এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দ্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার-৫

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২০৪ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
    বারোই আগস্ট, ২০১৩

    "আমি কিচ্ছু পেরে উঠব না। আমার মনে হচ্ছে মাটির সাথে মিশে যাই। "

    আজকে সকাল সকাল উঠে পড়তে হয়েছিল। ব্যায়ামের ভোর চারটা থেকে সেশন শুরু হয়। বেসিক ট্রেনিং দুঘন্টা করে। যদি কেউ আরো বেশি করতে চায়, করতে পারে। কিন্তু ওই দুঘন্টা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক। এই সেশন তার দশটা পর্যন্ত চলতে থাকে। শুধু মাঝে বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত বন্ধ থাকে। তার মধ্যে যার যখন যেমন সুবিধা যেতে পারে। আমি ভেবেছিলাম, ফিরে এসে যাব। কিন্তু তখন শরীর এত ক্লান্ত থাকে যে আর ব্যায়াম করতে মন চায় না। তাছাড়া ওই সময় অনেক লোক হয়, সবাই সকালে উঠতে চায় না। তাই তারা রাত্রের সেশনে যায়। সকালে তুলনামূলক কম ভিড় থাকে। তাই আমি তখনই যাই। ব্যায়াম করে আর বাড়ি ফিরিনি, ওখান থেকেই ফিজিক্স টিউশন চলে গিয়েছিলাম। টিউশন শেষ হওয়ার পর প্রাতঃরাশ সেরে নিলাম। মিনুও এখানে ভর্তি হয়েছে। ওকে দেখেই আমার মনে হল, "চারিদিকে ফুল ফুটে উঠল যেন। চারিদিকে ঘর, শহর, মানুষ সব অদৃশ্য হয়ে গেল, কিংবা তারাই হয়তো দিগন্তবিস্তৃত ময়দান হয়ে গেল। সেখানে মিনু বসে আছে একা। মাঝে মাঝে সে যখন হাসছে, যেন একরাশ ফুল ঝরে পড়ছে ওর চারিদিকে। "

    সবার সম্মিলিত স্বরে ঘোর ভাঙল। "গুড মর্নিং স্যার!"আমিও থতমত খেয়ে বলে উঠলাম, "গুড মর্নিং স্যার। "
    সবার ততক্ষনে বলা শেষ হয়ে গেছে। আমার গলার স্বর একা এদিক ওদিক উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গেল। শেষে দলে ভিড়তে না পেরে একপাশ দিয়ে পালাল। আমি লজ্জায় মরে গেলাম। সবাই আমার দিকে তাকাল, মনে হল, যেন সবাই দৃষ্টি নয়, বন্দুক তাক করে আছে। ওরা কেন চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না আমার থেকে!কিছুক্ষণ পরে ওরা চোখ ফিরিয়ে নিল, আমি বাঁচলাম।

    স্যার পড়াতে আরম্ভ করলেন। কেমিস্ট্রির ক্লাস;আজকে পিরিয়ডিক টেবিল পড়াচ্ছেন। আমার পড়াই ছিল। তাই বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না। এমন সময় মিনু জিগ্যেস করল, "স্যার, নিষ্ক্রিয় গ্যাসরা কেন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না?"
    আমি এর উত্তর জানি। তাই আমি ছটফট করে উঠলাম। সেটা সবারই নজরে পড়ল। স্যার বললেন, "রমস্তনকি তুমি কি কিছু বলবে?"
    কয়েকজন হেসে উঠল। আমি দেখলাম মিনুও অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমি ওর মুখে হাসি দেখলাম। অন্যরা কী করলে সেটা তখন গৌণ হয়ে গেল, আমার কাছে সবচেয়ে বড় অপমানের কথা, মিনুও হাসল। একটু পরে যখন ও মুখ ফেরাল, তখনও ওর মুখে হাসির ছাপ লেগে আছে।

    আমার রোখ চেপে গেল। আমি উত্তর দিতে গিয়ে তোতলাতে লাগলাম। ওরা আরো হাসতে লাগল। তাতে আমার আরো রোখ চেপে গেল। আমার চোখ ছলছল করে উঠল। আমি আবার চেষ্টা করলাম বলার। কিন্তু সেখানে কথার জায়গা তখন অর্ধদমিত কান্না দখল করে নিয়েছে। সবাই কেমন মিইয়ে গেল। এবারে তাদের চোখে সহানুভূতি আর আফসোস দেখলাম আমি। আমি চুপ হয়ে গেছি, মনে হয় এখনই ঘর চলে যাই। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যাবে, স্যার রেগে যাবেন।

    যখন ছাড়ল তখন প্রায় দশটা বেজে গেল। আমি আর কোনদিকে তাকালাম না। ওখান থেকে সোজা মেট্রো স্টেশন, সেখান থেকে ট্রেন ধরে স্কুলের স্টপেজে ট্রেন থামতেই সোজা স্কুলে গেলাম। স্কুলে সারাদিন কী পড়াল, কী করলাম কিছুই মনে নেই। বিকেলে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন মনে হল, সারাদিন টোপান কাঁধে করে বেড়িয়েছি। ক্লান্তিতে দু কাঁধ নুয়ে পড়ছিল মাটিতে। আমি কোনোরকমে মুখ-হাত ধুয়ে, খাবার খেয়ে আমার রুমে গেলাম। বই নিয়ে বসলাম, কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মিন বসছিল না। এদিকে ক্লান্তিতে চোখ মেলতে পারছি না, অন্যদিকে মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। কথাগুলো মনে হতেই প্রচন্ড রাগ, ঘৃণা, অপমান, লজ্জা, ভয় একসাথে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আমার উপর। আমি কোণঠাসা  হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন আর মনে নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন