এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ও দেশভাগ

    পাপাঙ্গুল লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • [ অনেক দিন আগে দেবেশ রায়ের হাজার পাতার 'বরিশালের যোগেন মন্ডল' পড়েছিলাম। বই পড়ার সময় অজানা জিনিস নোট করে রাখার পুরোনো অভ্যেস। বইটি সম্পর্কে একটি বড় অভিযোগ - শুধুমাত্র শেষ একশো পাতা ১৯৪০ পরবর্তী ঘটনার জন্য রাখা হয়েছে। নিচে লেখা সমস্ত পরিচ্ছেদ বই থেকে তোলা এবং আমার নিজের মন্তব্য নয়। ]  
     

     
    বল্লাল সেনের ব্রাহ্মণ্যবাদ যারা মেনে নেননি, তারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন আমরা নম ব্রাহ্মণ না, নমশূদ্র। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে রাঢ় বাংলা আদ্ধেক খালি হয়ে যাবার পর তাদের অনেকে পালিয়ে যান নিম্ন বাংলায়। এ এক অদ্ভুত নদীময় দেশ , তারাময় আকাশের মত - গোনার বাইরে। নদীর আর এই নদীর মানুষদের বেঁচে থাকার উপায় একটিই - শুধু বাঁক নাও , শুধু বাঁক নাও আর এক এক বাঁকে দশজন্ম করে বাঁচো। এই ভৌগলিক অঞ্চলগুলোকে বিল বলে। খুলনা , যশোর , ফরিদপুর , বরিশাল , ঢাকা , কুমিল্লা পাবনার বিলগুলিতে প্রধাণত নমঃশূদ্ররাই থাকে।
     
    ইতিহাসের এমন কত সংস্করণ। মূল বক্তব্য নমশূদ্রেরা শূদ্র নয়। তারা বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ - বল্লাল সেন কনৌজিদের পরামর্শে তাদের পতিত বলে শূদ্র করে দেন। তারা চণ্ডাল নয় কারণ তারা গ্রামের বাইরে বাস করে না , ভাঙা মালসায় ভাত খায় না ইত্যাদি। হরিচাঁদ , গুরুচাঁদ , তারক চন্দ্র , গোপাল সাধু , হরিবর, মহানন্দ এরা নমশূদ্রদের আধ্যাত্মিক আভিজাত্য রক্ষা করে এসেছেন, মতুয়া ধর্ম প্রবর্তন করেছেন। আর এদের দেখে কুমুদবিহারি মল্লিক, মহানন্দ হালদার, ভগবতী ঠাকুররা বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি এনে নিজেদের হিন্দু উচ্চবর্ণের সমতুল্য করে তোলেন। এই তাদের ক্ষমতার উৎস ও প্রসার। 
     
    যোগেন্দ্রনাথ বাংলার পুবে বরিশাল সদরের গৌরনদী বলে থানার মৈস্তারকান্দি গ্রামের নমশূদ্র বাড়ির ছেলে। ওই গ্রামের মৌজা নেই , সেনসাসের টেন্যান্সি নাম্বারও নেই। ওই জায়গাটা দুর্গম বলেই নমশূদ্ররা কোনো এক পলায়নে ওখানে আত্মগোপন করেছিল। একলব্য ও শম্বুকের মত , এই শূদ্রের কোনো অস্ত্রগুরু বা হিন্দু অবতারের দরকার হয়নি। লাল পাড়ের আট হাতি কোঁড়া ধুতিই নমঃশূদ্র দের পোশাক। বাবুরা দশ বারোহাতি ধুতি পরেন। আর আছে মনসাপুজোয় রয়ানি আর বিয়ের গান।
     
    গান্ধীর আন্দোলনে যোগ দেওয়া নিষেধ ছিল গুরুচাঁদ ঠাকুরের। আইন অমান্য ও অসহযোগের সময় যোগেনের বয়স পনের ষোল ও পঁচিশ ছাব্বিশ। সেসব কোনও আন্দলনে সে দর্শক হিসেবেও ছিল না। মৈস্তারকান্দি থেকে যোগেনকে প্রতিদিন যেতে হত আগৈলঝরার স্কুলে। সে নানা কিছু পড়তে ভাল বাসে, অঙ্ক আর সংস্কৃত বি এ পাশের বিষয়। কলকাতায় আইন পড়ার সময় কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটে খাওয়া থাকার বিনিময়ে ডাক্তারের ছেলেকে টিউশনি , প্রেসে প্রুফ দেখা। হ্যারিসন রোডের মোড়ে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা থেকে হেঁটে ফিরে আসার সময় দেখত ট্রাম রাস্তা জুড়ে ঝালাইয়ের নীল বিদ্যুৎ- আকাশে মাটিতে ট্রামের তার-লাইন ঝালাই হচ্ছে। যোগেনের বংশানুক্রমিক পেশা নৌকা বানানো। সে জানে নৌকা বানানোর অর্থনীতি , কাঠসংগ্রহ , আলকাতরার দর , গাবগাছ কমে যাওয়া এসব।

    আগৈলঝরার নিরক্ষর ভেগাই হালদার যোগেন ও তার মত তরুণ নেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন নমশূদ্র জাগরণের প্রতীক পুরুষ। অশ্বিনী কুমার দত্তের নেতৃত্বে তিনি বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনে বরিশালের নমশূদ্রদের জড়ো করে ১৯০৬ এ বরিশালের প্রাদেশিক সম্মিলন করেছিলেন। অশ্বিনী দত্ত বুঝেছিলেন মুসলিম ও অবর্ণ হিন্দুদের বিপুল জনস্তরকে মিলিয়ে দিতে না পারলে দেশ বোধ তৈরি হবে না। ১৯০৬-৭ এ তার 'স্বদেশবান্ধব সমিতি'র অর্ধেক নেতাই ছিল ছোট বা মেজ হিন্দু জমিদার আর চাষিরা বেশির ভাগ মুসলিম , সেখানে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দলন হয়ে উঠেছিল হিন্দু জমিদারের সঙ্গে মুসলিম চাষির স্বার্থের সংঘাত। স্থানবিশেষে এটাই উল্টে যেত যখন জমিদাররা মুসলিম ও চাষিরা অবর্ণহিন্দু। 
     
    ১৯২৬ সালে আগৈলঝরাতে প্রজা সম্মিলনে ভেগাই হালদার ছিলেন প্রধান সংগঠক – সেখানে মদন মোহন মালব্য , সরলা দেবী এসেছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতা ছিল বাইশ বছর বয়সী সবেমাত্র আই এ পাশ করা যোগেন। বরিশাল টাউন হলের সভায় যোগেনের প্রথম বক্তৃতা শুনে 'বরিশাল হিতৈষী' র সম্পাদক দুর্গা মোহন সেন মুগ্ধ হয়ে তাকে নতুন বরিশালের নতুন নেতা 'বরিশালের মেগাস্থিনিস' বলে বর্ণনা করেন। 
     
    মাহিষ্য , নমশূদ্র আর রাজবংশী এই তিন জাত মিলিয়েই তো বাঙ্গালির প্রায় তিনভাগের একভাগ। বামুন কায়েতরা আট ভাগের একভাগ। ১৯১১র সুমারিতে সারা বাংলায় নমশূদ্রের সংখ্যা গোনা হয়েছিল প্রায় ২১ লক্ষ। এর পরের সুমারিগুলিতে জাত জানাতে আপত্তি শুরু হয়ে যায়। এদের ছ-আনি , আট লাখই থাকত বাখর গঞ্জ , দক্ষিণ ফরিদপুর , নড়াইল, মাগুরা , খুলনা, বাগেরহাট মিলিয়ে যে ডাঙা , সেখানে। ১৯২০ থেকে সরকার ভাঙনের নদীর চরে দখল মেনে নিতে জমিদাররা নমশূদ্র আর মুসলমানদের কাজে লাগাত। বরিশালের এই জলময় পশ্চাদভূমির সঙ্গে বরিশাল শহরের আষ্টেপৃষ্ঠে সম্পর্ক ছিল যা অন্য কোনও জেলায় ছিল না। 
     
    ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন। মিল বেনথামের ভারতীয় ছাত্ররা লজিকের সূত্র অনুযায়ী ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান ছকে ফেলেছিল। ১৯৩০ এ ডান্ডি মার্চ, আইন অমান্য আন্দোলনের শুরু। ১৯৩১ করাচীতে কংগ্রেসের অধিবেশন আর সেদিন রাতেই ভগত সিং , রাজগুরু সুখদেবের ফাঁসি। কদিন আগেই গান্ধী আরুইন চুক্তি হয়েছে কিন্তু ভগত সিংরা মুক্তি পাননি।
     
    গান্ধীজীর অনশন রাজনৈতিক বিষয় না থেকে হয়ে উঠল সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় এবং ভারতীয় শিল্প পতিদের বিষয়। আইন অমান্য , গোলটেবিল , অনশন এসবের পরে ১৯৩৫ এ ভারত শাসন আইন ও তার ভিত 'কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড' ঘোষিত হল। ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির প্রথম কথা ছিল – জমিদারি উচ্ছেদ। দ্বিতীয় কথা চাষির ঋণ মকুব। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘোষণার পর এক স্মারকপত্রে আরো অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ , শরৎচন্দ্র , ব্রজেন্দ্রনাথ শীল , প্রফুল্লচন্দ্র রায় সই দেন। তাতে বলা হয় মননে, সংস্কৃতিতে , রাজনীতির বৃত্তিতে , ব্যবসায় এই প্রদেশের হিন্দুরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। তারা সংখ্যায় কম হতে পারে কিন্তু শিক্ষিত জনসাধারণের ৬৪ শতাংশ।
    যোগেন্দ্রনাথ গভীর ওকালতি বিদ্যা সবে মাত্র আয়ত্ত করেছেন তার সিনিয়র কুলদারঞ্জন দাশগুপ্তের কাছে। আরও কয়েক বছর কাজ করার আগেই দশজন মিলে তাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিল। তেত্রিশ বছর বয়সের অস্থিরতায় যোগেন দেখতে পাচ্ছিল - প্রাদেশিক আইনসভার প্রথম ভোট, মন্ত্রীসভা , দেশ শাসনের বদল ঘটতে যাচ্ছেই। এ সুযোগ আর নাও আসতে পারে। যোগেন এর আগে লোক্যাল বোর্ডের ভোট করলেও দ্রুত জেনে ফেলেন 'লাস্ট মিনিট গেম', বুথজ্যাম, বুথ দখল, ছাপ্পা। এর বছর পাঁচ বাদে তিনি ক্যান্ডিডেট গুম, ভোটার গুম, রেস্কিউ অপারেশন এগুলোরও দক্ষ ব্যবহার করবেন।
     
    ১৯৩৭ র ভোটে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী জেলা কংগ্রেসের সভাপতি বাটাজোড়ের জমিদার অশ্বিনী দত্তের ভাইপো সরল কুমার দত্ত। একই ভোটে পটুয়াখালিতে গভর্নর অ্যানডরসনের বন্ধু মুসলিম লিগের হয়ে ঢাকার নবাব খাজা নাজিমুদ্দিন আর কৃষকপ্রজা পার্টির হয়ে ফজলুল হকের ভোটের লড়াই হল। ফজলুল হক বরিশালি শব্দ 'ভোটমারানি' জনপ্রিয় করে তুললেন।
     
    "এই নাসুরাবরদি , নিজামুদ্দিন আমারে লুক্যাইয়া কইরল ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি বানাল। জিন্নায় ভাইবছিল , আমার মাথায় পা রাইখ্যা মুসলমান কৃষকের ভোট গুনব। আরে মাথাখান তো ফজলুল হকের।"
     
    "দ্যাহ মণ্ডল আমারে আইন শিখাইয়ো না। আমি আশু মুখার্জির জুনিয়র ছিলাম।"
     
    বিধান রায় নিখিল ভারত কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির মুখপাত্র বলেই বাংলার রাজনীতিতে পরিচিত। বিধান রায়, শরৎ বোস, নলিনী সরকার, তুলসী গোস্বামী , নির্মল চন্দ্র এই পাঁচ কংগ্রেসি নেতার প্রদেশ কংগ্রেস, কাউন্সিল আর কর্পোরেশনের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি। তার সঙ্গে শিডিউল কাস্টের জন্য সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির গৃহ যুদ্ধ। ১৯৩৭ এর ফেব্রুয়ারির গোড়ায় সব এমএলএ রা কলকাতা যাচ্ছিলেন প্রায় স্বাধীন ভারতের, একটি প্রদেশের প্রায় প্রথম প্রায় সরকার তৈরি করতে। কংগ্ৰেসের জিলা অফিসগুলো ছিল সদরে। শহরের শিক্ষক, উকিল, ডাক্তার, মোক্তার, চাকুরে এরাই ছিলেন মেম্বার ও নেতা। ঢাকার তেওটার জমিদার কিরণশঙ্কর রায়, রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীর ছেলে তুলসী গোস্বামী, তুলসীঘাটার বিজয় রায় চৌধুরী , ময়মনসিংহর সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ ইত্যাদি।
     
    ১৯৩৭ সালে আইনসভায় জেতা সদস্যদের আট ভাগে ভাগ করা যায় -
    কংগ্রেসের ৫৪
    স্বতন্ত্র হিন্দু উচ্চবর্ণ ১৪
    স্বতন্ত্র শিডিউলড কাস্ট ২৩
    হিন্দু ন্যাশনালিস্ট মানে মালব্যর পার্টি ৩
    হিন্দুসভা ২
    মুসলিম লিগ ৪০
    কৃষক প্রজা পার্টি ৩৮
    স্বতন্ত্র মুসলিম ৪৩
    ইউরোপিয়ান - এংলো খৃষ্টান ভারতীয় ৩১
    মোট ২৪৮
    সরকার গড়তে ১২৬।
     
    সাধারণ আসন নামে ৭৮ হলেও তার ৩০টিই শিডিউল কাস্টের জন্য রিজার্ভ। শিডিউল কাস্ট একটি সরকারি কাগজের নাম। ইংরেজরা একটি তালিকা তৈরী করেছেন - হিন্দুসমাজের ভেতর কোন কোন জাত অনুন্নত। বাকি ৪৮ আসনে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। 'স্বতন্ত্র শিডিউলড কাস্ট' হিসেবে যোগেন্দ্রনাথ জিতেছেন সেরকমই একটি সাধারণ আসনে। হিন্দু মুসলিম ভুলে কংগ্রেস, কৃষক প্রজা, ইউরোপিয়ান ব্লক আর স্বতন্ত্র শিডিউলড কাস্ট মেলালে ১৪৯। নিশ্চয় শরৎ বসুর সঙ্গে ফজলুল হকের কথা শুরু হয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ফজলুল হক মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী হলেন।
     
    "ইংরেজরা কংগ্রেস ভাঙার কাজে শিডিউলদের ও মুসলমানদের ঘুঁটি সাজিয়েছে। যোগেন একটা হাই তুলে নিজের মন থেকে এই গ্লানিকর সত্য সরিয়ে রাখতে চায়। ঘুঁটি যখন বোঝে সে ঘুঁটি, তখন তার ঘুঁটি হওয়ার দাম আদায় কোনও দিনই আর শেষ হয় না।"
     
    প্যারিমহন দাশের কলকাতার হেদোর বাড়িতে তার কলকাতার ঠাই। চিংড়িঘাটায় নমশূদ্র জমিদার দাস চৌধুরীদের বিখ্যাত প্রাসাদ ও বিখ্যাততর রাধে শ্যাম মন্দির। সে ধর্মশালায় রাসে কি ঝুলনে কি দোলে গিয়ে গান গেয়েছে ও গব্য ঘৃতে রান্না ভোগ খেয়েছে। বেলেঘাটায় জোড়া মন্দিরে হেম নস্করের বাড়ি। যোগেনের লক্ষ্য নমশূদ্র হিসেবে পৃথক রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করে তোলা এবং সেই পরিচয়ের জোরেই ভারতের স্বাধীনতা পাবার কাজে স্থান করে নেওয়া। হিন্দুত্ব সম্পর্কিত রাজনৈতিক যে বিকল্পগুলি তখন নিম্নবর্ণের সামনে খুলে গেছিল - কংগ্রেস , ফরওয়ার্ড ব্লক ও হিন্দু মহাসভা - যে কোনো একটিতেই তিনি উচ্চস্তরে আমন্ত্রিত ছিলেন। 
     
    "শ্রমিক শ্রেণী আমি শিখেছি মার্ক্সসইজম থেকে। বামুনরা তো বুর্জোয়া নয় , তাহলে শূদ্ররাই বা প্রলেটারিয়েট হবে কি ভাবে ?"
     
    নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার যোগেনকে দিয়েছিলেন মলাট দেওয়া 'কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো' আর 'ক্লাস স্ট্রাগল ইন ফ্রান্স'। যাদুগোপাল মুখুজ্যের সঙ্গে পরিচিতি ছিল। মানবেন্দ্রনাথ রায় খুব লম্বা , সব সময়েই একটা পাইপ কামড়ান , ইংরেজি ছাড়া কথা বলেন না। তাহলে চটকলের শ্রমিক ইউনিয়ন করেন কি করে? নীরদ চৌধুরী শরৎবাবুর রাজনীতি বিষয়ক সেক্রেটারি। যোগেন সুভাষ চন্দ্রের ওপর স্বপ্নাদ্য চাঁদসী চিকিৎসা করেন। সুভাষ বললেন - "সারা দেশই পরাধীন। তাহলে কয়েকটা জাতের লোককে এরকম নাম দিয়ে আলাদা করা কেন ?"
     
    যোগেন যদি পুরো কংগ্রেসি হতে চাইতেন , তাহলে পুরনো নমশূদ্র নেতারা - রসিক লাল বিশ্বাস, যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল তারা তাকে সন্দেহ করতেন। যোগেন ছিলেন এক আধুনিকতর শূদ্র নেতা যাকে তার সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতেন। তার মনে গোল পাকিয়ে যায় হিন্দু ধর্ম , জাতিভেদ, কংগ্রেস , স্বরাজ, গান্ধী, ইংরেজ , স্বদেশী। নেতারা এক একজন এক এক রকম বলছিল। একদিকে হিন্দু কংগ্রেস গান্ধী এবং অন্যদিকে ইংরেজ। মুসলমানদের সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন – বিদেশীর হাত থেকে দেশকে স্বতন্ত্র করতে কি অন্য কোনও বিদেশি বিধর্মীর সঙ্গে হাত মেলানো যায়?
     
    ইতিমধ্যে ১৯৪১ সালে সরকারের দ্বিতীয় প্রোগ্রেসিভ কোয়ালিশন পার্টিতে আছে কৃষকপ্রজা পার্টি , হিন্দু মহাসভা , সুভাষচন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক - যাদের বাংলার কংগ্রেস বলেই সবাই চেনে। সেসময় মুসলিম প্রধান চারটি প্রদেশ - বাংলা , পাঞ্জাব , সিন্ধু , উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ কোনোটিরই নেতা লীগের ছিলেন না বা জিন্না সমর্থকও ছিলেন না। ১৯৩৭ এ ফজলুল হক প্রজাপার্টির চোদ্দ দফার এক নম্বরে রেখেছিলেন বেঙ্গল টেন্যান্সি এক্টের নতুন সংশোধন। কিন্তু সাত বছরেও বিলটি আইনসভায় আনতে পারলেন না। ১৯৪৩ সালে তিনি পদত্যাগ করার পর নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হলেন। 
      
    যুদ্ধ চারবছর চলছে। তার আগে ৩২/৩৩ সাল থেকেই যুদ্ধের আওয়াজ উঠেছে। তাহলে তো যুদ্ধ প্রায় দশ বছর সময় দিয়েছে। যুদ্ধ, ডিনায়াল পলিসি , প্রকিওরমেন্ট , চাল আমদানি বন্ধ , সৈন্য ও যুদ্ধ উৎপাদনের জন্য কলকাতা ও শিল্পাঞ্চলের রেশন চালু রাখা এগুলোর জন্য তৈরী হওয়ার সময় ছিল না - এই কথাটা ঠিক নয়। যাদের দায়িত্ত্ব ছিল , তারা করেননি। অথবা তারা যুদ্ধটাকে যেভাবে ভেবেছিলেন , সেভাবে হল না। বৃটিশরা রেঙ্গুন থেকে সরে আসবেন কেউ ভাবতে পারেনি। বার্মাশেলের ট্যাংকার আর খনিতে যে আগুন লাগিয়েছিল তা চিটাগাং থেকে পাঁচ সাতদিন ধরে দেখা যাচ্ছিল।

    ১৯৪২ র জুনে পুব বাংলার গ্রামে গ্রামে তখন কারো আর কোনো আয়ের উপায় নেই। নৌকা পোড়ানো হয়েছে - এক বাখরগঞ্জেই ১২০০০। ১৯৪৩ র দুর্ভিক্ষ তৈরী হচ্ছে। যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতে বাড়তি চাল কেনার কন্ট্রাক্ট নিয়েও মন্ত্রিসভায় মারামারি। সোহরাওয়ার্দী সিভিল সাপ্লাই মিনিস্টার। মিলিটারি পোড়ামাটি নীতি চাইলেও ডিন্যায়াল পলিসির সুবাদে চারটি উপকূলবর্তী জেলার সব চাল কিনে ফেলার কাজ দেওয়া হয় ইস্পাহানীকে। মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে ঘুষ খেয়ে মিলিটারি অর্ডারের কন্ট্রাক্ট বিলি করতে লাগল। গভর্নর , ভাইসরয়ের একমাত্র দায় যুদ্ধের জন্য সাপ্লাই লাইন চালু রাখা। কিন্তু ভারতের প্রশাসনিক বা ব্যবসায়ী ইংরেজরা সেই চরম বিপদেও ঘুষ খায়নি। খেয়েছে বাঙালি কেরানি ও মন্ত্রী। শ্যামাপ্রসাদ ছোটলাটের সঙ্গে দেখা করে বলেন -"হিন্দুদের আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। ব্রাহ্মণ এবং বিধবাদের আতপ চাল খেতে হয়। যাদের ঘরে ইষ্টদেবতা আছেন , তাদের নিত্য ভোগ দিতে হয়। শুধু এঁটোর কারণে একজন বিধবা দশবার স্নান করে। এই সব সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারে সরকারের হাত দেওয়া উচিত নয়। ডিনায়াল পলিসির চাইতে পোড়ামাটি নীতি অনেক ভাল হত। গ্রাম ছাড়ার আগে পুড়িয়ে দিত।" ১০০ দিনের চমৎকারী যুদ্ধে জাপান বার্মা সীমান্তে এসে গেল। দক্ষিণ এশিয়া থেকে যুদ্ধ শরণার্থীরা বাংলায় আসতে শুরু করে দিয়েছে। কলকাতায় ট্রেঞ্চ কাটা চলছে। কলকাতা থেকে চিড়িয়াখানা খুলে দেবার ও জেলখানা সরিয়ে নেবার কথা চলছে। ৮ ও ৯ মে সকালে চিটাগং এয়ারপোর্টে বোমা পড়ল। 
     
    বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ ইউনিয়ন চালান সোহরাওয়ার্দী। তাদের প্রধান কাজ অন্য মিলের হিন্দু শ্রমিকদের ওপর দাঙ্গা করা। পাট চাষ করে বেশিরভাগ মুসলমান , পাটের ব্যবসা করে আড়ৎদার - তার মধ্যে অবাঙালি বেশি। পাট থেকে হেশিয়ান বানায় সাহেবদের চটকল আর বিদেশে চালান দেয় সাহেব কোম্পানিগুলি। হিন্দুদের কাজ শুধু পাট কোম্পনীর অফিস , গোলা , কলকাতায় মফস্বলে চাকরি।

    ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থেকে বরিশালের নাজিরপুরের 'লড়া' গ্রাম পর্যন্ত হতে হতে আসা হিন্দু মহাধর্ম মহাসম্মেলনের মূল কর্মসূচি ছিল -
    ১। তপশিলিদের হিন্দু ধর্মের অন্তৰ্গত করে নেওয়া 
    ২। শুদ্ধি সংক্রান্ত কিছু অনুষ্ঠানে তফসিলিদের অস্পৃশ্যতা দূর করা ও পাওয়া গেলে দু একজন মুসলমানকে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনা 
    ৩। নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভায় মুসলমান , তপশিলি ও নমঃশূদ্রদের বাংলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে ওঠায় যোগেনের নেতৃত্বের বিরোধিতা। 

    যোগেনের কাছে স্বাধীনতা বা স্বরাজ কখনোই প্রধান বিষয় হয়ে ওঠেনি। প্রধান বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের দাসত্ত্ব থেকে স্বাধীনতা। ১৯৪৬র নির্বাচনে যোগেন ফেডারেশনের প্রার্থী হওয়ায় ও সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভায় বিচার , আইন ও পূর্তবিভাগের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেওয়ায় পি আর ঠাকুর , মুকুন্দবিহারী মল্লিক 'তপশিলি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ'  নামে একটি সভা ডাকেন।  পি আর ঠাকুর সেই সভায় বক্তব্য রাখেন - "ইতিমধ্যেই লীগ - তফসিলি - আম্বেদকর ঐক্য দেশের রাজনীতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেটাই সর্বনাশা। জিন্নার পাকিস্তান প্রস্তাব পাঁচ ছ বছরের মধ্যেই দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে উঠেছে"
     
    ১৯৩২ গোলটেবিলে আম্বেদকরের নাম গান্ধীজি প্রথম শোনেন , সেখানে আম্বেদকর মনুবাদী ধর্মকে তুলোধোনা করেন। ১৯৪৬ এ প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্ব শাসনের দ্বিতীয় ভোটের আগে আম্বেদকারকে নেতা মেনে 'ভারতীয় তফসিলি জাতি ফেডারেশন' তৈরী হয়। সেই ভোটে যোগেন ছাড়া আর কেউ জিততে পারেনি। প্যাটেল প্রকাশ্যে জনসভায় বলেছিলেন তিনি আম্বেদকরকে জিততে দেবেন না। এমনকি 'সংবিধান রচনা পরিষদ'র সদস্য নির্বাচনেও আম্বেদকর বোম্বে থেকে হেরে যান। তাকে ডেকে এনে বাংলা থেকে জিতিয়ে দেন যোগেন। জিন্নার লীগের সেই মন্ত্রী তালিকায় পঞ্চম নাম ছিল যোগেন মন্ডল। যে অনশনে গান্ধী মৃত্যু পর্যন্ত চলে গিয়ে সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ ঠেকাতে চেয়েছিলেন , সেই অনশন শেষ হল আম্বেদকরের সঙ্গে হিন্দু কংগ্রেসীদের দর কষাকষিতে।

    ১৬ অগস্ট কলকাতায় দাঙ্গা লাগবে তা প্রায় কোনো উচ্চপর্যায়ের লিগনেতাই জানতেন না। মীজানুর রহমান শুধু সেদিনের ঘটনা নিয়ে একটা গোটা বই লিখেছেন -'কৃষ্ণ ষোলোই'। ১৭ তারিখ থেকে সোহরাওয়ার্দী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। ফলে কমিশনার কোনো কাজ করতে পারলেন না। কোনো পুলিশ নেই। ১৯ তারিখেও দাঙ্গা থামেনি। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন তারা বেশির ভাগই গরিব থেকে গরিবতর। "মৃত্যু নয় , নরকের পরের শহর। একটি কলোনিদেশের শাসনক্ষমতা নিয়ে হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায় জীবিত ও মৃতের সমাজ তৈরী করেছিল।"

    লোহা সিমেন্টের মত দরকারি জিনিস ও বোমা তৈরির বিশেষ উপকরণ নেবার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কাছে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ধার হয়ে গেছে লক্ষ লক্ষ পাউন্ড। সে কারণে যুদ্ধের একেবারে শেষ সময় থেকেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলির প্রাণান্তকর চেষ্টা ভারতকে ঘাড় থেকে নামানোর। ব্রিটিশ সৈন্য ও অফিসারদের মাইনে দিতে হচ্ছে। সীমান্ত কমিশন গঠন হল। হিন্দু মহাসভার নেতা এন সি চ্যাটার্জি ছিলেন ব্যারিস্টারিতে র‍্যাডক্লিফের সহপাঠী। একজন ফার্স্ট হয়েছিলেন , আরেকজন সেকেন্ড। তিনি খুব সম্ভবত পুরোনো বন্ধুর কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশটি উপহার হিসেবে চেয়ে এনেছিলেন।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:২০540018
  • একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ প্রতিক্রিয়া। নমশূদ্র শব্দ ছোটবেলা থেকে শুনেছি। তার ইতিহাস এখন জানলাম। 
  • পাপাঙ্গুল | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২০540020
  • ধন্যবাদ রঞ্জনদা। 
     
    যোগেন মন্ডল শ্যামাপ্রসাদ সমেত সমকালীন বাকি সবার মত ঐতিহাসিক চরিত্র হলেও তার নমঃশূদ্র সমাজের মানুষরাই কোনোদিন তাকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করতে পারেননি এবং নিজেরাই তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছেন। বই পড়ে এরকম মনে হয়েছিল। পরে দেখেছি কুলদা রায়ের মত যারা আদি বরিশালের , তারাও এরকমই বলেছেন। 
  • | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৫540022
  • এই যোগেন মন্ডলের পরে মোহভঙ্গ হয়। সব মিলিয়ে বেশ  বর্ণময় চরিত্র। বইটা বহু আগে পড়েছিলাম। আরেকবার রিভাইজ করতে ইচ্ছে করছে।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১৯540024
  • যোগেশ বাবু উচ্চ বর্ণের হিন্দুর চেয়ে মুসলিম সঙ্গ শ্রেয় মনে করেছিলেন। পাকিস্তানের মন্ত্রী ও হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ওরা নিচের তলার হিন্দুদের আপন করে নেবে। ওরা দেশ ভাগের পর ওপারে রয়ে গেছিল। পরে যখন মোহ ভঙ্গ হয় এপারে আসতে থাকে। ঠাঁই হয় দন্ডকারণ্যে বা আন্দামান। মরিচ ঝাঁপির গণ হত্যা ও ফেস করতে হয়। এখন বিজেপির ক্যা রাজনীতির বলি।
  • বিশ্বজিত বন্দ্যোপাধ্যায় | 2409:40e0:15:6c03:74ca:ab7e:a6d6:***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০৯540032
  • ঊনিশশো পাঁচ থেকে ঊনিশশো পঞ্চান্ন এই সময়ের বাংলার উপর আরও অনেক ঠিক বা ভুল (না হলেই ভাল)খবর ও লেখা ছাপা হওয়া দরকার। না হলে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে। 
    আপনার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাই। 
  • পাপাঙ্গুল | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:২৪540033
  • হ্যাঁ জিন্না মারা যাবার পর মোহভঙ্গ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন