৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ি আজ নিস্তব্ধ।
যে ঘরে একসময় সন্ধ্যা নামলেই ভরে উঠত হাসি, ঠাট্টা, সিগারেটের ধোঁয়া আর ঘনাদার গম্ভীর কণ্ঠে রোমাঞ্চকর গল্প—সেই ঘর আজ ফাঁকা।
গৌর, শিবু, শিশির, সুধীর—সবাই সংসারী হয়েছে।
কেউ অফিসের বদলিতে অন্য শহরে, কেউ বিয়ের পর নতুন ফ্ল্যাটে, কেউ আবার শ্বশুরবাড়ির দায়িত্বে।
মেসের আড্ডা ভেঙে গেছে।
ঘনাদা বসে আছেন তাঁর ছোট্ট ঘরে।
ধুতি‑পাঞ্জাবি মলিন, চোখে ক্লান্তি।
ঘরে নেই কোনো আসবাব, নেই কোনো সঞ্চয়—শুধু একখানা পুরোনো খাট, কয়েকটা ছেঁড়া বই, আর জানলার ধারে রাখা ভাঙা চেয়ার।
চুল্লিতে আগুন নেই, সিগারেট নেই, চায়ের কাপও নেই।
পেট খালি, শরীর কাঁপছে।
তবু তাঁর ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি।
তিনি ফিসফিস করে বলতে শুরু করেন—
“তখন আমি ছিলাম আন্দিজ পর্বতের গহ্বরে… হঠাৎ এক অদ্ভুত শব্দ কানে এলো…”
কেউ শোনে না, তবু তিনি গল্প চালিয়ে যান।
অন্ধকার ঘর ভরে ওঠে তাঁর কণ্ঠে, যেন অদৃশ্য শ্রোতারা বসে আছে চারপাশে।
বাস্তবে তিনি নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ, অসহায় প্রৌঢ়—
কিন্তু কল্পনায় তিনি আবারও বিশ্বজয়ী অভিযাত্রী।
বাইরে হাওয়া বইছে, জানলার কপাট কাঁপছে।
মেসের উঠোনে আর কোনো তরুণ নেই, তবু ঘনাদার কণ্ঠে যেন প্রতিধ্বনি শোনা যায়—
গৌর, শিবু, শিশির, সুধীর আবার বসেছে তাঁর চারপাশে, সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে, আর গল্প চলছে অবিরাম।