১৯৪৮ সালে র্যালফ আলফার ও রবার্ট হারম্যান দেখালেন, যে, গ্যামোর তত্ত্ব যদি সত্যি হয়, তাহলে সেই মহাবিস্ফোরণের কিছু অনুরণন এখনো খুঁজে পাওয়া উচিত। শক্তি বা তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে এই অনুরণনটা হবে কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ, যার উষ্ণতাও তাঁরা হিসেব করলেন, মান বেরোলো ৫ কেলভিনের মতন। ৫ কেলভিন মানে ‘–২৬৮° সেলসিয়াস’, অর্থাৎ মহাকাশ খুবই ঠান্ডা জায়গা। কিন্তু মহাবিশ্ব বরাবর এমন ঠান্ডা ছিল না। বিগ ব্যাং তত্ত্ব বলে, অতীতে মহাবিশ্বের আয়তন যখন খুব ছোটো ছিল, তখনো এই অনুরণনটা কৃষ্ণবস্তু বিকিরণই ছিল, কিন্তু তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছিল অনেক কম, অর্থাৎ এক একটা ফোটনের শক্তি ছিল অনেক বেশি। যত দিন গেছে, এই বিকিরণ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। অর্থাৎ, এই বিকিরণ খুঁজে পাওয়া গেলে আর উষ্ণতা হিসেবের সঙ্গে মিলে গেলে তা ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্বের পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হবে। ... ...
১৯৩৩ সালে ফ্রিৎজ জুইকি নামে এক বিজ্ঞানী দেখালেন, মোট পরমাণুর হিসেব থেকে ছায়াপথের ভর বের করতে গেলে একটা গোলমাল হচ্ছে। ছায়াপথের স্পাইরাল বাহুতে যে সমস্ত নক্ষত্র আছে, তারা সকলেই ছায়াপথের কেন্দ্রের চারদিকে আস্তে আস্তে ঘুরছে। ছায়াপথের দৃশ্যমান ভরের প্রায় পুরোটাই এই কেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত (কেন্দ্রের গল্পটা সংক্ষেপে বলেছি শেষের দিকে। সেখানে যে ঠিক কী আছে, তা দেখানোর জন্যে এই বছর, ২০২০ সালে, রাইনহার্ট গেঞ্জেল এবং আন্দ্রেয়া গেজ নামে দুই বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন)। কিন্তু তাহলে ওই নক্ষত্রদের ঘোরার বেগ যত হওয়া উচিত, পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। জুইকি বললেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা মহাবিশ্বের সব ভরই দৃশ্যমান নয়। অনেকটা জিনিস আছে যা আমরা চোখে (অর্থাৎ যন্ত্রপাতি দিয়ে) দেখতে পাই না, শুধু তার মহাকর্ষীয় টান অনুভব করতে পারি। এর নাম দিলেন ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণবস্তু। ... ...
হিগস বোসন তো তৈরি হল, কিন্তু যন্ত্রে তার চিহ্ন তো ধরতে হবে? যে যন্ত্র এই সব চিহ্ন ধরে, তাদের বলে ডিটেক্টর। সার্নের সুড়ঙ্গে চার জায়গায় চারটে বিরাট ডিটেক্টর বসানো আছে, আর এক একটা ডিটেক্টরকে ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের এক একটা গোষ্ঠী বা কোলাবোরেশন গড়ে উঠেছে। এই চারটে গোষ্ঠীর মধ্যে দুটো কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্যে তৈরি করা হয়েছে, আর বাকি দুটো বড়ো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মতন, তাদের লক্ষ্য অনেক বিস্তৃত, সংঘর্ষের পরে যা যা তৈরি হতে পারে সবকিছুই ধরার জন্যে তারা প্রস্তুত। এই বড়ো গোষ্ঠীদুটোর একটার সংক্ষিপ্ত নাম অ্যাটলাস, অন্যটার সি এম এস। ভারতের অনেক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান সি এম এস গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত, তার মধ্যে কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সও আছে। ... ...
অফিসটাইমের শেয়ালদা স্টেশনের কথা ভাবুন। স্টেশন লোকে থিকথিক করছে, প্রচুর লোক এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে। এই বিপুল জনসমষ্টি যেন হিগস ক্ষেত্র। এই স্টেশনের মধ্যে দিয়ে একদিক থেকে আরেক দিকে যেতে আমার আপনার মিনিট-দুই লাগবে। টিভি সিরিয়ালের মোটামুটি মুখচেনা কোনো অভিনেতার, পেরোতে আরেকটু বেশি লাগবে, কারণ আমাদের ধরে তো কেউ অটোগ্রাফ নেবে না, কিন্তু তাঁকে ধরে দু-চারজন নিশ্চয়ই নেবে। আর শাহরুখ খান বা সচিন তেন্ডুলকর (বারো বছর আগের লেখা। এখন হলে হয়তো কোহলির নাম করতাম) স্টেশন পেরোবার চেষ্টা করলে ঘণ্টাখানেক তো লাগবেই। অর্থাৎ চলার বেগ এক হলেও, এই জনসমষ্টির সঙ্গে যাঁর আদানপ্রদান যত বেশি, তাঁর একই দূরত্ব যেতে সেইমত বেশি সময় লাগবে। সুতরাং বলা যেতেই পারে, তাঁর জড়তা তত বেশি। হিগস ক্ষেত্রের মধ্যেও এই ব্যাপারটাই ঘটে। যে কণার সঙ্গে হিগস ক্ষেত্রের ভাব বেশি, তার জড়তা তত বেশি। আর জড়তাই তো ভরের মাপ। ... ...
ধরুন, আপনারা জনা দশেক মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেছেন। ওয়েটার একটা গোল টেবিলে বসালো—সবার থেকে সবাই সমান দূরত্বে—একেবারে নিখুঁত প্রতিসাম্য। তারপর দশটা গেলাস এনে টেবিলে রেখে দিয়ে গেল, দু-জনের ঠিক মাঝখানে একটা করে গেলাস। আবারও প্রতিসম। এখন আপনি ডান হাতের গেলাস তুলবেন, না বাঁ হাতের – সেটা আপনার মর্জি। কেউ না কেউ তো প্রথম গেলাসটা তুলবেনই, যাঁর সবচেয়ে বেশি তেষ্টা পেয়েছে, তিনিই প্রথম তুলবেন। যেই তিনি কোনো একটা গেলাস তুললেন – ধরা যাক ডান হাতের, প্রতিসাম্য ভেঙে গেল। ওয়েটার কিন্তু জোর করে প্রতিসাম্য ভাঙেনি, আপনাদেরই একজন ভাঙলেন। তাঁর হাতে দুটো সমান সম্ভাবনা ছিল – ডান বা বাঁ দিকের গেলাস তোলার, তিনি যে কোনো একটা বেছেছেন। কিন্তু যেই তিনি ডানদিকের গেলাস তুললেন, আপনাদের সবাইকেই ডানদিকের গেলাসই তুলতে হবে, নইলে কেউ একজন গেলাস না পেয়ে রেগে যাবেন আবার কেউ দুটো গেলাস নিয়ে বোকাবোকা মুখ করে বসে থাকবেন। ... ...
সত্যেন্দ্রনাথ বসু মশাইকে দিয়েও এই গল্পটা শুরু করলে খারাপ হয় না। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি এমন এক দেশে জন্মেছিলেন, যে, সেখানকার লোকে তাঁর কাজ সম্পর্কে এক বিন্দু না জেনেও তাঁকে আইকন বানিয়ে দেবার আগে দু-বার ভাবে না। ইউরোপে জন্মালে বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আরো বেশি স্বীকৃতি পেতেন, হয়তো নোবেল পুরস্কারও পেতেন, কিন্তু হিরো-বুভুক্ষুর দল তাঁকে নিয়ে এমন উৎকট মাতামাতি করত না (কতটা উৎকট তার পরিচয় পরে দেব)। সত্যেন্দ্রনাথ ঠিক কী করেছিলেন? ... ...
জাহার সমালোচকরা তার কাজের পেছনে ‘বিমূর্ততা, বিনির্মাণবাদ, প্যারোমেত্রিকতা’ এসব অস্বচ্ছ লেবেল লাগিয়ে দিয়েছেন। হ্যাঁ, সব সময় সোজা লাইন থেকে ঘুরে গেছেন তিনি। জাহা গ্লাস, স্টিল ও কংক্রিট নিয়ে অনেক কিছু কল্পণা করেছেন যা পদার্থবিদ্যার সূত্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ২০১২ এর অলিম্পিকের জন্য নির্মিত লন্ডন অ্যাকোয়াটিক সেন্টার, আর চায়নার গুয়াংঝু অপেরা হাউজের একটি ভাসমান বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এর পর্যবেক্ষকদের একটি স্থায়ী চলন ও গতির অভিজ্ঞতা উপহার দিতে সক্ষম হয়। জাহা হাদিদ তার স্টাইল নিয়ে নিজেই বলেনঃ “৯০ ডিগ্রি পেতে হবে এমন চিন্তা থাকে না আমাদের মাথায়। বরং, আমরা শুরুতে একটি কর্ণকে নিয়ে ভাবি। কারণ কর্ণ বা ডায়াগনাল একটি বিস্ফোরণের ধারণা নিয়ে আসে যা কিনা স্পেস বা শূন্যকে কাটাকাটি করে একটা রিফর্ম বা সংস্কারের রূপ দেবে।“ ... ...
২০২০ তে, অসংখ্য ফোটোশ্যুটের ফাঁকে, গাড়ি গাড়ি মানুষের মৃত্যু জাস্ট পাত্তা না দিয়ে মোদি যখন 'মন কি বাত(কর্ম)' করছিলেন, তার ফাঁকেই কোনো এক সময় টুক করে দাবি পেশ করে এসেছিলেন — রামমন্দির এমনভাবে বানানো হোক, যেন ঠিক রামনবমীর দিন রামলালার মূর্তির মাথায় সূর্যের আলো এসে পড়ে। সেই কাজ এদ্দিনে CSIR সেরে এনেছে। তাদের ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গর্বভরে স্ট্যাটাস দিয়েছে, কীভাবে CSIR-এর বিজ্ঞানীরা হাতেনাতে দেখিয়েছেন, ২০২৪ সালের রামনবমীতে মূর্তির মাথায় সূর্যালোক পড়বে। ... ...
আমি নিশ্চিত, তুমি এমন দু’জনকে চেনো, যাদের একজন ক্রিকেটের সমস্ত শুকনো সংখ্যাতত্ত্ব মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আর একজনের সে সব শুনলেই ক্লান্তি আসে। কিন্তু কিছু কিছু প্রশ্ন এতটাই গভীর, এতই বিশাল তার পরিধি – যে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভিড় করে আসে আরও হাজারটা প্রশ্ন (কম করেও) – যারা নিজেরাও প্রায় ততটাই গভীর। সেইসব প্রশ্ন-পিতামহ তখন জন্ম দেয় এক-একটি গবেষণার বিষয়ের। ... ...
যত গভীরে ঢুকব দেখব তত মজার ব্যাপার – যেহেতু শুরু করেছিলাম যদুবাবুর চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা নিয়ে লেখাটি উল্লেখ করে, তাই আজকের পর্ব শেষ করি যদু বাবুর লেখা দিয়েই। ওই পর্ব একজায়গায় উনি লিখেছেন, “উৎক্ষেপণের ঠিক ৭৩ সেকেন্ডের মাথায় চ্যালেঞ্জার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বিস্ফোরণে – সাতজন নভচরের সকলেই প্রাণ হারান মুহূর্তেই”। এই যে “মুহুর্তে প্রাণ হারানো ব্যাপারটা”, এটা চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা নিয়ে অনেকে লেখাতেই দেখা যায় – আদপে এটা একটা মিথ। এমনকি যেটাকে ‘বিষ্ফোরণ’ বলে জেনারেলাইজ করা হয় সেটা ‘ক্রু কম্পার্টমেন্টের’ জন্য প্রযোজ্য নয় – স্পেস শাটলটা ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছিল, বিস্ফোরণে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায় নি। মহাসমুদ্রে আছড়ে পড়ার মুহুর্তেও ক্রু কম্পার্টমেন্টটি ছিল অক্ষত, এবং তার ভিতরে ক্রু এবং প্যাসেঞ্জারের অনেকেই বেঁচে ছিলেন তখনো! এই “মুহুর্তে প্রাণ হারানো” আর “মহাসমুদ্রের বুকে আছড়ে পড়ার পর মৃত্যু” এই দুই পৃথক তথ্য কি রুট কজ অন্যালিসিস-কে প্রভাবিত করতে পারে? পারে, প্রবল ভাবেই পারে। ... ...
রেমডেসিভির বিষয়ক দু-একটি কথা। দেখা যাচ্ছে যে ধরণের প্রমাণের ভিত্তিতে রেমডেসিভিরকে আমেরিকার এফ ডি এ ছাড়পত্র দিয়েছেন, সেই সমস্ত প্রমাণ খুব জোরালো নয়। এতৎসত্ত্বেও ভারতে রেমডেসিভির নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা তৈরী হয়েছে কি? ... ...
“কেন?” প্রশ্ন করা মানেই হল এর পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে তা জানতে চাওয়া। এই মহাবিশ্বের চলন গমনের পেছনে কোনও উদ্দেশ্য আছে ভাবার অন্তর্নিহিত অর্থ এই যে এই সৃষ্টি কারওর পরিকল্পনাপ্রসূত, অর্থাৎ এই সৃষ্টি পরিকল্পনা করার কেউ আছে। এই ভাবনা বিজ্ঞানের প্রমাণ তথা গণ্ডীর বাইরে। কোনও সৃষ্টিকর্তা (বা কর্ত্রী) আছেন কি নেই, এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে না। বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে “কীভাবে” প্রশ্নের উত্তর। শোওয়া থেকে হঠাৎ উঠলে যে অনেক সময় মাথা ঘোরে, তা কীভাবে হয়, তার পেছনে কী কী শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আছে, তার বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। কিন্তু সেই বিবরণের পুরোটাই “হাউ”-এর উত্তর, “হোয়াই”-এর নয়। ... ...
বিজ্ঞান গবেষণার অন্তর্লীন সুরটাই হল ক্রমাগত আত্মসংশোধন। বিজ্ঞান নিজের ভুল নিজেই শুধরে চলে। তাতে তার মহত্ব খর্ব হয় না, বরং আরও বাড়ে। আমরা যারা এই প্রসেসটার বাইরে তারা মধ্যে মধ্যে বিরক্ত হই। এ কি রে বাবা, আজ বলে ডিম খেও না, কাল বলে খাও। আজ বলে মানুষ থেকে মানুষে করোনা ছড়ায় না, কাল বলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখো।এরা বৈজ্ঞানিক না পাগল! আসলে এই ক্রমসংশোধনের নামই বিজ্ঞান। যদি পরিবর্তিত, সংশোধিত না হত, তবে সে আর স্বচ্ছতোয়া স্রোতস্বিণী থাকত না, সংস্কারের বদ্ধ জলায় পরিণত হত। ... ...
বিজ্ঞান গবেষণার আলোচনায় যে কয়েকটা শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাদের মধ্যে একটা হল এই হাইপোথিসিস। বেশীরভাগ গবেষণাই শুরু হয় এই হাইপোথেসিস নামক আমড়াতলার মোড়ের থেকে। তবে শুধু বিজ্ঞান গবেষণাই বা বলি কেন, আমাদের জীবনের প্রতিটা পদেই মিশে রয়েছে এই হাইপোথিসিস। ব্যপারটা কী রকম একটু বিশদে বলি। ধরুন, গতকাল রাত্রে আপনি আপনার সোনামনা বা সোনামণির সাথে মেসেজ চালাচালি করছিলেন। উনি আপনাকে ভালোবেসে লিখলেন “আমার সোন্টুমনা বিড়ালছানাটা ডিনারে কি খেয়েছে?” আপনারও মনে হল এর একটা সমান ভালোবাসাভরা উত্তর দেওয়া দরকার। আপনি লিখলেন, “আমি ভাত খেয়েছি। আমার গুল্লুগাল্লু হিপোর ছানা কি খেয়েছে?” তারপর এক চরম নৈশব্দ্য। সারা রাতে আর কোনও মেসেজ এল না। এমন কি সকালের গুড মন্নিং মেসেজও নয়। এইবার আপনি ভাবলেন যে আপনার গুল্লুসোনা হয়তো আপনার ওই হিপোর ছানা বলাটা খুব একটা ভালোভাবে নেন নি। এই যে আপনি ভাবলেন বা অনুমান করলেন, এটা হল আপনার হাইপোথিসিস। এখানে দুটো জিনিষ লক্ষ্য করার আছে। ... ...
বিজ্ঞানকে পছন্দ করি বা না করি, একে ছেড়ে থাকা আমাদের কারওর পক্ষেই সম্ভব নয়। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে রাতের ঘুম, বারেবারেই আমাদের বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞানের শরণাপন্ন বলতে আমি মাইক্রোওয়েভ টেকনোলজি বা স্মার্টফোন টেকনোলজির কথা বলছি না। আমি বলছি রোজকার জীবনের নানা সিদ্ধান্তের কথা, যার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের নানা অন্ধিসন্ধি। কী রকম? ধরা যাক, আপনি সকালে জ্যাম-পাঁউরুটির বদলে ওটমিল খান। কেন? না, ছোটকাকুর ডাক্তার বন্ধু বলেছেন ময়দার জিনিষ না খেতে। কিন্তু তিনি এটা জানলেন কী করে যে ময়দা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর? কী করে আবার, ডাক্তার মানুষ, তাই জানেন। উঁহু, উত্তরটা হল না। তিনি জানেন, কেন না, কেউ কোথাও এটা নিয়ে গবেষণা করে উত্তরটা খুঁজে বার করেছেন। ডাক্তারকাকু সম্ভবত কোনও জার্নালে পড়ে এটা জেনেছেন। ... ...
সম্প্রতি এই বছরের পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা হয়েছে। কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বশ্রুত গণিতজ্ঞ রজার পেনরজ, অ্যান্ড্রিয়া গেজ এবং রেইনহার্ড গঞ্জাল এই বছরের নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।....... নোবেল প্রাইজ তিনি পাননি, কিন্তু এই বছরের পদার্থ বিদ্যার নোবেলের সাথে জড়িয়ে গেছে আদ্যপান্ত এক বাঙালি অধ্যাপকের নাম। অমল কুমার রায় চৌধুরি বা ছাত্রদের AKR । কিন্তু কেনও? কি করেছিলেন তিনি? ... ...
লৌহ স্তম্ভ কেন ক্ষইছে না তা খুঁজতে গেলে কি কি জিনিস টার্গেট করবে গবেষকরা? প্রথম ধারণা করা হবে যে আবহাওয়ার একটা ব্যাপারটা আছে। মানে যেখানে এই স্তম্ভ খাড়া ছিল আগে এবং এখন দিল্লিতে, সেখানে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কি স্তম্ভের জন্য ভালো ছিল? অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশী নেই – শুকনো বাতাস! যেই কারণে দীঘার হোটেলের বারান্দার গ্রীল কলকাতার হোটেলের গ্রীলের থেকে অনেক বেশী তাড়াতাড়ি ক্ষয়। দ্বিতীয়ত, সেই প্রায় ষোলশো বছর আগে যারা বানিয়েছিল ওই স্তম্ভ তারা কি ধাতুর সাথে অন্য কিছু স্পেশাল মিশিয়েছিল? তৃতীয়ত, ধাতুর সাথে বানাবার সময় কিছু না মেশালেও পরে কি স্তম্ভকে সুরক্ষা দেবার জন্য তাতে কিছু্র প্রলেপ বুলিয়েছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি। ... ...
এই প্রজন্মে কল্পজগতের নির্ভরতার সুযোগে যে নকল ভিডিও বা নকল তথ্য ছড়িয়ে বাস্তব জগতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয় তার পোশাকি নাম ডিপ ফেক লার্নিং। ডিপ ফেক লার্নিং কি করে কাজ করে এবং এর প্রতিকার নিয়ে আমার দুই পয়সা। ... ...
ফেলিক্স হপ্পে-সেলার ( Felix Hoppe-Seyler ), যাঁকে আধুনিক বায়োকেমিস্ট্রির জনক বলা যায়, ক’বছর পরেই ১৮৬৪ সালে হিমোগ্লোবিন নামটি দিলেন। দেখালেন যে হিমোগ্লোবিন আর অক্সিজেন মিলে তৈরি করে অক্সিহিমোগ্লোবিন। কিছুদিন আগেই ১৮৬০ সালে আবিষ্কার হয়েছে স্পেকট্রোস্কোপ। সেই যন্ত্র দিয়ে রক্তের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিশ্লেষণ করে ফেলিক্স দেখালেন যে লাল রং এর আলোর ক্ষেত্রে অক্সিহিমোগ্লোবিন, ডিঅক্সিহিমোগ্লোবিনের মানে যে হিমোগ্লোবিনে অক্সিজেন নেই তার তুলনায়, আলো শোষণ করে অনেক কম। অথচ ইনফ্রারেড আলোর ক্ষেত্রে কতটা আলো শোষণ করবে তা রক্তে কতটা অক্সিজেন আছে বা নেই তার উপর ততটা নির্ভর করে না। ... ...