নীরবতা কি নিরপেক্ষ? মৌলবাদ ও আমাদের নৈতিক দায়। অয়ন মুখোপাধ্যায় আমি অনেকদিন ধরেই একটা অস্বস্তি বয়ে বেড়াচ্ছি। এবং কথা বলতে গিয়ে বারবার নিজেকে সংযত করতে হচ্ছে। কখনো কখনো মস্তিষ্কের মধ্যে একটাই ভাবনা চলে শব্দ বেছে বলতে হবে, বাক্য নরম করে বলতে হবে—যেন একটু বেশি স্পষ্ট হলেই কেউ আঘাত পেয়ে যাবে। কিন্তু আজ মনে হয়, এই সংযমটাই আমাদের সময়ের সবচাইতে বড় সমস্যা। কারণ যে বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে নরম ভাষা আর সাবধানী উচ্চারণ আসলে সত্যকে ঢেকে রাখার কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা এখনও বলতে ভালোবাসি—“সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই।” কথাটা নৈতিকভাবে ঠিক ... ...
ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়া কেন অনিবার্য।অয়ন মুখোপাধ্যায়আমি বহুবার নিজেকেই এই প্রশ্ন করেছি—“সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই” এই বাক্যটা কি সত্যিই আমাদের দায় শেষ করে দেয়? নৈতিকভাবে কথাটি ঠিক। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বারবার মনে হয়েছে, এই বাক্যের আড়ালে আমরা অনেক সময় এমন এক নীরবতাকে লালন করি, যা সমস্যাকে চিহ্নিত করার বদলে ঢেকে দেয়। আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে সংগঠিত, আদর্শগতভাবে কঠোর এবং গণহত্যাকে পর্যন্ত ‘ধর্মীয় কর্তব্য’ বলে বৈধতা দেওয়া যে সন্ত্রাসবাদ, তার বড় অংশ যে ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যার উপর দাঁড়িয়ে ... ...
আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষকে চেনা যায়অয়ন মুখোপাধ্যায় গতকাল রাতটা শুধু বাংলাদেশে নয়—এই উপমহাদেশের বিবেকের উপর দিয়ে হেঁটে গেছে। আগুনে পোড়া একটি শরীর, ফাঁসিতে ঝোলানো এক শ্রমিক, আর উল্লাসে ভিডিও তোলা কিছু মানুষ—এই দৃশ্য কোনও “ঘটনা” নয়, এটা এক ভয়াবহ বার্তা। বার্তাটা খুব পরিষ্কার: মানুষকে আর মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে না, দেখা হচ্ছে পরিচয়ে, পদবিতে, সংখ্যায়।দিপু চন্দ্র দাস—একজন কাপড় কারখানার কর্মী। তার কোনও অপরাধ ছিল না, কোনও আদালত ছিল না, ছিল না কোনও মানবিক প্রশ্ন। ছিল শুধু হিংসা, আগুন আর উল্লাস। আর সেই উল্লাসের ভিড় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—মৌলবাদ যখন রাষ্ট্র, সমাজ আর রাজনীতির প্রশ্রয় পায়, তখন মানুষ পুড়ে যায়, ... ...
উচ্চারণের রাজনীতি: মঞ্চ থেকে মেন্টালিটি পর্যন্তঅয়ন মুখোপাধ্যায়১. ময়দান, সকালবেলাময়দানে লোক জমেছে—কেউ বলছে ভক্তি, কেউ বলছে শৃঙ্খলা,মাইকে ভেসে আসে অনেকগুলো সংস্কৃত শব্দ—যার মানে অধিকাংশেরই আমাদের অজানা।পালকের মতো হালকা গীতাহাত থেকে হাতে ঘোরে—চটি সাইজ,যেন মৃত্যুর পর শেষ কথা বলার জন্যআগেই প্রস্তুত।ভগবান নিশ্চয়ই শুনছেন—কিন্তু বুঝছেন কি,এই উচ্চারণ কার?২. সমবেত আত্মা একসঙ্গে গীতা পাঠ করলেআত্মোপলব্ধি হয়—এ কথা কে বলেছিলেন?আত্মা তো নিভৃতবাসী,সে লাইনে দাঁড়ায় না,পুলিশের ব্যারিকেড মানে না,স্লোগানেও সাড়া দেয় না।লক্ষ কণ্ঠে যখন একই শব্দএকই স্বরে উঠে আসে—তখন আত্মা নয়,শুধু প্রতিধ্বনি জন্মায়।আর প্রতিধ্বনির রাজনীতিখুব পুরোনো।৩. গ্রহযানে গীতা মঙ্গলগ্রহে যাচ্ছে গীতা—খবরটা পড়ে এই মঙ্গল বাড়ি মনটা খারাপ হয়ে গেল।মঙ্গলে যদি কেউ থাকে,সে কি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে?তার কি অর্জুনের সংশয়?নাকি ... ...
অনুগল্প: “পরিচয় বাসযোগ্য”অয়ন মুখোপাধ্যায় বৃদ্ধাশ্রমটার আসল নাম “জনকল্যাণ আবাস”, কিন্তু এখন সবাই ডাকে পরিচয় বাসযোগ্য আবাস বলে।কারণ এখানে ঠাঁই পেলে বাবা-মার পরিচয় ধরা থাকে ফলে ছেলে-মেয়েদের নাগরিকত্ব ও নিরাপদ ।সকাল থেকে লাইন। কেউ বাবার হাত ধরে টেনে আনছে আবার ,কেউ মাকে হুইলচেয়ারে ঠেলে। বৃদ্ধ বৃদ্ধরা হাঁপাচ্ছেন, আর সন্তানরা কাগজ, ফর্ম, অ্যাপয়েন্টমেন্ট এসএমএস দেখাতে ব্যস্ত—“মা, তাড়াতাড়ি সই করো। তোমার নথিতেই তো আমাদের ভবিষ্যৎ জোড়া আছে।”নীরেনবাবু, আজীবন স্কুলশিক্ষক, ধীরে ধীরে বললেন—“অদ্ভুত তো… সারাজীবন তোমাদের মানুষ করলাম এত বছর ধরে এর কোন গুরুত্ব ... ...
তোমার না থাকা দিনগুলোর গল্প অয়ন মুখোপাধ্যায় ১ তুমি থাকলে ঘরটা অন্যরকম হতো প্রতিদিন তোমার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করি,হাওয়ার ভেতর লুকিয়ে থেকেমনে হয়, আমাদের কোথাও কোনো ঘর আছেযেখানে আমরা থাকতেই পারতাম। তুমি এলে আলো বদলায়,জল বদলায়,মনের ভেতর নরম একটা নদী নামে।কিন্তু তুমি তো থাকো না—থাকে শুধু তোমার যাওয়ার শব্দ,আর আমার বুকের ভেতরএকটা ফাঁকা চৌকাঠ। আমি ভাবি, তোমায় যদি আনতে পারতাম,এই সাধারণ ... ...
ইডেনের পাঁচদিন : এক বাবা–মেয়ের শীতের সিরিজ অয়ন মুখোপাধ্যায় ১. দাওয়াতনামা কাল সকালের খবরের কাগজে প্রথম খবর ইডেনের মাঠে ভারতকে হারিয়ে দিল সাউথ আফ্রিকাকিন্তু আমার কাছে ওটা কোনো খবরই নয়।আমার খবর হলো—সামনের শীতকালে মেয়েকে নিয়ে যাব ইডেন গার্ডেন্সে। আমার কাছে ইডেন শুধু স্টেডিয়াম নয়—একটা দেশ, গোটা ভারতবর্ষ,তার রাজনীতি, তার সংস্কৃতি, আর ড়াইয়ের মানচিত্র। এই কথাটা বলতেইআমাদের বারান্দায় পাড়ার লোকেদের ... ...
রাসের আলো নিভলেই যে গল্পের শুরু অয়ন মুখোপাধ্যায়রাত একটা পেরিয়ে গেছে। রাসের মেলার ভিড় তখনও কমেনি। আমি, রানা আর অরিন্দম — তিনজন বহুদিন পরে একসাথে মেলার ঢাকের আওয়াজের ভেতর দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম তারপর অনেক রাত্রে বাড়ি ফেরার পথে রাসের ভিড় দেখে মনে হল, গ্রামটা আর আগের মতো নেই। আমাদের শৈশবের শ্রীপুর বলাগড়কে মনে পড়লে আজকের এই ভিড়কে অচেনা লাগে — যেন গ্রামের শরীরে শহরের ছায়া ঢুকে পড়েছে এবং সেই ছায়াই এখন আসল রূপ নিচ্ছে। জনপদের অন্তর্গঠন বদলে যাচ্ছে — পোশাক আশাক হাঁটার ধরণ, কথার গতি, সম্পর্কের ভঙ্গি, উৎসবের ভাষা সবই আলাদা। গোপনে, অদৃশ্য সুড়ঙ্গ দিয়ে শহর প্রবেশ করেছে এই গ্রামে। তবু ... ...
অধ্যায় এক : নিষিদ্ধ ছন্দের রাষ্ট্রনীতি রাষ্ট্র বলল —তুমি খুব বেশি উচ্চস্বরে ভাবো।আমরা ভয় পাই।তোমার কবিতার ভেতরে বোমা আছে,তোমার মাইক্রোফোনে বিপ্লব। আমি বললাম —ভয় কোরো না,আমি শুধু মানুষদের কান ফেরত দিচ্ছি। রাষ্ট্র ফাইল খুলল —পাবলিক সিকিউরিটি,আর্টিকল ১৩৭,"অতি সংবেদনশীল কণ্ঠ।" আমি তবু গাইলাম —একটা রুটির গান,একটা নদীর গান,একটা মৃত শ্রমিকের গান। রাষ্ট্র লিখল —এইসব শব্দে রাষ্ট্রবিরোধী গন্ধ আছে আমি হাসলাম —কারণ গন্ধও একধরনের বিপ্লব। অধ্যায় দুই : শব্দের নাগরিকত্ব রাষ্ট্র বলল —এই শব্দ আমাদের নয়।এই ভাষা বিদ্রোহী।তুমি কেন বাংলায় গান গাও? আমি বললাম —কারণ আমি বাংলায় জন্মেছি,আমার কান এখনো মাটির আওয়াজ চেনে। রাষ্ট্র কপাল কুঁচকাল —হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান,তুমি ... ...