এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দ্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার-৩

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ জুলাই ২০২৪ | ১৭২ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
    তেরোই জুন, ২০১৩

    মাথা যন্ত্রণা তো গেছে, কিন্তু এ কী?
    কালকে সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। সকালে অঙ্ক টিউশন ছিল। সেখান থেকে ফিরে স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেল। আমি ঘরে এসে হাত-পা ধুয়ে বসেছি। মা খাবার দিল। আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। অনেক পড়া আছে। সেগুলো করতে হবে। অবশ্য সেগুলো পড়া দিতে হবে বলে নয়। কারণ আমি তো পড়া বলতেই পারি না। কিন্তু পড়তে খুব ভালো লাগে। আমি প্রায় সব বইয়ের এক তৃতীয়াংশ পড়ে শেষ করে দিয়েছি। এত মজা লাগছে, যে চোখ সরাতে মন যায় না। কিন্তু যেগুলো বাড়ির কাজ দিয়েছেন স্যারেরা সেগুলো করতে হয়, এর মধ্যে আমি যতগুলো পড়েছি তার বাস্তব সমস্যা খুঁজে সমাধান করার চেষ্টা করি। তাই এত দেরি।

    তা আজকে পড়তে বসেছি, মনে হল আমার শরীর থেকে যেন আগুনের হলকা বেরোচ্ছে! প্রথমে ভাবলাম মনে হয় তা নয়, কিন্তু ক্রমে ক্রমে গরম বাড়তেই লাগল। আমি একটা টি-শার্ট পরেছিলাম। খুলে ফেললাম তাড়াতাড়ি। তাও গরম একটু কমল না। আমি হাফপ্যান্ট পরেছিলাম থাকতে না পেরে তাও খুলে ফেললাম। কিন্তু এবারে গরমে যেন আমার মাংস পুড়তে লাগল। আমি গামছা গায়ে জড়িয়ে ছুটে গেলাম বাথরুমের দিকে। বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার খুলে দিলাম। গায়ে জল পড়তে একটু স্বস্তি লাগল। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমি আরো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবলাম, "এবার শাওয়ারটা বন্ধ করে দিই। "ঠিক তখনই দেখলাম, আমার গা থেকে ভাপ উঠতে আরম্ভ করেছে। আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। কিন্তু না মিথ্যা নয়, স্বপ্নও নয়। এবারে আমার গায়ের গামছায় দপ করে আগুন ধরে গেল। মুহূর্তের মধ্যে তা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার পায়ের কাছেই একটা বালতি ছিল, আমি আতঙ্কে সেটাই পা দিয়ে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম সেটাও আগুনে জ্বলছে। বাথরুমের অন্যপ্রান্তে একটা বাথটব ছিল। সেটা বাবার খুব প্রিয়। বাবাই ব্যবহার করতেন। অন্য কারো ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধু মাকে কিছু বলতেন না, তাই মা গ্রীষ্মকালে বেশিক্ষণ কাজ করলে বা খুব খাটুনি হলে তিনি বাথটবে গা ডুবিয়ে বসে থাকতেন। অন্যরা ওই বাথটব ছোঁয়ারও সাহস করত না। আমিও এর আগে কোনোদিন ওর কাছেও যাইনি। কিন্তু সেদিন আর থাকতে পারলাম না। ছুটে গিয়ে বাথটবে বসেই ট্যাপটা খুলে দিলাম। সেকেন্ড দুয়েক হবে, বিকট ফটাস্ করে শব্দ হল, তার সাথে আমিও খানিকটা ধ্বসে গেলাম মাটির মধ্যে, জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে শাওয়ারের দিকে একটু এগিয়ে গেলাম। আতঙ্কে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। আজকে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি আমার গায়ের জ্বালা ভুলে গেলাম। সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। এখন বাইরে যাব কী করে? আমি ভাবতে লাগলাম। আমার মনে হল, এরকম কেন হচ্ছে?আর এত তাপ, যাতে কাপড় পুড়ে যায়, প্লাস্টিকে আগুন ধরে যায়, চিনামাটির টব ভেঙে যায়, তাতে আমার শরীর পুড়ল না কেন? আমি অবাক হলাম, মনে হল, মাথার সেই পুরোনো ইনফেকশন এর পিছনে নেই তো? কিন্তু তাই বা কী করে হয়? হাইপোথ‍্যালামাস পর্যন্ত কি ইনফেকশন পৌঁছেছিল? আর মানলাম পৌঁছেছিল, কিন্তু আমার শরীরটা পুড়ে গেল না কেন? অতদূর যাওয়ার আগে হাইপোথ‍্যালামাসই কি পুড়ে যাওয়া উচিত নয়? ডাক্তারকে জিগ্যেস করে দেখতে হবে। কিন্তু তার আগে বাবা বা মা কিংবা হয়তো দুজনের সাথেই মোকাবিলা করতে হবে। সেটা সবচেয়ে কঠিন কাজ।

    প্রায় ঘন্টা তিনেক বাথরুমে থাকার পর দরজায় টোকা পড়ল। আমি উত্তর দিলাম না। আবার টোকা পড়ল, তার সাথে এবারে মায়ের  গলার আওয়াজ, "ভেতরে কে আছিস রে?"
    আমি এবারেও চুপ। এবারে মায়ের গলার আওয়াজ এক পর্দা উঠে গেল, "কানে কি কালা হয়ে গেছিস নাকি? ডাকছি উত্তর দিতে পারছিস না?"
    আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম, "আমি। "
    বাইরে থেকে বিরক্তিভরা গলায় আওয়াজ এল, "এতক্ষণ কী করছিলেন? ডাকছিলাম সাড়া দিতে পারছিলেন না? বোবা হয়ে গেছিস নাকি কালা? এখন দরজা খোল তাড়াতাড়ি। ওর জন্যে এবার হাগা-মুতাও বন্ধ করে দিতে হবে!"
    আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, মা প্রচন্ড রাগে তাড়া দিয়ে উঠলেন, "কী হল, শুনতে পারছিস না!"
    আমি বুঝতে পারলাম, মায়ের খুব বেগ পেয়েছে। এবারে না খুললে দরজা ভেঙেই ফেলবেন হয়তো। তার সাথে মারের পরিমাণও দুগুন বাড়বে।

    আমি কোনোরকমে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। মা আমাকে প্রায় ঠেলেই ভিতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি চুপচাপ ঘরে গিয়ে দরজা দিলাম। মিনিট খানেক পরেই মায়ের প্রচন্ড চিৎকার শুনলাম। "হারামজাদা বাথরুমে কী করছিলি? সব ভেঙে পুড়িয়ে রেখে দিয়েছিস?" তারপরেই আমার রুমের দরজায় দুমদাম ধাক্কা দিতে লাগল। আমি ঘর থেকে বেরোলাম না। ঘরের দরজা থেকে সবচেয়ে দূরের কোণটাই গিয়ে দুহাঁটু জড়িয়ে বসে রইলাম। বাবা সেইমাত্র অফিস থেকে ঘরে ঢুকেছেন, চেঁচামেচি শুনে তিনি এসে জিগ্যেস করছেন শুনতে পেলাম, "কী হয়েছে?"
    মা বললেন, "দেখো না, হারামজাদা, অপদার্থটা বাথটব ভেঙে রেখে দিয়েছে, নতুন বালতিটা কালকেই বাথরুমে রাখলাম, আজ দেখি সেটাকেও পুড়িয়ে বরবাদ করে দিয়েছে। একটা কাজে নেই, ঘরে বসে বাখড়ে গিলছে, আর সব জিনিস বরবাদ করছে। "
    আবার বাবার গলা শুনতে পেলাম, "তুমি কী কাজ করছ করো, আমি দেখছি। "
    মা আর কিছু বললেন না। চলে গেলেন। আমি ভাবলাম, "বিল পেরিয়ে  সাগরে পড়লাম এবার। এই বুঝি দরজায় টোকা পড়ল!" কিন্তু না, কোনো আওয়াজ হল না। আমি তবু আরো কিছুক্ষণ ওই একই জায়গায় বসে রইলাম। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে উঠে গিয়ে বসলাম তক্তপোষে। ভাবতে লাগলাম ব্যাপারটা কী হল? কিন্তু শারীরিক ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে মনে হল, "বাবা-মায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?" কিন্তু তখনই মনে হল, "আমার এরকম কেন হল? কী কারণে তাপমাত্রা এত বাড়ল, আমি পুড়লাম না কেন? এরকম যদি এর পরে হয়, তখন কী করব?"

    এভাবে টানাপোড়েনে মাথা গুলিয়ে উঠল। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। তখন শুধু একটা কথায় মাথায় আসছে, "রাতে খেতে ডাকলে কী করে যাব?" এমন সময় আমার শরীরটা যেন প্রচন্ড ভারী হয়ে গেল, হাত-পা তুলতে গিয়ে মনে হল যেন এক একটা পাহাড় তুলছি। কোনো মতে ঘষটে ঘষটে নিজের মাথাটা বালিশে রাখলাম, শরীরটা বিছানায় তুলতেই যেন ঘুম এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন