এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাইদূর 

    শ্রীমল্লার বলছি লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৮৮ বার পঠিত
  • | | |
    “ঘরটা একটু গুছিয়ে রাখবে তো! ঘরই যদি গোছাতে না পারলে, যদি না ছাড়াতে পারলে এক এক ক’রে ভাবনার গিঁট— তবে আর কী করলে?”— 
    রোশনাইয়ের দিকে সে কেমন এক অলসচোখে তাকিয়ে কথাগুলো ব’লে গেল সংকেত। 
    রোশনাইয়ের গোটা জীবন দাঁড়িয়ে আছে, যুক্তি এবং আবেগের ওপরে। সে বোঝে, আবেগের মাত্রা একটু বেশি হ’য়ে গেলেই জীবনকে আর মুখে তোলা যাবে না। তাই বুঝেশুনে সে আবেগ খরচ করতে চায়। পেরে ওঠে না। 
    রোশনাইয়ের বয়েস, উনিশ বছর তিন মাস।
    “না গুছোলেও সমস্যা নেই। যাকে গোছানো দেখছ, দেখতে পাও— সে তো আরও বেশি ক’রেই অগোছালো। ‘গোছানো’ একটা বিশ্বাস। আমি কোনও বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে চাই না।” 
    রোশনাই এমন এক চোখে সংকেতের দিকে তাকিয়ে বলল কথাগুলো, যাকে অনুবাদ করতে গেলে শব্দ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। 
    সংকেতের বয়েস এই বাইশ বছর সাত মাসের কাছাকাছিই। 
    সংকেত ভালবাসে ভাবনার গিঁট ছাড়াতে। কখনও আবার জটিল ভাবনায় মাসের পরে মাস নিজেকে আটকে রেখে বুঝতে চায়, মন কোনদিকে ঘুরছে, ভয় কত রকমের এবং কী কী ধরনের হতে পারে এমনকী, কথা উঠে আসে কোত্থেকে— এই সবকিছুই বুঝতে চায় সে বড় আদর আর ভালবাসা দিয়েই। 
    “নিজের ভেতরে যে বিছানা আছে, সেখানে চাদর পাততে শেখো। এমনভাবে শেখো, যাতে কোথাও একটুকুও কোঁচকানো না থাকে। নিজের ভেতরে যে ঘর আছে, সেখানে প্রতিদিন ঝাঁট দাও। অন্তত একবার হলেও। আর নিজের ভেতরে যে জানলা আছে, সেটাকে খুলে দাও। বাতাসকে ঘরে ঢুকতে দাও, রোদ্দুরকে তার স্বীকারোক্তি দেওয়ার সুযোগ দাও, জোছনাকে দাও বিশ্রাম নিতে। অনেকদূর থেকে আসতে হয় তাকে। তাই বলছি, নিজের ভেতরের ঘরটা যদি গোছাতে না পারো, তোমার বাইরের এই ঘরও গুছিয়ে উঠতে পারবে না।” 
    সংকেত এমনভাবে, এমন ক’রে ব’লে চলল কথাগুলো, শুনলে মনে হবে— অন্তর্দৃষ্টির পিছু নিয়েছে সে। সামনে যা দেখছে, তাইই ব’লে চলেছে হুবহু। যদিও সংকেত এখনও বুঝতে পারেনি, অন্তর্দৃষ্টি ঠিক কোন কোন সময়ে সক্রিয় হয়, আর কোন কোন সময়ে নিভে আসে। চলছে আবিষ্কার এখনও তার এই অন্তর্দৃষ্টিকে বোঝার চেষ্টায়। 
    রোশনাই বলল, “বললাম যে, ‘গোছানো’ একটা বিশ্বাস। তবে তোমার কথা তো ফেলে দিতে পারি না। তোমার সমস্ত কথায় গোপন সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। যদি খুঁজতে পারি, কোনওভাবে খুঁজতেও পারি, তবে সেই সম্ভাবনার কাছে পৌঁছনো সম্ভব না হলেও দূর থেকে দেখতে পারি তার চেহারা। তখন সবটাই বাস্তব মনে হয়। কিন্তু ধরো যখন রাত্রে স্বপ্ন দেখছি ঘুমের মধ্যে, তখনও তো সবই বাস্তব। সকালে ঘুম ভাঙার পরে যা কল্পনারও অতীত। এও তেমনই, সম্ভাবনার চেহারাকে যখন দূর থেকে দেখছি, মনে হচ্ছে, স্বপ্নের মধ্যেই আছি। বাস্তব সবটাই। কিন্তু যখন সম্ভাবনা মিলিয়ে যাচ্ছে, মানে ওই ফুরিয়ে আসছে আমার চোখের সামনে থেকে তার আদল, তার উপস্থিতি— সেই সময়টার পরের সময়টাতে রাত্রের স্বপ্ন শেষে সকালের ঘুম ভাঙার মুহূর্তটা অনুভব করি। যখন ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন কল্পনার এমনকী, আমার জীবন অভিজ্ঞতারও বাইরে চলে যায়। যা ব্যাখ্যার অতীত।” 
    রোশনাই থামল। আর সেই মুহূর্তেই সংকেত বলতে শুরু করল, “হুম, বুঝেছি। তোমার পর্যবেক্ষণের তারিফ করতে হয়! এই যে পথকে ধরতে, বুঝতে, চিনতে শিখেছ, শিখছ— এই দেখেই ভাল লাগছে। সময় কোথাও আলাদা ক’রে লিখে রাখা নেই। বলতে পারো জমিয়ে রাখা আছে। আমার তো কৌতূহল হয়, জানার ইচ্ছে হয়, সময় যখন একেবারেই ফুরিয়ে যাবে, তখন আর কী বেঁচে থাকবে? অন্ধকারের ইতিহাস, একমাত্র অন্ধকারই জানে। আলোর কাছে জানতে চাইলে, সে বেচারা লজ্জাই পাবে। ইতিহাস যে তৈরি করে, তারচে’ বড় এবং তার চেয়ে ছোট ইতিহাস— একমাত্র সে নিজেই।”
    রোশনাই কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিল, সংকেত তাকে থামিয়ে বলল,“অনেকক্ষণ এসেছি। অনেক কথাই হল। এবার দেখি ঘরের জানলাটা খোলো তো। তারপরে এসো দু’জনে মিলে বিছানাটা গোছাই। ঘরটার মধ্যে ভ্যাপসা গন্ধ হ’য়ে আছে। টিউব লাইট জ্বালিয়ে রেখে দাও দিনের বেলাতেও। সাংঘাতিক ব্যাপার! সেই কখন এসেছি, ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গল্প ক’রে গেলাম। আমার সঙ্গে তুমিও দাঁড়িয়ে...।”
    রোশনাই ঘরের জানলা খুলে দিল, সংকেত রোশনাইয়ের ঘরের টিউব লাইট নিভিয়ে দিল। অগোছালো বিছানায় এসে পড়ল সকালবেলার কচি রোদ্দুর। আর স্কুল ছুটির পরে কচিকাঁচারা যেভাবে মা বাবার কাছে ছুটে আসে, সেভাবেই একদল বাতাস ঢুকে এল রোশনাইয়ের ঘরে। রোশনাই আর সংকেত, দু’জনেই টের পেল সেটা। 
    সংকেত বিছানা গোছানোয় মন দিতেই রোশনাই বলল, “নিজের পছন্দের বিষয় বাংলা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিলে। মাঝপথে যে কেন ছেড়ে দিলে? কী এমন ভাবনা চেপে বসল মাথায়...”
    সংকেত বিছানা গোছাতে গোছাতেই বলল, “দ্যাখো রোশনাই, এই এক কথা শুনতে আমার ভাল লাগে না প্রতিদিন। হয়তো তোমার বলতে ভাল লাগতে পারে, কিন্তু ওইই শুনতে প্রতিদিন মোটেই ভাল লাগে না আমার। আর তুমি যে মাধ্যমিকের পরে স্কুলই ছেড়ে দিলে, তার বেলায়?”
     
     
     
    (ক্রমশ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manali Moulik | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২২734399
  • অসাধারণ এগোচ্ছে। চলতে থাকুক।
  • Jahar Kanungo | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৫২734404
  • খুব ভালো লাগলো 
  • শ্রীমল্লার বলছি | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:২২734408
  • মানালি, ভালোবাসা জেনো! 
    আর জহর, ভালো থাকবেন খুউব। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন