ঘড়ি দেখে অনিকেত। ফালতু ফৈজতে আধ ঘন্টা নষ্ট হয়ে গেলো। সটান উঠে গেলেই হয়। কিন্তু কৌতুহল হচ্ছে। কী এতো শুটিং চলে আজকাল। কারা করে? কেই-বা এসব করাচ্ছে?? ... ...
সম্বর্ধনায় এমন বিড়ম্বনা জুটবে কে জানত...তবে শেষমেষ যা পাওয়া গেল, সে সম্বর্ধনা অমূল্য। ... ...
দিদিমা বললেন, “ছাড়ো বৌমা, বেঋয়ে পড়ি। তোমার বাবার যত্তো ছিটিয়া৯ কারবার, সারাজীবন মাষ্টাঋ করে মাথার মধ্যে ছিটমহল বানিয়ে ফেলেছেন। নী৯মা আমার বেরোচ্ছি...” গলা তুলে নৃপেনবাবুকে চেঁচিয়ে বললেন, “শুনছো, আমরা বেরোচ্ছি”। তারপর নমুর গাল টিপে বললেন, “তুমি তো লক্ষ্মী ছেলে, দাদুর দিকে একটু নজরদাঋ করো, কেমন? দাদু যেন দুষ্টুমি না করতে পারে। আমরা বেরোলে দরজাটা বন্ধ করে ওপরেই থেকো”। ... ...
মেঘের মধ্যে ভাসতে থাকা কোটি কোটি ওই বরফ-বিন্দুগুলোও চায়ের পাতার মতো মেঘের স্তূপের মধ্যে ওঠানামা করতে থাকে। ব্যাপারটা বোঝা গেল কিছুটা?” ... ...
গাছে গাছে নেচে বেড়াই এই ডালে ওই ডালে। পাকা পাকা ফলগুলি ভাই,টপ করে নিই গালে।। বগল দুটি চুলকোই খুব,আরও চুলকোই ভুঁড়ি। বাঁদরামিতে এই দুনিয়ায় নেই গো মোদের জুড়ি।। ... ...
অরুণিমা বলে চলে, “দেখ দাদা, আমার ইমোশন টিমোশন নেই। ডিভোর্সের পর থেকে বোধ হয় আরও কাঠখোট্টা হয়ে গেছি। তাই যা বলছি, সেটা শুনতে খারাপ লাগতে পারে। বৌদিকে জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেওয়াটা ভাল। আগে কোনও দিন দিয়েছিস বলে তো মনে হয় না। তবে তার চেয়ে অনেক ভাল গিফট হবে ওর আর রঙিনের ভবিষ্যতের জন্য কিছু একটা করে যাওয়া। তোর তো যে কোন দিনই কিছু হয়ে যেতে পারে।” অরুণাভ গম্ভীর ভাবে শুনতে থাকে, চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে এক টুকরো কেক তুলে নেয়। বিনীতা বলে, “সকাল সকাল এসব আলোচনা না করলেই নয়?” ... ...
গল্পটি লিখেছিলাম বেশ কবছর আগে - আজকের দিনের মতো সেদিনও কোন এক কন্যার চরম অপমানিত হত্যার প্রতিবাদে দেশ এবং রাজ্য উত্তাল হয়েছিল । দোষীদের চরম শাস্তির আশায় তদন্ত চলেছিল, বিচার চলছিল - কিন্তু সব আশ্বাস সব সান্ত্বনা শুকিয়ে গিয়েছিল রাজনীতির মরু প্রান্তরে। আমাদের সকলের হাতে রয়ে গেল শুধু "মোমবাতির আলো" - সেদিনও - আজও একই ভাবে ... বাকি সব মরীচিকা... ... ...
বিনীতা আর গায়ত্রী বাইরের ঘরে এসে দেখে প্রচুর খাবারের প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকছে ড্রাইভার বিকাশ, তাকে সাহায্য করছে রঞ্জিত আর সবার পিছনে কেকের বাক্স নিয়ে আসছে অরুণাভ। গায়ত্রী হাসি মুখে বন্ধুর দিকে তাকায়। আর বিনীতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে। রঞ্জিত আর বিকাশ ভেতরে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর প্যাকেটগুলো রাখে। তাদের সাথে রঙিনও গেছে ভেতরে। ওদিকে অরুণাভ স্ত্রীর হাতে কেকের প্যাকেট তুলে দিয়ে বাইরের দরজার দিকে তাকায়। তার ভাব দেখে মনে হয় আরও কেউ আছে বাইরে। আর কে এল? মুহূর্তের মধ্যে আশা আর আশঙ্কা মেশানো একটা মিশ্র অনুভূতি হয় বিনীতার মনে। ডাক্তারবাবু নাকি? ... ...
সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাদের দরজা খুলল সে, বাইরে এল। ঠান্ডা রয়েছে ভাল, চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিল। আকাশ ঘন নীল, পূর্ব দিকে আলো ফুটছে, আশেপাশের গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে তারাও বিনীতার চাদর গায়ে দিয়েছে, তবে তাদের চাদরগুলো কুয়াশা দিয়ে তৈরি। সেই চাদরের আড়াল থেকে পাখি ডাকছে নানা রকম, শহর থেকে দূরে হওয়ায় অনেক পাখির ডাক শোনা যায় এখানে - বুলবুল, ছাতারে, সাতভাই, মাঝে মাঝে কাঠঠোকরাও আসে দু-একটা। দরজার পাশে একটা লাল সিমেন্টের বেঞ্চ আছে দেওয়ালের গায়ে। কয়েকটা উড়ে আসা শুকনো শিরিষ আর শাল পাতা পড়ে আছে তার ওপর, ছাদেও। কয়েক পা হেঁটে প্যারাপেটের কাছে গিয়ে নিচে বাগানটা দেখল। টেবিল-চেয়ার রাখার জায়গা তৈরি হয়েছে, নতুন কিছু গাছও লেগেছে। ছাদের ধার থেকে ফিরে শুকনো শাল পাতার পাশে বেঞ্চের ওপর বসে পড়ল বিনীতা, পাতাটা হাতে তুলে ধরল, শিশির লেগে আছে তার গায়ে। রোদ উঠে গেলে শিশির আর থাকবে না। শিশির ভেজা শুকনো পাতাটাকে পাশে রেখে দিল সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় একটা শ্বাস নিল। ... ...
গায়ক ছেলেটা ইতিমধ্যে একটা ইংরেজি গান ধরেছে, আর অনেকেই হাততালি দিয়ে তাল দিচ্ছে। বিনীতা বুঝল নিশ্চয় জনপ্রিয় গান, তবে তার জানা নেই। “বিলিভার” আর “পেইন” এই দুটো শব্দ ঘুরে ঘুরে আসছিল গানটায়। ইংরেজি গানে অবশ্য তার আগ্রহ নেই। যাতে আগ্রহ আছে সেই রবীন্দ্র সঙ্গীত নিশ্চয় এই ছেলেটা গাইবে না। ... ...
“সত্যিই তো… টেগোর কেন?” বলল বিনীতা। “ইয়েস। এই একটা প্রশ্ন লোককে হন্ট করবে। একজন জিজ্ঞেস করবে আর একজনকে - হোয়াই টেগোর? সে আবার জিজ্ঞেস করবে তিন নম্বর লোককে - হোয়াই টেগোর? এই চেন চলতে থাকবে আর দোকানের নাম ছড়িয়ে পড়বে ইন ওয়ার্ড অফ মাউথ। নতুন দোকান, তাও সেক্টর ফোরে। পাবলিসিটি তো লাগবেই,” ছদ্ম গাম্ভীর্যের সাথে বলল রঞ্জিত। “আইডিয়া আচ্ছা হ্যায়,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল অরুণাভ। “ওই নামের জন্যই লোকে দোকানে আসবে। আর বৃষ্টি যদি হয় তবে ছাট আসবেই,” বলল রঞ্জিত। “মানে দোকানে লোকজন এলে বিক্রিও হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আর ফ্যাশন…?” পুরোন কথায় ফিরে এল দাস সাহেব। ... ...
অশরীরীরা যখন বন্ধু হয়ে ওঠে - তারা অনেক মুশকিলই আসান করে দেয় - তেমন বন্ধু মানুষদের মধ্যে কোথায়? ... ...
যথাসম্ভব শব্দ না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চিরুনি তুলে নিয়ে সে গেল বারান্দার খোলা দরজার দিকে। এই বারান্দার সামনে একটা মুসান্ডা আর একটা হলুদ জবা গাছ আছে। দরজাটা বাইরের রাস্তা থেকে খুব চোখে পড়ে না। তাই এইখানে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ায় বিনীতা, চিরুনিতে চুল উঠে এলে সেগুলো আঙুলে পাকিয়ে ঘরের কোণে রাখা ঢাকনা দেওয়া ছোট ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। আজও তাই করতে যাচ্ছিল, এমন সময়ে বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামল ... ...
ড্রইং খাতা ফেরত নিয়ে কিৎকিৎ খেলার মত করে রঙিন ঘর ছাড়ে। তার হাঁটার ভঙ্গিতে মজা পায় ইন্দ্রনীল। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল সে, বিনীতার কথায় থেমে গেল। “আমাদের একটা ভুল হয়ে গেছে। আপনার মিসেসকেও বলা উচিত ছিল।” “কিছু ভুল হয়নি,” একটু থামল ইন্দ্রনীল, তারপর বলল, “আমার কোনও মিসেস নেই।” অরুণাভ জিজ্ঞেস করল, “আপনি ব্যাচেলর?” “ডিভোর্সি,” একটা শব্দে উত্তর দিল ডাক্তার। একটা অস্বতিকর নীরবতা নেমে এল ঘরে। ... ...
এই অভিযোগের উত্তরে অরুণাভ বলল, “আসলে কি জানেন, কোলিয়ারি কলোনিতে থাকি, সবাই কলিগ। আড্ডা দিতে গেলে অফিস ঢুকে পড়ে।” সম্মতি জানিয়ে মাথা ঝাঁকাল ইন্দ্রনীল। “আমারও খানিকটা একই রকম অবস্থা।” বিনীতা বলল, “ওর তেমন বন্ধু নেই। অফিসের পার্টি থাকে, ক্লাব আছে, তবে ও বিশেষ কোথাও যায় না।আমার এক কলিগ আসে মাঝে মাঝে ওর হাসব্যান্ডকে নিয়ে। তার সাথে আমাদের বন্ডিংটা ভাল। সার্জারির দিন ওরা পুরো দিন হসপিটালেই ছিল। আর কেউ তেমন নেই।” ইন্দ্রনীল বলতে যাচ্ছিল এবার উঠতে হবে কেমো শুরু করার জন্য। অরুণাভ হঠাৎ বলল, “আপনি আসুন না এক দিন।” “কোথায়,” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল ডাক্তার। “আমাদের বাড়িতে, আবার কোথায়।” অরুণাভ খেয়াল করলে দেখতে পেত তার কথায় যে শুধু ডাক্তার অবাক হয়েছে তাই নয়, স্ত্রী বিনীতাও কম আশ্চর্য কম হয়নি। ... ...
শোভাময়ী সান্যালের রহস্যভেদ - না, রক্তারক্তি নেই - সাঁ সাঁ দৌড় আর কিঁইইইইচ আওয়াজে কার চেজ্ নেই। ... ...
শোবার ঘরে এসে দেখে ল্যাম্পের আলো তখনও জ্বলছে, বিছানার পাশে বই খোলা, অরুণাভ ঘুমিয়ে পড়েছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা বোতল থেকে জল খায় বিনীতা, তারপর আস্তে আস্তে বইটা সরিয়ে রাখে, আলোটা নিভিয়ে দিতে গিয়েও দেয় না। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত। গোল, দাড়ি গোঁফ কামানো মুখ, ডান দিকের গালের উঁচু অংশে একটা কালো জরুল। নাকের এক পাশে ল্যাম্পের আলো পড়ায় অন্য দিকে ঢালু হয়ে আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। অপারেশনের ধকল সামলাতে বা অন্য কোনও কারণে চোখের নিচে কালি পড়েছে তার। বিয়ের একেবারে প্রথম দিকে ছাড়া আর কখনও ঘুমন্ত স্বামীকে লুকিয়ে দেখেছে কি সে? ... ...
ফোনে কথা বন্ধ করল ইন্দ্রনীল, জামার পকেটে মোবাইল রেখে দুজনের দিকে একবার তাকাল। তারপর খামটা এগিয়ে দিল বিনীতার দিকে, সে ওটা হাতে নিল। ইন্দ্রনীল দেখল অরুণাভর বই বুকের ওপর খোলা, চোখ তারই দিকে। “সার্জারি ভালই হয়েছে। কিন্তু কন্ডিশন ভাল নয়। টিউমারটা ম্যালিগন্যান্ট,” কথা বলতে বলতেই ডাক্তার দেখল অরুণাভর চোখ বইয়ের দিকে ঘুরল। “আমি অকারণ আশা দিতে চাই না। মেটাস্টেসিস শুরু হয়েছে, মানে ছড়িয়ে গেছে রোগ, স্টেজ ফোর।” বিনীতা বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ইন্দ্রনীলের দিকে, তারপর দেখল তার স্বামীর দিকে। তার চোখ বইয়ের পাতায়, তবে মন কোথায় বলা কঠিন। ... ...