এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এই ফাটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো বেঁচে নেই: অতি ডানপন্থীদের উল্লাস! (পর্ব ৭)

    জোনাকি পোকা ৭১ লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | | | |
    বাংলাদেশ এখন ধর্মের লেবাসে আচ্ছন্ন। যে সেক্যুলার রাষ্ট্রের স্বপ্ন দু চোখে মেখে মুক্তিযোদ্ধারা এদেশকে স্বাধীন করেছিল, সেই স্বপ্নের গুড়ে বালি! বিগত ৫৪ বছরে যা ঘটেনি, তাই ঘটেছে এই ২৪'র জুলাই আন্দোলন'র পরে। স্বাধীনতাবিরোধী অতি ডানপন্থীরা সর্বগ্রাসী বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা তরুণ প্রজন্মের মননে বিশ্বাসের ভাইরাস ঢুকিয়ে দিতে এখন অধিকতর তৎপর। চলেন মূল ঘটনা নিয়ে কথা বলি।
     
    ডাকসু নির্বাচন
     
    গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পটপরিবর্তনের পর এটিই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাচন। যদিও এই নির্বাচনের সাথে জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি কোনো যোগসূত্র হঠাৎ ঠাউর করা যায় না, তবে এই কথাও মনে রাখা জরুরি যে, যুগে যুগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস মূলত এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেই রচিত হয়েছে। ৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১'র মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিপ্রস্তর এই ঢাবি'তেই স্থাপিত হয়েছিল। এমনকি হাল আমলে ২৪'র জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক  পটপরিবর্তনের সূচনাও কিন্তু এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই। 
     
    তো এই ডাকসু নির্বাচনে অতি ডানপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির'র ভূমিধ্বস বিজয় হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এটা এক ঐতিহাসিক কান্ড। আমাদের বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মূলধারার রাজনৈতিক দলেরই অন্তত ১টি করে ছাত্র সংগঠন রয়েছে। এই ছাত্র সংগঠন গুলো মূল রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে কাজ করে এবং মূল দলগুলো এই ছাত্র উইং কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। 
     
    এখানে শিবির হলো জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র উইং। শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ছাত্র উইং। এছাড়া আছে ছাত্রদল, যারা বিএনপি'র ছাত্র উইং। এবং সর্বশেষ আছে বাম ধারার ছাত্র উইং ছাত্র ইউনিয়ন। তো ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ বাদে আর সকল ছাত্র সংগঠনই অংশ নিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ছাত্রলীগ কার্যত নিষিদ্ধ সংগঠনের তকমা পেয়ে তাদের সকল রকম গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। 
     
    ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেল থেকেই ২৩ টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে। মোট ২৮ টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। বাকী ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় লাভ করেছে। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন, যার মাঝে ৭৮% ভোটার ভোট দিয়েছে। সবচেয়ে বিষ্ময়কর ব্যাপার হলো, শিবিরের প্যানেলের প্রত্যেক প্রার্থী বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে এই জয় নিশ্চিত করেছে। এখন প্রশ্ন হলো কীভাবে এই ঘটনা ঘটলো? তা নিয়ে আমরা এখন হালকা আলোচনা করবো। 
     
    শিবির দেখতে কেমন? 
     
    ছেলেবেলা থেকে ১টা কথা শুনেই বড় হয়েছি, শিবির হচ্ছে রগকাটা পার্টি! যদিও নিজ চোখে কখনো দেখি নাই। তবে পত্র- পত্রিকায় কখনো সখনো খবর দেখেছি। এছাড়া শিবিরের রগকাটা না দেখলেও ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি ব্লগার-হত্যার ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছি। মূলত ৯০'র দশকে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের পরপর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে শিবির'কে ব্যান করা হয়েছিল। যে কারণে ২৪'র পটপরিবর্তনের আগে শিবির মূলত গুপ্ত সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে। এই গুপ্ত সংগঠনের প্রধান কাজ কী ছিল? 
     
    গুপ্ত সংগঠনের কর্মীদের প্রধান কাজ ছিল, গরিব-হত-দরিদ্রদের সাহায্য করা, বিভিন্ন রকম ধর্মীয় আলোচনার আয়োজন করা, ইসলামের প্রচার, রমজান মাসে ফ্রী ইফতারির আয়োজন,  নামাজ আদায়ে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মাঝে থেকে নিজেদের গোপন রাখা। শিবির মূলত বিভিন্ন আলোচনা সভা, বিতর্ক, কোরান পাঠের আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মের লেবাসে নিজেদের তৎপরতা অব্যহত রেখেছিল। 
     
    ডাকসু নির্বাচনে সাদিক কায়েম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে এস এম ফরহাদ। এমনিতে এদের দেখে মনে হবে একেবারে সাধারণ ছেলেপেলে। অথচ এই দুইজনই আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় পরিচয় গোপন রেখে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছে। তাদের নিজেদের ভাষ্যমতে, আওয়ামী আমলে ছাত্রলীগের মাঝে তারা গুপ্ত অবস্থায় হেলমেট বাহিনী হয়ে তৎপরতা চালিয়েছে।  তখন সবাই তাদেরকে ছাত্রলীগের সমর্থক বলে জানতো, মানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাই জানতো। হয়তো তারা যে গুপ্ত সংগঠনের কাজ করতো, সেই সংগঠনের কর্মী ছাড়া আর কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতো  না, তারা শিবিরের কর্মী! 
     
    তার মানে আমরা এই সরল সমীকরণে পৌঁছাতে পারি, শিবির আদতে আর ৫টা শিক্ষার্থী'র মতনই দেখতে ; তবে তাদের গুপ্ত থাকার এবং সাংগঠনিক তৎপরতার ক্ষমতা অন্য সকলের থেকে ভিন্ন। তারা সামাজিক, ধর্মীয়, স্বেচ্ছাসেবী কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে নিজেদের মহৎ উদ্দেশ্য'কে চরিতার্থ করার মিশনে অটল অবস্থান ধারণ করে থাকে। 
     
    কেন শিবির জিতলো? 
     
    প্রথমত শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ মাঠে নাই। সেই ৯০'র দশকে শিবির'কে যে অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই একই অভিযোগে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ'কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অপর দিকে ছাত্রদল গত ১ বছরে তাদের নিজেদের সঠিকভাবে পরিচিতি দানে ব্যর্থ হয়েছে। 
     
    আওয়ামী রিজিমের সময় ছাত্রলীগ ছাত্রহলগুলোতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তারই কম্পাউন্ড ইফেক্ট হচ্ছে আজকের দিন। ছাত্রলীগের কর্তৃত্ববাদী আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নাখোশ ছিল। কেননা ছাত্রলীগ সমর্থক না হলে, হোস্টেলে সিট পাওয়া দুষ্কর ছিল। নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১ম এবং ২য় বর্ষের ছাত্রদের জন্য গণরুম/গেস্টরুম ইত্যাদি নামে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছিল। যে কারণে রিজিম পরিবর্তনের পর শিবিরের স্বেচ্ছাসেবী আচরণে ছাত্রসমাজ তাদের উপর ভরসা করতে আস্বস্ত হয়েছে। 
     
    এদিকে ছাত্রদলের কর্মীরা ক্যাম্পাসে নিজেদের পরিচয় তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে আওয়ামী রিজিমের সময় ছাত্রলীগের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে ছাত্রদলের কর্মীরা সেই সময় সেরকম ভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালায় নাই। অন্যদিকে ২৪'র জুলাই আন্দোলনের পর ছাত্রদল মূলত সেই ছাত্রলীগের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির আদলেই নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল কোনো আসনেই জয় অর্জন করতে পারেনি। ছাত্রদল ভেবেছিল, ছাত্রলীগের পরে সবচেয়ে বড় সংগঠন তাদেরই। তবে এদিক দিয়ে তারা ভুল চিন্তা করেছে। তারা ছাত্র শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির কৌশলকে হেয় জ্ঞান করেছে। যার খেসারত এখন তারা দিচ্ছে। ছাত্রদল ভুলে গিয়েছে, এইবারই প্রথম তারা ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। 
     
    কেননা এর আগে সবসময়ই ছাত্রদলেরই একটা উইং হিসেবে শিবির কাজ করতো। কারণ নিষিদ্ধ দল থাকায়, পরিচয় গোপন করে অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করাই সহজ ছিল। এবং ছাত্রদল এই শিবিরের পূর্ণশক্তিকে তখন ব্যবহার করতো। কিন্তু এইবার তো তারা বিরুদ্ধ দল। ছাত্রদলের আরো ১টি ভুল স্ট্রাটেজি ছিল, তারা ছাত্রলীগের বয়ানে শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছিল। শিবির'কে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের দালাল ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করার সময় ছাত্রদল ভুলে গিয়েছিল, শিবির একসময় তাদেরও অংশ ছিল। 
     
    বামপন্থীদের কেন হার হলো? 
     
    আদর্শের কথা যদি বলি, বামদের আদর্শিক অবস্থান এক ভিন্ন রঙের পতাকা। যেখানে সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধেই তাদের বিপ্লবাত্মক অবস্থান। তাদের ইস্তেহারও ছিল অভিনব। নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। এই ডাকসু'তে জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু'ই কেবল কিছুটা ফাইট দিতে পেরেছে। যদিও হেরেছে। অথচ ২৪'র পরে এই মেঘমল্লারই শিবিরের রাজনীতিকে প্রথম ম্যান্ডেট দিতে শুরু করে। 
     
    যদিও বামপন্থী'রা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভেবেছিল, যেহেতু ছাত্রলীগ নাই, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য কোনো শক্তি নাই, তাই বামপন্থী'রা অন্তত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভোটগুলো পাবে। কিন্তু এখানে তাদের হিসাবে ভুল হয়েছে। তারা ভুলে গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থী'রা বামপন্থীদের নাস্তিক মনে করে। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাস্তিক ট্যাগিং এক মারাত্মক অস্ত্র। এছাড়া বামপন্থীদের উদারনৈতিক চিন্তাধারাও এখানে ধোপে টিকলো না। কেন টিকলো না? 
     
    কারণ যতই বলা হোক বাঙালি ধর্মভীরু জাতি,  আমি বলবো আদতে বাঙালি ধর্মান্ধ জাতি। ইতিহাস সাক্ষী, ধর্মকে কাজে লাগিয়ে বাঙালিকে বহুবার বোকা বানানো হয়েছে। আর এই বোকা বানানোর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগ। যাক, আমরা সেদিকে আর বেশি আগাবো না। বামপন্থীদের হেরে যাওয়ার প্রধান কারণ এদেশে সকল কিছুই ধর্মীয় মেরুকরণের মধ্য দিয়ে হয়। এবং বামদের কাছে খরচ করার মতন টাকাপয়সা নাই, যা শিবিরের আছে। আর এদেশের নির্বাচনে কড়ি খরচ না করলে ধোপে টেকা যায় না।
     
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন প্রায় ৬০% মাদ্রাসা থেকে আসছে। এই সুযোগটিও আওয়ামী রিজিমের সময়ই মাদ্রাসা'র ছাত্রদের জন্য করে দেয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার নতুন নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসা থেকে আসা ছাত্ররা সাধারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের থেকে অধিক সুযোগ পায়। কেননা ভর্তির সময় মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট থেকে ৪০% এবং ভর্তি পরীক্ষা থেকে ৬০% নম্বরের সম্মিলিত ফলাফলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এখানে মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের থেকে রেজাল্টের ৪০% নম্বরে বরাবর এগিয়ে থাকে। যার ফলে ঢাবি এখন বৃহৎ মাদ্রাসায় রূপ নিয়েছে। এছাড়া আছেন নারী শিক্ষার্থীরা।  আচরণগত ভাবেই নারীরাই ধর্মীয় আচরণকে অধিকমাত্রায় ধারণ করে থাকে। আর এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শিবির তাদের ধর্মের লেবাসে নারীভোট আদায়ে সক্ষম হয়েছে। 
     
    ভোটে কারচুপির অভিযোগ 
     
    বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এইসব নির্বাচন সম্পর্কেও যখন কারচুপির অভিযোগ উঠে তখন বুঝতে হবে অবশ্যই কোথাও ১টা কিন্তু আছে। সংবাদমাধ্যম মারফত জানা গেল জাল ভোটের অভিযোগ আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগও আছে। কেননা ঢাবি'তে বর্তমান যে ভিসি এবং প্রক্টর দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তারা সকলেই জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট কর্মকর্তা। 
     
    কিছু কিছু ব্যালট পেপারে আগে থেকেই শিবির প্যানেলের প্রার্থীদের ঘর নাকি পূরণ করা ছিল। এছাড়া ভোটের সময় কোনো প্রার্থী ভোটকক্ষে অবস্থানের নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও শিবিরকর্মীরা ভোটকক্ষে অবস্থান করছিল বলে এরকম অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায়। 
     
    ২৪'র জুলাইতে বৈষম্যেবিরোধী আন্দোলন সংগঠনের সাথে যারা জড়িত ছিল তারাও এই ভোটে তেমন কিছুই করতে পারেনি। সেই প্যানেলের সবাই ফেল করেছে। সেই প্যানেল থেকে আসা বাগছাস'র মুখপাত্র আমাদের সকলের পরিচিত মুখ উমামা ফাতেমা এই ভোট'কে কারচুপির ভোট বলে দাবি করেছে। 
     
    সবচেয়ে বড় কথা যে পরিবর্তনের কথা বলে ২৪'র আন্দোলন মহিমান্বিত হয়েছিল, সেই পরিবর্তনের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নের রূপ নিয়েছে। কেননা আওয়ামী রিজিমের সময় যে ধরণের কর্তৃত্ববাদী আচরণের মধ্য দিয়ে ভিন্ন মতাদর্শ'কে প্রতিহত করা হতো, সেই একই ফর্মূলা এখন অতি ডানপন্থীরা আত্মসাৎ করেছে। কীভাবে করেছে? অতি ডানপন্থী মানে জামাত-শিবিরের বহু সমর্থক এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় জায়গায় দায়িত্ব পালন করছে। রিজিম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেরকম ভাবেই প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরাই ডানপন্থী সমর্থক হয়ে পদে আসীন আছে। 
     
    তার মানে হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে একই ফর্মূলা প্রয়োগ করে অতি-ডানপন্থী সংগঠনগুলোই ক্ষমতায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। 
     
    মদ-গাঁজা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বয়ান
     
    আসন্ন দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কীরকম বিধিনিষেধ? মদ-গাঁজা খাওয়া নিষেধ। মানে তিনি তাঁর বয়ানে বলেছেন, পূজায় বিভিন্ন মেলাকে কেন্দ্র করে মদ-গাঁজার আসর বসে। সেই রকম কোনো আসর এবার বসানো নিষেধ।
     
    এই যে উনারা মোরাল পুলিশিং করছে, এটা কি ১টি স্বাধীন দেশের সরকারের আচরণ? নৈতিক কিংবা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে মাদক'কে আপনি ক্ষতিকর বলতে পারেন। কেবল ক্ষতিকর এইটুকুই আপনি বলতে পারেন। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক সেই ক্ষতিকর কাজটি করবে কিনা তা সেই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেবে। আর চোরাই মাদকের বিরুদ্ধে আপনি অবস্থান নিতে পারেন। অথচ আপনি ঢালাও ভাবে হিন্দুদের পূজাতে মদ-গাঁজা খাওয়া হয়, যা নিষিদ্ধ। এরকম কথা যখন গুরুতর ভাবে বলবেন, তখন তো আপনি চরমপন্থীদের এক অর্থে ম্যান্ডেট দিয়ে দিলেন।
     
    অর্থাৎ সেই উপদেষ্টা মহোদয় মব-সৃষ্টিকারী উগ্রবাদীদের হাতে নিজ উদ্যোগে ১টি অজুহাত সৃষ্টি করে দিলেন। যে অজুহাতে তৌহিদি জনতা মন্ডপভাঙার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারবে। অথচ ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা তো আপনারা ভাবলেনই না, তথাপি একটা পুরো কমিউনিটি'কে তাদের সাংস্কৃতিক আচার পালনে একরকমের বিধিনিষেধ আরোপ করলেন। 
     
    এজন্যই বলছি দিকে দিকে এখন অতি ডানপন্থীদের উল্লাস। 
     
    জামাত-শিবির কি খারাপ? 
     
    আদর্শের দিক থেকে জামায়েত ইসলামি এবং ইসলামি ছাত্রশিবির শুধু ১টি কমিউনিটির প্রতিই দায়বদ্ধ।  কেননা তাদের নামফলকেই তারা নিজেদের পরিচয় জাহির করেছে। এছাড়া তাদের আদর্শের প্রধান দিক হলো, তারা সারাবিশ্বে এক ইসলামের কর্তৃত্ব স্থাপনে কাজ করতে তৎপর। 
     
    অথচ আমাদের পৃথিবী তো বৈচিত্র্যে ভরপুর। এবং বৈচিত্র্য আছে বলেই তো পৃথিবী এত সুন্দর। কিন্তু এই অতি ডানপন্থীদের প্রথম লক্ষ্য হলো শরিয়তের আইন বা আল্লাহ'র আইন প্রতিষ্ঠা করা। যদিও ইদানিং এই গোষ্ঠীর বয়ান শুনলে প্রথম দফায় আপনার কাছে উদারপন্থী বলে ভ্রম হতে আপনি বাধ্য। কেননা তারা সব সময় নিপীড়িতের পক্ষে কথা বলে, তবে সেই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কেবল তাদের কমিউনিটিরই অংশ। যা আসলে বাস্তব। যেমন ফিলিস্তিন এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। এবং তাদের কথা অনুসারে সারা জাহানে কেবল মুসুল্লি'রাই নাকি নিপীড়নের শিকার! 
     
    এদিক থেকে আবার কিন্তু মুসুল্লিদের জন্য দান-খয়রাতে তারা প্রচন্ড উৎসাহী। স্বেচ্ছাসেবী হিসাবেও প্রচুর কাজ করে। তবে এই সকল কিছুই কেবল নিজেদের কমিউনিটি'র মধ্যে ধর্মীয় লেবাসে। 
     
    কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে শুধু ধর্মের রঙে তো আপনি ১টি পৃথিবী সাজাতে পারবেন না। নাকি? আপনাকে ধারণ করতে হবে বৈচিত্র্য। আপনাকে হতে হবে উদারনৈতিক।  তাই না? 
     
     
    ১২/০৯/২৫ 
     
     
    [আবার কথা হবে আগামী পর্বে। ধন্যবাদ।]
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • asim nondon | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১০734050
  • ডাকসু নিয়ে লিখলেন এখন জাকসু, রাকসু চাকসু এগুলো নিয়েও তো লেখা উচিত... 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:d1d4:11e6:666e:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:৪০734062
  • 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন প্রায় ৬০% মাদ্রাসা থেকে আসছে' - এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ  তথ্য 
  • asim nondon | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:২৪734135
  • https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/gz4fuyob5n
     
    শুরু হয়ে গেছে মূর্তিভাঙার উৎসব.. কুষ্টিয়াতে ঘটেছে.. ১টি অস্থায়ী দূর্গামন্দিরে.. 
     
    আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তো পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে তার বয়ান বলেই রেখেঋেন! 
  • asim nondon | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৩৯734206
  •  
     
    ঘোর সন্দেহজনক!! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন