এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ৯

    Aniket Chattopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ২৭৫০ বার পঠিত
  • #গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ৯

    আজ শুরুতেই একটু ইতিহাস নিয়ে চর্চা হোক। গুমনামির গুল গল্পে পরে আসছি। কেউ একটা বই লিখে দিলেই সেটা ইতিহাস হয়ে যায় না। অযোধ্যায় রাস্তায় অনেক চটি বই পাওয়া যায়, সেখানে অমুক সন্ত তমুক মহারাজ রাম ঠিক কোন জায়গায়, কবে কোন মুহূর্তে জন্ম নিয়েছিল,তার বিবরণ আছে। অবশ্যি নানান বই তে নানান বিবরণ। তাতে কি? তাদের সবাই দাবী করেন যে ঘোড়ার মুখ থেকে বার করা তথ্য, এসব বলে গেছেন অমুক মহারাজ, তমুক মহারাজ। এদের আবার নিজেদের মধ্যেও রোজকার ক্যাঁচাল। যেমন ঝগড়া গুমনামির ফলোয়ারদের মধ্যেও। একদল বলে ১৯৮৫ তে মারা গেছে, অন্যদল বলে মারাই যায়নি, হিমালয়ে চলে গ্যাছে, আবার ফিরে আসবে। কিন্তু ইতিহাস তো এমন করে রচনা হয়না।
    ইতিহাসের প্রথম প্রশ্ন হল কবে হয়েছে? মানে ধরুন গুমনামি, কবে উদ্ভব হলেন? কেউ বলতেই পারেন ৫১/৫১, কেউ বলতে পারেন ৫৬/৫৭। কিন্তু বললেই তো হবে না। এই সাল টা পাওয়া গেল কোথায়? গুমনামির নিজের লেখা চিঠিপত্র দেখে প্রথম যে সাল পাওয়া যাচ্ছে তা হল ১৯৬০। বাকি হল আবার সেই উনি বলিলেন, তিনি বলিলেন। যা বলিলেন তাই ইতিহাস নয়, এটা সামান্য সাধারণ জ্ঞান যাদের আছে তাদের বোঝানো যায় কিন্তু যারা এই তারিখ, বাবা বানানো ইতিহাস নিয়ে ধান্দা করতে চায়, তাদের তো বোঝানো যাবেনা।
    ইতিহাসের পরের প্রশ্নটা ‘কোথায়?’ যেমন ধরুন গুমনামির ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে বস্তি, হ্যাঁ সেই বাড়ি চিহ্নিত, বাড়িওলা কে চিহ্নিত করা গেছে। এবার ধরুন কেউ যদি বলে স্বামী ঘুটঘুটানন্দ জানিয়েছেন গুমনামি হর কিপ্যারি ঘাটে বসে থাকতেন, তাহলে সেটা ইতিহাস নয় কারণ আগেই বলেছি ঘুটঘুটানন্দই বলুন আর অনুজ ধর ই বলুন, কেউ বললেই সেটা ইতিহাস হয় না। ধরুন উত্তম চাঁদ মালহোত্রা যিনি কাবুলে নেতাজী কে আশ্রয় দিচ্ছেন বা ধরুন মেজর সত্য গুপ্ত, বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স এর মাথা, যিনি বিনয় বাদল দীনেশ কে রাইটার্স অভিযানে পাঠাচ্ছেন, এঁরা দুজনেই স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল নাম, এঁরা দুজনেই লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে শৌলমারির সাধুই নেতাজী? এনারা কী বই বেচে টাকা করতে চেয়েছিলেন? না। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল? না। অসৎ লোক ছিলেন? না। তাহলে বললেন কেন? মেজর সত্য গুপ্তের মত মানুষ যাঁকে নেতাজীর ছায়াসঙ্গী বলা হত তিনি কি নেতাজী কে চিনতে পারলেন না? আসলে এইসব বাবাজী মাতাজীদের প্রভাবিত করার প্রবল ক্ষমতা থাকে। এবং এই মানুষগুলো সরল, আবেগপ্রবণ, এঁরা প্রতারিত হন। গুমনামির ক্ষেত্রেও হয়েছেন অনেকে। আবার কারোর কারোর যে ধান্দা ছিল, তাও সম্ভব।
    ইতিহাসের পরের প্রশ্ন কে বলল? বা খবরটা এল কোথা থেকে? ১৯৬০ সাল থেকে গুমনামির খবর মানুষ জানতে শুরু করেছে। অথচ দেশের নেতাজী ঘনিষ্টদের বেশিরভাগই গুমনামির কাছে কি যাচ্ছেন? না। গুমনামি নিয়ে বলছেন? না। তাঁরা সব্বাই ভিতু কাপুরুষ ছিলেন? যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ বাজী রেখে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তাঁরা এতটা কাপুরুষ? স্বয়ং নেতাজী এত ভীতু? এত কাপুরুষ? যিনি প্রকাশ্যে আসতে ভয় পাচ্ছেন? নেতাজী যিনি কাবুলে গিয়ে যখন তাঁর রাশিয়া যাবার ব্যবস্থা হচ্ছিল না তখন কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর সরাসরি বলেছিলেন ব্যবস্থা না হলে নিজেই ব্যবস্থা করবেন, চারিদিকে ইংরেজ পাহারার মধ্যে কলকাতা থেকে গোমো, সেখান থেকে কাবুল, মস্কো হয়ে বার্লিন। বা ধরুন ঐ যুদ্ধের মধ্যে যিনি সাবমেরিন পালটে প্রায় ব্রিটিসের নাকের ডগা দিয়ে পৌঁছলেন জাপান, তিনি কাপুরুষ? তিনি ঘরে বসে রইলেন। এবং যারা war criminal গল্প বলেন, তাদের জানাই, নেতাজীর নাম কোনওদিনই ঐ তালিকাতে ছিলনা। তিনি ভারতবর্ষে এসে লুকিয়ে থাকবেন?

    ইতিহাসের পরবর্তি প্রশ্ন টা হল কি ভাবে তথ্যটা এল? অনেক মুখের ঝাল খেয়ে এল? নাকি সোজাসুজিই এল? গুমনামি সম্পর্কে উনি তেনাকে যা বলিলেন তা হরির বাবা শুনে ফেলেছিল, এবার হরির বাবা মরার আগে ভজা কে এই কথা বলে গিয়েছিল। এটা ইতিহাস নয়। এ ভাবে ইতিহাস লেখা যায় না।
    এবং শেষ যে প্রশ্ন টা আসে তা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে পাস না হলে সেটা গাল গল্প, গুলগল্প ইতিহাস নয়। সেটা হল তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা, অর্থাৎ ইতিহাসের যে তথ্য আপনার সামনে আসবে তা কি বিশ্বাসযোগ্য? মানে যে মানুষটি আনখশির অসাম্প্রদায়িক, হিন্দু মুসলমান ফারাক করেন নি, তাঁর ডান হাত হিন্দু হলে বাঁ হাত মুসলমান। যিনি সত্য কে এক অবিচল পথ হিসেবে সারাজীবন মেনে চলেছেন, সেই নেতাজী তীব্র মুসলমান বিরোধী কথাবার্তা বললেই প্রথমেই তা ইতিহাস থেকে নাকচ হবে, ১৫ বছর সিপিএম এর বিধায়কের বিজেপি হয়ে যাওয়া বা ৫ বছরের তৃণমূল সাংসদের বিজেপি হয়ে যাবার সঙ্গে নেতাজী কে মেলাবেন না দয়া করে। অর্থাৎ যে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই তা ইতিহাস হতে পারেনা।
    এই ৬ টা বিষয় কে সামনে রেখে যদি CONUNDRUM পড়া যায়, তাহলেই বোঝা যাবে যে বইটি ইতিহাসে কষ্ঠিপাথরে একটি অতি নিকৃষ্ট কন্সপিরেসি থিওরি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু যদি সেটাই হত তাহলে আমার এত কথা বলার দরকার হত না। এরই সঙ্গে আছে আর এস এস বিজেপি র পরিকল্পনা। বেচারিদের ইতিহাস টা বিশ্বাসঘাতকতার, মুচলেকা দেবার। সে সাভারকরই হোক বাজপেয়িই হোক বা আদবানিই হোক। জাতীয় রাজনীতিতে তাদের একজন জাতীয় নেতা দরকার, কারণ যতই গুরু লাগানো থাকুক নামের সামনে গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ার রা জাতীয় রাজনীতিতে কার্যকরী নন। ওনাদের দরকার একজন দেশপ্রেমিক। গান্ধি নেহেরূর বিরুদ্ধে নেতাজীকে লড়িয়ে সেই কাজটি তাঁরা করতে চান, এই বই সেই লক্ষেই এক ধাপ।
    আজ এইপর্যন্তই। কাল যাব গুমনামির সংগে বাঙলাদেশের রণাঙ্গনে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ২৭৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন