এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পড়া বই - 'চার রঙের উপপাদ্য'

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • এই উপন্যাসকে আমরা চারটে অঞ্চল জুড়ে বানানো একটা কাল্পনিক মানচিত্র এবং সেই মানচিত্রের চারটে কাল্পনিক অঞ্চলকে চাররকম রং দিয়ে কল্পনা করে নিতে পারি । কমলা অঞ্চলে অর্থাৎ কলকাতার সাহেবগলিতে থাকে মিঠু , তার মা ছন্দা এবং বিপ্লব। নীল অঞ্চলে অর্থাৎ বিদেশে[ব্রিটেন সম্ভবত] আছে পঙ্কজ , লিপি , সুবিমল। সবুজ অঞ্চলে কলকাতার অন্য একটা পুকুরসুদ্ধু গলির মধ্যে প্রতিবেশী হিসেবে থাকেন স্মিতার অসুস্থ জেঠিমা এবং শখ হিসেবে মহাকাশ নিয়ে অবসেসড সনৎ। হলুদ অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় বৌবাজারের নির্মীয়মান মেট্রোর সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাহিল , তার প্রেমিকা কঙ্কণা এবং বৌবাজারের ফুটপাথবাসী প্রফুল্ল। 
     
    উপন্যাসের এই প্রধান চরিত্রগুলো এক বছর ধরে নিজেদের নিজেদের স্বতন্ত্র অঞ্চলে বসবাস করে এবং এক অঞ্চলের চরিত্রের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের চরিত্রের সামনা সামনি দেখা হয়না। কিন্তু চরিত্রগুলোর মধ্যে কিছু কিছু অতীত স্মৃতির মাধ্যমে সংযোগ আছে। যেমন বর্তমানে আলাদা আলাদা রঙের অঞ্চলে থাকলেও মিঠু ও সনৎ এককালে বিবাহিত ছিল। স্মিতা ও পঙ্কজ বিবাহিত , কিন্তু স্মিতা তার জেঠিমার অসুখের জন্য  আছে কলকাতায়। এই দুজনের মধ্যে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ থাকলেও ইন্দ্রাণী সচেতনভাবে সেইসব জায়গা লেখেননি। অর্থাৎ এক অঞ্চলের রংলাগা চরিত্র কখনো অন্য অঞ্চলে সীমানা টপকে ঢুকে পড়েনা। পাশাপাশি সাহিল নিজেও তার একটা উপন্যাসের নানা অংশ লিখে রাখতে থাকে , যার মাধ্যমে আমরা পড়তে থাকি সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া থাই ইঞ্জিনিয়ার চান্ডী মুখানের মিথ এবং তার নামে নামাঙ্কিত টানেল খোঁড়ার যন্ত্র টিবিএম চন্ডীর আখ্যান। উপন্যাসে এক জাদুকরের চরিত্রও লিখবে বলে সে নীলকমল বলে সাহেবগলির এক পুরনো জাদুকরকে খুঁজতে থাকে। উল্টোদিকে ক্লাস এইট পর্যন্ত সাহেবগলির স্কুলে পড়া পঙ্কজের মধ্যে আমরা দেখি জাদুকর বিষয়ক অতীতের কোনো এক ট্রমা। স্মিতার কাছে সে সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায় যা স্মিতার মধ্যে সাহেবগলিতে পঙ্কজের ছেড়ে আসা অতীত নিয়ে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। সাহিল ক্রমাগত "সংশয় লেখে , ভয় লেখে , অন্ধকার লেখে , তারপর ছিঁড়ে ফেলে; সাহিলের লেখা শেষ হয়না কারণ তার কোনো গন্তব্য় নেই , সে কোথায় যাবে - জানে না"। সাহিলের উপন্যাস গন্তব্য খুঁজে না পেলেও চার রঙের উপপাদ্য মেনে সমস্ত চরিত্রগুলোর আলাদা আলাদা হাত ধরে ইন্দ্রাণীর উপন্যাস ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগোতে থাকে।
     
    বইয়ের গল্পটা কিন্তু মোটেই একরৈখিক নয়। চরিত্রগুলো মনে মনে সময়ের মধ্যে দিয়ে অনায়াস যাতায়াত করে।  পুরোনো দিনের গান শুনে কোনো চরিত্র সাময়িকভাবে অতীতের স্মৃতিতে  ফিরে যায় আবার উল্টোটাও ঘটে। ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে বসে একটা বাচ্চার মুখে 'মহারাজো এ কি সাজে' গানটার ঝাঁকুনিতে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে যেমন মিঠুর মনে হয় -"বসে বসে ভাবার জন্য ডাক্তারের চেম্বারের থেকে ভালো জায়গা আর হয়না।" ইন্দ্রাণী তার লেখার মাধ্যমে পাঠককে বুঝিয়ে দেন অতীত আসলে স্থির না থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলমান এবং ঘটমান বর্তমানও প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে সেই অতীতের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়মেই বইয়ের শুরুর দিকে উপস্থিত পঙ্কজের পোষা কুকুরছানা বনময়ূরকে আমরা বইয়ের শেষে অতীত স্মৃতির কুয়াশার মধ্যে মিশে যেতে দেখি ।
     
    উপন্যাসটা একবারে টানা পড়ে ফেলা যায় না। বহু সূক্ষাতিসূক্ষ ডিটেল এই বইয়ের সর্বত্র লুকিয়ে রাখা আছে যা প্রথমবার থেমে থেমে পড়লেও চোখ এড়িয়ে যায়। দু তিনবার পড়লে তবেই মানচিত্রটা রং সমেত স্পষ্টভাবে চোখের সামনে ভেসে ওঠে । এতদিন পর্যন্ত ছোটগল্পের মাধ্যমেই ইন্দ্রাণীর লেখনীর সঙ্গে পরিচিত হলেও পাঠক হিসেবে তার প্রথম উপন্যাস এরকম বৃহৎ ক্যানভাসের লেখার প্রত্যাশা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিল । 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩২516276
  • বাহ আপনার পড়ার সাথে আমার বেশ অনেকটা মিলল তবে সবটা নয়। 
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৩516279
  • @ yes সবটা তো মেলার কথাও নয়। পাঠক বিশেষে পড়ার অভিজ্ঞতা কিছুটা আলাদা হবেই। laugh
  • দীপাঞ্জন | 223.19.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৫516283
  • তবে কোথায় মিলল না সেটা বললে বুঝতে সুবিধা হত। যেমন সাহেবগলি বা পুকুরটার হয়ত বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই ,  ওগুলোও স্মৃতিরই অংশ - এরকম কিছু কি ?
  • ইন্দ্রাণী | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৭516297
  • দীপাঞ্জন,
    ধন্যবাদ আপনাকে।
    নমস্কার জানবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন