এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাইদূর 

    শ্রীমল্লার বলছি লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৮ বার পঠিত
  • | | | |
    অসম্ভবের পাঁজরে যখন ঝড় উঠতে থাকে তখন পায়েরা ছন্দ ভুলে গোলমাল ক’রে ফ্যালে। এদিক ওদিক তাকায় বটে কিন্তু কিছুতেই নক্ষত্র হওয়ার মুখচোরা ভাব এড়িয়ে যেতে পারে না। এরপরে গর্জনের আহ্বানকে অন্ধকারে মিলিয়ে দিতে সে এক পরিকল্পনা মাফিক বস্তুত বিড়ম্বনা। তাছাড়া সঙ্গের ভবিষ্যৎে দৌড়নোর পুঁজি যদি অল্পবিস্তর শিখে নেওয়া না যায়, তবে হয়রানির একশেষ। তবুও ঝামেলার বিশ্লেষণ কোনও মতেই আপেক্ষিক নয়— এও ঠিক। সেই বুঝেই আদরের স্বভাব বদলাতেই বাকিরাও অলস হ’তে চেয়ে ঢেউয়ের সমগ্র লিখতে যায়। তাও কিনা মেপে, বড্ড মেপেই এগোনোর নাগাল পেয়ে চিন্তার খোরাক পাওয়া। আর বর্ণনার আশীর্বাদে ক্ষত কেনার হুজুগ— না এভাবে যদি চলতেই ভালবাসে, লাগেও বা ভাল, তবেও প্রতিশোধের জোছনায় হোঁচট খেয়ে থুবড়ে প’ড়েই সঙ্গীতের গভীর অব্দি এসেই মাঝপথে ফিরে যেতে চাইলেই বয়স্ক জোনাকিরা হাততালি দেয়। কঠিন। আরও কঠিন। সাবধানের কাছে প্রিয় হওয়ার চেয়ে অসাবধানের কাঁধে মাথা রেখে বালিশঘুমেয় আলপনায় বাড়তি স্বপ্নের হাতছানিকে আগলে নিয়ে একটা জীবন বন্ধু হ’য়ে কাটিয়ে দেওয়া। 
    সেই শান্ত ছেলেটি যে কিনা রান্নাঘরে রোশনাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চা বানানো দেখছিল রোশনাইয়ের, সে এখন রোশনাইয়ের বিছানায় রোশনাইয়ের মুখোমুখি ব’সে আছে। রোশনাইয়ের চা শেষ। সংকেতের চা খেতে সময় লাগে। শুধু চা কেন যেকোনও খাবার খেতেই সংকেত অনেক বেশি সময় নিয়ে নেয়। এই এখন যেমন অর্ধেক চাও শেষ হয়নি। এদিকে চায়ের, গরম চায়ের স্পর্শটুকুও সংকেতের কাপে নেই। রান্নাঘর থেকে ফেরার পরে কেউ কারও সঙ্গে একটা বাক্য তো দূর, একটা শব্দও বিনিময় করেনি। দু’জন মাথা নীচু ক’রে নিজেদের চায়ের কাপে তাকিয়ে ছিল। এই সময়টুকুয় রোশনাই অন্য সকল ভাবনা ছেড়ে চা খাওয়ায় মন দিতে পারলেও সংকেত তা পারেনি একেবারেই। তাই যেমন তার চা শেষ হয়নি, তেমনই ভাঙেনি ভাবনার ঘোর। 
    সংকেতের ভাবনার ঘোর ভাঙতে রোশনাইই ব’লে উঠল, “নতুন ক’রে চা বানিয়ে আনি? এই চা তো ঠাণ্ডা হ’য়ে গেল। খাবে কী ক’রে?”
    “বাদ দাও। আসলে ঝাঁপ দেওয়াকে শিল্পের চোখেই দেখি। শিল্পের চোখ দিয়েই দেখি। বৃষ্টি হলে রাস্তা ডোবে, কিন্তু ভেসে যায় কি? যায় না। সেরকমই ঝাঁপ দিলেও শিল্প ঠিক নিজের জায়গায় থেকে যায়। থেকে যেতে হয়। নইলে শিল্প যদি হারিয়ে যায়, তখন শিল্পীরা যাবে কার কাছে? এখন তুমি জানতেই চাইতে পারো, কোন ঝাঁপের কথা বলছি? এ হল সেই ঝাঁপ— যেখানে টুকরো হ’য়ে যাওয়া স্রোত আবারও হাত-পা ছুঁড়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে এই কারণেই, কেননা এবার বিশ্রামের দিন। বিশ্রামের মুহূর্ত সমস্তটাই। যদিও মনে রেখো, জানোও নিশ্চয়ই— মুক্তি পাওয়া আসলেই একটা ভ্রম। এর কোনও অস্তিত্ব নেই। ছিলও না। আমরাই মিথ্যে গ’ড়ে তুলে পৃথিবীকে ঠকিয়েছি। আমাদের উচিত ছিল, পৃথিবীকে শ্রদ্ধা জানানোর। আসলে পৃথিবী যে আমাদের অভিভাবক। তবুও ব’লে রাখি, অভিভাবকদেরও দোষ থাকে। আমরা তা স্বীকার তো করিই না। এমনকী এমন একটা মুখ ক’রে থাকি, যেন অভিভাবকেরা আলাদায় আলাদা। না, তেমন নয়। এই দেখা, এই জানা, এই শোনা— বড় প্রচণ্ড আঘাতের। যদি তুমি সত্যিকে আপন ক’রে নিতে নাইই শেখো, তবে তুমি সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ালেই আঘাত পাবে। তাই মনকে সবসময় সত্যের কাছাকাছি রেখে দিতে হয়। যাতে তুমি না চাইলেও তোমার মন সত্যকে আঁকড়ে ধ’রতে পারে নিমেষেই।”
    “কোন সত্যের কথা বলছ তুমি?” রোশনাই একপ্রকার হন্তদন্ত হ’য়েই প্রশ্নটা রাখল সংকেতের কাছে। 
    সংকেত তেমন সময় না নিয়েই বলতে লাগল, “সত্যের ছোঁয়া আসলে কেমন জানো, ট্রেনের মতো। কত কত লোককে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসে... ট্রেন— এর চেয়ে বড় সত্য আর এর চেয়ে বড় বিস্ময়, কমই হয়। খুব কমই হয়।”
    “বেশ বললে তো! ট্রেনকে মাঝেমধ্যেই আদর করি মনে মনে। আমার ভেতরে ট্রেন চলতে থাকে। আর সেই ট্রেনের চালক হ’লে তুমি।”
    রোশনাই থামল। সংকেতের মুখ লজ্জায় লাল দেখে রোশনাই আবার বলল, “এই হয়েছে রে! আচ্ছা, তুমি বাতিল ছন্দদের কীভাবে জড়িয়ে রাখো তোমার চারপাশে?”
     
     
     
     
    (ক্রমশ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন