এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাইদূর 

    শ্রীমল্লার বলছি লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ অক্টোবর ২০২৫ | ২৬ বার পঠিত
  • | | |
    যেভাবে ছাদে ছাদে ফুলগাছ বেড়ে ওঠে হাতের যত্নয়, যেভাবে মেঘেরা এসে সাজিয়ে তোলে রঙিনময়লাটে বাড়িদের, যেভাবে কাক দেখলেই ডানা পাওয়ার কথা মনে পড়ে হেরে যাওয়া মানুষদের অনেকটা তেমন একটা ভাব নিয়ে বলা ভাল তেমন এক ঘোর আনন্দ নিয়ে রোশনাই সংকেতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করল, “কিছু কথা যদি তুলোর মতোই নাছোড়বান্দা হয় তো কিছু কথা প্লাস্টিকের মতোই একগুঁয়ে সাইকেলের সমান। এরা চুপ থাকে না। অবসাদ ভালবাসে, আর তা নিয়ে যাচ্ছেতাই রকমের হুল্লোড়পনা...”
    সংকেতের মাথার ওপর দিয়েই সব বেরিয়ে গেল। সে না কিছু বুঝল, না কিছু বোঝার চেষ্টা করল। বোঝার চেষ্টা করবেই বা কী ক’রে! মাথার ওপর দিয়েই যে রোশনাইয়ের সব কথা বেরিয়ে গেল। সংকেত তাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই রোশনাইকে বলল, “বলছি যে মনস্তত্ত্ব তুমি ভাল বোঝো, আমিও। কিন্তু একটু সহজ করলে, মানে বুঝতেই পারছ, আমার মাথায় সামান্য হলেও তোমার কথায় যে আবহাওয়া আছে তার প্রভাব পড়ত।”
    রোশনাই মুখের হাসিটা থামিয়ে বলতে শুরুই ক’রে দিল, “শোনো, এবার একটু চা খাওয়া যাক। রান্নাঘরে আসবে তুমি?”
    রান্নাঘর— সে এমন এক ঘর যেখানে মানুষের চাইতে বেশি থাকে আরশোলা, টিকটিকি আর টুকরোগন্ধ রান্নার পরের। 
    “চা খাওয়াতেই পারো, তবে আদা দেওয়া লাল চা। চিনি কম, না দিলেও চলবে।”
    “চিনি কবে থেকে খাওয়া কমিয়ে দিলে? আগে তো বেশ...”
    “মিষ্টি কিন্তু একটা প্রস্তুতি। যত ভাল ক’রে ছাড়তে পারবে, ততই উচ্ছে বা নিম পাতা ভাজার কাছে পৌঁছতে পারবে।”
    “এই শুরু হল! আগে ঠিক করো চা খাবে নাকি গল্পই করতে থাকবে?”
    “চা খেতে খেতে গল্প করব। এইই ভাল। কী বলো?”
    “তা মন্দ নয়। তবে তো তার আগে রান্নাঘর অবধি পৌঁছতে হবে আমাদেরকে। তারপরে চা বানানোর প্রস্তুতি।”
    “চলো...” সংকেত এই ব’লে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। সেইসঙ্গে রোশনাই।
    রান্নাঘরে এলেও দু’জনে কিছুতেই গল্প থেকে বেরোতে পারছে না। বিশেষ ক’রে সংকেত।
    সংকেতের কী যেন একটা মনে পড়ায় বলতে লাগল, “মাছ। সব্জি। আটা। ময়দা আর ভালবাসা। রান্নাঘরে একটা ইতিহাস তৈরি হয়, হতে থাকে। আমরা করি কী, তার কোনও খোঁজ রাখি না। হাত আসলে মনোযোগে ফেরার সহজ পথ। একটা হাতে কত কত আলাদা রান্না আবিষ্কার করা যায়! মনে পড়ে, পড়ছে— বছর তিনেক আগে তখনও মায়ের সঙ্গে বাবার কাগজে কলমে বিচ্ছেদ হয়নি। হবে হবে একটা ভাব। সময়টা ছিল দুপুরের পরে বিকেলের শুরুর দিকে। বাবা আর মা-কে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছিলাম। এই রান্নাঘরেই। বিশ্বাস করবে না— কী শরীর নিয়ে খেলা দু’জনের... দেখলে কে বলবে, আর কয়েক বছর পরে বিচ্ছেদ হ’য়ে যাবে দুটো মানুষের! আমি কেবল দু’বার তাকিয়েছিলাম আড়াল থেকে। একবার দেখেছিলাম, সেই মুহূর্তে বাবার ঠোঁট মায়ের বুকের মাঝখানে। আর একবার, আর একবার দেখেছিলাম, না দেখা নয়। শুনেছিলাম, উত্তেজনায় মায়ের মুখ থেকে এক অদ্ভুত শব্দ। তারপরে মাথা নীচু ক’রে চ’লে এসেছিলাম নিজের ঘরে। দরজা-জানলা বন্ধ ক’রে ঘর একেবারে যখন অন্ধকার হ’য়ে এল, তখন মুখ ডুবিয়ে মাথার বালিশে কেঁদেছিলাম। কেন কেঁদেছিলাম জানি না। কিন্তু একটা কষ্ট আমাকে ভেতর ভেতর চিবিয়ে খাচ্ছিল। ঘুমোনোর চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি ঘুমোতে। মাথার মধ্যে শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাবা মায়ের মিলনদৃশ্য। ভুলতে চেষ্টা করা বৃথা। ভুলতে চাইনি। পারিওনি। তারপরে কী করলাম জানো, জানলা খুলে দিলাম ঘরের। বিছানায় তো বইপত্তর ছড়ানো ছিটোনো থাকেই আমার। দেখলাম অবন ঠাকুরের ‘শকুন্তলা’ প’ড়ে আছে। টেনে নিলাম। আবারও পড়লাম নতুন ক’রে। খুব। খুব। নতুন ক’রে।”
    রোশনাই কিছুতেই চা বানানোর প্রস্তুতি নিতে পারছে না। পুরো মনটাই সংকেতের কথায় প’ড়ে আছে। 
    রোশনাই বলল, “এ এমন এক গল্প শোনালে আমাকে, যে কিছুতেই আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এই ঘটনায় কখনও কোনওদিনও বিশ্লেষণ তো দূরের কথা হাত লাগাতে পর্যন্ত যেও না। আদর যেখানে গোপন থাকতে চায়, তাকে সেখানেই থাকতে দেওয়া ভাল। বাইরে নিয়ে এলে চোখ ঝলসে যায়, আর দম বন্ধ হ’য়ে আসে। আর... আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না।”
    সংকেত বুঝল, রোশনাই এখন কেবল চা বানানোয় মন দেবে। দিক। চা খেতে খেতে দেখা যাক গল্প কোনদিকে নিয়ে যায় তাদেরকে। রোশনাই চা বানাতে লাগল। পাশে শান্ত ছেলেটি হ’য়ে দাঁড়িয়ে থাকল সংকেত। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন