আলেপ্পি নাদিয়ালা। এক বিদেশি বন্ধু। যে জীবনে ভারতে আসেনি। ভারতবর্ষ বলতে ওর চোখে ভেসে ওঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিচ্ছবি। আর সত্যজিৎ রায়ের কিছু সিনেমা। তাজমহল আর এভারেস্ট... ব্যস। তার বাইরে এ দেশ সম্পর্কে সে কিছুই জানেনা। জানার কথাও নয়। আমরা কজনই বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক'টা খবর রাখি?আমাদের দেশ নিয়ে গর্ব করার জন্য অনেক কিছুই বলে চলেছিলাম। দুশো বছর পরাধীন থাকার পরেও আমাদের দেশ কত উন্নতি করেছে। দেশের অর্থনীতিতে গতি এসেছে। বাণিজ্যে রফতানি বেড়েছে। ঝকঝকে তকতকে হাইওয়ে তৈরি হয়েছে। বড়বড় এয়ারপোর্ট কিংবা হোটেল ইত্যাদি জন্ম নিচ্ছে। আমার দেশের উন্নতির বর্ণনা আলেপ্পি মন দিয়ে শুনছিল। ... ...
"তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন। সত্যম শিবম সুন্দরম। দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম। সেই মানুষই আসল মানুষ, যার জীবন পরের তরে।" উত্তমকুমার অভিনীত, শক্তি সামন্ত পরিচালিত সুপারহিট ছবি আনন্দ আশ্রমের গানের লাইন। যে সময়ে গানটি লেখা হয়েছিল, সেই সময়ে এরকম মানুষ খুঁজলে পাড়ায় বেপাড়ায় দু একজনের সন্ধান মিলতো। দিন বদলের সাথে সাথে অমন মানুষ একেবারেই দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেল। যারা নিজের জন্য নয়, অপরের জন্য বাঁচতে ভালোবাসতো। যাদের নিজের জন্য পার্থিব ভোগ্য বস্তুর চাহিদা থাকতো সবচেয়ে কম। দিন বদলের সাথে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মানুষের মন মহৎ থেকে সংকীর্ণ থেকে আরো সংকীর্ণ হয়েছে। আধুনিক জীবনযাপনে নিজেরটুকু ... ...
ভেঙ্কিদার স্কুল শিক্ষকের চাকরিটা অনেকের মত আপাতত সুতোয় ঝুলে। ইদানিং সে স্কুলে যায়না। বাড়িতেও থাকে না। অথচ চাকরি ফেরত পাওয়ার আন্দোলনেও নেই... সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে যায় কোথায় কে জানে! শুনেছি শাসক দলের শাঁসালো এক নেতা কাম মন্ত্রীর সাথে ভেঙ্কিদার নাকি এখন ওঠাবসা। তাই চাকরি নেই বলে ওর মধ্যে আর সব্বার মত হাহুতাশ নেই। আজ রোববার। বেলার দিকে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে দেখি ভেঙ্কিদা। চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজ ... ...
বহু চেষ্টা করেও আমি কখনও ভূতের দেখা পাইনি। শুনেছি, ঈশ্বর দর্শন যেমন সবার ভাগ্যে জোটেনা। ঠিক তেমনি ভূতও সবাইকে দেখা দেয়না। সরাসরি না দেখলেও ভূতের উপলব্ধি কিন্তু হয়েছে। অনেকের মুখেই শুনেছি, আমাদের অফিসে নাকি ভূত আছে। প্রতি রাতে আপনা থেকেই চেয়ারেরা ফ্লোর জুড়ে যাতায়াত করে। যেমন যারা একটু রাত করে অফিস থেকে বেরোয়, তারা চেয়ারগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিংবা যে যার ওয়ার্ক স্টেশনের কাছে রেখে চলে যায়। সকালে অফিস খুলে দেখা যায় সারা অফিসের প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশটি চেয়ার এক জায়গায় গোল করে রাখা। আগে সারারাত কাজ হত। সেই সময়ে সারারাত থাকাকালীন অনেকেই নাকি দেখেছে চাকাওয়ালা চেয়ার আপনা আপনিই মেঝেতে সরে যাচ্ছে। আমি ... ...
চাকরি চলে গেছে। যদিও হঠাৎ করে যায়নি। এক বছর আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল। অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। কান্নাকাটি করছেন। সরকারি চাকরি। তা হারানোর আক্ষেপ তো কম নয়। তাই অনেকেই গোপনে অথবা সোচ্চারে চোখের জল ফেলছেন। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন সে যোগ্য অযোগ্য বিচারে না গিয়েই বলছি, প্রতিদিন প্রাইভেট সেক্টরে হাজার হাজার কর্মীর চাকরি যায়। তাদের কাউকে কখনও পথে বসে অথবা সামাজিক মাধ্যমে কাঁদতে দেখেছেন? কাঁদা দূর অস্ত। কাউকে হাহুতাশ করতেও কখনও দেখবেন না। কারণ প্রাইভেট সেক্টর লড়াই করে বাঁচতে শেখায়। প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখতে হয়। তাই সেখানে চাকরি গেলেও পরদিন সকালে চাকরি খোঁজার চেষ্টায় নতুন উদ্যমে ... ...
আপনাকে আর ক'টা মাছ দিই? এরপরেই গৃহকর্তার হাঁক, এ্যাই রসগোল্লার বালতিটা এদিকে নিয়ে আয়... রসময়বাবুর পাত একেবারে ফাঁকা। রসময়বাবু সেই হাঁক শুনে বললেন, একদম নয়। আর পারব না। গৃহকর্তা এবার তাঁর পাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, দে দে পুরো বালতিটাই উপুড় করে দে। খুব পারবেন রসময়বাবু। ভুলে গেলেন? আপনার নাতির অন্নপ্রাশনের ভোজে আমায় উঠতে দেননি। গুনে গুনে চল্লিশখানা রাজভোগ খাইয়ে ছেড়ে ছিলেন। আমিও আজ আপনাকে ছাড়ছি না। সেই শোধ আজ তুলবই তুলব।এই ধরনের কথপোকথনের দিন আমাদের জীবন থেকে বহুকাল আগে হারিয়ে গেছে। ভোজসভার সেই আয়োজন আজ অতীত। সেই লম্বা টেবিলের ওপর পাতলা সাদা কাগজের ওপর কলাপাতা আর ভাঁড় পেতে খাওয়ানোর ... ...
আপনার নিজ জগতে কিছু মানুষকে পাবেন। যারা কিছু সংখ্যক মানুষকে অবহেলা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় পিএইচডি করেছে। হতে পারে সেই মানুষটি আপনার অত্যন্ত প্রিয়জন। ধরুন, আপনি খুব খেটেখুটে কোনো কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। বেশ কিছু মানুষ সেই কাজের জন্য আপনাকে প্রশংসাও করেছে। কিন্তু সেই তাচ্ছিল্যের পিএইচডি ডিগ্রিধারী লোকটি কোনো প্রশংসা তো করলই না। বরং এমন একটা ভাব করল, যেন আপনার কাজটি যেকোনো বাচ্চা ছেলে চুটকি মেরে করতে পারে। তাই কাজটা করে আপনি এমন কোনো তীরন্দাজ হননি। যেন আপনাকে ছোট দেখানোর জন্যই ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলার জন্ম ... ...
গত দশ বছরে গোটা পৃথিবীটাই আদ্যপান্ত বদলে গেছে। দ্রুততালে বদলে যাচ্ছে চারপাশটা। ক্রমশ বদলে যাচ্ছি আমরা। একটু খেয়াল করে দেখুন আমাদের চারপাশের মানুষগুলোও কেমন যেন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। মাঝে করোনা কাল দুনিয়ার খোল নলচে বদলাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এবার একটু মনে করে দেখুন, তার আগের দশ বছর এত দ্রুততালে বদলে ছিল কি? তেমনি তারও আগের দশ বছর? তার আগের...না। এরকম ভাবে বদলায়নি। বদলে যেত না। আজকের মত মা মেয়ে মিলে স্যুটকেসে ভরে গঙ্গায় লাশ ফেলতে বের হত না। কোনো ব্যবসায়ীর পরিবার শুদ্ধ বিষ খেয়ে, হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করত না। ভাগাড়ের মাংস অক্লেশে রেস্তোরাঁতে খাইয়ে দিত ... ...
ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। বহুল প্রচলিত একটি বাক্যবন্ধ। ফুর্তির সঙ্গে গড়ের মাঠের কি সম্পর্ক? আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কিনা! থাকলে কবে থেকে সেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বা এখনও তা টিকে আছে কিনা! এসব বিজাতীয় প্রশ্নের ধার কাছ দিয়ে এখন না যাওয়াই শ্রেয়। তবে এটুকু বলতেই পারি ফুর্তিবাজ মানুষদের ফুর্তি করতে গড়ের কেন, কোনো মাঠেরই প্রয়োজন পড়ে না। যেকোনও স্থানে, যেকোনও অবস্থায়, যেকোনও কালে তাঁরা ফুর্তি করতে একটুও কাঁপেন না। বরং তাঁদের ফুর্তির ঠ্যালায় আশপাশের মানুষজন কেঁপে উঠলেও উঠতে পারেন। সে ছাব্বিশে জানুয়ারি কিংবা চোদ্দই ফেব্রুয়ারি হোক, রাস্তার ধারে ঢেয়ো ঢাকনা স্টোভ ইত্যাদির সঙ্গে তারস্বরে দুটো ঢাউস বক্সে ঝাঁপড় ঝ্যাং গান ... ...
২০২২ সালের শেষের দিকে দক্ষিণী শহর ভেলোরে গিয়েছিলাম। সেখানে আলাপ হয়েছিল এক বাংলাদেশি যুবকের সাথে। ঘন্টা দুয়েকের আলাপচারিতায় বোঝার চেষ্টা করে ছিলাম, ওই দেশের রাজনীতি কিংবা আভ্যন্তরীণ সামাজিক পরিস্থিতির বিষয়গুলিকে। যুবকটির কথায় স্পষ্ট ছিল শেখ হাসিনা সরকারের বিপক্ষে অবস্থান। আজ বুঝলাম, দু বছর আগে শোনা কথাগুলো কতটা সত্যি ছিল। বিক্ষোভের চোরাস্রোত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের লাভার মত ... ...