প্রতিমানাটক নামে মহাকবি ভাসের একটি নাটক আছে। আমাদের এই নাটকটি ভাসের নাটকের বঙ্গানুবাদ নয়। এর পরিণতি ভিন্ন। প্রথম অঙ্কের প্রেক্ষাপটটি ভাসের অনুসারী এবং প্রেক্ষাপটের যুক্তিতেই কয়েকটি সংলাপ প্রায়-অনুবাদ। তাঁর নিজের সময়ে ভাস ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নাট্যকার; আমি ভাবতে ভালোবাসি, আজকের দিনে লিখলে ভাসের নিজের নাটকটিও হয়তো এই ধরণের কোন পরিণতি পেতে পারতো। মহাকবির মূল নাটকটি ছাড়াও এ নাটক রচনায় আমি শ্রদ্ধেয় রাজশেখর বসুর বাল্মিকী রামায়ণের সারানুবাদটি ব্যবহার করেছি। যাঁরা এই রামায়ণটি পড়েছেন তাঁরা জানেন বাংলায় চলিত ভাষার ভঙ্গীতে সাধু ভাষার ব্যবহারে রাজশেখর বসু শুধুমাত্র সিদ্ধহস্তই ন'ন, কোন কোন জায়গায় তাঁর ভাষার কোন বিকল্পই হয় না, ফলত সে রকম দু-একটি জায়গায় আমার নাটকের সংলাপ প্রায় রাজশেখরের রচনা থেকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাবার প্রশ্ন নেই, তাঁর ভাষাটি এখন আমাদের উত্তরাধিকার। নাটকের শেষ অঙ্কে দূতের দুর্মুখ নামটি ভবভূতির উত্তররামচরিত থেকে নেওয়া। ... ...
যেমন তোরা তেমনি তোদের পোদান হবেনি? আরে শুণ্ডিরাজ্যে লুঙ্গি চালু হইয়্যেচে সেই নিমাই সন্নেসীর আমল থেইক্যে। বামুন কায়েত নমোশুদ্দুর সব হিন্দুরা আর মোচলমান চাষা-জমিদার সব্বাই সেই নিমাই পণ্ডিতের লেইগ্যে গেরুয়া লুঙ্গি পরে লাইচত্যে লাগলো, কেরমে কেরমে সেই গেরুয়া রঙ বদল্যে, যে যার পচন্দের রঙে শুণ্ডিরাজ্য ছেইড়্যে অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ ছেইড়্যে – বন্ধু আর সিন্ধু দ্যাশতো ত্যাখন এক্যেই ছেল – সব দ্যাশেই পরতে শিকলো। অ্যাকন সরকারি পয়সায় বিশ-লাখি প্যান্টুল-কোট পইরত্যে শিখ্যে তোদের পোদান লুঙ্গিওয়ালা চিনত্যে শিক্যেচে! ... ...
হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়-বন্ধুদের অপেক্ষা করার জায়গায় অনলাভ বসে আছে। মাঝে মাঝে লাউডস্পীকারে কিছু ঘোষণার অস্পষ্ট শব্দ শোনা যায়, তাছাড়া এই ধরণের জায়গার স্বাভাবিক গুঞ্জনধ্বনিও শ্রোতার কানে আসে, এরই মধ্যে হঠাৎ শোনা যায় স্পষ্ট একটি ঘোষণা। ... ...
নো-এর আদর্শ যে রূপটির প্রতি জেয়ামির লক্ষ্য ছিল তা হল এই নাট্যরূপের এক সুক্ষ্ম কমনীয়তা প্রদান। জেয়ামি বিশ্বাস করতেন যে কমনীয় নো নাটকে অভিনয় করার সময় অভিনেতাদের আরও সৌন্দর্য প্রদর্শন করা উচিত ফুলের মাধ্যমে। এখানে ফুল একটি রূপক অভিব্যক্তি যা অভিনবত্বের প্রতিনিধিত্ব করে,এবং যা সদা আকর্ষণীয় ও সদা সতেজ। জেয়ামি জোর দিয়েছিলেন যে প্রতিটি নো নাটক পরিবেশনায় এবং অভিনেতাদের সাথে অবশ্যই ফুল থাকতে হবে এবং “সারুগাকু দাঙ্গি” এবং “ফুশিকাদেন” সহ ২১ রকম নো-পরিবেশনের উপর তাত্ত্বিক বই লিখেছিলেন। তিনি ৫০টির-ও বেশী নো গানের প্রবক্তা। এগুলি আধুনিক নো-তেও ব্যবহৃত হতে শোনা যায়। ... ...
আমরা দু'বোন এক বাড়িতে থাকি/ অনেক সুখের সেই একটি সুখ,/ অ্যাস্ট্রোনমির অঙ্ক কষে দিদি/ সেই গর্বে নাচে বোনের বুক। সূর্য-তারা বোনের কবিতায়/ দিদির অঙ্কে তারাই আসে-যায়,/ আমরা জানি আমরা কেমন দেখি/ অন্যে বলে অন্ধ? ― তা বলুক! ... ...
আমড়াগাছের নীচে একটি সভা বসেছে। এখন মাঝ রাত্তির। সভায় উপস্থিত বকচ্ছপ, বিছাগল, হাঁসজারু, গিরগিটিয়া, হাতিমি, মোরগরু, সিংহরিণ। একটু উঁচু জায়গায় বসে আছে প্যাঁচানি, সে এই সভার সভাপতি। সকলেরই চোখে জল, সমবেত চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হাত তুলে প্যাঁচানি উপস্থিত সবাইকে শান্ত হবার ইঙ্গিত দেয়, এক মুহূর্তে কান্নার শব্দ থেমে যায়, প্যাঁচানি হুট হুট শব্দে সকলের আচরণ অনুমোদন করে। এমন সময় ঘুম-ভেঙে-উঠে-আসা হরু চোখ কচলাতে কচলাতে প্রবেশ করে। ... ...
উৎফুল্ল দ্বীপবাসী বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সম্মিলিত কণ্ঠে "ধনধান্য পুষ্প ভরা' গানটি গাইতে থাকে। তাদের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ দ্বীপের সহজ সরল জীবন প্রকাশিত হয় কৃষিকাজ, নৌকা চালানো, খেলাধুলা, গেরস্থালি, উৎসব...। গান আর কার্যক্রমের মধ্যে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে তাদের সমৃদ্ধি আর সুখ-শান্তিতে বসবাসের চিহ্ন। গান গাইতে গাইতে সবাই বের হয়ে গেলে দেখা যায় এক জয়দীপ তার কয়েকটা অস্ত্রের মধ্যে একটা শান দিতে দিতে গানের একটা কলি গুনগুন করে গায় ... ...
অ্যামেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে একটি ক্যাম্পাস টাউন। প্রায় গ্রাম। দুর্গাপুজোর একমাস আগের এক সন্ধ্যা। একটি অ্যাপার্টমেন্টের লিভিং রুমে বেশ কয়েকটি ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে-দাঁড়িয়ে আছে। সবাই মিলে কথা বলার ফলে কারুর কথাই বোঝা যাচ্ছে না। ... ...