সিম্পসন’স প্যারাডক্স : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : শিক্ষা | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ৮৪৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৬
সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে?
ব্লাড টেস্ট, প্রসিকিউটর’স ফ্যালাসি ও ওয়ান্ডার উওম্যানের ল্যাসো – এজলাসে Bayes-বাবু : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৮ মে ২০২১ | ৪৮৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
ও-জে-সিম্পসন নিজের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, বহুদিন ধরে বহুল-চর্চিত ট্রায়াল হয় তার, সে ট্রায়ালের সম্প্রচার হয় সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথমবার ট্রায়ালে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান ওজে। প্রসিকিউশন প্রমাণ এনে দেন ওজে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করতেন, কিন্তু ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যালান ডেরশোউইজ সওয়ালে বলেছিলেন, তাতে কী? প্রতি ২৫০০-এ নির্যাতনকারীর ১ জন খুন করেন শেষমেশ। জুরির লোকেরা একটু বেইজ থিয়োরেম জানলেই দেখতে পেতেন এই তথ্য বরং প্রমাণ করে যে ওজে সিম্পসনের দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% এর উপরে!
মার্জারিন, ডিভোর্স, ভ্যাক্সিন ও সিগারেট -- কাকতালীয় ও কার্যকারণ সম্বন্ধ : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ৩১ জুলাই ২০২১ | ৪০৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কখনো কখনো দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এক তৃতীয়জন, ‘লার্কিং ভেরিয়েবল’ অথবা ‘কনফাউণ্ডার’। চাদ্দিকে এর মেলাই উদাহরণ, এই যেমন আপনার মাইনেও বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে ব্লাড প্রেশার, হয়তো দেখা যাবে, মাইনে বাড়ছে বয়সের সাথে, রক্তচাপ-ও তাই ... আবার কিছু মাথামুন্ডু নেই এমন জিনিষেও কোরিলেশান বেশি হতেই পারে, Zআনতি পার না। আই-এস-আই-এর একটা মজার গল্প আছে এই নিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর কোর্স, মিড-সেমেস্টারে প্রশ্ন এসেছে, 'মানুষের উচ্চতাও যেমনি বাড়ছে, মাথার চুলের ঘনত্ব তেমনি কমছে ... ক্যায়সে?' আমার এক প্রিয় জুনিয়র দুর্ধর্ষ উত্তর লিখে এলো, 'লম্বা লোকের টাক সূর্যের অনেকটাই কাছে, সেখানে গরম বেশী, খুব ঘাম ... ঘেমো টাকে অল্প চুল যদি না-ই পড়লো, তা'লে আর ঘেমে লাভ কি?' (বলাই বাহুল্য, আসলে হাইট আর জেন্ডারের সম্পর্ক আছে, ‘জেণ্ডার’ এখানে লার্কিং ভেরিয়েবল।)
জন স্নো, কলেরা ও ব্রড স্ট্রিটের একটি পাম্প : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৬৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা।
আপনি যেখানেই থাকুন : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | লঘুগুরু : উৎসব | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ৪০৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম দিবসে বাবার হাত ধরে আমিও যেতাম সেই সব রোমহর্ষক সংগ্রামে। তখন-ও ‘দিনেরাতে মুলে রাখে কান’ মোবাইল ছিল না পকেটে-পকেটে, তবুও ঘাবড়াইনি কোনোদিন, জানতাম রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে পকেটে একটা নাম-ঠিকানা লেখা চিরকুট থাকলেই চলে, হারিয়ে গেলেও কেউ খুঁজে পেয়ে আমাকে ক্যুরিয়ার করে দেবেন। তবে কি না, ছোটোবেলায় হারাইনি কোনোদিন-ই, ইচ্ছে ছিল একবার অন্তত হারিয়ে গিয়ে বাবার নাম ধরে মনের আনন্দে চ্যাঁচাবো, সেই গোপালের ছেলে যেমন চিল্লিয়েছিল “অ্যাই গোপাল, গোপাল”! কিন্তু সে শখ আর পূর্ণ হল না কোনোদিন।
তবে হারিয়ে একবার গেছিলাম, তাও আবার আধদামড়া, হিজল-দাগড়া বয়সে। সে-ও সেই অভিশপ্ত সপ্তমীর দিনটাতেই। সেই গল্প বলছি।
প্রোফেসর বক্সের সাবধানবাণী – ভূ-পর্যটকের ভুল অথবা টলেমি ও কে সি পালের পৃথিবী : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৪৪৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩১
মনে করুন সেই ছোট্টবেলার ভূগোল বই – সৌরজগতের ছবি আঁকা। প্লুটো তখন-ও লাইনের শেষে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে আছে, আর বাকিরা আগে-পিছে উঁকি মারতে মারতে ঘুরে চলেছে – আমাদের দেখা সৌরজগতের প্রথম ‘মডেল’ এবং বলাই বাহুল্য, সেটিও খুঁটিয়ে দেখলে ‘ভুল’-ই। তবে এক্কেবারে ডাহা ভুল নয়, অন্তত সূর্য তো মধ্যিখানে, তাই না?
একটা সময় তা-ও ছিল না, যেমন ধরুন টলেমি আর কোপারনিকাস – টলেমি-র মডেল ‘জিওসেন্ট্রিক’ আর কোপারনিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক’। ‘জিওসেন্ট্রিক’ অর্থাৎ পৃথিবীর চারদিকে সূর্য বা অন্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এমন কথা এখন বাচ্চারাও শুনলে হাসবে। আর বড়দের মধ্যে? সেই এক বিখ্যাত কন্সপিরেসি-থোরিস্ট কে-সি-পাল ছাড়া আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন, এমন ভাবনা-ই অসম্ভব, কিন্তু টলেমি নেহাত বোকা বা গোঁড়া মানুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন জিনিয়াস!
চ্যালেঞ্জারের দুর্ঘটনা ও প্রোফেসর ফাইনম্যানের মাইনরিটি রিপোর্ট : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৯ মার্চ ২০২২ | ৪৪৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
ফাইনম্যান নাসার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট লিখে মতামত দেন, যে এই ভেঙে-পড়া ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া অবধি মহাকাশযাত্রা স্থগিত থাকুক। বলেন, “For a successful technology, reality must take precedence over public relations, for nature cannot be fooled”। রজার’স কমিশনের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও সে রিপোর্ট শেষমেশ প্রকাশ পায়, তবে একেবারে শেষে অ্যাপেন্ডিক্স-এফ হিসেবে। অথচ, থিওকল, বইসজলি আর তাদের সঙ্গীদের সমস্ত সাবধানবাণী ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, নাসার ম্যানেজমেন্ট উৎক্ষেপণের আগে যে প্রি-লঞ্চ এস্টিমেটটি কষেছিলেন, তাতে বলা ছিল, লঞ্চে শাটল ফেল করার সম্ভাবনা ১০০,০০০এ মাত্র ১ – প্রায় নেই বললেই চলে। তাহলে?
হাণ্ড্রেড-ইয়ার ফ্লাড, এক্সট্রিম ভ্যালু থিওরি এবং একটি রাজনৈতিক হত্যার দলিল : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৫ নভেম্বর ২০২২ | ২৮৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনার কথা ভেবে তর-তম করেন ভূবিজ্ঞানীরা, হাণ্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, ফাইভ-হান্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, থাউজ্যান্ড … ইত্যাদি। কিন্তু, এই হাণ্ড্রেড-ইয়ারস ফ্লাডের মতো এমন ঘটনা যা হয়তো কোথায় একবার-ও হয়নি আগে, বা হলেও হয়তো সেই কোন মান্ধাতার আমলে, সেই বিরল থেকে বিরলতম দুর্ঘটনার মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করবেন কেমনে? একটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন ভাবলে সুবিধে হয়, ধরুন আপনি সেই ছোটোবেলার হান্স ব্রিঙ্কারের গল্পের মত এক ডাচ গ্রামের লোক, বন্যার জল আটকাতে চারদিকে এমন বাঁধ দিতে চান, যাতে আগামী একশো, কি হাজার বছরের বন্যার জল-ও কক্ষণো সেই বাঁধ টপকাতে না পারে, এইবার ভাবুন কত উঁচু বাঁধ বানাবেন হান্স? উচ্চতা মাপবেন কী করে সেই অনাগত বিপুল তরঙ্গের?
আধুনিক বিজ্ঞানের বহু বহু প্রশ্নের উত্তর যে রাশিবিজ্ঞান দিয়েছে সে তো বলাই বাহুল্য। সেসব প্রশ্নের উত্তর যোগানোর জন্য তথ্য (ডেটা)-ও তো আছে প্রচুর পরিমাণে, বরং দরকারের চেয়ে কিছু হয়তো বেশিই। কিন্তু এই ধরণের এক্সট্রিম ইভেন্টের (চূড়ান্ত?) সম্ভাবনা মাপার সূত্রটি ধরতে গেলে সেইসব অঙ্কের ভাঁড়ারেও কিছু কমতি পড়ে যায়। দরকার পড়ে অন্য একরকমে প্রোবাবিলিটি থিয়োরি – থিয়োরি অফ এক্সট্রিমস।
সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি - ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি! : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৮৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
আজ থেকে প্রায় বাহাত্তর বছর আগে, ১৯৫০ সালে, প্রোফেসর উইলিয়ম এস রবিনসন একটি যুগান্তকারী পেপারে (“Ecological Correlations and the Behavior of Individuals”) প্রমাণ করে দেখান, যে, দুটি রাশির মধ্যে সম্পর্ক (অর্থাৎ কোরিলেশন) সম্পূর্ণ আলাদা-আলাদা দুরকম হতেই পারে, যদি একটি মাপা হয় সমষ্টির জন্য (অর্থাৎ এগ্রিগেট লেভেল) আর একটি ব্যক্তির পর্যায়ে (অর্থাৎ ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলে)। রবিনসনের পেপারে ১৯৩০ সালের আমেরিকান জনগণনার—অর্থাৎ সেন্সাসের—ডেটা অ্যানালাইজ করে দেখানো হয়, যে ঐ সময়ের ৪৮টি স্টেটে যদি বিদেশে-জন্মানো (ফরেন-বর্ন) শতাংশ এবং সাক্ষর জনতার (আমেরিকান ইংলিশে সাক্ষর) শতাংশের মধ্যে কোরিলেশন পজিটিভ: ০.৫৩। এর থেকে ধারণা হতে পারে—যে রাজ্যে যত বিদেশ থেকে আসা লোক, সে রাজ্যে তত কম নিরক্ষর মানুষের শতাংশ, অথবা, তত বেশি সাক্ষরতার হার। আর একটু এগিয়ে ব্যক্তি-স্তরে নিয়ে গেলে, এমন মনে হতে পারে—যে, বিদেশে-জন্মানো মানুষের (আমেরিকান ইংলিশে) সাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা দেশে-জন্মানোদের থেকে বেশি। কিন্তু, এই সম্পর্ক-ই যদি ব্যক্তির স্তরে দেখেন, ঐ দুই রাশি—বিদেশে জন্ম আর সাক্ষরতা—এবার কিন্তু কোরিলেশন নেগেটিভ: —০.১১, অর্থাৎ সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি-স্তরে আসতেই সম্পর্ক উল্টে গেলো।
তবুও কখনো কখনো ব্যক্তির আচরণ আর সমষ্টির ব্যবহার এক-ই হয়, কখনো হয় এক্কেবারে উলটো। সেই গণ্ডগোলের নাম “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি”। “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি” শব্দবন্ধ অবিশ্যি রবিনসনের দেওয়া নাম নয়, সেটির আবির্ভাব কিছুদিন পর সেলভিনের ১৯৫৮ সালের পেপারে – ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসির সংজ্ঞা পেলাম আমরাঃ ‘the invalid transfer of aggregate results to individuals’!
ভক্স পপুলি : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : লোকসভা - ২০২৪ | ২৪ মে ২০২৪ | ২৩২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
ধরা যাক আমাদের n-সংখ্যক ভোটার আছে, n বিজোড় সংখ্যা (অর্থাৎ “টাই” অসম্ভব)। প্রত্যেক ভোটারের ঠিক বিকল্পে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ধরা যাক pc, এবং সবার ভোট পড়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে “মেজরিটি রুল” অনুযায়ী, অর্থাৎ যে সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেটিই আমাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। কনডরসে-র উপপাদ্যে এও ধরে নেওয়া হয়, যে, প্রত্যেক ভোটার ‘স্বতন্ত্র’, ‘দক্ষ’ এবং ‘আন্তরিক’। ‘স্বতন্ত্র’ – অর্থাৎ যে যার নিজের ভোট দিচ্ছেন বা একজনের পছন্দ আরেকজনকে প্রভাবিত করে না। ‘দক্ষ’ – অর্থাৎ, প্রত্যেকের ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের থেকে বেশি, যত সামান্যই হোক, এক্কেবারে র্যান্ডম গ্যেস অর্থাৎ ইকির-মিকির-চামচিকির করে আন্দাজে যা-ইচ্ছে-তাই একটা বোতাম টিপে দেওয়ার থেকে তার প্রজ্ঞা বা দক্ষতা একচুল হলেও বেশি। আর শেষ অ্যাজ়াম্পশনের কথা আগেও লিখেছি, ভোটার-রা ‘আন্তরিক’, সিরিয়াস-ও বলা যায়—কেউ ইচ্ছে করে ভুলভাল ভোট দিয়ে নষ্ট করছেন না।
দুই লেজান্ড্রর গল্প - একটি ভুল প্রতিকৃতি ও একটি অসম্পূর্ণ ক্যারিকেচার : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১৯৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
আমার গপ্পের নায়ক এমন একজন লোক যার সাথে "Prince of Mathematics" গাউস দীর্ঘদিন প্রায়োরিটি ডিস্পিউটে জড়িয়েছিলেন লিস্ট স্কোয়ারের আবিষ্কার নিয়ে। সেই নিয়ে বিস্তর চিঠিচাপাটি, মান-অভিমান, একশো বছর পরেও গণিত বা রাশিবিজ্ঞানের ইতিহাসের আগ্রহের ব্যাপার। তিনি আদ্রিয়ান-মারি লেজান্ড্র (নাকি লেজঁদ্র?) (জন্ম - ১৭৫২, মৃত্যু - ১৮৩৩।) অঙ্কের ইতিহাসে তার-ও কীর্তি কম নয়। চট করে ভাবলেই মনে পড়ছে - লেজান্ড্র পলিনমিয়াল, লেজাণ্ড্র ট্রান্সফর্মেশন, লেজাণ্ড্র ডিফারেনশিয়াল ইকোয়েশন, লেজান্ড্র সিম্বল, লেজান্ড্র কণ্ডিশন ফর ক্যালকুলাস অফ ভেরিয়েশন, লেজান্ড্র রিলেশন ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কিছু। ভদ্রলোক এর-ই পাশাপাশি নাম্বার থিওরি, এলিপটিকাল ইন্টিগ্রাল, ক্যালকুলাসের উপর বই লিখেছিলেন বেশ কিছু, আর ইউক্লিডের জিওমেট্রির মালমশলা নিয়ে লিখেছিলেন বেশ জনপ্রিয় পাঠ্যবই, একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল সেটি। তাও লেজান্ড্র জীবদ্দশায় প্রচুর খ্যাতি পেয়েছিলেন এ কথা লিখলে মিথ্যা বলা হবে। অন্যান্য সমমানে বিখ্যাত গাণিতিকদের মত তার 'সমগ্র' বেরোয়নি। এমন কি, ব্যক্তি লেজান্ড্র কেমন ছিলেন সে বিষয়ে আমাদের জানা আজ-ও অতি অল্প। ছাত্র অথবা বন্ধুদের দু-একটি চিঠির ভেতর যেটুকু যা ধরা যায় তাইই।
তবে, সে এমন কিছু আশ্চর্য হয়তো না। কত বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কি অঙ্কবিদ সারাজীবন নিভৃতচারী হয়ে কাটান। অন্য এক আশ্চর্যতর জগতের বাসিন্দা হয়ে। তাদের রোজনামচা না-ই জানা থাকতে পারে। কিন্তু লেজাণ্ড্রের গল্পের সবথেকে আশ্চর্য বিষয় এই যে এক শতাব্দীর-ও বেশি সময় ধরে মানুষ অন্য এক লেজান্ড্র-র ছবি দেখে ভেবেছে এই সেই আদ্রিয়ান-মারি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেখানে যেখানে যে বইতে লেজান্ড্রর কথা পড়েছে, যে ওয়েবসাইটে অঙ্কের ইতিহাসে লেজান্ড্রর কীর্তি পড়েছে, সেই কীর্তির পাশে যাঁর ছবি দেখেছে তিনি আদৌ গণিতজ্ঞ লেজান্ড্র নন। আদ্রিয়েন-মারির সাথে তাঁর যে কোনোরকম বাহ্যিক সাদৃশ্য ছিলো এমন-ও না। শুধু, মিল ছিল পদবীতে।
ঋতেন্দ্রনাথ : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ২৪ মার্চ ২০২৫ | ১১১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
'আমাদের দিনগুলিও অপূর্ণ, অপূর্ণ আমাদের রাত্রি, তবুও হাত ফস্কে জীবন চলে যায় যেন অকম্পিত ঘাসের মধ্যে একটি মেঠো ইঁদুর।' লিখেছিলেন এজরা পাউন্ড। জীবনের দিকে, এবং বারবার এই সন্ধেবেলায় নিজেদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে সত্যিই অদ্ভুত ঘটনাহীন জীবন যেন নিস্তরঙ্গ দুপুরের উঠোন। পুকুরের বুক চিরে ব্যাঙাচি খেলার মত একটা করে ঢিল ছুটে যায় মাঝেমাঝে - সত্যিই কি জলের স্তর চিরে যায়? চেরে না। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন যেন ঐরকম, কত কিছু হয়ে যায় দাগ পড়ে না। তবু সেইসব নিস্তরঙ্গ দিনগুলোর মধ্যে একদিন একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। আমরা বোঝার আগেই একটা অন্য পৃথিবীতে গিয়ে পৌঁছুই। আর জেনে যাই - সময় দুইরকম হয়। বিপর্যয়ের আগে, আর বিপর্যয়ের পরে। 'যেমন অসত্য ছিল দীর্ঘ গতকাল, যেমন অসত্য হবে অনন্ত আগামী'। ঋতেনদার সাথে আমার আলাপ ২০০৩ সালের আগস্ট মাসের কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে। আমাদের বিস্ট্যাটের ক্লাস শুরু হয়েছে সেদিন, লাঞ্চব্রেকের আগেই অমর্ত্য দত্তর ক্লাসে গ্যালোয়ার টাওয়ার অফ ফিল্ড-টিল্ড শুনে তখন কান দিয়ে ধোঁয়া-টোঁয়া বেরোচ্ছে, এই অবস্থায় ক্যান্টিনের রাস্তায় আকর্ণবিস্তৃত নিষ্পাপ হাসি মেখে একজন ভালোমানুষ গোছের দাদা এগিয়ে এলেন। ঋতেনদা।
বিষের ইতিহাস, ইতিহাসের বিষ : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
প্যারাসেলসাস বলেছিলেন, “Only the dose makes a thing not a poison”, অর্থাৎ শুধু মাত্রার তফাত-ই ঠিক করে দেয়, কোনটা বিষ, আর কোনটা বিষ নয়। আজকের দিনে এই কথাটার তাৎপর্য বোঝা বোধহয় আরও একটু বেশিই দরকারি হয়ে পড়েছে আমাদের সবার জন্যেই, কারণ বিজ্ঞাপন কিংবা মিডিয়া থেকে শুরু করে খবরের বিভিন্ন সূত্রে প্রায়-ই শোনা যায় ভয়-ধরানো সব বিশেষণ, “সাঙ্ঘাতিক বিষ”, “দ্য মোস্ট টক্সিক সাবস্ট্যান্স” ইত্যাদি প্রভৃতি। যা থেকে আমাদের মনে হয় যেন আসলে প্রকৃতিতে একটা দুর্দান্ত বাইনারি ব্যবস্থা আছে - কিছু পদার্থ বিষাক্ত আর বাকি সব নির্বিষ। কিন্তু আরেকটু তলিয়ে দেখলে বোধহয় প্যারাসেলসাসের মতই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো খুব কঠিন না। আরও সহজ করে বললে, যত বিষাক্ত পদার্থই হোক না কেন, যদি তার একটিমাত্র অণু, একটি মলিকিউল প্রবেশ করে কারুর শরীরে, বাজি রেখে বলা যায় তার কিস্যু হবে না, আবার অন্য দিকে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে, এমন কী জল-ও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। আর তাই, আজকের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা দূষকের মাত্রা পার্টস পার বিলিয়ন অর্থাৎ পিপিবি এককে মাপতে পারছি যখন, আবার-ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন ‘বিষবিজ্ঞানের জনক’ প্যারাসেলসাস। মাত্রা তবে মাপবো কী করে? কাকে বলে বায়ো-অ্যাসে, অথবা ডোজ-রেস্পন্স কার্ভ? কাকেই বা বলে LD-50? সেই সব গল্পে আসতে গেলে আমাদের রেনেসাঁ পেরিয়ে এসে অপেক্ষা করতে হবে সেই ১৯৩৫ অব্দি। ওহায়োর স্প্রিংফিল্ডের একজন সাধারণ কিন্তু অসামান্য মানুষ চেস্টার ব্লিসের গল্প বলবো। ব্লিসের গল্পে আসবেন ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট, আসবে গ্রেট ডিপ্রেশন, রোনাল্ড ফিশার এবং স্তালিন-জমানার লেনিনগ্রাদের গল্প। এবং একটু অঙ্ক, আর নির্বিষ অঙ্কের সাথে একটু বিষাক্ত ইতিহাস।
অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন: সংখ্যা, প্রবণতা ও বাস্তবতার খুঁটিনাটি : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১৬১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
যারা খবর দেখেননি তাদের জন্য আজকের তাজা খবর এই যে রাজস্থানে আমির শেখ নামে এক ব্যক্তিকে, নাগরিকত্বের সচিত্র পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বলার অপরাধে ডিটেইন করা হয়, এবং অভিযোগ এই যে, ডিটেনশন ক্যাম্পে কিছুদিন বন্দী থাকার পর তাকে বসিরহাট সীমান্তে এনে একটি পে-লোডার মেশিনের সাহায্যে কাঁটাতারের ওপারে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। আমির শেখ মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা, আমির শেখের সচিত্র পরিচয়পত্র ছিল, আমির শেখ কাজ করতেন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে, দোষ বলতে এক তিনি বাঙালি, আর দুই তিনি শ্রমিক ছিলেন বিজেপি-শাসিত একটি রাজ্যে।