সুকিয়ানা - বাড়ির পুজো – পুজোর বাড়ি - ৪ : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৫ অক্টোবর ২০২০ | ৫০৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আরও অনেক কিছুর সাথে দুর্গা পুজো মনে করিয়ে দেয় আমার রিসার্চ বিষয়ক প্রথম ব্যর্থতার কথা। বাড়িতে বাজি বানাতে গিয়ে—না, বাজি বানাতে ব্যর্থ হইনি, ব্যর্থ হয়েছিলাম হাতে বানানো রংমশাল আর তুবড়ির ধোঁয়া কমাতে। বানাতাম সেসব মাল জবরদস্ত, কিন্তু বড়ো বেশি ধোঁয়া হত। সে অনেক দিন আগেকার কথা।
একসময় আমাদের দাদারা লায়েক বয়েসে পৌঁছে ঠিক করল বাড়িতেই বোম-বাজি ইত্যাদি বানাতে হবে। আমরা তখন খুবই ছোটো। কানেকশন এল নেপালদার বন্ধু অদয়দার চেনা সূত্র ধরে—সেই মাস্টার-এর সাথে। মাস্টার নাকি কংগ্রেস জামানায় পেটো বানাত দুরদার—সিপিএম আমলেও বানাত, তবে খুব খাতির থাকলে তবেই। আমাদের পুরানো বাড়ির ছাদেই সেই বোম-বাজি বানানোর শুরু। তুবড়ির খোল কেনা আসত কুমোর বাড়ির থেকে—বাকি বোম বানানোর মালমশলা মেমারি বাজারের এদিক ওদিক হতে। সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম/লোহাচুর, স্পাইরো পাউডার ইত্যাদি। তখন অত রেগুলেশন ছিল না সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) বিক্রি নিয়ে। পরে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়, লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রি করলেও কতটা পরিমাণে ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে কী সবই চেনাশোনা সার্কেলের জন্য জিনিস মার্কেটে থাকলে এবং বেআইনি না হলে মালমশালা পেতে কোনোদিন আসুবিধা হয়নি। তবে জমাটি কেস ছিল কাঠকয়লার বেলায়। সঠিক কাঠকয়লা বাজি বানানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানবেন। আর কোন্ পাগলা নাকি বলেছিল সবচেয়ে ভালো কাঠকয়লা হয় আকন্দ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে!
সুকিয়ানা – ১৯ পর্ব (দুই প্যালেস মিউজিয়ামের গল্প) : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ভ্রমণ | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ৩১৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে।
পান আর গুটকার পিক ফেলে আমরা হাওড়া ব্রিজকে ক্ষইয়ে ফেলছি : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ৩১ মে ২০২১ | ৫৭১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
পাখিদের তো আর শেখানো যায় না যে তোরা হাওড়া ব্রিজে আর মল ত্যাগ করিস না বাপু! এত তো জায়গা রয়েছে! কিন্তু দেখা গেল শুধু পাখি নয়, মানুষদের শেখানোও খুব চাপ – এত পোস্টার, অনেক সচেতনতা ক্যাম্পেনের পরেও পাবলিক পানের আর গুটকার পিক হাওড়া ব্রিজের পিলার গোড়ায় ফেলা বন্ধ করল না। পিলারের গোড়ার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকেও তেমন সাফল্য এল না। আগে যেমন লিখেছি, পানের/গুটখার থুতু বেশ বেশ অম্ল এবং তাই লোহার জন্য ক্ষতিকারক। প্রথমে পিলারের গোড়া গুলি বার বার রঙ করা হচ্ছিল এবং পরিষ্কার করা হচ্ছিল – কিন্তুতেই কিছু হল না। বরং দেখা গেল মাত্র চার বছরে, ২০০৭ থেকে ২০১১ এর মধ্যে পান/গুটখার পিক পিলার ক্ষইয়ে দিয়েছে ৩ মিলিমিটার! দৈনিক হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ (১-৫ লক্ষের মধ্যে)। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগও যদি থুতু ফেলেন, তাহলে দৈনিক পিলারে থুতু ফেলছেন কয়েক হাজারের মত লোক! সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়!
চাষার ভোজন দর্শন – দ্বিতীয় পর্ব : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ০১ জুলাই ২০২১ | ৪৮৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এটা রিসোত্তোর রেসিপির বা ইতিহাস লেখার রচনা নয়, তাই সেই সব বিষয়ে ঢুকছি না। তবে যেটা বলার, রান্নার টেকনিক ছাড়াও আর যেটা প্রধান পার্থক্য করে দেয় রিসোত্তো কোয়ালিটির তা হল যে চাল ব্যবহার করা হয় তা। রিসোত্তোর ছবি দেখেই ‘আমাদের গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে এই জিনিস আরো ভালো হত’ এমন হল্লা মাচাবেন না প্লিজ। সব জিনিসের একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে! অবশ্য আপনি নিজের নিজের সিগনেচার ডিস “রিসোত্তো উইথ এ গোবিন্দভোগ টুইস্ট” বানাতে চাইলে কিছু বলার নেই! যদি পারফেকশন আনতে পারেন, কে জানে হয়ত পায়েস ছেড়ে গোবিন্দভোগ গ্লোবাল স্কেলে পৌঁছে যাবে পাতে পাতে! এখানে জাস্ট এটুকু বলে রাখি এই মুহূর্তে রিসোত্তো বানাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় চালু চাল তিনটি – কারনারোলি, আরবোরিও এবং ভিয়ালোনে ন্যানো। আর একটা ছোট্ট টিপস -এই চাল দিয়ে রিসোত্তো রান্নার আগে প্লিজ চাল ধোবেন না বারে বারে! একবারে না ধুলেই ভালো হয়।
চাষার ভোজন দর্শন – ৫ম : সুকান্ত ঘোষ
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানাবন্দনা | ২২ জুলাই ২০২১ | ৪৬৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
খাবার গল্প করতে গিয়ে সৌন্দর্য্য বোধের কথা উঠছে কেন? এটাই মূল কারণ – যদি নামী কোন ফ্রেঞ্চ রেষ্টুরান্টে খেতে যান, তাহলে সেটা নিজেই টের পাবেন। ধরুণ – একটা বিশাল স্টাইলের সাদা প্লেট দেবে – কিন্তু মাঝখানে ১০ গ্রাম মাংস, দুটো বীনসের দানা, এককাছি সবুজ পাতা চেরা। আর সেই মাংসের অর্ডার নেবার সময় আপনাকে ওয়েটার/ওয়ের্টেস সেই চিকেনের (যদি চিকেন অর্ডার করেন) বাল্যকাহিনী শোনাবে! চিকেন এই খেত, বনেবাদাড়ে খেলে বেড়াতো, তার মামারবাড়ি ওখানে, জবাই করার আগে সে এই এই জায়গা ভ্রমণ করেছে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতাম – এখন আলতো করে বলে দিই, চিকেনের জীবনগাথা শোনায় আমার ইন্টারেষ্ট নেই!