এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মাত্রাচেতনা

    শ্রীমল্লার বলছি লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ বার পঠিত
  • স্বীকারোক্তি
    এই লেখা কতদূর এগোবে জানা নেই। কেবলই অজানায় পা রেখে এগিয়ে যাওয়া। আমার জানা নেই, কীভাবে গদ্য লিখতে হয়। এমনকী কী ক’রে কবিতাও লিখতে হয়— জানা নেই, আমার। অনেক কথাই বলার থাকে, যা বলা যায় না কবিতায়। আর তাই বেছে নেওয়া গদ্যের এই পথকে, এই আবিষ্কারকে। যা দেখছি, যা শুনছি– সেইসবের ভিত্তিতেই লিখে চলা নিরন্তর। লেখার চেষ্টা করতে করতে বুঝেছি, শিল্পের এই পথ বড় কঠিন, আবার বড়ই সহজ। আজ পর্যন্ত মনের মতো একটা কবিতাও লিখতে পারিনি। অজস্র কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আদৌ সেগুলো কবিতা হ’য়ে উঠতে পেরেছে কি না জানা নেই আমার। আর গদ্য লিখিনি বললেই চলে। যখন যেমন পেরেছি, পড়ার চেষ্টা করেছি। লিখেছি বেশি, সেই তুলনায় পড়েছি অনেক কমই। এই লেখা আসলে অভ্যেসকে নিয়েই। আমরা নতুন নতুন অনেক অভ্যেসই গ’ড়ে তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই অভ্যেসকে শেষ পর্যন্ত ধ’রে রাখতে পারি কতদিন? সেটাই চ্যালেঞ্জ! অভ্যেস বলতে সেটা মন্দও হতে পারে। আবার ভালও। যদিও ব’লে রাখা জরুরি যে, মন্দ বা ভাল ব’লে কিছুই হয় না। দৃষ্টিভঙ্গিতে শুধু বদলে যায় দেখা আর বিচার করার প্রক্রিয়া। আর অভিজ্ঞতার বাইরে বেরিয়ে নতুন কিছুই করতে পারিনি। করতে পারিনি, এখনও। এ আমারই সীমাবদ্ধতা। এই ব্যর্থতা আমারই। অনেক বড় বড় কথা বলেছি, কিন্তু তখন যদি জানতাম যে, আমার ক্ষমতার বাইরে চ’লে যাবে— তাহলে বলতাম না নিশ্চয়ই। কিছুটা বুঝতাম যে, বলাটা উচিত হল না। পারব না আমি। আসলে তখনও অন্তর্দৃষ্টি আমার অতটাও শক্তিশালী ছিল না। ছিল না অন্তর্দৃষ্টির কথা শোনার সাহস। আজও যে সে সাহস, সে বোঝার ক্ষমতা আমার তৈরি হয়েছে, তা বলতে পারি না জোর দিয়ে। মানুষ হিসেবে আমি একেবারেই ভাল না। নিজের মা-বাবাকে যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি আজও। দু’জনের সঙ্গেই তুমুল তর্ক হয়। হয়তো দোষ ওঁদেরও আছে। কিন্তু আমি কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করতে চাই না। তাই সমস্ত অপরাধের ভার একাই বহন করব ব’লে ঠিক করেছি। পাঠককে তাই ব’লে রাখি, যখন আমার কোনও কবিতা বা গদ্য পড়বেন, তখন শ্রীমল্লারকে একজন শিল্পী হিসেবেই কাটাছেঁড়া করবেন। কেননা, ব্যক্তি শ্রীমল্লার মানুষটি মোটেও ভাল নয়। যখন থেকে কিছুটা বোধ হয়েছে আমার, তখন থেকেই আমি সমস্ত শিল্পীর শিল্পী জীবন নিয়েই কাটাছেঁড়া করি। তাঁর ব্যক্তি জীবনের অন্দরমহলে ঢোকার সাহস দেখাই না। এবং আমার মনে হয়, এটাই করা উচিত সমস্ত পাঠকশ্রোতাদর্শকদের। আর তাছাড়া আদর্শ ব’লে কিছুই হয় না। গদ্য আমাকে সত্যি বলার এক টুকরো জায়গা দিয়েছে। যেটা কবিতা এখনও দেয়নি আমাকে। হয়তো আমিই সেই জায়গা তৈরি করতে পারিনি। যাইহোক, শেষমেশ বলার— জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের শিরোনাম ‘মাত্রাচেতনা’ ধার নিয়েই এই লেখার নাম রেখেছি, ‘মাত্রাচেতনা’। যদি ইচ্ছে হয়, তবেই প’ড়েন। নইলে ফালতু সময় নষ্ট করবেন না এই লেখা প’ড়ে।

    শ্রীমল্লার
    কৃষ্ণনগর, ৫ অক্টোবর ২০২৫


     
    ডাইরি। কলম। ভাবনা।
    স্বতন্ত্রের পরে যদি কিছু হ’য়ে থাকে, তবে ওরা সেটাই। পাশাপাশি তিনজনকে রাখলে তেমন কিছুই বোঝা যায় না। যাবেও না। কিন্তু যদি নিজের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যায়, তবে ওরা হাঁটতে থাকবে। ঠিক যেভাবে একজন শিশু হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটার পথে অগ্রসর হয়। সোজা বাংলায় যাকে বলে, ‘প্রস্তুতি’। এ এমন এক অভ্যেস— যাকে কিনা ধরতে পারলে আরাম। আর ছাড়তে পারলে আত্মসংকটের দিকে সঁপে দেওয়া নিজেকে। আরাম কি? না আরাম নয়। অবাধ্য মন আর কবেই বা ভাল হওয়ার তকমা পেয়েছে...! প্রথমদিকে অস্থিরতায় মুহূর্ত কাটে। তবে দিন, রাত যতই এগোতে থাকে– ততই অস্থিরতা কেটে গিয়ে জীবন মুখস্থ হ’য়ে আসে। শেষমেশ অস্থিরতা থেকে যায়। সে এমন এক থাকা— যাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না, আবার সঙ্গে ক’রে রেখেও দেওয়া চলে না একেবারেই। তাই অস্থিরতা যত না জমাতে হয়, তারচে’ বেশি খরচ করতে হয় আরও বেশিই। বুঝে উঠতে গেলে আগে যেমন বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় সারাক্ষণ, তেমনই দু’পাতা-চারপাতা লিখতে গেলে আগে থেকে অভ্যেসের আওতায় নিয়ে আনতে হয় নিজেকে। দু’পাতা-চারপাতা তো দূর— এক পাতায় একটা শব্দ বসাতেই গোটা জীবন এতটাই কম প’ড়ে যায় যে, জীবন ফুরিয়ে আসার আগে ভাবতে হয়, করলামটা কী? যদি কিছু করা হয়েও থাকে, তবে তা আরও অনেকটাই না-করার দিকে ফিরে চাওয়া এক পলক। না-করার মধ্যে থেকেই করার যা কিছু প্রকাশ পায়, তা নামমাত্র। নামমাত্র এই কারণেই, যা বলার থাকে, তা দূরে সরতে থাকে দিন-দিন। 
    এমনকী একটা সময় পরে দেখা যায়, যা বলার ছিল, যা বলার আছে– তা তো বলা হলই না। উলটে যা ছিল না বলার, যা বলার নেই— তাইই উঠে এল ডাইরির পাতায় পাতায় কলমের আঁচড়ে, ভাবনার প্রশ্রয়ে। আর এখানেই শুরু হল দ্বন্দ্ব। এখন দেখার যে, সব ছেড়ে চ’লে যাওয়াই সমীচীন নাকি সবের মধ্যেই খুঁজতে থাকা পুরনো কিছুর মধ্যে নতুন বিষয়ের উপস্থিতি। তবে একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক—
    এক তিন মাত্রার ডাইরি গেল তারই মতো অন্য এক তিন মাত্রার দোকানে। সেই দোকান শহরের প্রাণকেন্দ্রেই। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক একজন তিন মাত্রার মানুষ ব’সে আছেন। যে কিনা খাতা, বই বাঁধাই করেন তিন মাত্রায়। আচ্ছা, ডাইরি তো আর এমনি এমনি চ’লে যেতে পারে না। তার জন্য দরকার দু’মাত্রার একটি মেয়েকে। হ্যাঁ, নিয়ে গেল সেইই। সে মেয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে, তিন মাত্রার দোকানের তিন মাত্রার একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সামনে।
    “ছিঁড়ে যাওয়া। না ঠিক ছিঁড়ে যাওয়া নয়। ছিঁড়তে ছিঁড়তে পাতা ক’মে আসা এক অর্ধেক ডাইরিকে বাঁধিয়ে দিতে পারবেন?”
    “দেখি?” ব’লে সেই প্রাপ্তবয়স্ক লোকটা মেয়েটার কাছে ডাইরিটা দেখতে চাইলেন। মেয়েটা তার স্কুলব্যাগ থেকে পাতা-মলাট ছিঁড়তে ছিঁড়তে অর্ধেক হ’য়ে আসা ডাইরিটা লোকটার কাছে এগিয়ে দিল।
    “যা অবশিষ্ট আছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, এতে চার মাত্রার অন্ধকার লেগে আছে। বাঁধাই হবে। তবে তিন মাত্রার একশো টাকা খরচ পড়বে। রাজি থাকলে বলো, আমি দু’মাত্রার খুশি দিয়ে এই ডাইরিকে ফের তিন মাত্রার জীবন ফিরিয়ে দেব।”
    “অসুবিধে নেই। আপনি আমাকে সেইভাবেই সারিয়ে দিন। কবে আসব?”
    “তুমি দু’মাত্রার সাতদিন পরে এসো। আমি তোমাকে তিন মাত্রার কাগজে আজকের তারিখ দিয়ে আরও এক তিন মাত্রার একশো টাকা লিখে দিচ্ছি৷ ডাইরি ফেরত নেওয়ার সময়ে, কাগজটা নিয়ে এসো মনে ক’রে।”
    কাগজে লেখা হ’য়ে যাওয়ার পরে সেই প্রাপ্তবয়স্ক লোকটা মেয়েটার হাতে সেটা দিয়ে দিল। মেয়েটা কিছু একটা ভাবল, হাতে কাগজটা নিয়ে। তারপরে বলল, “টাকাটা কি এখনই দেব?”
    লোকটা বলল, “সেটা তোমার দু’মাত্রার খুশি। চাইলে এখনই দিতে পারো। নয়তো ডাইরি ফেরত নেওয়ার সময়ে একবারেই...”
    “আচ্ছা, তবে টাকাটা ডাইরি ফেরত নেওয়ার সময়েই দেব...”
    “তবে তোমাকে দু’মাত্রার এসো বলি। আসতে পারো।”
    মেয়েটা এবার হাঁটা লাগাল তিন মাত্রার কলমের দোকানের দিকে। ওখানে ছোট্ট একটা কাজ সেরেই, সে তার দু’মাত্রার ছোট্ট বাড়ির আরও দু’মাত্রার ছোট্ট ঘরে পা রাখবে।
    কলমের দোকানের সামনে এসে দেখল, দোকান বন্ধ। এবার তাকে চেপে ধরল তিন মাত্রার ভাবনা। কিছু বোঝার আগেই পেছন থেকে একটা চার মাত্রার চলন্ত সাইকেল এসে, তাকে ধাক্কা মারল। তারপর...
     
     
     
    (ক্রমশ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন