এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • খবরের কাগজ

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৬৭ বার পঠিত
  • "পাঁচে নয় সাতে আছি।" এক সময়ে শহর জুড়ে বড় বড় হোর্ডিংয়ে এইরকম লেখা আমরা অনেকেই দেখেছি। বাংলার এক বিখ্যাত সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা কত, তার হিসেব জানানোর বিজ্ঞাপন ছিল ঐ ভাষায়(৭ লক্ষ পাঠক)। প্রায় দশ বছর হতে চলল ঐ জাতীয় বিজ্ঞাপন শহরে আর চোখে পড়েনা। কারণ সংবাদপত্রের পাঠক আর বাড়ছে না, ক্রমশ কমছে। আগে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে অন্যসব পণ্যের মতোই সংবাদপত্রের সার্কুলেশন বাড়তো। কিন্তু স্মার্ট ফোনের দৌরাত্মের যুগে সংবাদপত্রের সার্কুলেশন ক্রমহ্রাসমান। 

    একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বোধহয় শেষ পর্যায়ের দিন গুনছে। পরিচিত অনেক মাধ্যম আজ বিলুপ্তির পথে অথবা বিলুপ্ত হয়েই গেছে। যেমন ট্র্যাডিশনাল রেডিও। এখন কজন মানুষ কলকাতা ক কিংবা বিবিধ ভারতীর অনুষ্ঠান শোনেন? রেডিওর স্থান দখল করে এসেছিল এফএম রেডিও। যা রেডিও সেটের পরে মোবাইল ফোনে শুনতে অভ্যস্ত অনেকেই। ফোনের উন্নতির ফলে টর্চ বা ক্যালকুলেটরের মত অনেক পণ্যর চাহিদা তলানিতে। ঠিক তেমনই স্মার্ট ফোনের দৌলতে মানুষের পড়ার অভ্যাসও তলানিতে পৌঁছেছে। নতুন প্রজন্ম অর্থাৎ জেন ওয়াইয়ের সাথে খবরের কাগজের কোনো সম্পর্কই নেই। থাকলেও নগন্য। ট্রেনে বাসে খবরের কাগজ পড়ছেন এমন মানুষের সংখ্যা এখন দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। 

    এক সংবাদপত্র ব্যবসায়ীর কথায়, আপনারাই বোধহয় শেষ প্রজন্ম যাঁরা এখনও কাগজ পড়েন। তাঁরই হিসেব অনুযায়ী আগে একটি পরিবারে কাগজ নিলে কমপক্ষে সেইটি চারজন পড়তেন। এখন নাকি তা এক বা দুইয়ে নেমে এসেছে। এখন কে আগে পড়বে সেই নিয়ে কোনো পরিবারে আর দ্বৈরথ তৈরি হয়না। সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রপত্রিকার অবস্থাও তথৈবচ। তাহলে প্রশ্ন হল, কাগজ পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে মানুষ অন্য কিসে মজেছে? উত্তর - স্মার্ট ফোন। স্মার্ট ফোনে লুকিয়ে রয়েছে সামাজিক মাধ্যমের অমোঘ হাতছানি। আর আছে ভিডিও দেখার দুর্নিবার আকর্ষণ। ভিডিওর দুনিয়াই পড়ার মত নোবেল অভ্যাসকে দশ গোল দিয়ে হারিয়েছে। 

    তবুও সংবাদপত্র এখনও টিকে রয়েছে। স্মার্ট ফোন ও কম্পিউটারাইজড প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বইয়ের মত এই দুনিয়ায় টিকে আছে। কতদিন এই অসম লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারবে তা অবশ্যই অজানা। এখনও বড় বড় ব্যবসায়ী সংস্থার বিজ্ঞাপন কাগজের সিংহভাগ দখল করে। বেশকিছু বছর ধরে সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই বড় সংবাদপত্রের পুরো ফ্রন্ট পেজ কিংবা হাফ পেজই বিজ্ঞাপনের দখলে যায়। আমি মনে করি এটা ভাল লক্ষণ। যে মিডিয়ার কপালে যত বেশি বিজ্ঞাপন আসবে, সে প্রতিযোগিতার বাজারে তত বেশি টিকে থাকবার ইন্ধন পাবে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে কাগজ চালানোর বিপুল খরচ যোগায় এই বিজ্ঞাপন। নইলে পাঁচ টাকায় বিক্রি হওয়া সংবাদপত্র ব্যবসাকে এই দুর্মূল্যের বাজারে পটল তুলতে অনেক আগেই হত। যেকোনো মিডিয়া ব্যবসায় আয়ের প্রধান উৎস হল বিজ্ঞাপন। সে ইলেকট্রনিক হোক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া। সবারই টিকে থাকার রসদ চাই। 

    পরিশেষে একটি কথাই বলব, সংবাদপত্রের সংবাদ পরিবেশনের ধারেকাছে কিন্তু কোনো মিডিয়া নেই। এত বিশদে খবরের ভিতরে ঢুকে খবর পরিবেশন একমাত্র সংবাদপত্রেই সম্ভব। তারপর রয়েছে কতরকম বিভাগ। প্রত্যেক বয়েসের আগ্রহ বুঝে পাতাজুড়ে সাজানো হয় নানান বিভাগ। তাই আট থেকে আশি, সকলের জন্য সংবাদপত্র এখনও পর্যন্ত সেরা মিডিয়া। পড়ার প্রতি ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই দিনান্তে অন্তত একটিবার কাগজ উল্টে দেখুন। ভাল লাগবেই লাগবে।

    _____________
    ©রজত দাস 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন