এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ২

    Aniket Chattopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ২০৩০ বার পঠিত
  • #গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ২

    যদিও সরকারি ডিএনএ আর হাতের লেখা পরীক্ষায় ডাহা ফেল, কমিশনের রিপোর্টে clinching evidence নেই বলে পরিস্কার জানানো হয়েছে, যদিও নেতাজী পরিবারের অধিকাংশ সদশ্য বিরোধিতা করেছেন, যদিও আই এন এ র প্রায় কেউই মেনে নেন নি, যদিও ফরোয়ার্ড ব্লক দলের কেউই মেনে নেন নি তবুও আসুন তর্কের খাতিরে মেনে নিই যে CONUNDRUM বই এর লেখক যা প্রমাণ করতে চেয়েছেন তা সঠিক। অর্থাৎ নেতাজীই গুমনামি বাবা অথবা গুমনামি বাবাই নেতাজী। তাহলে এই বই এ সবথেকে সত্যি কথাগুলো কী ? কমিশন, প্রমাণ, তথ্য, এসব বাদ দিলে স্বয়ং গুমনামি বাবা যা বলেছেন সেটাই সব থেকে সত্যি। কারণ ওগুলোই তো নেতাজী উবাচ। এবার যদি দেখা যায় যে নেতাজীর মত শিক্ষিত, বিবেচক, পৃথিবীর ইতিহাস ভুগোল এবং রাজনীতি জানা এক মানুষ এসব কথা বলতেই পারেন না, বলা সম্ভব নয় তাহলে মাননীয় পাঠক, আমরা বলতেই পারবো যে গুমনামি আদতে এক নিম্ন স্তরের জোচ্চর ছিলেন। আপাতত তাঁকে জোচ্চর বলছি না। গুমনামি বাবাই নেতাজী, নেতাজীই গুমনামি বাবা। আসুন দেখা যাক তিনি কী কী বলেছেন।

    ওসব প্লেন দুর্ঘটনা ইত্যাদি কিছুই হয় নি, উনি বহাল তবিয়তে পৌঁছেছিলেন রাশিয়া, এবং রাশিয়া তখন সাইবেরিয়া অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। বারবার চেষ্টা করছে, পারছে না কিছুতেই। ভাবুন একবার রাশিয়া আর কদিন পর আ্যটম বোমা ফাটাবে, চাঁদে লোক পাঠাবে, তো সেই রাশিয়া চেষ্টা করছে এবং ব্যর্থ হচ্ছে। এমন সময়ে উনি মাঠে নামলেন, প্রজেক্ট সফল হয়ে গ্যালো। ব্যস তারপর থেকে ওনার সঙ্গে রাশিয়ান শীর্ষ নেতাদের দারুণ ভাবসাব হয়ে গ্যালো। উনিই জানাচ্ছেন যে ঐ প্রজেক্ট এ বেশ কিছু আজাদ হিন্দ সরকারের অনেক লোকজন ও তাঁর সঙ্গেই ছিল। ১৯৪৯ সালে তিনি রাশিয়া ছেড়ে চীন চলে যান। বই এর ৩১৪ থেকে ৩১৯ পাতার মধ্যে এই তথ্য আছে, এবং খুব পরিস্কার বলা আছে যে ভগবানজী ওরফে গুমনামি বাবা ওরফে মহাকাল ওরফে নেতাজী নিজেই এই কথা গুলো বলেছিলেন। এবং এই কটা পাতার মধ্যে এক জায়গায় লেখক অনূজ ধর বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে কী ভাবে গুমনামি বাবা সাইবেরিয়ার লেবার ক্যাম্পগুলোর হুবহু বর্ণনা দিয়েছেন।

    এবার কাটাছেঁড়ায় আসি। গুমনামি বাবার কাছে ১১ টা আলেকজান্ডার সলঝেনেৎসিন এর বই পাওয়া গেছে। তারমধ্যে ‘গুলাগ আর্কিপেলগো’ নিশ্চই থাকবে। এবং ওটা পড়ার পর সাইবেরিয়া, সেখানকার নির্বাসন, লেবার ক্যাম্প নিয়ে ঘণ্টা খানেক বলাই যায়, তিনিও বলেছিলেন, এতে বিস্ময়ের কী আছে?

    তিনি বললেন রাশিয়া গেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেমন ভাবে গেছেন, তিনি সে সব নিয়ে একটা কথাও বলেন নি। এবার আসা যাক চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিরাট প্রজেক্ট এর কথায়। মাথায় রাখুন সাল টা ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯, চীনে মাও এর নেতৃত্বে লড়াই হচ্ছে এবং সেই যুদ্ধের সথেকে বেশি হাতিয়ার মাও পেয়েছিলেন সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে, বেইজিং এ একটা মিউজিয়াম আছে, সেসব অস্ত্রশস্ত্র রাখা আছে, কেবল অস্ত্র নয়, ট্রেনিং এবং অর্থ এসেছিল রাশিয়ার কাছ থেকে। সেই রাশিয়া নাকি ঐ সময়েই চীনের বিরুদ্ধে বিশাল প্রজেক্ট করছে, এবং নেতাজী তাতে সাহায্য করছেন!! একা নয় সংগে আছেন আজাদ হিন্দ সরকারের অনেক লোকজন। আজাদ হিন্দ সরকারের একজন ও নিখোঁজ হয়েছেন বলে আজ পর্যন্ত তথ্য নেই, তাহলে সেই লোকজনেরা কারা? একজন দুজন নয়, তাঁর ভাষায় several, তো তাঁরা এলেন কোথা থেকে এবং আরও বড় প্রশ্ন তাঁরা গেলেন কোথায়? মিথ্যের এই এক দোষ, ঢাকা যায় না কিছুতেই, ফুটে ফুটে ওঠে। যেহেতু ১৯৬০ সাল থেকে এই গুলগল্প দেওয়া শুরু কাজেই গুমনামি বাবার মনে হয়েছিল রাশিয়া চীনের বিরুদ্ধে প্রজেক্ট করতেই পারে, মাথায় ছিলনা যে ১৯৪৫-১৯৫১ চীন রাশিয়ার সবথেকে সুসম্পর্কের সময়। মাথায় রাখুন রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সাহায্য নিয়েই মাও লড়েছিলেন, পয়লা অক্টোবর ১৯৪৯ লালফৌজ এর বিজয় দিবস। এবং গুমনামি বাবা গুল দেবার সময় খেয়াল করেন নি যে ঐ আজাদ হিন্দ সরকারের হিসেব টা কেউ চাইতে পারে। এবং কি আশ্চর্য, ৪৫ – ৪৯ তিনি রাশিয়ায় থাকলেন, এক আধ বছর পর থেকে তো দারুন সম্পর্ক রাশিয়ান দের সঙ্গে, সঙ্গে আছেন অনেক আজাদ হিন্দ সরকারের লোকজন, তিনি কিন্তু ভারতবর্ষে র কারোর সঙ্গে, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। কেন? ৪৫, ৪৬ তো নেহেরুর সরকার নয়, শরৎ বসু বেঁচে, না উনি যোগাযোগ করছেন না। কারণ একটাই উনি মিথ্যে কথা বলছিলেন।

    অতঃপর রাশিয়া পর্ব সমাপ্ত। এরপর চীন, যেখানে মাও সে তুং কে উনি ডাকতেন ‘তুং’ বলে। ও, একটা ছবি দিয়ে দিলাম ঐ চীনের মিউজিয়ামের।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ২০৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন