আমার পুজোনামচা : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১১৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
যেহেতু লঘু-গুরুর প্রসঙ্গ হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে এসে থেবড়ে বসেই পড়ল, তখন বলেই ফেলি, অফিস- কাছারিতে একটা দিনও যে ঈদের জন্য বরাদ্দ নেই (ফ্লেক্সি আছে খালি) - এইটা সারারাত পুজোয় ঘুরে রোল-বিরিয়ানি-আইসক্রিম-চাউমিন-ফুচকা একসাথে হজম করার থেকেও সত্যি বেশ কষ্টকর। শুধু এটুকুই 'অভিযোগ' ভেবে যেসব চরমপন্থী হনুর আঁতে হওয়া ঘা'য়ে কয়েক চিমটে নুন পড়ে গেছে বলে রে-রে করতে আসবেন ভেবে আস্তিন গুটাচ্ছেন, তাদের বলি, বাংলাদেশে এই লঘু-গুরুর হিসেবটা এ বঙ্গদেশের মাপে এক্কেরে লুডোর গুটি - ছক্কা আর পুঁটের মাপজোখ : সেখানে পুজোর বদলে তাই ঈদসংখ্যা বেরোয়, তিনদিন ছুটি বরাদ্দ, সাথে টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং 'দ্য কাউন্টডাউন বিগিন্স' জাস্ট লাইক বঙ্গদেশের পুজো। কিন্তু তবুও ঈদ, দুর্গাপুজোর মতো 'সার্বজনীন' হয়ে উঠতে পারেনি ধর্মীয় বেড়াজালে অক্সিজেন লেভেল কমিয়ে।
ফলসাকিসিম : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১১৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ছেলেবেলার সে ফলসা গাছের মত এখনও মায়া আঁকড়ে জেগে থাকে কিছু বনেদীবাড়ি। মাথা উচুঁ করা নাজনীন, মোহময়ী ইতিহাসের পরতে পরতে তার মুহব্বত। যবনিকা পড়ে গিয়েও কোন এক ফাঁকে ধরা দেওয়া ক্ষীণ আয়ু। গাছ নেই, ফুল-পাতা শূন্য তবু শেকড়ের কোনো এক ভাঙা মূলটপের মত লেজুড় সে 'বড়বাড়ি'র ইতিহাস। যে জমিদার জমানায় কেউ বিলেত ফেরত কেউবা ডাক্তার-প্রফেসর, সে জমানা ক্রমে বেগানা হতে হতে ধুলো বালি, বালি ধুলো। জমিটুকু সম্বল করে বংশপরম্পরায় বনেদিয়ানা দেখাতে দেখাতে বিস্মৃত হয়েছে শিক্ষা-সাবেকিয়ানা। মেয়েরা হাঁড়ির তলানিটুকু খেতে খেতে বড় হয়েছে অভ্যেসে, গড়পাঠ শেষে তারপর ঢুকে গেছে বিয়ে প্রতিষ্ঠানে।
বে'গুণ' পোড়া : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১১০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আকাশ হল অনুভব মানে অনুর সৎ ভাই। মা মারা যাওয়ার পর বাবা মামণিকে নিয়ে এলেও ওর অত রাগ হয়নি যেমন চার দেওয়ালের চৌহদ্দিতে আকাশের আবির্ভাবে হয়েছিল। তার ওপর বাবার এক্সট্রা আদিখ্যেতা বরাদ্দ আছে ভাইয়ের জন্য, দেখলেই পিত্তির মৌচাকে ঢিল ছুঁড়ছে কেউ মনে হয়। তা সে বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ হঠাৎ আকাশের শরীর খারাপ-শ্বাসকষ্টের জন্যই হবে হয়ত, কখনও ইনহেলার কখনওবা গুচ্ছের ওষুধ: কিছুতেই ব্যাটাকে বাগে আনা যায় না। তবু গুমোট গুমোট মেঘমার্কা কাশির দমকটা পর্যন্ত অনুর কোমিসারেশন কোটায় একটা পুঁট ফেলতে পারেনি কুড়ি বছরে। খাওয়ার সময় আকাশের পাতে পড়া মাংসের পিসটায় আধা ইঞ্চি মশলা বেশি উঠলেও অনুর মাথায় গুগল সার্চ কিলবিলিয়ে ওঠে, "হাউ টু প্রুভ ইওরসেল্ফ অ্যাজ আ প্যাট্রোফিল"
আমার কালীপুজো : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৩৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এরপরে এল আমার টিউশনকাল। কালীপুজোর দিন সব ক্লাসই ছুটি থাকত। অতএব পরের দিন থেকে ভাই-ফোঁটা অব্দি ফিরতি পথে চলত আমাদের টো-টো সফর। তবে সমস্যা হল, বারাসত আজও যে কারণে বি(?)খ্যাত, উন্নয়নের মত যেখানে সেখানে দাঁড়ানো মাতাল আর কন্যাশ্রী হারে উড়ে আসা ইভটিজিং, এসবের কল্যাণে মায়ের টেনশন এবং সে চক্করে রাতে প্যান্ডেল ঘোরা প্ল্যান ছিল এক্কেরে নট অ্যালাউড।
গচ্ছিত মায়াদিন : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ঈদের কড়চা | ২৩ জুন ২০১৮ | ১৩৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....।
আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন -
নারী 'দি' বস : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
কিন্তু ঘটা করে এই একটা দিন কীসের উদযাপন? কেন উদযাপন? গত এক বছরে প্রায় প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সকালটা তেতো হয়েছে এক বা একাধিক ধর্ষণের খবরে। চার থেকে আশি - কেউ তো বাদ নেই 'ধর্ষিতা' পরিচয়ে শিরোনাম হতে। হিসেব বলছে নাকি এক দিল্লিতেই গড়ে দিনে পাঁচটা ধর্ষণের 'কেস' পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। তাহলে 'কিন্তু-তবু-যদি-লোকে কী বলবে'র গেরোয় হাঁসফাঁস করা বাকি 'কেস'গুলোর খতিয়ান কেমন, ভাবুন তো! ধর্ষণ- শারীরিক নিগ্রহ আর ভারতীয় উপমহাদেশের যা বিয়ের কনসেপ্ট অর্থাৎ সম্পূর্ণ অচেনা (হালে অবিশ্যি ফোনে দু'দন্ড বাক্য বিনিময়ের পর বাপ-মায়ের দ্বারা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক এর একখান গালভরা নাম দেওয়া গেছে : 'অ্যারেন্জ্ঞড কাম লাভ ম্যারেজ', এক্কেরে আচ্ছেদিন মার্কা ব্যাপারস্যাপার আর কী। রাজা বলেছেন দিন এসছে, উহাকে তোমরা, নালায়ক প্রজাগণ, সোচ্চারে বল 'আচ্ছে দিন' এবং ভাব, ভাবা প্র্যাকটিস কর যে এর থেকে আচ্ছেদিন তুমি জীবনেও দেখনি, দেখবে ঠিক love হবে, লাভ এই লাভ তো এটাও সেরকমই একখান ব্যাপার) একজনের গলায় সোনা-দানা-খাট-পালঙ্ক (ইহাদের পণ বলে না, ইহারা হল গিয়ে 'আপনার মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেবেন' এর কড়ি আঙুলে ফেলা ক্যারিকেচার)নিয়ে ঝুলে পড়ার পর শারীরিক-মানসিক ট্রমার রুটিনে এই একদিন আলতো শো-পিস পরানোর নামই কি উদযাপন?প্রথম মহিলা মহাকাশচারী, মহিলা রাষ্ট্রপতি, মহিলা পর্বতারোহী...এসব সাধারণ জ্ঞানের অসাধারণ মেয়েদের কথা তো সবার অল্পবিস্তর জানা অতএব অজানা কয়েকজন অতি সাধারণ মেয়ের কথাই না'হয় এখন বললাম।
শ্রমজীবী নারী দিবসের শুভেচ্ছা : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০২০ | ১৭২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আজ থেকে বছর পনেরো আগে,আনোয়ারা'দি অর্থাৎ আমার বু এক কাপড়ে স্বামী-ছেলেমেয়ের হাত ধরে বেলগাছিয়ার বস্তি থেকে বেরিয়ে আসে। শাশুড়ির অকথ্য অত্যাচার দিনের পর দিন সহ্য না করে, রোজ মার খাবার নিয়ম গায়ে না মেখে, জোর করে ভিক্ষা করতে বাধ্য হবার রুটিনকে পায়ে ঠেলে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্নে সমস্ত নাক কুঁচকানো-মুখ ঝামটাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর সাহস করেছিল যে মেয়েটি, সেই আনোয়ারা'দির জন্য রইল নারীদিবসের শুভেচ্ছা।
ঈদ মুবারক : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০২০ | ৩২৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সত্যি বলতে, তিরিশদিন এমন না খেয়ে থাকলে নাকি গরীবের পেটের জ্বালার খানিক বোঝা যায়- এই যুক্তিখানার বাড়বাড়ন্ত, হালে, বেশ মনোরঞ্জনকারী। গুছিয়ে পরের ভোরের সেহেরির উপকরণের তোড়জোড় আর বিকেল থেকেই হরেক কিসিমের ফল-বাহারি নাস্তা সাজানো উপোসী বাড়ির মহিলাদের, ফুরসৎ নেই আপিস থেকে খানিক আগে ফিরে নামাজ-কোরান পাঠের পর আরামসে মিনিট তিরিশেক, আপনার মতন, গা এলিয়ে নেওয়ার। মশাই, বলুন তো, কোন গরীব মানুষ এমন বিলাসিতায় না খেয়ে থাকে?!
আজলাত : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৩ নভেম্বর ২০২০ | ২৫৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
জায়গার নাম চক ইসলামপুর। বহরমপুর থেকে কিলোমিটার পঁচিশেক দূরে শহুরে ভাষায় এক হদ্দ মুদ্দের 'গণ্ডগ্রাম'। সেই গ্রাম, যা নবাব থেকে হালের আমল পর্যন্ত সকলেবরে অক্ষত 'মুর্শিদাবাদ সিল্ক' এর প্ৰথম প্রাণকেন্দ্র; খাদি এবং রেশম যেখানে হাত ধরাধরি করে বাঁচে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে যা কিছু রোশনাই, নহবত ছিল, ১৯২৯ এর বিশ্বজুড়ে মন্দার গ্রাসে সেসব ভয়াবহ ধাক্কা খায় । সেসময় গ্রামের ললিতমোহন সাহা, তৎকালীন বোম্বে প্রদেশের অল ইন্ডিয়া স্পিনার্স অ্যাসোশিয়েশন ও খাদি ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা-কর্তা এবং স্বয়ং গান্ধীর খাদি দ্রব্যাদির বাণিজ্যিকরণের দায়িত্বে থাকা শ্রী জেরাজিনিজির সাথে যোগাযোগ করে রেশমশিল্পকে খাদির সাথে বিবেচনা করবার জন্য বারবার বোঝাতে থাকেন। ভারত জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের সৌজন্যে গ্রামীণ শিল্পের কদর তখন তুঙ্গে। ললিতমোহন বাবু দূরদর্শী। তিনি আন্দাজ করেন, গ্রামের মানুষের নিজের হাতে তৈরি রেশম শিল্পও যে খাদির সমতুল্য "খাঁটি ভারতীয়"; এটা গান্ধী-জেরানিজিদের একবার বোঝাতে পারলেই মুখ থুবড়ানো সিল্ক-ইন্ডাস্ট্রি শ্মশানের আগেই কল্কে পাবে।
পান্তা হুজুগায় নমঃ : জারিফা জাহান
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ২৯ জুলাই ২০২১ | ৩০৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
ইউটিউবের বদান্যতায় যে বাঙালির এখন ঘরে ঘরে শেফ, বিভুঁইয়ের মাস্টারশেফের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীদের ড্রিবলিং করে টিকে থাকা শীর্ষ তিনের একমাত্র মহিলাটির জটিল-কুটিল খাবারের বদলে এই 'সাধারণ' রান্নাটি ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশনায় তাঁরা কিঞ্চিৎ পাজল্ড। এমনিতেই ক্লান্তিকর মানিমেকিং সর্বস্ব মধ্যবিত্ত মিডিওকার বাঙালি, আঁতেল প্রমাণান্তে, এট্টু গাঁয়ের ছোঁয়া পেলেই আহা উহু করতে করতে গায়ের ক্যামাফ্লোজখানা নালেঝোলে ভিজিয়ে ফেলেন; তাঁরা গালভরা নাম দেন 'ফোক', তাপ্পর ফোকি (রি নয়, সেটার সহমর্মী কোনভাবেই নন বলেই বাহুল্য) সেজে নববর্ষে পান্তা ইলিশ খান, মাঝেমাঝে মাটির দেওয়ালে সাজা রেঁস্তোরায় কচুভর্তা খেয়ে ভাবসমাধি যান। অতএব, এই পান্তাকে অ্যান্টিক্লাস স্ট্রাগলের মর্যাদা না বাঙালির নেকু স্মৃতিরোমন্থনের সোৎসাহ পৌষপার্বণ বলা হবে সে সিদ্ধান্তে আসতে তাঁরা গলদঘর্ম হচ্ছেন, বৈকি।