এসে টিফিন বক্সগুলি বাইরে থেকে স্যানিটাইজ করে খুলে দেখি শুঁটকি মাছ, ভাপা পিঠে আর কয়েক খিলি জর্দা পান।
সেদিন ব্যক্তিগত আবেগকে দূরে রাখতে পারিনি, খুব কেঁদেছিলাম।
ছোটবেলায় আমার আশে পাশে এমন অনেকে ছিলেন যাঁর উদ্বাস্তু হয়ে, শরণার্থী হয়ে জন্মভূমির স্মৃতি, সংস্কৃতি, আচারটুকু সম্বল করে এক বস্ত্রে দেশ ছেড়েছিলেন। নিঃসম্বল ছিলেন কিন্তু দয়ার দান নিতেন না, প্রতিদানে অন্তত ভালোবাসাটুকু দিতেন।
আমার বাড়ি আগরতলা।
আমার বাবা অনেক ছোটবেলায় আমার বড় জেঠিমার হাত ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এসেছিলেন। আমার মা’র জন্ম আলিপুরদুয়ারে। আমার দাদুদের পূর্বপুরুষ কুমিল্লা থেকে ভারতে আসেন। আমি এখন অন্য আরেক দেশে। আমার মেয়ে ৬টি বিভিন্ন শহরে আর দুটি দেশের মধ্যে ১১ বছর কাটাচ্ছে।
আমি কাকতালীয় ভাবে যখন এই non profit organization এ ঢুকলাম, আস্তে আস্তে যখন কাজ বুঝতে শুরু করলাম - কোথাও একটা যোগসূত্র খুঁজে পাই মনে হয়।
নূর বিন্তি - ২০১৯ জুনের শেষের দিক।
ওদের বাড়ীতে অনেক কিছু খেয়ে পানের ডাবর নিয়ে বসলাম। আমার ওয়ার্কশপ ছিল ১০ জন মহিলা নিয়ে - কী কী উপায়ে এ দেশে রোহিঙ্গা মেয়েরা নিজেদের স্বনির্ভর করতে পারে। প্রথমত এই কাজে আসতে গেলে MSW ডিগ্রী থাকতে হয়। সাথে ট্রেনিং আর ভলান্টিয়ারিঙের অভিজ্ঞতা। আমার কোনটাই নেই। তাই সবসময়ই ভয়ে থাকি। এই না এমন কোন কথা বলে ফেলব যেটা বলা উচিত না। যাই হোক - ওয়ার্কশপ শেষে মনে হল একটু গল্প করি। ঐ পানের ডাবর দেখে আমিও আবেগের বশে নিজের ছোটবেলার গল্প শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি নূর কাঁদছে। আমি ঘাবড়ে গেলাম।
বললাম “তোমায় কি আমি কোন দু:খ দিলাম?”
নূর: না গো আপু, আমার সব পুরোনো কথা মনে পড়ে।
আমি: নূর, কেন কাঁদছ? বলতে চাও?
নূর: সব কথা মনে পড়ে। কত কষ্ট। এখনও ঘুম ভেঙে যায় ভয়ে। কানের কাছে গুলির শব্দ!
আমিও ভয় পাই। ওদের কোন অতীতই তো জানিনা। জানতে চাইব?
সাহস পাই না। মুখে বলি “যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর ভেবো না। এখন তো কত ভাল আছ। খুব শিগগিরই বাড়ি কিনবে।”
নূর: না গো আপু। সুখ আর এই জীবনে পামু না। পরাণ পুড়ে সবসময়।
আমি মনে মনে ভাবি, শিকড় ছিঁড়ে গেলে পরাণ পুড়ে।
রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম। এমন লেখা সচরাচর পড়তে পাই না। লেখিকাকে এবং যাঁরা খুঁচিয়ে লিখিয়ে নিলেন তাঁদের ধন্যবাদ।
খুবই আগ্রহের সাথে বাকী পর্বের অপেক্ষায় থাকব। বাংলায় এরকম অভিজ্ঞতা পড়তে প্রায় পাইই না। চেনাবৃত্তে সবাই আমেরিকা যায় সফল থেকে সফলিতর হতে।
আচ্ছা ঠিক কি কাজ করে সেটা না জেনে কাজ নিতে তোমার অস্বস্তি হয় নি? ভাগ্যিস ঃঃঃইএছিলে কাজটা।
আর উপরের ছবিটা আমার চেনা। :-)
ছিন্নমূল অস্তিত্বের গোড়ায় নাড়া পড়ে গেল। মরমী উপাখ্যান।
খুব ভালো শুরু । পড়ছি।
ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
"অশিকড় ছিঁড়ে গেলে পরাণ পুড়ে " অথচ যুগে যুগে শিকড় ছেঁড়া মানুষেরা নূতন শিকড়ে নূতন সভ্যতা গংড়ে। এই মানুষদের মাঝখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা এত সংযত আবেগে বলেছেন লেখিকা ।আমি তো মুগ্ধ
স্বাগত। একটা নতুন দরজা খুলছে। অপেক্ষায়,
বিশ্ব শরণার্থী দিবস মনে রেখে এই লেখাটির আয়োজন করা দুর্দান্ত ব্যাপার হল একটা। লেখককে অশেষ ধন্যবাদ গুরুচন্ডালিকেও।
পড়তে পড়তে অদ্রীশ বিশ্বাসের একটি লেখা মনে পড়ছিল- বছর পনেরো আগের লেখা- জুন মাস ই ছিল- নাসিমকে দিয়ে শুরু হয়েছিল লেখা, যে নাসিমের পাসপোর্ট নিয়ে তার এক দোস্ত মারা পড়েছিল পাকিস্তানে- কেউ না, কিচ্ছু না , 'মৃত' নাসিম বলত- এইসায়ি চলা যায়েগা' -
সেই সব মনে পড়ল।
অনেক কবিতার লাইন ছিল সে লেখায়- জিন্ডালা মেবুর কয়েকটি লাইন ছিল এইরকম-
"সারা পৃথিবীর সমস্ত শরণার্থী শিবিরের তাঁবু নীল কেন?
সারা পৃথিবীর সমস্ত সীমান্তের রং হলুদ
এই নীল আর হলুদের বুনে যাওয়া সোয়েটার নিয়ে
আমার বাড়িতে মা বসে আছেন।
আমি যত দূরেই যাই, সেই সোয়েটারের উল
ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি আর আমি শরণার্থী শিবির থেকে
শিবিরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হাতে পাসপোর্ট -
কিন্তু মায়ের কাছে যেতে পারছি না।"
প্রতিটি পর্বের অপেক্ষায় থাকব -অনেকখানি আবেগ নিয়ে সম্ভবত।
তোমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অনেক হৈচৈ আড্ডা তথা কুমিল্লা, ময়মনসিং, ত্রিপুরা এবং কোলকাতার চমৎকার সব গল্পের মাঝে। তোমার কথায় হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত।
আর আজ এই কঠিন সময়ে বিদেশে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে দায়িত্ব পালন করছ-- আমি গর্বিত যে তোমার মত মানুষের সঙ্গে কখনও পরিচয় হয়েছিল। প্রতিটি পর্বের জন্যে অপেক্ষায় থাকব।
এই বিষয়টা নিয়ে জানার ইচ্ছা ছিল অনেকদিনের। প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কারো লেখা বাংলায় এই প্রথম পেলাম। আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া, 'মানুষ প্রাণীটা কেমন যেন'
আমি বুঝতে পারিনি আমার এই অভিজ্ঞতার গল্প কিভাবে শুরু করব। যেদিন থেকে টান অনুভব করলাম সেদিন থেকেই লেখার ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। আলস্য আর নেশা - দুটো ভয়ই ছিল আমার। আলস্য কাটিয়ে একবার লিখতে শুরু করলে - এই গুরুর ঠেক এর নেশা থেকে কি করে বেরুব?
রঞ্জন দা - প্রণাম! এত সুন্দর করে লিখলে! সেই আমাদের পুরনো আড্ডা ,গল্প ... অনেক কষ্ট করে সেই নেশা কাটিয়েছিলাম সাময়িক ভাবে। কিন্তু গুরুর দুই একনিষ্ঠ চণ্ডাল আবার নেশা লাগিয়ে দিল :)
সব পাঠকদের মতামত আর উৎসাহ আমাকে অনেক সাহায্য করছে লিখতে।
খুব ভালো লেখা। সুন্দর স্টাইল, অসাধারণ কনটেন্ট। চলুক। পড়তে থাকবো। লেখিকাকে চিনি অনেকদিন ধরে। কিন্তু তাঁর এই ধরণের লেখা আগে কখনো পড়িনি। চমৎকৃত হলাম।
কিন্তু এদের বোঝানো যায় না এতো বাচ্চা হয় কেন? এই যে ভদ্র মহিলা তাঁর স্বামী আসতে পারেননি কিন্তু চারটে ছেলে নিয়ে এখানে এসেছেন হয় তো তো স্বামীরই আরো আটটা বাচ্চা নিয়ে আরেক জন এসে এইখানেই উঠবেন! এই আঠারো না হওয়া মেয়েটি এখন থেকে বাচ্চা হতে শুরু করলো। এর তো কোনও শেষ নাই!
*তো স্বামীরই = ওই স্বামীরই
আবেগের লেখায় আমার কমেন্টটি খুবই রুড। সুতো বাবু কিছু মনে করবেননা। লেখাটি ভালো।
সুতো"বাবু"?
"এদের" বেশি বাচ্চা হওয়ার চিন্তায় গুলায়ে গ্যাছে।
"এদের" বেশি বাচ্চা হওয়া নিয়ে "আমাদের" এই উদ্বেগটা বেশ ঐতিহ্যপূর্ণ। :|: আবার বহুবিবাহের ব্যাপারটাও ছুঁয়ে গেছেন।
ঐতিহ্যপূর্ণ তো নিশ্চয়ই কিন্তু অর্থহীন কি? আবেগের বাইরে গিয়ে ভাবলে ...
:|:- আমার মা ওরা ছয় বোন । আমার এক ব্রাহ্মণ বন্ধুর বাবার ৯ ভাই নয় বোন। টিনা আম্বানী অনেক শারীরিক কষ্ট সহ্য করে - প্রচুর টাকা খরচ করে তিন বাচ্চার মা হয়েছেন। প্রায়ই খবর হয় এটা। মুনিরা কেন পারবে না? ওর বরের নাম অনিল আর শ্বশুরের নাম ধীরু হতে হতো বুঝি? রবীন্দ্রনাথের মত "এদের"ও অনেক ছেলেমেয়ে ছিল। এ দেশে আমার চেনা জানা প্রায় সবারই তিন/চারজন সন্তান । আবার অনেকের একজনও নেই। কেউ কেউ আবার চায়ও না সন্তান জন্ম দিতে।
কি করবে বলুন। কোন্ ঘরে জন্মাবেন - সেটায় আপনার কোন কৃতিত্ব নেই। কিভাবে সুস্থ চিন্তার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করবেন - সেটায় আপনার এবং আপনার পরিবারের কৃতিত্ব অর্জন করার একটা সুযোগ অবশ্য থাকে।
ধন্যবাদ।
ও আমি বাবু নই - বিবি
জীবনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে রিপ্রোডাকশন রেটের সম্পর্ক নিয়ে কী সব তত্ত্ব আছে, যে কারনে আগে সন্তানসংখ্যা বেশি হওয়ার চল ছিল। গোষ্ঠীগতভাবে অনিশ্চয়তা বেশি হলে সন্তানসংখ্যা বেশি এরকম কিছু ব্যাপার আছে।
অবশ্য এসব সবাই জানেন, নতুন কিছু না।
গর্ভধারণের জন্য অধিকাংশ, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েটির মতামত আদৌ গ্রাহ্য করা হয় না। 'মেয়েমানুষের তেজ' ভাঙতে, নিজের চাকরিহীনতা ইত্যাদির ফ্রাস্টেশান ঝাড়তে মেয়েটিকে গির্ভবতী করে তোলাই বীরপুঙ্গবরা উপযুক্ত উপায় মনে করেন।
ঠিক এই কারণেই প্রচুর হরমোনাল ইমব্যালেন্স ও তার শারিরীক অরতিক্রিয়া সত্ত্বেও মেয়েটিই লাইগেশান করায়। অথচ বিশেষ কিছু প্রতিক্রিয়ার খবর না পাওয়া গেলেও ভ্যাসেকটমির হার অত্যন্ত কম।
*গর্ভবতী
** প্রতিক্রিয়া
খুব ভালো লাগলো
সুতো বাবু (এই বাবু জেন্ডার নির্ভর না) -- এটা অনুমান করেছিলাম। ১৮৬১ সালে জন্মানো রবীন্দ্রনাথের ভাইবোনের সংখ্যার তুলনা আসবে এই বীভৎস জনসংখ্যার ২০২১-এ। ভাটের আলোচনায় তো দুর্যোধনের একশো ভাইও এসেছিলো!
প্রশ্ন হচ্ছে মাসি পিসির সংখ্যাই বা গুনবো কেন? আমাদের প্রজন্মের এক সন্তানের বেশী নাই কোনও শিক্ষিত পরিবারে (ব্যতিক্রম নিয়ে কথা না)। আমাদের পরেও দুটি জেনারেশন এসে গেছে। এই আঠারোর মেয়েটি আমাদেরও পরের প্রজন্মের ইফ নট দুই প্রজন্মের পার। পপুলেশন একটা সমস্যা এবং আবেগ দিয়ে তার আলোচনা সম্ভব না। দারিদ্র্যের মধ্যে নয়ই।
অবশ্যই অনিল আম্বানির মতো পয়সা থাকলে কিছুটা বেটার। এর মধ্যে শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত ইত্যাদি প্রভৃতি বার্তা এনে লাভ নাই। বহু মেয়ে এই বাস্তবতা বোঝেন এবং দ-বাবু যেমন বললেন অনেক সমস্যা সয়েও লাইগেশনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রশংসনীয়।
ও এই আলোচনা কোনও বিশেষ ধর্ম নির্ভর না। কারণ গোবলয়েও এই একই সমস্যা।
হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ বা ঠাকুমার প্রজন্ম এনে লাভ নেই।
কিন্তু ওই অনিশ্চিত জীবনের ব্যাপারটা আছে।
আবার এটা অত সোজাও না, বলে সঞ্জয় গান্ধী জোর করে করতে গিয়ে কেস খেয়ে গেল।
আর ধর্মের ব্যাপারটা না থাকলে "ওই স্বামীরই" আরেকজন - প্রসঙ্গটা আসতো বলে মনে হয় না! আরে লজ্জার কী আছে, আধুনিক ভারতে সফট ইসলামোফোবিয়া খুব ইন থিং, আমরা সবাই জানি :)
জন্ম নিয়ন্ত্রন তো একটা সচেতনতার ব্যাপার, সেই সচেতনতার জন্যেও কিছু প্রিভিলেজ লাগে। আর দমদি যেটা বললো সেটা তো আছেই।
যে যার নিজের ধারণা গড়ে নেন। গোবলয়ের কথাতেও "সফট ইসলামফোবিয়া" মনে হলে কিই বা করতে পারি! আর ওই স্বামীরই কথাটা তো এই কাহিনীতেই আছে। হিন্দু বৌদ্ধ জৈন ক্রিশ্চান পরিবার হলেও তো গল্পটা একই থাকতো। বৌ চলে এসেছে আর দেখা হবে কি না কে জানে। আবার একটা সংসার আর একগাদা সন্তান তো স্বাভাবিক। আর ১৮৬১ থেকে ২০২১ শিশু মৃত্যু হার একই থেকে গেছে এটাও জানলুম। ঠিক জানলুম কিনা আর ভেরিফাই করতে ইচ্ছে নাই। যাগ্গে। নমস্কার জানিয়ে আলোচনায় ইতি টানলুম।
বহুদিন প্রতীক্ষায় ছিলাম, এই লেখাটার জন্য। বিরল অভিজ্ঞতা।
খুব ভাল হচ্ছে। চলুক
সাংবাদিকতার সুবাদে ত্রিপুরায় চাকমা আর এপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির দেখেছি বহুবার। তবু এই লেখাটি পড়তে পড়তে চোখ ভিজে গেল।
দেশহীন মানুষের মর্মবেদনা বোঝা সহজ কথা নয়।
আরও লিখুন
এই দামি টইটা বেলাইন করতে চাইনা। কিন্তু দুটো কথা বলে যাই।
এখন যে কমিউনিটির টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফ আর) দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মাপা হয় সে হিসেবে ভারতের গড় ২.২৩। সম্ভবতঃ ২.২ হলে জনসংখ্যা স্থির হবে, অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যুর হার ব্যালান্সড হবে। এখানে বঙ্গে এবং কাশ্মীরে এই হার ১.৬ (মুসলমান আধিক্য সত্ত্বেও) , অথচ উপ্র ও গুজরাতে ৩+।
আমার পর্যবেক্ষণঃ গ্রামীণ পরিবেশে গড় জন্মহার বেশি, শহরে কম। এখানে দুটো জিনিস বড় ফ্যাক্টর-- অশিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক সামাজিক চাপ। শহরে জানে যে কেন কোন নবদম্পতির পাঁচ বছর পরেও কোন বাচ্চা হয়নি এটা নিয়ে প্রশ্ন কয়রা যাবে না, এমনকি বাপ-মা, শ্বশুর শাশুড়ি কেউ নয়। গ্রামীণ সমাজে ঠিক উলটো, বিশেষ করে ছেলে নাহলে মেয়েটিকে নিয়ে ডাক্তার, অমুক দেবস্থান, ঝাড়ফুঁক সবই সইতে হয়।
যেমন দময়ন্তী বলেছেন-পুরুষের অপারেশনের হার এত কম কেন? কারণ এখনও পুরুষের কথাই এব্যাপারে শেষ কথা। অনেক শিক্ষিত পুরুষের ধারণা এর ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। যদিও পুরুষের ক্ষেত্রে এটি সহজ এবং রিস্ক-ফ্রি। মেয়েদের ক্ষেত্রে উলটো-- ভুল হলে প্রাণহানি হতে পারে।
সুতোর দেখা কেসটিতে আমার মনে হচ্ছে উপরের সবক'টি ফ্যাক্টর কাজ করছে বিশেষ করে মেয়েটির অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায়। এখনও গ্রামীণ ভারতে সর্দা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১২-১৩ বছরে গৌরীদান হয়ে যায়। ধর্ম নির্বিশিষে। অধিকাংশ ধর্মগুরু বাল্য বিবাহের পক্ষে যুক্তি দেখান।
অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। আরো লিখুন।