বস্তার-দুঃশাসনীয় (অষ্টম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৫৩৪ বার পঠিত
যে সময়কার কথা, তখন না ছিলো মাইন, না ছিলো রাষ্ট্র, না ছিলো এ-কে ৪৭। এইসবের অনেক অনেক আগে, কুয়াশাঢাকা কোন গণোনোত্তর অতীতে, থাকত সাত ভাই। সাত ভাই বড় হতে থাকল সেই গাঁয়ের বনে ঢাকা শান্ত ছায়ায়। বড় ছয় ভাই ছিলো দামাল দুরন্ত অরণ্যসন্তান। ছোটোটি ধির-স্থির, শান্ত-শিষ্ট, জ্ঞানগম্ভীর। তার গভীর কাজলচোখে ছায়া পড়ে অরণ্যের, আকাশের ও মননের আয়নায় ফুটে ওঠে প্রজ্ঞাঋদ্ধ তারারাজি। আর তার রক্তে রক্তে বইতো গানের তরঙ্গলহরী বুঝি। এক সাথে বারো রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারত সে। বনের গাছপালা, পশুপাখি, পোকামাকড়েরাও বুঝি শান্ত হয়ে শুনতো সেই বাজনা, ভেসে যেতো সুরের প্রবাহে। বাকি ছয়ভাই খেত-খামারের কাজ করতে লাগল দিনভর, বয়ঃক্রমে ঘর বাঁধলো, বিয়ে করল। পড়ে রইলো লিঙ্গো। অথচ তার গান-বাজনায় এতই মুগ্ধ ছিলো তার দাদাবৌদিরা, যে তাকে ঘরের কাজ, বনের ফল-কাঠ-বীজ-শিকার জোগাড়, খেতি-বাড়ির কাজ, এমনকি রান্না-বান্নার কাজ করার জন্য বকুনি দিতে মন সইতো না কারুরই। সে এ’সবের ধার ধারতো না, শুধুই গাইতো আর বাজাতো। ক্রমে ক্রমে তিক্ত হয়ে উঠলো তার ছয় দাদার গৃহী মন।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (নবম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩২৯ বার পঠিত
এই সব পড়ে নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে যুবকবৃন্দ হাজির হল পাশের গ্রামের গাইতার কাছে। তার আশীর্বাদ নিয়ে হাজির হল সেই পাশের গ্রামের ঘোটুলে – এইবার চলল সারারাত দেদার গানের পালা। সেই গ্রামের ঘোটুলের লেয়া, মানে যুবতীরা-রা গানের মাধ্যমে হেঁয়ালী কৌতুকের প্রশ্নশেলে বিঁধতে থাকলো লেয়োর, মানে পাশের গ্রামের ঘোটুলের যুবকদের, আর সেই লেয়োরেরা গানে গানেই জবাব দিতে লাগল, উত্তর প্রত্যুত্তরে জমে উঠলে রাতের মৌতাত, রঙ্গকৌতুকের ফোয়ারা। এই গানের লড়াইয়ের নাম ‘দ্রার’। নাচে গানে সকাল হল। এ’বার বেরোনোর পালা। নাচিয়ে গাইয়ের দল আবার চলল গাইতার বাড়ির উঠোনে – এইবারের নাচের নাম ‘দেউর তেররুহানা’। নর্তকেরা একে অপরের কাঁধে চড়ে বানিয়ে তুললো মানব-মীনার – তারিফ ও আশীর্বাদ কুড়োলো গ্রামবাসীর, গাইতার। এইবার সাদরে খাওয়ানো হবে নাচিয়ে-গাইয়েদের, তারপর আবার সেই গ্রামের গাইতা-পত্নীর থেকে ‘শেষা’ বিদাই গ্রহণের পালা।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (দশম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১৩১৭ বার পঠিত
গোণ্ডি ভাষায় বিয়ে মানে মারমীং। বস্তারের গোঁড় জনজাতির মধ্যে নানান ধরণে বিয়ে প্রচলিত। বিভিন্ন দ্রাবিড়-গোষ্ঠির মত এইখানেই মামা-ভাগ্নীর বিয়ে বহুলপ্রচলিত। মানা হয়, মামার ঔরসে প্রথম সন্তান ধারণের অধিকার ভাগ্নীর। অবশ্যই, বিবাহোত্তর। পিসতুতো ভাই বোনেদের বিয়েও এইখানে সামাজিক স্বীকৃতি ও সমাদর পেয়েছে। এই এণ্ডোগ্যামি-কে ‘সমাজে দুধ ফেরানো’ ধরা হয়। অবশ্য সমস্ত বিয়েই যে এইরকম হয় না নয়। আপন আপন জীবনসঙ্গী চয়ন করে নেওয়ার সম্পুর্ণ সামাজিক অধিকার রয়েছে বস্তারের যুবক-যুবতীদের। বিভিন্ন ধরণের বিয়ে হলেও, প্রথাগত ভাবে মূল রূপরেখা একই রকমের। প্রথমে বরপক্ষ কন্যা পক্ষের বাড়ি যায় তত্ত্ব নিয়ে (কোনো কোনো প্রথায় এর উল্টোটাও হয়)। তত্ত্বে থাকে ফল, গুড়, মহুয়া, সালফি ইত্যাদি। সন্ধ্যে বেলা দুই পরিবারের মানুষেরা আর গ্রামের জ্যেষ্ঠরা বসে, খানা-পিনা চলে দেদার, সূচিত হয় বিবাহবন্ধনের প্রথম ধাপ। এর পর আরো দুইতিনবার এইভাবে তত্ত্ব নিয়ে যাওয়ার পর দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়। তারপর বিয়ে। বস্তারের বিভিন্ন ধরণের বিয়ের মধ্যে প্রধান ধরণগুলো নিয়ে একটু জেনেশিখে নেওয়া যাক। অবক্ষয়ের মুখে এই জানাশেখাগুলোই তো সম্বল।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (দ্বিতীয় পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৪ এপ্রিল ২০১৬ | ৩৫৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
গোটা বস্তার সম্ভাগের যা আয়তন, তার ৫১% জমি তুলে দেওয়া হয়েছে মাইনিং, পাওয়ার-প্ল্যাণ্ট সহ বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য। এর মধ্যে ভিলাই স্টীল প্ল্যাণ্টের খাঁই মারাত্মক। ঐখানে কাজ করা এক বন্ধু জানিয়েছিলো যে প্ল্যাণ্টের যন্ত্রপাতির অবস্থা তথৈবচ। অথচ, ভারতের গৌরব এই বি-এস-পি, নবরত্নের এক রত্ন সে, তাকে তো উৎপাদন করে চলতেই হবে। তাই, আউটপুট বাড়াতে, ইনপুট বাড়াতেই হবে। এ’দিকে ছত্তিসগড়ের রাজনন্দগাঁও জেলাস্থ দল্লী-রাজারার মাইন শেষ হওয়ার মুখে। অতএব, বস্তার সম্ভাগের কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলা জুড়ে রাওঘাটে আকরিক লোহার নতুন মাইন বানাও নতুন, দান্তেওয়াড়া জেলার খ্যাতনামা বৈলাডিলার চলতি মাইনের প্রোডাকশান ক্যাপাসিটি ২৯ মিলিয়ন টন থেকে ২০২০র মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন কর, রাজনন্দগাঁওর মহামায়া অঞ্চলে ও বস্তার-সংলগ্ন বালোদ জেলার দুলকিতে নতুন মাইন বানাও, প্রভৃতি উদ্যোগ। শুধুই কি ভিলাই স্টীল প্ল্যাণ্ট? আয়রণ ওর মাইনের নাম করে নারায়ণপূরের অবুজমাড়ে, কাঁকেরের চারগাঁ নামের দুইটি গ্রামে এসে গিয়েছে নিক্কো-জয়সওয়াল কোম্পানী। দান্তেওয়াড়ার বাচেলি ও কিরণ্ডৌলে তৈরী হচ্ছে আয়রণ ওর বেনেফ্যাকশান প্ল্যাণ্ট। ইতিমধ্যে বস্তারেই তৈরী হচ্ছে তিনটি স্টীল প্ল্যাণ্ট – ডিলমিলি, নগরনাড় ও লোহাণ্ডিগরে। প্রথমটি আবার ‘আল্ট্রা মেগা’। কাঁকেরের আমাবেড়া অঞ্চলে তৈরী হচ্ছে বক্সাইট মাইন।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (তৃতীয় পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১২ এপ্রিল ২০১৬ | ১৫১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সংবিধানে যে সকল এলাকা পঞ্চম তফসিলভুক্ত – মানে যে সমস্ত জায়গার জনসংখ্যার গরিষ্ঠাংশ বাসিন্দা আদিবাসী, সেই সকল এলাকায় পঞ্চায়েতি রাজ জারি করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে প্রণীত পঞ্চায়েৎ একস্টেনশান টু শ্যেড্যুল্ড এরিয়াস (পেসা) অ্যাক্ট মাধ্যমে। উক্ত কেন্দ্রীয় আইন, ২০০৬ সালের দ্য শ্যেড্যুল্ড ট্রাইবস অ্যাণ্ড আদার ট্রেডিশিনাল ফরেস্ট ডোয়েলার্স রেকগনিশান অব ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট (এফ-আর-এ) এবং রাজ্য ছত্তিসগড়ে প্রযোজ্য ছত্তিসগড় পঞ্চায়েতি রাজ অধিনিয়ম ১৯৯৩ অনুসারে কোনো আরণ্যক গ্রামের মানুষের ব্যাবহারযোগ্য ব্যক্তিগত জমি মানে ভিটেমাটি, খেতি-আবাদী এবং গ্রামের নিস্তারী, মানে সেখানকার দেবদেবীদের থান, উৎসবের জায়গা, শ্মশান, গোচারণভূমি – সমস্ত কিছু যদি ‘বিকাশ’-এর ধ্বজিত উদ্দেশে হাপিস করতে হয়, তাহলে প্রভাবিত সমস্ত গ্রামের গ্রাম সভার মাধ্যমে রেসল্যুশান পাস করতে হবে, গ্রামবাসীদের গরিষ্ঠাংশের সম্মতি প্রয়োজন। এছাড়াও, উক্ত এফ-আর-এ আইন অনুসারে আরণ্যক গ্রামের গ্রামবাসীরদের নানাবিধ অধিকার-জ্ঞাপক পাট্টা দেওয়া হয় – যেমন বসবাসের অধিকার, খেতি-আবাদির অধিকার, খাদ্য হিসেবে আহৃত ফল-মূল-ব্যাঙের ছাতা, পানীয় হিসেবে আহৃত মহুয়া, সালফি প্রভৃতি, জীবিকার উদ্দ্যেশ্যে আহৃত তেন্দু পাতা, গালা, ধুপ বানানোর রেসিন-সমূহের অধিকার, পরম্পরা-নির্দিষ্ট স্থানে পুজো, উৎসব অন্ত্যেষ্টাদি সকল রিচুয়াল-উদযাপনের অধিকার, অরণ্য ও জীব-বৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখার অধিকার ইত্যাদি। এই পাট্টার আবেদন-ও করা হয় উক্ত গ্রাম-সভা মারফৎ।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (চতুর্থ ভাগ) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৬ | ১৫৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
এই সব তথাকথিত টাউনে যারা হোমড়া চোমড়া, তাদের মোটমাট প্রত্যেকেই অনাদিবাসী, গরিষ্ঠাংশের তেল—বনোপজ-লকড়ির ব্যবসা। (নুনটা জঙ্গল থেকে লুঠ করা ব্যবসায়িক-ভাবে অপ্রয়োজনীয়, কারণ আপাতত বিশ্ব-বাজার ছেয়ে আছে সৈন্ধবলবণে, জঙ্গলের বিভিন্ন গ্রামে থাকা আদিবাসীদেরও মুখিয়ে থাকতে হয় সমুদ্র থেকে তোলা নুন কবে বাজারে আসবে, তার উপরে। বস্তারের ধারেকাছে তো সমুদ্র নেই। বস্তারিয়া কৌম-প্রাকৃত ফুড সিস্টেমে ইতিহাসের কতটা স্রোত-ঢেউ-বাতাসিয়া-লুপের ফলে, মলয়াদ্রি বা সহয়াদ্রির উপকুলবর্তী জঙ্গল থেকে আসা মানুষেরা সৈন্ধব লবণ নিয়ে এসেছিলো, অথবা কত শতাব্দী-সহস্রাব্দের সৈন্ধব লবণের খাদ্য-প্রাকৃতিক বা ফুড-কালচারাল হেজিমনির বশবর্তী হয়ে রক-সল্ট ছেড়ে সৈন্ধব লবণ দিতে শুরু করল রান্নায়, আন্দাজ দুষ্কর।) তবে এই সমস্ত হোমড়া চোমড়ারা কেউই বস্তার তো ধূস্তরি মায়া, এক বা ম্যাক্সিমাম দুই জেনারেশন আগে কেউই হালের ‘ছত্তিসগড়’ এলাকাতেও থাকতোও না, থাকত মূলতঃ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা বা মহারাষ্ট্রতে, অথবা নর্মদা নদীর উত্তর উপকুলের টেবল-টপ-সমতলময় ডেকানিয় উত্তর-মধ্যপ্রদেশে, মানে যেইখানে গোণ্ডওয়ানাল্যাণ্ড মিশে গ্যালো অ্যাংগোরাল্যাণ্ড, সেইখানে।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (প্রথম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৭ মার্চ ২০১৬ | ১৭৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
একই পদ্ধতিতে, নকশাল-দমনের উদ্যেশ্যে সন ২০০৬তে সালওয়া জুডুম কম্যাণ্ডো-বাহিনী গঠিত হয় বস্তার সম্ভাগে।এই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন ভা-ক-পা বিতাড়িত কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মা। বাহিনীর সদস্য হল ছোটো ছোটো আদিবাসী কিশোরেরা। তাদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দেওয়া হতে লাগল এবং দুই সপ্তাহের ট্রেণিং দেওয়া হতে লাগল, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হল বস্তারের জংলা গাঁ-গঞ্জে যখন তখন হানা দেওয়ার, যত খুশি লুট, খুন, ধর্ষণ ও গৃহদাহ সংঘটিত করার। গ্রাম-কে-গ্রাম জ্বলে ছাই হয়ে গেলো। তটস্ত আদিবাসীরা পাহাড়ি জঙ্গল ছেড়ে নেমে এলো পাকা-রাস্তা তথা হাইওয়ের দুইধারে খাঁচার মত করে তৈরী ‘ক্যাম্প’-গুলিতে। পাশাপাশি ‘কোয়া’-উপজাতির আদিবাসী কিশোর যুবকদের দিয়ে তৈরী হল কোয়া-কম্যাণ্ডো। একই ধরণের কার্য্যকলাপের উদ্দ্যেশ্যে। এই সবের জন্য টাকাপয়সা সহ সমস্ত সুবন্দোবস্ত করে দিলো সরকার।
এই সব ‘স্থানীয় কম্যাণ্ডো’-বাহিনীর পাশাপাশি জোরকদমে ‘মিলিটারাইসেশান’। স্থানীয় থানাগুলির হাতে চলে এল প্রচুর অর্থ, ক্ষমতা ও ক্ষমতার উৎস তথা ভয়াল অস্ত্রশস্ত্র। বস্তারজুড়ে প্রায় সমস্ত থানা পরিণত হল কাঁটাতার পাঁচিলে ঘেরা ক্যাম্পে। এবং একের পর এক আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হতে থাকল অঞ্চলে, অজস্র গ্রামকে ঘিরে ফেললো সি-আর-পি-এফ, বি-এস-এফ, কোব্রা ব্যাটেলিয়ন নাগা ব্যাটেলিয়নের ক্যাম্প। শক্ত নজরদারীতে ঘেরবন্দী হয়ে গেলো বস্তারের মানুষেরা। তার পাশাপাশি অন্ধ্রের কুখ্যাত নকশাল-দমক গোষ্ঠী ‘গ্রেহাঊণ্ড’ এসে করে যেতে লাগল একের পর এক এনকাউণ্টার। ২০০৮-এ যখন অপারেশান গ্রীণ হাণ্ট আরম্ভ হয় তখন থেকে আজ অর্থাৎ ২৬শে মার্চ ২০১৬ অবধি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হয়েছে বস্তারে।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (পঞ্চম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৮ জুলাই ২০১৬ | ১৫০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
যত ঘুরছি, কথা বলছি, জানছি, শিখছি, একটা বিষয় পরিস্কার হচ্ছে। ফৌজি-কৃত ভায়োলেন্স এবং মাইনিং-এর মধ্যে একটা আলবাৎ-কোরিলেশান রয়েছে। যে সব জায়গায় মাইনিং আরম্ভ হয়, সেই সব অঞ্চলে তার আগ-আগ দিয়ে বন-বাদাড় সাফ করে গড়ে ওঠে আধাসামরিক ক্যাম্প। ক্যাম্প বলতে মূলতঃ কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলায় বর্ডার সিক্যুরিটি ফোর্স এবং সশস্ত্র সীমা বল এবং বস্তার, দান্তেওয়াড়া, সুকমা, বীজাপুর জুড়ে সি-আর-পি-এফ, মূলতঃ তাদের ‘এলিট’ শার্প-শ্যুটার কোব্রা ব্যাটেলিয়ন। বস্তার সম্ভাগ দেশের কোনো বর্ডারের ধারেকাছে নয়, তাই বি-এস-এফ বা সশস্ত্র সীমা বল এ’খানে কি করছে তা সভ্রেনেরই মালুম।
বস্তার-দুঃশাসনীয় (ষষ্ঠ পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০১৬ | ১৫১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অরণ্য তার অগণন সন্ততীদের জন্য যুগ-যুগান্ত ধরে সাজিয়ে রেখেছে খাদ্য তথা পুষ্টি-সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ঢালাও আয়োজন। কাঁকের-নারায়ণপুরের গ্রামগুলিতে বনৌষধি হিসেবে কাজে লাগে আম, আমলকি, হত্তুকী, ভেলওয়া, বজ্রদন্তী, পাঠ-জড়ী, ফলসা, বকফুল, রসনা, ভাসাম-পাত্রী, ভরহা, পোটর, হলুদ ফুল, ভুঁইনিম, নিমপাতা, মোগ্রালাটা, কুমড়ো-পাতা, ভালু-মুএসলি, সাদা মুএসলি, চার, লাসা, ফুটু, বোডা, অর্জুন গাছের ছাল, বেল, লেজোমররা, ভুঁইকুমড়ো, পৈরা-ফুটু ও নানাবিধ ব্যাঙের ছাতা, পোকামাকড়ের শুকানো মাংস প্রভৃতি থেকে তৈরী হয় নানাবিধ ওষুধ। উপশমের উপাচারও নানাবিধ। কয়েকটা উদাহারণ দেখা যাক
বস্তার-দুঃশাসনীয় (সপ্তম পর্ব) : অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গত কয়েক দশক ধরে বস্তারে যখন হু হু করে ঢুকে পড়তে লাগল গেরুয়া-ঝাণ্ডা হাতে শঙ্করাচার্য্যের চেলারা, লাল ঝাণ্ডা হাতে মাওয়ের চেলারা, এবং তার পর পর ভয়াল অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে ভারতরাষ্ট্রের সউর্দি চেলারা, তখন সেই প্রহার আর সইতে পারল না এই কৌম-কমনীয় যৌব-যাপন। চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো শান্ত অরণ্যের বিটপীছায়ায় লালিত যৌবনের পাঠশালাগুলো। আর্য্য-হিন্দু সিদ্ধান্ত অথবা কালচারাল-রেভলিউশান-মণ্ডিত সিদ্ধান্ত – কোনোটাতেই যে এর স্থান নেই! গ্রামের গাইতা-প্যাটেলেরাও যে তাদের হাজার হাজার বছরের টোটেম হারিয়েছে পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ-সচিবদের অশোকস্তম্ভিত শিলমোহরের সামনে। তাই এখন গ্রামকে গ্রাম অতীতসমৃদ্ধ যাপন-স্মৃতির হারিয়ে যাওয়াদের ব্যথা বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শূন্য ঘোটুল-প্রাঙ্গণ।