এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • অচলায়তনের রূপকথাঃ পর্ব ৪

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৩৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • পূজোর ছুটির পরে হোস্টেল ফিরতে দেরি হল। ঠান্ডা লেগে বুকে সর্দি বসে ঘুসঘুসে জ্বর হয়ে সে এক কেলো!
    সপ্তমীর দিন ঠিক সকালে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে পার্কসার্কাস থেকে যোধপুর পার্ক , আনোয়ার শা রোড পোদ্দার নগর ঘুরে বিকেলের দিকে সন্ধ্যে হয় হয়, তখন বাড়ি ফিরলাম। দুপুরে খাবার বলতে খালি বাদামভাজা, ঝালমুড়ি আর বুড়ির চুল।
    অনভ্যাসে এতটা একদিনে পায়ে হেঁটে যা ব্যথা, তারপরেই জ্বর। কিন্তু আনন্দে ছিলাম। পোদ্দারনগর কলোনীর ভেতরে রাস্তায় টিউকল থেকে জল ভরছিলেন জনাকয় মহিলা। পাশেই পূজোর প্যান্ডেল থেকে তারস্বরে বাজছে নতুন হিন্দি সিনেমার গান---" বোল রাধা বোল সঙ্গম হোগা কি নহীঁ? "
    ত্যক্ত বিরক্ত নায়িকা হার মেনে বলে ওঠে--হোগা, হোগা হোগা!
    জল ভরতে ব্যস্ত একজন মহিলা সঙ্গিনীদের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বাঙাল উচ্চারণে বলে ওঠেন-- হগা, হগা, হগা!
    সবাই সমস্বরে হেসে ওঠে।
    যোধপুর পার্কের পূজো প্যান্ডেলের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বাজছে-- " ত্রিবেণী তীর্থ পথে কে গাহিল গান?"
    আশ্রমে রামানন্দ মহারাজ একবার বলেছিলেন-- ওই গানটা পটদীপ রাগিণীতে।

    কিন্তু ছবিঘর সিনেমার সামনে মিতার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হল না। সিনেমার সামনে বন্ধু অপেক্ষা করছে শুনেই মায়ের চেহারা কেমন কঠিন কঠিন হয়ে গেছেল আর মাত্র জ্বরে ভূগে উঠেছি-- এই ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে মা আমার বেরনোর প্রস্তাব খারিজ করে দিলেন।
    কিন্তু বিপ্লব মানে মিতা নাকি দুঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল লাকি আসবে এই ভরসায়। তবে লাকির বদলে দেখা হয়ে গেল টিউটোরিয়ালের রথীন স্যার ও ক্লাস টেনের অসিতদার সঙ্গে।  ওরা ছবিঘর সিনেমাহলে পুজোয় রিলীজ হওয়া ফিল্ম দেখতে গেছল। জেরায় জেরায় লাকি কবুল করল যে প্রদ্যুম্নের জন্যে দাঁড়িয়েছিল।
    ও সময়মত হোস্টেলে ফিরল। আমি সেদিন অ্যাপো ফেইল করা ও হস্টেলে ফিরে যেতে দেরির কথা লিখে ওকে একটা পোস্টকার্ড ছাড়লাম। সেটা ওর মা হোস্টেলের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন।
    চিঠিটা ওর হাতে সোজাসুজি যায় নি, গেল সেই অসীমদার মাধ্যমে। অসীমদা মহা ছোটলোক-- চিঠিটা পড়ে তবে ওকে দিল। খোলা পো্স্টকার্ড বলেই কি অন্যের চিঠি পড়া যায়?
    ব্যস-, অসীমদা হোস্টেলে পুরো গল্পটা আদা নুন মাখিয়ে ছাড়ল।
    দশদিন পরে হোস্টেলে ফিরে দেখলাম আমরা দু'জন বিরাট খোরাক হয়ে গেছি। আর তদ্দিন গোটা তামাশা শুধু বিপ্লবকে নিয়েই হয়ে্ছে।
    রাত্তিরে ও আমাকে চেপে ধরল, বলল-- কে তোকে বলেছিল পোস্টকার্ডে লাকি-মিতা লিখতে?
    এবার ছুটির পর আবার রুম অ্যালটমেন্ট পাল্টেছে। একই ঘরে আমরা চারজন ক্লাস নাইন, শুধু একজন ক্লাস সেভেন, এবছর নতুন ভর্তি হয়েছে। হোস্টেল খুললেও স্কুল খোলেনি, খুলবে সোজা ভাইফোঁটার পর। এবার আমাদের রুমের ক্যাপ্টেন বিপ্লব। সকালবেলা প্রেয়ার ও ড্রিলের পর জলখাবার, দুঘন্টা পড়া, একঘন্টা ক্রিকেট। তারপর স্নান করে সাঁটিয়ে খেয়ে কষে ঘুম। বিকেল চারটেয় উঠে জলখাবার খেয়ে খেলার মাঠ, তারপরে প্রেয়ার, টিউটোরিয়ল, খাওয়া-- শেষে সাড়ে দশটায় লাইট অফ।
    কিন্তু প্রথম দিন দুপুরে খালি চোখ লেগেছে এমন সময় দরজায় খটখট। অতিকষ্টে চোখ খুলে দেখি কেউ ডাকছে-- বিপ্লবদা, অ বিপ্লবদা! দরজা খোলো।
    বিপ্লব উঠল, কাঁচাঘুমে লাল চোখ।
    দরজা খুলতেই সেই নতুন ছেলেটা হুড়মুড়িয়ে ঢুকল। বিপ্লব কোন কথা না বলে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় মারল। তারপর আবার নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ক্লাস সেভেনের ছেলেটা গালে হাত বুলোতে বুলোতে শুতে গেল।
    বিকেলে ওকে বললাম--অমন করে মারলি কেন?
    -- দু'দিন দেখ! বুঝে যাবি।
    পরের দিন দুপুরে আমরা সবাই গাঢ় ঘুমে কাদা-- অনেক দূর থেকে কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে-- প্রদ্যুম্নদা, ও প্রদুম্নদা!
    আমার খাটের কাছেই দরজা। উঠে খুলে দিতেই সেই ছেলেটা !একইরকম ভাবে হুড়্মুড়িয়ে ঢুকল। আমিও সোজা দুটো চড় কষিয়ে নিজের বিছানায় ফিরে গেলাম।
    বিপ্লব উঠে লাল চোখ দিয়ে দুজনকে দেখে ফিক করে হাসল, তারপর শুয়ে পড়ল।
    কিন্তু স্কুল খোলার আগে নতুন বাওয়াল  শুরু হোল যার মাথামুন্ডু বোঝা কঠিন।
    ক্লাস সিক্সের নবারুণ বলে একটা বাচ্ছা ছেলে পাগল হয়ে গেছে!
    ফুটফুটে ছেলেটা, এবছরই নতুন এসেছে। ১৫ই অগাস্টের ক্যাম্পফায়ারে একটা মজার কবিতা বলেছিল, সঙ্গে সুন্দর অ্যাক্টিং।
    " ওই রাবণ আসিল যুদ্ধে পড়ি বুটজুতা,
    হনুমান মারে তারে লাথি-চড়-গুঁতা।
    লাথি খেয়ে রাবণরাজা যান গড়াগড়ি,
    হনুমান করে তারে দন্ত কিড়িমিড়ি।"
    জুরিদের সর্বসম্মতিতে ওকে একটা প্রাইজ দেওয়া হল। ও একটা আধুনিক গানও গেয়েছিল--"সূর্যমুখী সূর্যে খোঁজে সূর্য খোঁজে বিনা,
    বল তো গো-- আমি তোমার মনের মত কি না?"

    ভালই গেয়েছিল, কিন্তু অনিল মহারাজ নাক কোঁচকালেন। ফলে কোন প্রাইজ দেওয়া গেল না।
    সেই সবার প্রিয় ছটফটে হাসিমুখ ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে?
    হুড়মুড়িয়ে ছুটলাম অফিসের দিকে।
    লম্বা বারান্দায় একটা থামের সামনে ছোট কাঠের টুল, তাতে বসে ছোট্ট নবারুণ, কোমরের হাতদুটো পিছমোড়া করে থামের সঙ্গে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা। ঘোলাটে চোখে ও সবাইকে দেখছে অথবা কাউকে দেখছে না।
    কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠছে-- পোকা! পোকা!
    তারপর নিঃস্তেজ হয়ে পড়ছে। একটু পরে আবার শুরু হল সেই পোকা পোকা চিৎকার। দেখতে দেখতে ভীড় জমে গেছে। কারো কারো চোখ গোল্লা হয়ে গেছে আর ছোট বাচ্চারা মজা পেয়ে হেসে উঠছে।
    এবার নবারুণও হাসতে শুরু করল।
    --- পোকা! পোকা! চারদিকে পোকা। পোকার বাড়ি। ছোট পোকা দুধ খাবে, বড় পোকা বাজারে যাবে।মা্ছ কিনে আনবে।

    আমার দমবন্ধ লাগছে। দেখলাম বড় মহারাজ সুনীল মহারাজকে ডেকে কিছু বললেন, উনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন।
    আমার কানের কাছে ক্লাস টেনের অমিয়দা ফিসফিস করল-- ওর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে লোক আসছে, ওকে নিয়ে যাবে।
    কিন্তু এই তামাশা বেশিক্ষণ চলল না। আমাদের আশ্রমের এল এম এফ ডাক্তারবাবু ওঁর কালো ব্যাগ নিয়ে রিকশা থেকে নামলেন। নবারুণকে মন দিয়ে দেখে সুনীল মহারাজকে ওইরকম ফিসফিসিয়ে কিছু বললেন, মহারাজও আগের মত মাথা নাড়লেন।
    তারপর উনি একটা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ বের করে কাউকে ইশারা করলেন। বাচ্চাটার বাঁধন খুলে দিয়ে দুজন চৌকিদার শক্ত করে ওর দুটো হাত চেপে ধরল। উনি স্পিরিট লাগানো তুলো দিয়ে বাচ্চাটার হাতে একটু ঘষে সুঁচটা পট করে বিঁধিয়ে দিলেন। একটা ওষুধ আস্তে আস্তে ঢুকছে।
    সুঁচ দেখেই নবারুণ পরিত্রাহি চিৎকার জুড়েছিল। এবার আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ল। তারপর ওর মাথাটা বুকের কাছে ঝুঁকে পড়ল। সিক রুমের বড়দা এসে এবার ওকে কোলে করে সিক বেডে নিয়ে গেলেন।

    নবারুণ চলে গেছে। ওর বাবা-কাকা এসে ওকে নিয়ে গেছেন। মহারাজ টিসি দিয়ে দিয়েছেন।
    কিন্তু প্রশ্নগুলো রয়ে গেল।
    কেন? কী হয়েছিল?
    কোন উত্তর নেই। একমাস হয়ে গেল।
    মন মানে না; জানতে হবে। গুরুর কাছে হত্যে দিতে হবে।
    ইদানীং আমাদের এক গুরু হয়েছে-- ক্লাস টেনের অমিয়দা। কোলকাতার উপকন্ঠে কোন পুরনো জনপদের বাসিন্দে। খেলাধূলো আর ফচকেমি--দুটোতেই চৌকস, শুধু পড়াশুনোটা মোটামুটি। তবে বুককীপিং এ ভাল নম্বর পায়। আমি হলাম ওঁর বাঁহাত, ডান হাত প্রশান্ত।
    অমিয়দা খবর আনল--শোন, নবারুণ রোজ সকালে বা সন্ধ্যেয় ফাঁক পেলে বলাইদার কাছে যেত। বলাইদার থাই ম্যাসেজ জানিস তো? উনি ছোট ছোট বাচ্চাদের ওনার কোয়ার্টারের বারান্দায় ব্যায়াম করাতেন; তারপর কুল ডাউন করাতে করাতে ওদের থাই ম্যাসাজ করতেন।
    অমিয়দা অর্থপূর্ণ ভাবে চোখ টিপল।
    --- ধেত্তেরি! ওসব আমাদের জানা আছে। কবে ঠোঙা হয়ে যাওয়া গল্পগুলো ছাড়ছ। নবারুণের ব্যাপারটা যদি জান তো বল। নইলে?
    -- নইলে কী রে শ্লা? ঘোড়ায় জিন চড়িয়ে এসেছিস? আগে শোন তো!
    --- আরে, নবারুণ গিয়েছিল সেক্রেটারি মহারাজের কাছে কমপ্লেন করতে।
    --কী কম্প্লেন?
    --বাচ্চাছেলে; বলল --আমাকে হুল ফুটিয়ে দিয়েছে!
    --- কী ? সেটা কী কেস?
    --বল্লাম তো, বাচ্চারা ওইভাবেই বলে অনেকসময়। বুঝলি না?
    --হ্যাঁ, হ্যাঁ; কিন্তু কে?
    --- কে আবার আমাদের বলাইদা! ব্রহ্মচারী বলাই!
    --- কী ফালতু বকছ? বলাইদা!
    -- এ শর্মা ফালতু বকে না; খামোকা কারো কুচ্ছো করে বেড়ায় না।
    -- তারপর?
    --তারপর তো পুরো কেলো! বলাইদা হলেন আমাদের ফেবারিট মেজো মহারাজ রামানন্দদার ছোট ভাই। এখনো গেরুয়া পান নি, সাদা পরে ব্রহ্মচারী মানে সন্ন্যাসী হওয়ার অ্যাপ্রেন্টিস হয়ে আছেন।
    তো সেক্রেটারি মহারাজ-- আমাদের  সেজ'দা--- রামানন্দদা মানে স্বামী বিজ্ঞানানন্দ ও ব্রহ্মচারী বলাইদা , দুজনকেই ডেকে পাঠালেন। বলাইদা পুরো ব্যাপরাটা অস্বীকার করে বললেন বাচ্চাটা ওনার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সেই সময় কিছু ঘটেছে। উনি ঘরে ছিলেন না। হয়ত ক্লাস এইটের বিভাস কিছু করে থাকতে পারে। ও সেই সময় ঘরে ছিল।
    --- কী ডেঞ্জারাস !
    --আরে শোন না! ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয় নি। নবারুণদের পরিবারের কেউ লালবাজারে অফিসার। ওঁর বাবা-কাকারা স্বামীজিকে বলে গিয়েছিলেন যে ওঁরা ছেড়ে দেবেন না।
    -- কী করলেন?
    -- সে জানি না। তবে এই একমাসের মধ্যে কোথাও কেউ কলকাঠি নেড়েছে। গতকাল বলাইদাকে আমাদের আশ্রম থেকে সন্ধ্যেবেলা বিদেয় করে দেওয়া হয়েছে। ওঁর আর এ জীবনে বেলুড়ে গিয়ে গেরুয়া ল্যাঙোট পাওয়া হবে না।

    আস্তে আস্তে ব্যাপারটা থিতিয়ে যায়। শুধু রাত্তিরের আডডায় বলাইদার থাই ম্যাসাজ একটা ছ্যাবলা জোক হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
    কিন্তু অমিয়দাকে ঘটনাটা বোধহয় আমাদের থেকে বেশি নাড়া দিয়েছিল।
    ও একদিন ওর ঘরে আমাদের পাঁচজনের মিটিং ডাকে। সবার আগে হাজির হই আমরা তিনজন। ডানহাত প্রশান্ত, বাঁ-হাত আমি ও আমার মিতা মানে বিপ্লব। বাকি দুজন --নিখিলেশ ও বিশু-এল একটু দেরি করে। ওদের সুনীলদা, স্বামী আত্মানন্দ প্রেয়ারে যারা ঘুমোয় তাদের নাম লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ওদের খাতা খালি ছিল, তাই একরাউন্ড বকুনি।
    অমিয়দা বুড়োদের মত গলা খাঁকারি দিয়ে শুরু করতেই আমরা হেসে ফেললাম। ও এত মজার এ হাসি পেয়েই যায়। শেষে মাথা চুলকোতে লাগল।
    --- কী ? কী জন্যে ডেকেছ নিজেই ভুলে গেছ? এই তোমার জরুরি মিটিং?
    --- বালের মিটিং!
    -- দাঁড়া, দাঁড়া; এক্ষুণি মুখ খারাপ করিস না। আসলে কোত্থেকে যে শুরু করি?
    -- ল্যাজা মুড়ো যেখান থেকে ইচ্ছে! শুরু তো কর, গুরু!
    --- শোন, নবারুণের কেসটা তো দেখলি! এটাই প্রথম না, শেষও না। এখানে বহুদিন ধরে কচি কচি ছেলেদের সঙ্গে জোরজবরদস্তি করে এইসব করা চলছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
    --- কী করবে? কেউ যদি কম্প্লেন না করে তো ? তোমার এই ফোঁপরদালালি স্বভাব নিয়ে না? আমি এসব ফালতু ঝামেলায় নেই বাবা!
    -- বিশু, তুই কী বলিস?
    -- একই কথা; নিজ নিজ পশ্চাদদেশ নিজ দায়িত্বে রক্ষা করিবেন। ইহার দায়িত্ব লইতে আশ্রম অপারগ।
    --- আশ্রমের কথা আসছে কী করে? আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে স্টেপ নেওয়ার কথা বলছি।
    --- আর কম্প্লেন হলে আশ্রম স্টেপ নেয় না এমন তো নয়! বলাইদাকে , মানে ব্রহ্মচারী বালচৈতন্যকে বের করে দিল তো।
    -- দূর বাল! কতগুলো ঘটনা ঘটে চলেছে আর তুই একটা স্টেপ নেওয়ার কথা বলছিস। আজকাল স্বামীজিদের দালালি করছিস নাকি?
    ---তোকে কালীকীর্তনের দলে রামানন্দ মহারাজ নিয়ে নিয়েছেন তাই?
    হাতাহাতি হতে যাচ্ছিল, অমিয়দার কড়া ধমকে সব থেমে গেল।
    ওর ইশারায় প্রশান্ত বলতে শুরু করলঃ
    দেখ, সব হোস্টেলেই এক অবস্থা। কোন উৎসবে বা ফুটবলের ময়দানে বহড়া , বীরেন্দ্রপুর বা কাঠালিয়া আশ্রমের ছেলেদের সঙ্গে দেখা হলেই একবার শুরু হয়-- কী দাদা? আপনাদের ওখানে চলে? আমাদের ওখানে তো চলছে।
    আমি আর থাকতে পারি না। সোৎসাহে দোহার দিইঃ
    হ্যাঁ, দাদা। গত সপ্তাহে একটা দারুণ বই পড়েছি, 'ফর হুম দি বেল টোলস্‌', অশোক গুহের বাংলা অনুবাদে। তাতে লেখক হেমিংওয়ে বলছেন--স্প্যানিশ ভাষায় নাকি গালাগালি সাংকেতিকতার চরমে পৌঁছেচে। সেখানে অশ্লীল ক্রিয়ার নামটি না বলে শুধু 'করেছে' এমন বলা হয়।
    --- ধ্যেৎ, এই প্রদ্যুম্নটা মহা ক্যালানে। কোথায় আমাদের মিশন আর কোথায় হেমিংওয়ে?
    -- আরে সম্বন্ধ আছে; বলছি যে হেমিংওয়ে আমাদের আশ্রমে আসেন নি। তাহলে দেখতেন আমরাও অমনি করি। খালি 'করেছে'র জায়গায় বলি 'দিয়েছে'। যেমন অমুকদা তমুক ছেলেটাকে না 'দিয়েছে'।
    এবার অমিয়দা নিজে হাসতে হাসতে বিছানা থেকে গড়িয়ে যায়।
    তারপর জল খেয়ে বলে--আমার কথাটা শোন। আমি একটা সল্যুশন ভেবেছি। আমরা এই পাঁচজন কাজটা শুরু করব। কান খোলা রাখলেই টের পাওয়া যাবে কোন কোন বাচ্চা কার শিকার হতে চলেছে।
    আমরাই সিনিয়র। ইলেভেনের মাত্র সাতজন, আর তারা বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষার চিন্তায় হিমসিম খাচ্ছে। আমি টেন, তোরা নাইন। আমরা রাত্তিরে তক্কে তক্কে থাকব। শিকারী ও শিকারদের হাতে নাতে ধরতে হবে।
    -- কিন্তু যদি ওরা বলে যে আমরা যাই করি তোদের বাপের কি? তখন?
    --- হাতেব নাতে ধরলে ফিফটি-ফিফটি ধোলাই খাবে। আশ্রমে এসব নোংরামি চলবে না। আর যেগুলো ছোট বাচ্চাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে করে তাদের মহারাজদের কাছে নিয়ে যাব।
    --- বেশ, আমি তোমার সঙ্গে আছি। কিন্তু তোমার ক্লাসের বন্ধুরা? বা যারা বিমানদা-- রাজকুমারদার মত জোড়া বেঁধেছে? ভালবাসাবাসি না কী যেন?
    আমাদের গুরুর কপালে ঘাম জমল।
    নাঃ, গুরুর সল্যুশন নেহাৎ রাবার সল্যুশন , তাও হট নয়, কোল্ড। বিশেষ কাজে এল না।
    ওভাবে পুলিশগিরি হয় না। আর রাত্তির জেগে দুটো ফ্লোরের বারান্দায় ঘুরে বেড়ানো? জানলার কাছে আড়ি পাতা? কদিন সম্ভব? উল্টে একদিন মহারাজের কাছে ডাক পড়ল।
    ইতিমধ্যে সেজ'দা মানে সর্বজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ মহারাজ অনেক দিন ধরে অসুখে ভুগে গত হয়েছেন।
    এখন রামানন্দদা মানে আমাদের ফেবারিট রাজসিক রুচির স্বামী বিজ্ঞানানন্দ সেক্রেটারি মহারাজ ।

    সেজ'দার চলে যাওয়াটা অদ্ভূত। দুপুর থেকেই শুনছি ডাক্তারবাবুরা জবাব দিয়েছেন, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই সময় এল রাত সাড়ে আটটায়। হটাৎ হাঁউমাঁউ কান্না ও চিৎকারে আমরা ছেলের দল দৌড়ে গেলাম।
    খাটের উপর শুয়ে সেজ'দা; চোখ তুলসীপাতা দিয়ে বোজানো। খাটের চারদিকে ভীড় করে অনেক লোকজন, সবাই কাঁদছে।
    একজন সাদাচুলের মহিলা ঢুকলেন। বেশ এলিট চেহারা। উনি শায়িত দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিলাপ করে কাঁদতে লাগলেন।
    -- আমি কতদূর থেকে তোমাকে দেখব বলে এসেছি, সেই সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, কিন্তু ঠাকুর আমার ইচ্ছে পূরণ করলেন না!
    কান্নার রোল বেড়ে গেল। ইতিমধ্যে বিবাদী সুর বেজে উঠল। আশ্রমের কার্পেন্টারি বিভাগের মানিক মিস্ত্রী ভেতরে ঢুকে সরু মোটা নানান স্বরে সমবেত কান্না শুনে হটাৎ হোঃ-হোঃ করে হেসে উঠল।
    কান্না থেমে গেল। সবার লাল চোখ ওর দিকে ফিরেছে। ও লজ্জা পেয়ে হুড়মুড়িয়ে পালিয়ে গেল।
    আমরা জানতে পারলাম যে শোকাকুল মহিলাটি  সেজ'দার পূর্বাশ্রমের আপন বৌদি।

    উনি নাকি একসময় নেতাজির সহকর্মী ছিলেন। এ নিয়ে অনেক গল্প আছে। আমাদের ওয়ার্ডেন বীরুদা ও আরো দু'একজন আশ্রমকর্মী বলতেন-- শৌলমারীর সাধুটি আসলে নেতাজী!
    সে যাকগে, শোনা গেল যে ক্লাস সেভেনের রুদ্রাংশু ও প্রতুল নাকি সেজ'দার প্রয়াণ নিয়ে প্যারডি গান বেঁধেছে, শাম্মী কাপুরের চায়না টাউনের 'হিট সং "বার বার দেখো, হাজার বার দেখো"র 'সুরে।
    গুরু অমিয়দা বলল-ওই বাঁদর দুটোকে রোববার আমাদের ঘরে নিয়ে আয় তো! কী কী সব গান বেঁধেছে শুনব।
    --- শুনে? বাঁদরামির জন্যে ক্যালাবে?
    --- আমি এর মধ্যে নেই, ওরা নেহাৎ বাচ্চা ছেলে। যাদের ক্যালানো উচিৎ তাদের এক আঁটি কলমীশাকও ছিঁড়তে পারলে না ? এবার বাচ্চাদের ওপর হাতের সুখ করবে?
    --- এই প্রদ্যুম্নটা কে নিয়ে আর পারি না। ওরা বাচ্চা, আর তোরা বুড়োর বাপ? আরে ডেকে আন, মারব কেন? যদি গান ভাল হয় তো দুপুর বেলা দু'পিস মাছ বেশি দেব।

    ওরা কাঁদো কাঁদো মুখে এল। কিছুতেই গাইবে না। অনেক করে সাধ্যসাধনা এবং ভয় দেখানোর পর ডুয়েট শুরু হলঃ
    " বল হরি বল,
    এ সেজ 'দা মারা গেল,
    সেজ সেজ’দাকে ধরে নিয়ে টানাটানি কর সেজ 'দা গো-ও-ও!
    ও সেজো, তোমাকে ছাড়া আর চলছে না,
    মাঠে মাঠে দিনগুলো কাটছে না।
    --"।
    এমন সময় দরজায় কড়া নড়ে উঠল। আমরা হাসতে হাসতে উঠে দরজাখুলে ফ্রিজ! চৌকাঠে দাঁড়িয়ে স্বামী আত্মানন্দ, মানে সুনীলদা।

    সুনীলদা বিদ্যেসাগরী চটি পরে দ্রুতপায়ে বারান্দার একমুড়ো থেকে অন্য মুড়োয় পৌঁছে যেতেন, প্রায় নিঃশব্দে। এই বিরল দক্ষতার গুণে ছেলেরা ওঁর নামকরণ করেছিল--প্রাইভেট বাস।

    ওনার অনেক দায়িত্ব, কারণ উনি জুনিয়র স্বামীজি। সকালে কেউ প্রেয়ারে না গিয়ে ঘরেই ঘুমুচ্ছে কি না, বা প্রেয়ার হলে প্রার্থনার সময় চোখ বুঁজে ঢুলছে কি না--সব উনি সুপারভাইজ করতেন। সন্ধ্যের টিউটোরিয়লে কোন রুমে পড়াশুনো হচ্ছে আর কোন রুমে স্থানীয় মাস্টারমশাই নাক দিয়ে গিটারে সন্ধ্যা মুখার্জির লেটেস্ট গান শোনাচ্ছেন এসব দিকে ওঁর ছিল তীক্ষ্ণ নজর। আর রোববার বিকেলের দিকে ঘরে ঘরে ঢুকে ইন্স্পেকশন, অর্থাৎ ঘর পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর ধোয়া, হাত ও পায়ের নখ কাটা এগুলো দেখাও ওঁর ডিউটির মধ্যে।

    -- কী হচ্ছে এখানে?
    আমরা চুপ, কথা জোগাচ্ছে না।
    -- জুনিয়র ছেলে দুটো এখানে কী করছে,? বড়দের ঘরে? বল।
    ওরা চুপ, ভয়ে কাঁপছে। করুণ মুখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমরা কি ওদের ফাঁসিয়ে দেব? চোখে নিঃশব্দ বিনতি--- প্রভূ মোরে, অবগুণ চিত ন ধরো!
    -- কী হল? প্রদ্যুম্ন? বিপ্লব? গলায় কিছু আটকেছে কি? দরজা বন্ধ ছিল কেন? সিগ্রেট খাচ্ছিলে?
    উঃ! সুনীলদাকে নিয়ে পারা গেল না। বাচ্চাদের সঙ্গে সিগ্রেট খাব?
    --অমিয়? তুমি হলে সিনিয়র। তুমিই বল। দরজা বন্ধ করে এখানে কী হছিল? কোন মহৎ কর্ম?
    অমিয়দা থতমত খেয়ে বলে-- রিহার্সাল।
    সুনীলদার ভুরু কুঁচকে যায়।
    --কিসের রিহার্সাল?
    -- গানের।
    --মানে?
    এবার আমাদের সম্মিলিত টিউবলাইট জ্বলে ওঠে।
    --হ্যাঁ মহারাজ গানের,-- গানের রিহার্সাল!
    --আসলে প্রেয়ারে একটা ছোট গানের দল সামনে বসবে, সুর ধরবে।
    মানে, ইদানীং প্রেয়ার বড্ড বেসুরো হচ্ছিল।
    -- কে বলেছে বেসুরো?
    -- রামানন্দদা মানে বড় মহারাজ। উনিই তো বললেন কিছু গাইতে পারে ছেলে জোগাড় করে ওদের রিহার্সাল দিয়ে তৈরি করতে। উনি পরীক্ষা নেবেন। তারপর ওরা নিয়মিত সামনের সারিতে বসে গাইবে।

    গুরু এটা তুরুপের তাস খেলল। সবাই জানে সুনীল মহারাজ বেসুরো, তাই ধ্রুপদ রাগপ্রধান পারঙ্গম বড় মহারাজ রামানন্দদা ওনাকে বেশ কৃপার চোখে দেখেন। আর অমিয়দা মহারাজের গানের দলের-- বিশেষ করে কালীকীর্তনের-- স্থায়ী সদস্য। সুনীলদার সাহস নেই গান নিয়ে রামানন্দদার সামনে গিয়ে কিছু বলার।
    কিন্তু উনি ভাঙবেন তবু মচকাবেন না।
    --বেশ, কী রিহার্সাল হচ্ছিল শুনি।
    অমিয়দার ইশারায় আমি গম্ভীর হয়ে ঘোষণা করিঃ
    রাগ--মালকোষ, তাল--তেওড়া।
    তারপর সবাই মিলে উঁচু গলায় চেঁচিয়ে উঠিঃ
    ' ক্ষাত্রবীর্য ব্রহ্মতেজ মূর্তি ধরিয়া এল এবার,
    গগনে পবনে উঠিল রে ঐ মাভৈঃ মাভৈঃ হুহুংকার"।
    সুনীলদা কনফিউজড! সবাইকে একবার দেখে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন-- চালিয়ে যাও। কিন্তু ডাইনিং হলে আসতে দেরি কর না। এক্ষুণি বেল পড়বে।
    ও হ্যাঁ, অমিয়! তোমাদের তিনজনকে রামানন্দদা খাওয়ার পরে দেখা করতে বলেছেন। তোমরা কিসব রাতপাহারা শুরু করেছ করছ নাকি ?
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৩৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kishore Ghosal | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৭516756
  • "ক্ষাত্রবীর্য ব্রহ্মতেজ মূর্তি ধরিয়া এল এবার,
    গগনে পবনে উঠিল রে ঐ মাভৈঃ মাভৈঃ হুহুংকার"। এরকম প্রেয়ার আজকাল নিশ্চয়ই আর হয় না। নাকি এখনও হয়। 
     
    ভাল লাগছে - আশ্রম সম্বন্ধে একটা আলাদা ধারণা ছিল - সেটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে যেন।..  
  • Ranjan Roy | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:০৮516764
  • এটা রোজকার প্লেয়ার নয়, কিন্তু কিছু নির্বাচিত বিশিষ্ট প্রেয়ারের অন্যতম।  সম্ভবত: বিবেকানন্দের উদ্দেশে নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের লেখা। এইরকম আর একটি হল মিশ্র ছায়ানটে
     মূর্তমহেশ্বরমুজ্বলভাস্কর মিষ্টমমর নরবন্দ্যম্।
    বন্দর বেদতনুমুঞ্জিতগর্হিত কাঞ্চনকামিনীবন্তম্।।
     
    তবে এসবই 60 বছর আগের কথা।
    আজকের ব্যাপারে জানি না।
  • Ranjan Roy | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৬516790
  • উফ   বন্দর নয়,  बन्दे. 
  • Nirmalya Nag | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪২516811
  • রঞ্জনদা,  আগের পর্বের লিংক গুলো প্লিজ দিন। খেই ধরার জন্য তিন নম্বরটা পড়তে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছি না।
  • Ranjan Roy | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:১৩516854
  • নির্মাল্য
     
    লিংক নম্বর 26646.
    আমি চতুর্থ পর্বে ভুল লিংক নম্বর দেওয়ায় গণ্ডগোলটা হয়েছে।
  • :|: | 174.25.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৫516857
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৭: এই ফিকে করে দেওয়াটাই কাহিনী লেখার মূল উদ্দেশ্য। কোনও কন্সট্রাক্টিভ লক্ষ্যে এটির সৃষ্টি না। সেই অর্থে এই লেখা "সার্থক"। 
     
    ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:০৮ -- না গিরিশ ঘোষের লেখা না। স্বামীজীর শিষ্য শরৎ চন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা। তিনিই স্বামী শিষ্য সংবাদ লিখেছেন। এই গানের শেষে ভণিতায় ওনার নামের অংশ চন্দ্রের উল্লেখ আছে।  
    बाल-चन्द्र-धरमिन्दु-वन्द्यमिह नौमि गुरु-विवेकानन्दम्‌॥
  • হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা | 2001:67c:6ec:203:192:42:116:***:*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৫৩516858
  • রাকৃমিচাড্ডিদের হেব্বি জ্বলে এ কতাগুলোনে। দুনিয়ার সক্কলের ফুটো খুজে বেড়ানো ফুটোময়ীরও জ্বলচে দেকে হেব্বি আমোদ পেলুম।
  • :|: | 174.25.***.*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০৬516859
  • আপনাদের আমোদ দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। লেখকেরও এবং মন্তব্যকারীরও। 
  • Ranjan Roy | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০১516861
  • চতুর্ভুজ
      আপনিই ঠিক--উদ্দেশ্য বিধেয় দুটো বিষয়েই। 
    তবে আমাদের বাচ্চাদের গানের বইয়ে রচয়িতার নাম থাকতো না। যেমন ঘরে ঘরে গাওয়া হয় যে গুরুবন্দনা --'ভবসাগর তারণ কারণ হে'। বড় হয়ে জানলাম যে ওটি লিখেছিলেন জনৈক দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার। 
     
    আর "বাল-চন্দ্রধরমিন্দুবন্দ্যমিহ নৌমি গুরু বিবেকানন্দম্‌" পংক্তিতে  'বালচন্দ্রধর' অর্থ জানতাম শিব (যোগরূঢ়), কারণ তাঁর জটায় অর্ধচন্দ্র রয়েছে।
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন