মহাভারত - দ্বিতীয় পর্ব : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৩ মে ২০১১ | ১৫৮০ বার পঠিত
তবে পরাশরের আগে কাউকে সঁপে দেননি নিজেকে। পুরুষ এসেছে, উত্তেজিত হয়েছে, ফাঁদে পরা বাঘের মত বা শিয়ালের মত ছটফট করেছে, কিন্তু তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। অনেক কম বয়স থেকে নৌকা পারানির কাজে লেগেছেন। বলা যেতে পারে তাঁর পিতা চেয়েছিলেন তিনি এ কাজে লেগে থাকুন। মেয়ের রূপ পিতার চোখেও পড়েছিল। জেলেবস্তিতে এ মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা মানে বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা হবে। তিনি নিজে ছিলেন জেলে সমাজের মাথা। কাজেই তাঁর অজানা ছিলনা জেলে পুরুষদের দৌড়। তিনি চেয়েছিলেন মেয়ে একাজে থাকলে কালে কালে অন্য সমাজের পুরুষের চোখে পড়বে এবং তাতে তার একটা সদ্গতি হতে পারে। তবে তিনিও এতটা আশা করেননি।
বাদল সরকার এবং : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মে ২০১১ | ৯৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পরাধীন ভারতের অন্যতম সেরা নাট্যপ্রযোজক ভদ্রলোকের নাম রবীন্দ্রনাথ। ইউরোপিয়ানদের এদেশে মঞ্চসজ্জা দেখে যিনি অনুধাবন করতে পারেন বাস্তবতার নাম করে বোকামো করা হচ্ছে এবং যিনি জানেন আসলেই একটি স্টুলকে একই মঞ্চে রাজসিংহাসন থেকে দারোয়ানের বসার জায়গা সব বানানো যায় দর্শকের কল্পনাশক্তির উপরে ভর করে(বাঙ্গালীর কাছে যাত্রা,কথকতায় কল্পনা বিস্তারের পাখা ছিল),তিনিও কিছু কথা বুঝেছিলেন,বলেছিলেন। যেমন গানের ব্যবহারের শক্তি,যেমন মঞ্চসজ্জায় স্বাতন্ত্র্য তৈরী করা,যেমন একটিমাত্র জালের আড়াল দিয়ে রক্তকরবীর গোটা নাটকে যক্ষপুরীকে তুলে আনা ইত্যাদি। তা কল্পনা যদি এতটাই পারে,তাহলে সেই কল্পনা একটি মঞ্চেই আবদ্ধ থাকে কেন? নাটক যদি শিক্ষার মাধ্যম হয়,নাটক যদি সচেতনতার প্রচারক হয়,নাটক যদি সমস্যা আলোচনার একটি নিবিড় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্থান হয় তাহলে সেই নাটক শুধু মঞ্চেই আটকে থাকবে কেন? তাহলে তো মঞ্চ পাওয়া না পাওয়া,তার জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষকে খুশী করা ইত্যাদি হিসেবে, আর দর্শককূল হিসেবে শুধু পরিশীলিত মধ্যবিত্ততেই খেলা শেষ! সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বাদল সরকার। কিন্তু মঞ্চ বিরোধিতা করেননি। সেটা নিতান্তই অপপ্রচার। আসলে নিজের কাজ নিয়ে শহর-গ্রাম তোলপাড় করে বেড়াচ্ছিলেন। আমাদের নাট্যকর্মীকূলের একটি বড় অংশ অফিস শেষ করে এসে থিয়েটারের মহড়ায় অভ্যস্ত। অভ্যস্ত হাফ বা ফুল ছুটি নিয়ে এসে মঞ্চে অভিনয় করায়। তাঁরা যেমন-তেমন ব্যবস্থায় অভিনয় বা প্রযোজনা করেন না। গোছানো সাজানো গ্রামীণ মঞ্চ নেই। আলো,শব্দের বিশেষ প্রক্ষেপণ নেই খোলা মঞ্চে। মানুষ এক জায়গায় বসে প্রবন্ধ পাঠের মুখ করে দেখছেন না নাটক। আসছেন-যাচ্ছেন,ধরে না রাখতে পারলে হেসে বিদ্রুপ করে চলে যাবেন,পাশেই বিক্রেতারা বিক্রি করে চলেছে,ক্রেতা কিনছে,সেই পরিবেশ তাঁদের সমস্যা করেছে। তাঁদের সমস্যা করেছে বাদল সরকারের শরীরি ভাষা।
মহাভারত অষ্টম পর্ব : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২০ নভেম্বর ২০১১ | ১৫৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পিতার দিকে তাকালেন বিদুর। কৃষ্ণ বর্ণের এই বিরাট পুরুষের শরীর এখনো অটুট। মুখের উপরে যে ছায়া দুলছে তা আসছে কেশভারের থেকে। জটাজুট ধারী ঋষির যে ছবি মনে আসে পিতা তেমনটি নন। বাল্যকাল থেকে বিদুর মনে করতেও পারেন না পিতা অসংবৃত থেকেছেন কবে? কেশ দীর্ঘ্য কিন্তু বিন্যস্ত এবং নিয়মিত পরিচর্য্যা হয় তার। পিতামহীর ছায়া পড়েনি ততটা যতটা লোকে বলে পিতামহের আদল দেখা যায় পিতার মধ্যে। কিন্তু সবল সুস্থ পেশীধারী এই দীর্ঘ্য পুরুষকে একদর্শনে সূরূপও বলা যাবেনা পিতামহের মত। বরং মুখমন্ডল ছোট দেহের তুলনায়। তাই এক অসমঞ্জস্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সময় নিয়ে না দেখলে ভীষণ ভাবই প্রবল। বিশেষ করে চক্ষু। তীব্র, উজ্জ্বল এবং গাঢ় বাদামী অক্ষিতারা। এর গভীরে কি আছে তা বোঝা খুব কঠিন কাজ! খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই চোখ সরিয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। যেন খুব ভেতর থেকে কেউ সব দেখে নিচ্ছে। সব ক্লেদ, সব পাপ, সব লোভ দেখে নিচ্ছে। খুব স্বচ্ছ মনের মানুষ না হলে এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে কেউ পারেনা। কেউ বুঝতে পারেনা এই মানুষটার মন আসলে কী বলছে!
মহাভারত - চতুর্থ পর্ব : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৫ জুন ২০১১ | ১২০৪ বার পঠিত
এর আগে তাঁর নারী সংসর্গের অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ব্রহ্মচর্য্য পালন করেছেন চিরকাল। কিন্তু মাতৃআজ্ঞা পালন করতে বাধ্য তিনি। তখন তিনি জেনেছিলেন সংস্কৃতভাষী সমাজের নারীর অবস্থা। দুই কন্যাই তাদের চরিত্র এবং সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা একদিকে,অন্যদিকে কৌরব বংশের কঠিন শাসনে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে রমণে,কিন্তু সে অবশ্যই স্বচ্ছন্দ ছিল না। তাদের দুর্ভাগ্য এই যে তাদের সন্তান ধৃতরাষ্ট্র এবং পান্ডুর জন্মকালীন অসুস্থতা তাদের কলঙ্কিত করেছে। কিন্তু এ তাদের অপরাধ নয়। ব্যাস পরে অনেক ভেবে দেখেছেন এ হতে পারে একমাত্র বিচিত্রবীর্য্যের থেকে রোগ সংক্রমণের কারণে। কিন্তু মাতা একথা জানতেন কিনা তা তিনি এখনো বোঝেন নি। তবে সন্তানদ্বয়ের জন্মের পরে তিনি মহর্ষি চ্যবনের গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়েছিলেন আত্মচিকিৎসায়। সংক্রমণ তাঁকে বয়ে যেতে যেন না হয় এই কারণে। কিন্তু হস্তিনাপুরের প্রতাপ এমনই যে এই সন্তানদ্বয়ের অক্ষমতার দোষ গিয়ে পরলো ওই রাজকন্যাদ্বয়ের স্কন্ধে। সত্যি, কী মহিমা প্রচারের! তবে তিনি সেই কালে একবারই প্রকৃত সঙ্গমের স্বাদ পেয়েছিলেন এক দাসীর কাছ থেকে, যার গর্ভে জন্মেছে তাঁর সেই সন্তান যাঁকে নিয়ে তিনি কিছুটা গর্ব বোধ করতেই পারেন। বিদুর তাঁর মন কেড়েছে গুণে-বিনয়ে-স্বভাবে।
স্বাধীনতাঃ সাইবার কহানি : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ আগস্ট ২০১১ | ১০০২ বার পঠিত
ঠিক এখান থেকেই শুরু হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলোচনাটা। ধরে নিন, আজকে ১৫ ই অগাস্ট কেউ ইন্টারনেট-এ পোস্ট করলেন বহু পুরোনো একটি কম্যুনিষ্ট শ্লোগান। "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়'! কি হবে? বা কি কি হতে পারে? ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এই শ্লোগানটা তার কিছু চিহ্ন বহন করছে অবশ্যই। কেউ কেউ যেমন ভাবতে পারেন সাদা চামড়ার লোকেরা চলে গিয়েছে তেমনি কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে তার জায়গায় এসে বসেছে বাদামী সাহেবরা। এমন ভাবনান্তর থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষত, আজকের এত বছর পরেও খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের কিই বা উন্নতি হয়েছে? শহরে হাস্যকর রকমের খরচ বাড়ানো বড়লোকের নার্সিংহোম, বেসরকারী হাসপাতাল বাড়া ছাড়া কি পেয়েছি আমরা স্বাস্থ্যে? আমলাশোলে বা খয়রাশোলে লোক মরলে আসে খবরে। এলে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়ে যায় সেটাও। আর যদি ওইভাবে না মরে ধুঁকে ধুঁকে মরে, তাহলে খবরেও আসবে না। আমরা প্রজ্ঞাসম্পন্নরা সেমিনারে বা ভোটবাজারে মুখ গম্ভীর করে আলোচনা করবো অনেক। কেউ কেউ বলতেও পারেন (আমি শুনেছি খাদ্য সম্পর্কে হওয়া একটি সেমিনারে), যে আসলে দারিদ্রের কারণ হল লোকের অলসতা। এই কিছুদিন আগে যেমন বাংলাদেশের বন্ধুরা আলোচনা করছিলেন অনেক খাওয়াই নাকি খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ, এমন বলেছেন বাংলাদেশের কোনো এক মন্ত্রী। আমাদের এখানে প্রফুল্ল বাবু খাদ্য "কাঁচকলা খাক্' বলে কাঁচকলা প্রফুল্ল হয়ে গিয়েছিলেন। খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। শিক্ষা মানে এক বিভীষিকাময় ব্যবস্থা। বাকী সব প্রসঙ্গেই এমন কথা বলাই যায়। আর কথা বাড়াচ্ছিনা এ প্রসঙ্গে। বলার কথায় চলে আসছি। যদি এই সব দেখে কেউ লেখেন "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়' তাহলে?
মহাভারত সপ্তম পর্ব : শুদ্ধসত্ব ঘোষ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৬ জুলাই ২০১১ | ১২৫৯ বার পঠিত
বাইরে এখন নরম লাল আলো একটু একটু করে ভেসে উঠছে। রাত্রির অন্ধকার কেমন পা পা হেঁটে চলে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। ওই, স্তবগান শুরু হচ্ছে মন্দিরে! পুত্র ব্যাস যা ব্যাখ্যা করতে চাইছে তা তিনি জানেন। বশিষ্ঠ্য-বিশ্বামিত্র বা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় বিরোধ আজ আর বিষয় নয়! আজ নতুন যুগের সঙ্গে নতুন সংকট এসেছে। দেবধর্ম বা বেদধর্ম নয়, ধনের ধর্মই প্রবল এখন। দোয়াবের দুই তীর ধরে যে অসংখ্য নগর গড়ে উঠেছে তাদের কেউ কেউ রাজশাসিত, কেউ কেউ গণের অধীন। সর্বত্রই এখন সামাজিক আইনের বিরোধ চলছে। যেখানে যে আইন আছে, সেখানে সেই আইনই মানুষের অসহ ঠেকছে! কী একটা বিষয় যেন তাকে সর্বত্র খোঁচা দিয়েই চলেছে। কিছুতে তার শান্তি নেই। কিছুতে স্বস্তি পেতে পারছেনা সে। বিলাসের চূড়ান্ত থেকে কৃচ্ছসাধনের শেষ সীমা অবধি গিয়েও যেন কিছুতেই হচ্ছেনা সমাধান। এ বিরোধের প্রকৃতি সত্যি পরিষ্কার নয় সত্যবতীর কাছে। তিনি আর কত বুঝবেন? কেনই বা বুঝবেন? সত্যিই তো, যার সন্তান সে এসে গেছে এবারে। সেই ঠিক করে দিক কে কী করবে? তিনি কেন আর টানবেন এই সব? এই প্রাসাদের বাইরের যে জীবন তাঁকে অমৃতের আস্বাদ একবার দিয়েছিল তারই কাছে ফেরাই উচিত। দূর থেকে ভেসে আসছে স্তব, কান পেতে শোনার চেষ্টা করলেন তিনি। গায়ত্রী, না কি অন্য কিছু? ছাই আজকাল কানেও সমস্যা। হেসে ফেললেন নিজেই। বুড়ি হয়েছ সত্যবতী, বুড়ি। চলো, এবারে তবে বাণপ্রস্থেই চল!