এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জুবিন 

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৫৯ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মোর কোনো জাতি নাই। মোর কোনো ধর্ম নাই। মোর কোনো ভগবান নাই। মো, কা..ঞ্চ...ন..জ..ঙ্ঘা..

    আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা। জুবিন গর্গ। আসামের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত একটাই নাম... জুবিনদা! ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি মানুষের মৃত্যুতে তিনদিনে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষকে পথে নামতে কেউ কখনও দেখেনি। এত ভালোবাসা মানুষের বুকে ছিল। হারানোর হাহাকার কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ লাশের পিছু পিছু হাঁটে জুবিন দেখিয়ে দিয়েছেন। এত সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি বিশ্বে চার নম্বরে স্থান পেয়েছে। প্রথম স্থানাধিকারী মাইকেল জ্যাকসন। 

    মৃত্যুর কয়েকদিন আগের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল... যাতে অসমীয়া ভাষায় জুবিনকে বলতে শোনা যায়, "সোনু নিগম কুমার শানু আমার ভাল বন্ধু। ওরা প্রচুর গান গেয়েছে। খুব ভাল গেয়েছে। কিন্তু সোনু মারা গেলে মহারাষ্ট্র একদিনও বন্ধ হবে না। শানু মারা গেলে বেঙ্গল একদিনও বন্ধ হবে না। কিন্তু আমি মারা গেলে আসাম এক সপ্তাহ বন্ধ হয়ে যাবে।" অর্থাৎ তিনি নিজের জনপ্রিয়তার হিসেব রাখতেন। তার পরিমাপ খুব ভাল করে জানতেন। সেটাই ঘটল। ওঁর বলে যাওয়া কথা মত আসাম তিনদিন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ সব কাজ ফেলে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে পথে নেমে পড়েছিল। 

    প্রায় চল্লিশটি ভাষায় চল্লিশ হাজার গান গেয়ে গেছেন। অসমীয়া ভাষায় দুটি সুপারহিট ছবি পরিচালনা করেছিলেন। নিজে বেশ কয়েকটি অসমীয়া ভাষার ফিল্মে অভিনয় করে ছিলেন। অজস্র গানে সুর দিয়েছিলেন। এগুলোই কি ওঁর জনপ্রিয়তার কারণ ছিল? ওঁর মত অনেকেই হাজার হাজার গান গাওয়া গায়ক পৃথিবীতে, এদেশে ছিলেন বা আছেন। সিনেমায় অভিনয়, গানে সুরও অনেকেই দিয়েছেন। তাহলে শুধুমাত্র জুবিন কেন? কারণ নিজের সন্তান না থাকার জন্য জুবিনের মত আর কেউ পনেরোটি শিশুকে দত্তক নেননি। আসামে প্রায় চারশো জনজাতি গোষ্ঠী আছে। সেইসব জনজাতি গোষ্ঠীতে জুবিন ঘুরে বেড়াতেন। নিজের মত করে তাঁদের সাহায্য করতেন। নিজের আয়ের প্রায় পঞ্চাশ থেকে সত্তর শতাংশ বিলিয়ে দিতেন। আসামের বন্যা কিংবা অন্যান্য দুর্যোগে ওঁকে পথে পাওয়া যেত। ওঁর কোনো রাজনৈতিক সত্ত্বা না থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারি পদক্ষেপ সিএএ' র ঘোর বিরোধী ছিলেন। সরকারি সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে না গেলেই প্রতিবাদী হয়ে মুখ খুলতেন। নিজেকে সোশ্যাল লেফটিস্ট বলতে ভালোবাসতেন। 

    ছোটবেলায় ক্লাস সেভেন অবধি বাংলা মিডিয়ামে পড়ার পর অসমীয়া স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতিপ্রেমী। নদী ও পাহাড়ের মাঝে জীবন কাটাতে ভালবাসতেন। তাই কংক্রিটের জগৎ মুম্বইয়ের উজ্জ্বল কেরিয়ার এক কথায় ছেড়ে অসমের নদী আর পাহাড়ের কোলে ফিরে যেতে পেরেছিলেন। অত জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে মানুষ যখন তখন রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে খাবার খেতে দেখতে পেতো। সকলের থেকে আলাদা, এমনই ছিলেন জুবিন। সেই জন্যই বোধহয় লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় জিতে হয়ে যেতে পেরে ছিলেন কারোর ভাই। কারোর সন্তান... মোদের জুবিনদা।

    শেষের দিকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেরই গানের কথা বা সুর ধরতে পারতেন না, এতটাই মদ্যপ অবস্থায় থাকতেন। পরিচিতদের মধ্যে বলতে শোনা যেত, "চল্লিশ হাজার গান গেয়ে আমি ক্লান্ত। এই রোবটের জীবন আমি চাইনি। আমি মুক্ত মানুষ। প্রকৃতির মাঝে ফিরে যেতে চাই।" মৃত্যু ওঁকে হয়ত সেই পথেই নিয়ে গেল। ওঁর অসময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু এক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। শো অর্গানাইজার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওঁর ব্যক্তিগত ম্যানেজার গ্রেফতার হয়েছেন। জানিনা কোন রহস্য উন্মোচন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আমরা এক মাল্টি ট্যালেন্টেড গায়ক, সুরকার, গীতিকার, নায়ক পরিচালক... সর্বোপরি একজন সত্যিকারের সমাজসেবী মানুষকে হারালাম।

    _____________
    ©রজত দাস 
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন