এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দ্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার-৪

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৮১ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
    পয়লা জুলাই, ২০১৩

    "আমার মৃত্যু যদি হয় যেন আজকেই হয়, নয়তো কখনোই না। "
    স্কুলে ক্লাস পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। পড়াও অনেকটা এগিয়ে গেছে। টিউশনেও বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। এখনো কিছু নতুন ছেলেমেয়ে আসছে। তাই কিছু কিছু অংশ স্যারেরা আবার একবার করে রিভাইজ করে দেন তাদের জন্য। তাতে একটু  পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে মনে হয় মাসখানেকের মধ্যে এ অবস্থা আর থাকবে না।

    আমি নিজে স্কুলের এবং টিউশনের থেকে পড়া একটু এগিয়েই রাখি। তাতে পড়া বুঝতে এবং বাড়িতে পড়া করতে সুবিধা হয়।

    অন্য ছেলেরা এখনো মাধ্যমিকের পরের তিনমাস ছুটির গন্ধ গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। তারপর সবাই বড় হয়ে গেছে এমন ভাব নিয়ে বেড়াচ্ছে।

    আমারও ইচ্ছা হয়, কিন্তু.....

    আজকে স্কুলে ছটা পিরিয়ড হল। প্রথমে বাংলা, তারপর অঙ্ক, পরপর ফিজিক্স, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি সবশেষে ইংরেজি। ক্লাস শেষ করে বেরোতেই বায়োলজি টিউশন। স্কুল থেকে মেট্রো ধরে সোজা মিনার্ভা টাউন পৌঁছলাম।

    মিনার্ভা টাউন আক্রোপোলিসের একদম পশ্চিমপ্রান্তের একটা এলাকা। টিউশনের বাড়তি চাহিদা আর রোজগারের অভাবে প্রায় কুড়ি বছর আগে সারা দেশের সমস্ত লোকেরা মিলে একটা আর্জি জানিয়েছিল। রুদ্রদমন বাচস্পতি তখন ঠিক করেন, প্রতিটা শহরের একপ্রান্তে কিছুটা জমি অধিগ্রহণ করা হোক। আগামী পঞ্চাশ বছরের কথা মাথায় রেখেই যেন পরিমাণটা ঠিক করা হয়। । তারপর সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বানানো হবে। আর তার সাথে কয়েকটা নতুন বহুতল বানানো হোক সরকারি সাহায্যে। সেগুলো যারা রোজগারহীন শিক্ষিত যুবক আছে, তাদের মিনিমাম ভাড়ায় দেওয়া হবে। তারপর থেকে ওখানেই টিউশন হয়। পুরোনো যেসব স্কুল, কলেজ শহরের ভেতরে ছিল, সেগুলো তেমনই আছে। নতুন যা বানানো হয়, সেগুলো এখন মিনার্ভা টাউনেই বানানো হয়।

    আজ পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে গেল। এমনিতে ট্রেন খুব একটা লেট হয় না। কিন্তু আজ একজন কে ট্রেনের সামনে পড়ে গিয়েছিল, সেজন্য ট্রেন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল পথে।

    যখন টিউশনে ঢুকলাম, স্যার পড়াতে শুরু করেছেন সেইমাত্র। আমি ভয়ে ভয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে হলটার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কোনোমতে বললাম, "স্যার আসব? "
    স্যার আমার দিকে তাকালেন একবার। বললেন, "এসো। "
    অন্য কেউ হলে স্যার নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করতেন, "দেরি হল কেন? "
    স্যার পড়াচ্ছিলেন, প্রাণী এবং উদ্ভিদের গঠনগত উপাদান। ভালোই পড়ান। সবচেয়ে বড় কথা স্যার বিষয়টাকে ভালোবাসেন। যখন পড়ান যেন ডুবে যান, বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায়।

    আমার এই চ্যাপ্টারটা পড়াই ছিল, তাই বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। তবে গোটাকতক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। একটা সম্ভাব্য উত্তরও তৈরি করে নিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো ঠিক কিনা তা যাচাই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম নিজেই খুঁজে বের করব। বইকে তো আর ভয় লাগে না। নিশ্চয় এই নিয়ে আমি প্রথমবার ভাবছি না!

    স্যার যখন ছাড়লেন তখন বাইরে ঝুম বৃষ্টি। যারা ছাতা এনেছিল সবাই একে একে চলে গেল। সাথে নিয়ে গেল তাদের বন্ধুদের। আমি এক দাঁড়িয়ে আছি, ভাবছি কখন বৃষ্টি থামবে? আজকে বাড়ি গিয়ে 'কোষের গঠন ও কাজ' চ্যাপ্টারটা নিয়ে বসব, এমন সময় পেছন থেকে একটা নারীকণ্ঠের আওয়াজে চমকে উঠলাম। প্রথমে কী বলেছিল বুঝতে পারিনি। দ্বিতীয়বার শুনতে পেলাম না তাকে দেখতে ব্যস্ত ছিলাম বলে। সে আবার বলল, "কী বলছি যে শুনতে পাসনি? তুই ছাতা অনিসনি? "
    আমি ঘাবড়ে গিয়ে কোনোমতে বললাম, "ন্না। "
    ও বলল, "তাহলে আমার সাথে চ। মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যাবি তো? "
    আমি মাথা নাড়লাম। আমার যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু সেটা বলার জন্য যে শক্তি দরকার, তাও আমার ছিল না। আমি ওর সাথে চললাম।

    যেতে যেতে ও অনেক কথা বলল। আমি নীরব শ্রোতা। ও কয়েকবার জিগ্যেস করল আমার 'নাম কী', 'কোথায় থাকি? 'কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বকবক করতে থাকে। আমিও বেঁচে যাই। এভাবে স্টেশন এসে গেল। ও বলল, "আসি তাহলে। "
    আমিও মাথা নাড়লাম।

    ওর নাম মিনু। ভালো নাম মৃন্ময়ী। আক্রোপোলিসেই থাকে। আমি এর আগে মেয়ে তো দূরের কথা কোনো মানুষের দিকেই মুখ তুলে তাকিয়েছি বলে মনে পড়ে না। ওর দিকে একবার তাকিয়েছিলাম। একথা বলতে পারি, ওর মতো সুন্দর আগে কাউকে দেখিনি। আমার ষোলো বছরের জীবনে প্রথমবার এমন একটা অনুভূতি হল, যা বলে বোঝানো যাবে না। যেন আমি ভারশূন্য হয়ে গেছি, মাটিতে পড়ছে কিনা বুঝতে পারছি না। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, আবার পরমুহূর্তেই মনে হয় না উল্টোটাই হবে।

    আজ আর পড়তে মন গেল না। তার জন্য একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল, কিন্তু মিনির কথা ভাবতে এমন একটা শিরশিরে আনন্দ হচ্ছিল, যে আর কিছুই ভাবতে বা করতে মন চাইছিল না। জানি আমি ঠিক করছি না হয়তো, কিন্তু পারফেক্ট হতেই হবে কি?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন