প্রশ্ন উপনিষদ্ (অথর্ববেদ)
(১)
ভরদ্বাজের ছেলে সুকেশা, শিবির বাছা শৈব সত্যকাম,
সূর্যের নাতি গর্গগোত্রীয় সৌর্যায়নি নাম,
অশ্বলপুত্র কৌসল্য, ভৃগু বংশীয় বৈদর্ভি ভার্গব
ও কত্যের ব্যাটা কবন্ধী কাত্যায়ন গণিতবিদ অসম্ভব
দধীচি পুত্র পিপ্পলাদ আশ্রমে একসাথে পৌঁছান
জিজ্ঞাসিলেন পরব্রহ্ম কিংস্বরূপ, কি বা তাঁর প্রত্যক্ষ প্রমাণ?
হাত তুলিয়া বলিলেন পিপ্পলাদ: রোসো, রোসো, শিষ্যগণ
আগে এক বৎসর করো এখানে অধ্যয়ন।
বিপরীত ক্রমে, যাকে বলে হিস্টেরন-প্রটেরন
বৎসরান্তে ছ'জনে ছ'ছ'টি প্রশ্ন করিল প্রস্তাবন।
জগতে এ সকল প্রাণী উৎপন্ন হবার কি-ই বা কারণ
কতজন দেবতা করিয়াছেন মানব শরীর বরণ
কোথা হইতে এলো এ প্রাণ, তার বসৎ বাটী শরীর হলো কেমোনে
এ দেহে কে হইলো লীন ঘুমের ফাঁকে, স্বপ্নে, জাগরণে
কোন-লোকে যায় যে-মানুষ তপস্যারত যাবজ্জীবন
জানেন কি সেই ষোলোকলা পুরুষ কেমনতরো অবয়ব আরোহণ?
(২)
পিপ্পলাদ বলে: যখন তোমার খিদেয় পায়, তখন তিনি বস্তু
যখন তোমায় মানুষ পায়, তখন তিনি বিষয়-বস্তু
তার বিষয়েই জানতে চাইছো ছ'জনায়।
পরোব্রহ্ম প্রয়োজন অনুযায়ী আবির্ভূতায়
নিজো-সময়, জগতো-সময়, জাগ্রতো-সময়
আর, আরো আছে যা যা কিছু অপচয়
স্থূলো হইতে সূক্ষতরো, মূর্ত অমূর্ত ধানের নাড়া
খাদ্য কিম্বা খাদক, উর্দ্ধে অথবা নিম্নে বাড়ন্ত চাড়া।
চাকার নাভিতে গোলোকে আঁটা কাঠির মতো ঘুরন্ত স্থির
ষোড়শ-কলা পুরুষ আপাত অধীর
সতোতো নিথর বুড়ো পীর
বলিও সুকেশা যখন জিজ্ঞাসিবে হিরণ্যগর্ভ
কোসোল দেশীয় রাজপুত্তুর সন্দর্ভ
নাভিতে তার কলা-যাদু পদোপাৎ পরিবর্তনীয় হৃদয় স্তম্ভ ।
(৩)
উপাসনা-হীন মানুষ কোন দিকে যায়?
জানিবে নির্দ্বিধায়
সে লক্ষ্যহীন দৌড়ায়।
পর
অপর
ওমকার …
ত্রিমাত্রা-বিহীন শ্রেষ্ঠ প্রতীক ।
অ-উ-ম
সাপের খোসা
ফেলে আসা …
পাপমুক্ত সঠিক ।
জাগরিত বিশ্ব, ঘুমন্ত তৈজস, ধী সুষুপ্তি, তুরীয় লোকে
যেতে পারে সে,
যেতে পারে না,
তুরীয় পেরিয়ে তৃতীয়-নেত্র ত্রয়োম্বকে।
জেনো সত্যকাম
তপস্যা যাতায়াত নিষ্কাম
ধেয়ান মধু-আহরণ মধু-কোষ মৌচাকে।
(৪)
যখন মানুষ না শোনে, না দেখে, না ছোঁয়, না বলে কথা
না চলে, না গ্রহণ করে, আনন্দ ও ত্যাগ না করে অযথা
লোকে বলে 'তিনি ঘুমাইতাছেন, জাগরিত না, শয়ন করে'
জেগে থাকে প্রাণোবৃত্তি প্রাণোবায়ু দেশান্তরে মনের দ্বারে
যাহা কিছু সত্য ও যাহা কিছু ভ্রম, অর্থাৎ
যাহা কিছু বলা হইল, বা হইল না বরবাদ
মনে মনে করে ঠাহর
ধাতু দর্পণ পড়শি-কুটুম অস্থাবর
স্বপ্ন নয়, আত্ম স্বরূপ সুখ, অক্ষর-পুরুষ, প্রাণাধিক
পাখির নীড়ে ফেরার মতই ঘটছে প্রাত্যহিক
সূর্যপৌত্র সৌর্যায়নি জেনো —
তিনি তুরীয় হতে তুরীয় জোনাক আলো
তমোহীন মানস-চক্ষু, জগৎ-বস্তু, সর্প-মণি জন্মালো
এ জমিনে উপাধি রহিৎ ক্ষেতের পর ক্ষেত ফুরালো।
(৫)
হে অশ্বল তনয় কৌসল্য, ব্রহ্ম বিদ্
প্রশ্ন তোমার বুনিয়াদি, বাড়ির দেয়াল সিঁধ …
পরমেশ্বর হইতে প্রাণ জন্মায় যেমন মানুষ থেকে ছায়া
পরমেশ্বর ও প্রাণ — নিকটবর্তী আলোর মায়া
অতঃপর, 'এখানে যাও' 'ওখানে যাও' উপযুক্ত
অপর প্রাণগুলি আলাদা আলাদা পুঁতির ন্যায় নিযুক্ত
বড়ো দীর্ঘতম বৃক্ষ পিতা, ফুল-পাতা-ফল-শাখায় দীর্ঘকায়
শরীরে জলের মতো আগমন করেন — প্রতিফলন প্রার্থনায়।
(৬)
হে ভৃগু বংশীয় বৈদর্ভি ভার্গব
প্রথমে ধুলো পরিবার, ঠান্ডা জরোদ্গব …
একে একে, বায়ু, অগ্নি, পৃথিবী, জল
আকাশ মেঘলা জ্যোৎস্না টলোমল …
বাক্, মন, কর্ণ, চক্ষু, স্পর্শ স্পর্ধাকার
ইন্দ্রিয় শ্রেষ্ঠ্যতা দৈহিক ভোমোরা সহকার।
বললে সবায় 'মোহপ্রাপ্ত হইয়ো না যেনো'
শরীর বেশি মনমাতানো
দেহের অধিক উঠিলেন তিনি
বাকিরাও ছুঁহিতে চায় অমৃত সম্মোহিনী
কোটরে সুস্থির ফিরিলেন যখন তিনি
মক্ষিরাণী পিছু বাকিরাও আলাপীনি।
এমন দেহ-ধারক প্রজা
সহজ নয় খোঁজা
দাঁড়িয়ে আছে রথ, দাঁড়িয়ে রথের চাকা
চলছে, ঘুরছে, নানান গড়ন, ছায়া মরীচিকা।
(৭)
হে কবন্ধী কাত্যায়ন প্রসিদ্ধ গণিত শাস্ত্র বিৎ
প্রশ্ন করিয়াছ তুমি অতি আচম্বিৎ।
প্রজাপতি হইতে প্রজা, তদা হইতে শ্রুতি
তপস্যা, ব্রহ্মচর্য, স্থূলো বা সূক্ষ্ণ বিচ্যুতি
দুই, জুড়ি, দম্পতি, যুগ্ম, সহজাত, জুড়ুয়া, যমজ নিখুঁত
চন্দ্র/সূর্য্য, উত্তর/দক্ষিণ যুগল-মিথুন অংশ-ভূত।
সংবৎসর ষড়-ঋতু মাসিক অহোরাত্র দিবাভাগ কলরব
অন্ন, শুক্র, রতিক্রিয়া, রস ও তেজস, অবারিত-প্রাণ মহোৎসব।
যারা সন্তান কামনা করেন
তারা সূর্যের দক্ষিণ পথ ধরেন
প্রাণী সৃষ্টির এই তো সাধারণ কারণ নিয়ম
আর উত্তর পথে যান যারা
আত্মা অন্বেষণ করেন
ইহা হইতে অসম্ভব পুনরাবর্তন ক্রম।
আসি-যাই-আসি জন্মাই আমি-ই আবার
আমি-ই আমার পুনরাবর্তন — পুনঃ অবতার ॥
~~~
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।