এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাইদূর 

    শ্রীমল্লার বলছি লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৮ বার পঠিত
  • | | |
    “তোমাকে যদি একব্যাগ বাতাস দিই, কীভাবে খরচ করবে?”
    রোশনাই একপ্রকার হাসতে হাসতেই সংকেতের দিকে ছুঁড়ে দিল প্রশ্নটা।
    “কেন জানতে চাইছ বলো তো?”
    “বলোই না... শুনি একবার!”
    সামান্য অন্যমনস্ক হ’য়ে সংকেত বলতে শুরু করল—
    “বাতাসকে খরচ করার আমি কে? বাতাস যে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাবে, আমাকেও সেই সেই ভাবে এগোতে হবে। বাতাস তো নিজেই নিজেকে অনুবাদ করতে পারে। বাতাসের আলাদা কোনও অনুবাদক প্রয়োজন পড়ে না। তাই আমি বাতাসকে অনুবাদ করতে পারি না। বাতাস নিজেকে যেমনভাবে অনুবাদ করবে, আমাকেও মেনে নিতে হবে তেমনটাই। আমাদের অনেক কিছুর ওপরে অধিকার থাকে না। আমরা জোর ক’রে যখন তার ওপরে অধিকার ফলাবার চেষ্টা করি, তখন সেটা আর তেমন থাকে না, আসলেই কথা ছিল যেমনটা থাকার। তাই আমি যদি জোর খাটিয়ে বাতাসকে অনুবাদ করতে যাই, তাহলে বাতাস আর ‘বাতাস’ থাকবে না। বাতাস ধ্বংস হ’য়ে উঠবে। আর তখনই...”
    সংকেতের হঠাৎ ক’রেই থেমে যাওয়ায় রোশনাই বলে, “থামলে কেন? বলো! কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলে। যখন বলছ, তখন পুরোটা ব’লেই শেষ করো কথা।”
    “আর তখনই এক অন্ধকার সভ্যতার সূচনা হয়। কালো বেড়ালকে দিনের আলোয় কালো রঙেরই দেখায়। কিন্তু রাত বাড়লে যখন অন্ধকার আরও ঘন হয়, তখন কালো বেড়ালকে খুঁজে পাওয়া আরওই অসম্ভব। কেননা, কালো রঙের সমস্ত বেড়ালই অন্ধকারকে অনুবাদ করতে চায়। কিন্তু অন্ধকারের অনুবাদক তো অন্ধকার নিজেই। বাইরের কোনও অনুবাদকের তার যেমন প্রয়োজন পড়ে না, তেমনই সেই অনুবাদকের সম্পর্কেও জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ হয় না অন্ধকারের। তাই বলি, বাতাসকে জানতে চাও, ভাল। বাতাসকে অনুবাদ করার চেষ্টা কোরো না। তাই বলি, অন্ধকারকে দেখতে চাও, ভাল। তাই ব’লে অন্ধকারকে অনুবাদ করতে উঠে প’ড়ে লেগো না। প্রত্যেককে নিজের মতো এগোতে দাও, তবেই না পথ বেরোবে...”
    সংকেত থামল। যেভাবে এমনি কারণে শালিখ ধীরে পাঁচিলে নেমে কিছু একটা ভাবে, সেই ভাবে থামল, সংকেত।
    “হরিণ নিয়ে খেলতাম জানো... হরিণ নিয়ে। মাটির হরিণ নিয়ে। খেলাটা ছিল এমন— হরিণকে ঘুম পাড়িয়ে তার চোখের মধ্যে ঢুকে যেতাম। হরিণের ঘুম ভাঙলে আমিও আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসব। তার জন্য হরিণকে চোখ খুলতে হবে। হরিণের চোখের ভেতরে গিয়েই তো দেখতে পেয়েছিলাম, বাঁচার জন্য লড়াই কত জরুরি! নদীতে জল খাচ্ছে হরিণ, কোত্থেকে এক বিরাট আকারের সিংহ এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপরে। কিন্তু কোনও এক কারণে সিংহ অসফল হল। হরিণ পালাল দৌড়ে। সিংহেরও নাগালের বাইরে। আবার ধরো, হরিণের সঙ্গেই লেগে গেছে হরিণের যুদ্ধ। তুমুল মারপিট। যে হরিণটার প্রাণ হারানোর কথা, সে পালিয়ে বাঁচল। বাঁচল তো! সে যতই রক্তপাত হোক। এইসব দেখতাম। আর হরিণ চোখ খুললে মানে হরিণের ঘুম ভাঙলে যখন আবার বাইরে ফেরত চ’লে আসতাম, তখন ওই মাটির হরিণের চোখের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। হরিণও একভাবে আমার দু’চোখের দিকে তাকিয়ে থাকত। হরিণের চোখ দিয়েই জীবনের লড়াইটা শিখেছিলাম। হরিণের চোখ দিয়েই শিখেছিলাম, যদি বাঁচতে হয়ই তাহলে জীবনে ঝুঁকি নিয়েই বাঁচতে হবে। এসব ঘটনার সময়ে বয়েস আমার সাত কি আট... আজ কেবল ভাবি, তখনই আমার এত গভীরতা ছিল!”
    রোশনাইয়ের কথায় টাটকা পাঁউরুটির গন্ধ। খেতেও মন্দ নয়, দেখতেও।
    “গভীরতা কখনও বৃদ্ধ হয় না। বছর যত এগোয়, সে আরও নবীন হতে চায়।”
    খুব শান্ত স্বরে সত্যি বলার পরে নিজের প্রতি যেমন গর্ব বোধ হয়, তেমনটা দেখাচ্ছে সংকেতের মুখ। যেখানে কোনও মিথ্যে নেই। আর মিথ্যে নেই ব’লেই, কোনও তাড়াহুড়ো নেই। সত্যি তবু জমিয়ে রেখে ভাগ ক’রে নেওয়া যায় সকলের সঙ্গে। কিন্তু মিথ্যে সেসময়টুকুও দেয় না। তার বড় তাড়া। আগুন হ’য়ে ছড়িয়ে পড়ে গুজবের মতোই।
    “ভেতরের দিকে হাঁটতে শিখলে, এমনই হয়। ওই তুমি যেমন ভাবনার গিঁট ছাড়াতে ভালবাসো, আমিও তেমন আমার সমস্ত শৈশবকে ফিরে দেখতে চাই আজ এতদিন পরে। আর দেখতে হলে তো প্রথমেই ভাবনার গিঁট ছাড়াতে হবেই। এক এক ক’রে ছাড়াব, আর এক এক ক’রে দেখতে থাকব আমার রঙিন অথচ হালকা আবছা হ’য়ে আসা আমার বন্ধু, আমার শত্রুও— আমার শৈশবকে। একদিন যে, যে একদিন ছিল আমার সবচাইতে কাছের আত্মীয়। ভুলতে পারিনি আজও যাকে।”
    পুরনো বন্ধুর সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা হলে প্রথম দেখায় ঠিক যতটা চমকে যেতে হয়, সংকেতও রোশনাইয়ের এই কথায়, এই অভিজ্ঞতার ঝলকানিতে কিছুটা অবাকই হ’য়ে পড়ল। 
    সংকেত রোশনাইয়ের কাছে প্রশ্ন রাখল, “শত্রু আর বন্ধুর বীজ কি একই সঙ্গে একই সময়েই বেড়ে ওঠে একজন মানুষের মধ্যে?” 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন