এই যুদ্ধ প্রতি মুহূর্তে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের পরিবারকে এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক বন্ধুজনকে। আমার রোমানিয়ান স্ত্রীর কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনকালটা গল্পে পড়া কাহিনি নয়। মাখনের জন্য দীর্ঘ লাইন। কাঠের টুল পেতে হোম ওয়ার্ক করেছে সেখানে। যে কোনো বিরোধী মতামতের মানুষকে পাড়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছে নিয়মিত। অত্যন্ত গোপনে রেডিও ফ্রি ইউরোপ শুনেছে বাবার পাশে বসে। চাউসেস্কু শহর ভ্রমণে বেরুলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পতাকা নেড়েছে। সেটাই নিয়ম ছিলো। ... ...
- আমাদের বাড়িটা খুলে দিতে পারি? - মানে ঢুকতে ভিসা পাসপোর্ট লাগবে না? - স্টপ ইট। বলছি আমি একা মানুষ। নানান বাড়িতে ঘোরাঘুরি করে দান সংগ্রহ আর প্যাক করার চেয়ে ভালো হয় যদি সেই সব দান আমাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। তাহলে বাড়িতে বসে আমি আর কয়েকজন সেগুলো বেঁধে দিতে পারি। শুক্র থেকে রবিবার মায়াও সাহায্য করবে। - তাহলে চালাঘর আর সুইমিং পুলটাও খুলে রাখো। এখন কেউ কি আর জলে নামবে? ... ...
এই সমস্ত, সবই আসলে পাঠ্য। বাতাস তাদের সবার মলাট সরিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন, শনশন শব্দে আমাদের কানে এসে বলছে, “পড়ো, পড়ো”। ... ...
একদিন বিবিসিতে দেখলাম, দুটো প্লেন মিলে ১১০ তলার দুটো বাড়িকে মাটিতে মিশিয়ে দিল। লো-অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা রাখা। তাতে বারবার ধরা পড়ছে, কালো আর ছাই-ছাই ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আমেরিকা, বিল্ডিংদুটো রংমশালের ফুরিয়ে আসার মতো নেমে আসছে। ... ...
১১ই মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’ কোভিড-১৯কে অতিমারী হিসেবে ঘোষণা করলো, আর ঠিক দু’ দিন পর, ১৩ই মার্চ আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রক বললেন, কোভিড-১৯ ‘জরুরি স্বাস্থ্যাবস্থা’ নয়। অবশেষে, ১৯শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিলেন দেশের উদ্দেশ্যে। তাঁর সরকার এই সঙ্কটমুহূর্তে কী করতে চলেছে – সে নিয়ে কিছুই খোলসা করলেন না, কিন্তু মানুষদের বললেন বারান্দায় বেরিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে, থালা, বাসন পিটিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের স্যালুট জানাতে। ... ...
আমার দেশ, আমার আমির-গরীব দেশ, ফিউডালিজম আর ধর্মীয় মৌলবাদের মাঝে, শ্রেণীভেদ আর পুঁজিবাদের মাঝে কোনো একখানে ঝুলতে থাকা, অতি দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদ-শাসিত ভারতবর্ষ -- তার কি খবর? ... ...
আমষ্টারডাম এমন একটা শহর যেখানে মানুষের থেকে সাইকেল বেশী – মোটামুটি আট লক্ষ লোক বাস করে এই শহরে, আর সেখানে সাইকেলের সংখ্যা প্রায় আট লক্ষ আশি হাজার মত (২০১৪ সালের হিসেব)। আর এই শহরের সবচেয়ে বেশী রিপোর্টেড ক্রাইম কি জানেন? সাইকেল চুরি। নানা বছরের গড় হিসেব বলছে আমষ্টারডামে বছরে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মত সাইকেল চুরি হয়! এবার এই সংখ্যাটা জানার পর আপনার সাইকেল চুরি হলে কি আপনি আর পুলিশের কাছে যাবেন? কি মনে হয়? এত পুলিশ গোটা হল্যান্ডে নেই যে বছরে ৮০ হাজার সাইকেল চুরির কিনারা করবে! ... ...
প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্রসাধনায় কল্পিত হয়েছে মানব শরীরের দুটো নাড়ী। শরীরের বামদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘ইড়া’, আর ডানদিকে যে নাড়ী থাকে তাকে বলে ‘পিঙ্গলা’। বৌদ্ধ সাধনায় এই দুটি যথাক্রমে শুন্যতা ও করুনার প্রতীক। ... ...
আপনি নিজে একা বা ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে যখন কোন হোটেলে ওঠেন, তখন কোনদিন সেই হোটেলের ‘ফায়ার-এসকেপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? মানে ধরুণ আপনি সেই হোটেলের পাঁচতলায় আছেন, হঠাৎ রাতের বেলা আগুন লেগে গেল কোন কারণে! কি করবেন আপনি? এটা আমরা সবাই জানি যে আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয় (আর এমনিতেই আগুন লাগলে লিফট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবার কথা) – তাহলে আপনি কিভাবে নামবেন নীচে? বেশী সময় নেই কিন্তু আপনার হাতে – আগে থেকে দেখে রেখেছেন কি সিঁড়িটা কোন দিকে যাতে বিপদের সময় আপনাকে খুঁজতে না হয়! ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
কলম্বাস বাবু শুধু ভারতকে নিয়েই কনফিউশনে ভোগেন নি – ক্যারাবিয়ান দ্বীপে পৌঁছেও বেশ ছড়িয়ে ছিলেন, ছড়ানোর মধ্যে এক অন্যতম উদাহরণ হছে চিলি-এর সাথে পেপার-কে ঘুলিয়ে ফেলা! ক্যারাবিয়ান দ্বীপ সান সালভাদরে (আজকের দিনের ওয়াটলিং দ্বীপ) পৌঁছে ঝাল ঝাল খাবার খেয়ে তিনি মনস্থির করে নিলেন যে যা থেকে ঝালের স্বাদ আসচে তাহাই ব্ল্যাক পেপার! কালো মরিচের স্বপ্নে তাঁর মন আচ্ছন্ন ছিল তখনো! যতক্ষণে তিনি বুঝতে পারলেন যে সেই ঝাল কালো মরিচ থেকে নয় বরং ছোট কুঁড়ি জাতীয় ফল এর জন্য এর জন্য দায়ী – ততক্ষণে বড় দেরী হয়ে গেছে। স্প্যানিশরা এই ছোট কুঁড়ি ফলকে পেপার বলে ডাকতে শুরু করে দেয় – সেই থেকে নামটা প্রচলন হয়ে গেছে! ... ...
লোকনৃত্য সমাজকে সংহত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ... ...
৯২০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে ব্যোমকেশ। এরপর বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হয় ইন্টারমিডিয়েটে। ১৯২১ সালে, ব্যোমকেশ যখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র, বয়স মাত্র সতেরো বছর, পর পর বাবা আর মা মারা যান। দুজনেই মারা যান দুরারোগ্য যক্ষ্মা রোগে। তাঁর জীবনে শুরু হয় এক অদম্য লড়াই, একলা চলার লড়াই ... ...
ব্যোমকেশের গল্প গুলো লেখা হয়েছিল অজিতের বয়ানে। অজিতের দৃষ্টিভঙ্গিতে। দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে সেই গল্পগুলোকে নিয়েই একটু আলোচনা করা হবে, তবে ব্যোমকেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর গল্প গুলো থেকে টুকরো টুকরো করে ঝেঁড়েবেছে ব্যোমকেশের জীবনকে বোঝার চেষ্টা করা হবে। অনেক কিছুই দেওয়া নেই। কল্পনা করে নিতে হয়েছে। যদিও কল্পনাকে কখনোই ডানা মেলে আকাশে উড়তে দেইনি। বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই কল্পনাকে মেশাতে হয়ছে। চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক। ... ...
প্রথম যন্ত্রচালিত গাড়ি ছিল ইলেকট্রিকের। আবার সে এসেছে ফিরিয়া। ... ...
সমন্বিত ইতালির দ্বিতীয় রাজা প্রথম উমবার্তো এবং তাঁর স্ত্রী রাণী মার্গারিটা নেপলস্ ভ্রমণে আসবেন বলে ঠিক হল ১৮৮৯ সালে। চারিদিকে হই হই লেগে গেল – থাকা ইত্যাদি তো ঠিক আছে, কিন্তু রাণী এখানে এসে খাবেন কি! তো ডাক গেল তখনকার নেপলসের বিখ্যাত পিৎজা বানানো শেফের কাছে – পিজারিয়া ব্র্যান্ডির রাফায়েলে এস্পোসিতো। তাঁকে বলা হল তুমি বাপু নানা রকম পিৎজা বানিয়ে রাজা রাণীকে পরিবেশন কর। আর গতানুগতিক জিনিস না বানিয়ে, মাথা ঘামিয়ে নতুন কিছু বানাও। রাফায়েলে এস্পোসিতো বানালেন বেশ কিছু রকমের পিৎজা - তিনি একটা পিৎজা বানালেন লার্ড, কাচ্চিয়াকাভাল্লো, এবং বেসিল দিয়ে, একটা বানালেন ছোট ছোট মাছ দিয়ে, আর একটা বানালেন ট্যামাটো, মোজারেল্লা এবং বেসিল সহযোগে। এই শেষের ডিসটি তখনো নেপলস্-এর বাজারে পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে। এবং এই পিৎজা খেয়েই রাণী কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ... ...
...পার্মিয়ান এক্সটিংশন কীভাবে হয়েছিল, সেই খবর এখনো আমাদের অজানা। ইঙ্গিত পাওয়া যায় শুধু, টুকরো টুকরো, আবছা, অনিশ্চিত। এক পৃথিবী প্রাণের প্রায় সবটুকু নিংড়ে নিয়ে গেল যে ঘটনা, তার দাগ রয়ে গেছে এখানে সেখানে। যারা শুনতে জানে, তাদের কাছে সেই অতীত এখনো কথা কয়। আমরা ঘরে বসে কাগজেপত্রে সেই বয়ান পড়ি। অদেখা, অচেনা জীবনের ছায়া আমাদের মনে এসে পড়ে, যারা মুছে না গেলে এই উপন্যাসে আমাদের অস্তিত্ব লেখা হত না। ... ...
বিজ্ঞান এক self-correcting, self-nourishing, ever-expanding বিদ্যা। অসম্পূর্ণতাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তাই আমাদের হাতে অন্তত একটা অসম্পূর্ণ ছবি গবেষকরা তুলে দিয়েছেন। নতুন কোনো টুকরোর হদিস পেলেই পরিমার্জন, পরিবর্ধন চলছে। অনেক জায়গা আবছা, ছোটো ছোটো সূত্র ধরে একটা অস্পষ্ট রূপরেখা আমাদের সামনে ফুটে উঠছে। তাই ভেজা-ডিম জলজ উভচরদের থেকে শুকনো-ডিম স্থলজ চারপেয়েদের বংশপঞ্জী এবং বৈশিষ্ট্য যদি খুঁজে দেখতে যাই, তাহলে ঝকঝকে পরিষ্কার ধারণার চেয়ে ছোপ-ছোপ ধারণা পাবার সম্ভাবনাই বেশী। আর সেই শতছিন্ন রোডম্যাপ ধরেই আমাদের এই গাইডেড ট্যুর। ... ...
সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে – “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?” বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে। ... ...