বানভাসিরা : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ আগস্ট ২০১৭ | ১৫২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
দাড়িওয়ালাদের অবির্ভাব ঘটল। তীব্র অসন্তোষে গনগন করছে ওদের মুখ, আমাদেরও তো ঘর ভেসেছে ---
রায়হান গা বাঁচায়, আরে ভাইসাব আমরা তো সামান্য সাংবাদিক। এই যে ছবি টবি তুলে নিলাম এগুলো পত্রিকায় দিয়ে নিউজ করলে আপনাদের জন্যে ত্রাণ চলে আসবে। সুন্দর চেহারার এক দাড়িওয়ালা চোখ ঘোঁচ করে জানতে চায়, কিন্তু লিস্টি যে করলেন আপনারা আমাদের নাম তো লিখলেন না? রায়হান মাখনের মত হাসে, ভাইরে আপনারা ত এখানে ছিলেন না তাই লেখা হয়নি। এবার হবে দেখবেন। কায়দা করে দাড়ি রাখা বেঁটে মত একজন সামনে এসে মারমুখী দাঁড়ায়, এখন ত এসেছি, নিন আমাদের নাম লিখেন লিস্টিতে।
ঈদের রঙ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ জুলাই ২০১৭ | ২০১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
দলবেঁধে আসত দিভাই আপুলি দাদুর বন্ধুরা । কে হিন্দু কে মুসলিম এরকম অনেককেই আমি সত্যি জানতাম না। ওদিকে রান্নাঘরে তখন মা ক্ষেপে গেছে। অসম্ভব। আমি কারো জাত নষ্ট করতে দিতে পারব না। টিকিয়া কিছুতেই মা দেবে না। আর এরা খাবেই। শেষ পর্যন্ত মিথ্যে বলে তবে টিকিয়া বের করা হত। আমি আর ভাইয়া ঘুরঘুর করতাম সেলামি নেওয়ার জন্যে। ব্যাগ ভরে টাকা পয়সা নিয়ে আমরা ছুটে যেতাম আইসক্রিমের দোকানে। তখন নতুন নতুন আইসক্রিম আসছে মার্কেটে। বিরতিহীন খেয়ে যেতাম আমরা ছোটরা। জিভ ভারি হয়ে কথা আটকে যেত। অইদিন গরিবদের ছেলেমেয়েরাও আইসক্রিম কিনতে আসত। তারাও সস্তা কাপড়ের নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দ করত। কিন্তু এত আনন্দের ভেতরেও খারাপ লাগত যখন দেখতাম এই ঈদের দিনেও কেউ ভিক্ষে করছে বা ছেঁড়াফাটা পুরান জামা পরে মুখ কালো করে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের শহরে হামবড়ামি করত যারা তাদের কেউ কেউ এদের তাড়িয়ে দিত। কেউ কেউ আবার দুষ্টুমি করে আমাদের বাড়ি দেখিয়ে দিত। মা যতটা পারত দিত। বাপি মাকে শিখিয়েছিল, দিও কিঞ্চিত না করে বঞ্চিত। আমরা তো অই হামবড়ামি টাইপের ধনীলোক ছিলাম না। ওদের গেট বন্ধ থাকত, শবে বরাত, ঈদ, কুরবানির দিনগুলোতে। গরীবরা কিছু না পেয়ে কত কি যে অভিশাপ দিত। শেষবারের মত বলত, আল্লাহ বিচার করবিনে, একদিন আমাগের মত ভিক্ষে করতি হবিনে ওগের। এই ধনসম্পদ কিছুই থাকপি নানে তহন। আল্লাহ কিন্তু ওদের ছাপ্পড় ফুঁড়ে দিয়েছে, দিয়েই গেছে। গরীব আরো গরীব হয়েছে। আমি আর ভাইয়া এগুলো ভালো করে দেখে টেখে ঠিক করেছিলাম, কাউকে মুখে কিছু বলব না। সুযোগ পেলে মেরে দেবো।
শক্তি হয়ে এসো হে বৈশাখ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১৮৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
হো হো হাসিতে তলিয়ে যায় সন্দেহবাজ লোকগুলো। আলোর দিকে পেছন দিয়ে বসে থাকে ওরা। অন্ধকারে মিশে যায় ওদের সাম্প্রদায়িক অসুন্দর মন। বাগানের অন্যদিকে তখন গান গাইছে দিভাই আপুলিরা, আনো আনো, আনো তব প্রলয়ের শাঁখ , মায়ার কুঞ্ঝটিজাল যাক দূরে , যাক যাক যাক --
কোনো এক নদীগন্ধমাখা শহরের তরুণ প্রাণরা বৈশাখকে বরণ করে নিতে কত কিছুই না বানাচ্ছে। পোস্টানো ছবিতে আমি ওদের হাত দেখি, হাতের আঙুল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রঙ, কাগজ। উদ্ভাসিত আলো এসে ছুঁয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের চোখ মুখ। ওদের হাসি, হাসিতে বৈশাখী হাওয়া, ঝড়, বৃষ্টি , রোদ্দুরের জন্যে অনাবিল আহবান। কেউ কেউ ডাকে, ম্যাম আসুন। আসুন না প্লিজ। এ তো আপনারও শহর। দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে আলপনা হবে। রঙ কেনা হয়ে গেছে। আপনিও আল্পনা আঁকবেন আমাদের সাথে। কি যে ভালো লাগবে ম্যাম!
প্রাকৃতজনের বিদায় : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ১২৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
তাই তো তাঁর গল্পের নায়িকা অশঙ্ক উচ্চারণে বলতে পারে, "এখানে আমি হেঁটেছিলাম- তুইও হাঁটিস এখান দিয়ে; এখানে দাঁড়িয়ে আমি মিছিল দেখেছিলাম- তুইও দেখিস এইখানে দাঁড়িয়ে, এখানে সেজানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল এখানে,এই গাছতলায়-এখানে তুইও দাঁড়াস। আর এই যে রাস্তাটা,এই রাস্তায় সেজান মিছিল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল-তুইও এই রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাস,হ্যাঁরে পারবি তো?" কী পবিত্র প্রত্যয়, অকলুষিত স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষার নির্ভীক পরম্পরা। শিউরে ওঠে মন, রোমকুপে বেজে যায় সাহসি দুন্দুভি। মনে পড়ে যায় ম্যাক্সিম গোর্কির 'মা' উপন্যাসের নিলভনা ভ্লাসভকে। ট্রেনের কামরায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, পুলিশি নির্যাতনে মৃতপ্রায় রক্তাক্ত মা নিলভনা দমে যাননি ভয়ে। বিপ্লবী সন্তান পাভেল ভ্লাসভের বক্তৃতাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দিতে নির্ভীক মা নিলভনা বলেছিলেন, ভাল মানুষের সন্তানেরা, একবার জাগো...। উপন্যাসিক শওকত আলির উপন্যাস, দক্ষিণায়নের দিন এর নায়িকা রাখী যেন ঠিক এভাবেই আলোর পথ চিনিয়ে দিচ্ছিলেন তার ভবিষ্যৎ অনাগত সন্তানকে, খোকা পারবি তো ?
অরিত্রীদের কেন মরতে হচ্ছে : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১১২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এসব ইশকুলের অধ্যক্ষা মাননীয়রা ছাত্রীদের বয়স, স্বাভাবিক অনায়বোধ, সহজাত অভিমান না বুঝে অমানবিক এবং বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকদের চরমতাকে বিবেচনা করে অভিভাবকসহ ছাত্রীদের হরহামেশ অপমান করে থাকে। এদের না আছে আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে অন্যদের মানব মর্যাদাবধের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। ছোটবড়, ছেলেমেয়ে, ধনী নির্ধনের মানবমর্যাদা বোধে আঘাত করা যে অপরাধ— এই শিক্ষা, শিষ্ঠাচার, প্রয়োজন এবং ভব্যতা সভ্যতা তাদের নেই। এসবের ধারও তারা ধরে না। কেননা একজন অরিত্রী মরে গেলে আরো দশজন অরত্রী অই সিটে ভর্তি হওয়ার জন্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আছে তাদের বাবামায়েরা।
অত্যন্ত দ্রুততার সাথে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এই প্রথম এ ইশকুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু অরিত্রী কি ফিরবে ? ওর বাবামা কি ফিরে পাবে কাঠগোলাপ কানে গোঁজা হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে ?
কাল নিরবধি : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০২০ | ১৮৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বায়ান্নোর রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারী মাসের রাত। মায়ের গহন গভীর দুঃখী মুখে বেদনার অশ্রুজল। আনিসুজ্জামান ঘ্রান পেলেন বাংলার পলিমাটির। বর্ণমালা খচিত আলপথের ধারে পথ হারানো মা যেন চিরদিনের আকাশ, বাতাস, বাঁশি নিয়ে ভয়ার্ত, সন্ত্রস্ত। সারাজীবনের জন্যে বুকে গেঁথে ছিল দৃশ্যটি। পরবর্তী জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে তুলতে তার সমস্ত মেধা, শ্রম, চিন্তাকর্মকে সমিধ করে তুলেছিলেন বিপুল নিষ্ঠা, সন্মান ও ভক্তিতে।
একটি দুম্বা কেঁদে যাচ্ছে : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৬২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পাড়ার দাদারা বলে চিনা শালারাই নাকি এ অসুখের ভাইরাস ছেড়েছে। নাক ফেটা হারামজাদা জাত। ভারতমাতার চরম শত্রু। টিভিতে চিনা মানুষদের ছবি দেখেছে হারু। ষ্টীলের থালার মত গোল চকচকে চেহারা। বাচ্চাকাচ্চা বুড়ো একরকমের দেখতে। বনগাঁর আকবর আলিদাদার দোকানে সাজানো থালার মত। কে জানে বাবা, মানুষ মেরে এদের কি সুখ !
আজকাল বাইরে কোথাও যাওয়া হয় না হারুর। গোহালেই থাকে। যত্ন নেয় গরুগুলোর । প্রত্যেক মাসের প্রথম রবিবার তিরিশটা গরু আর ওদের খাবার দিয়ে যায় চন্দনবাবু । তখন গরুগুলোকে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করে। গাল দেখে , দাঁত দেখে , পেটে হাত বুলোও, গাভিদের ওলান ধরে পরীক্ষা করে। কোন গরুকে রোগা লাগলে জানতে চায়, কি রে হারু। খাবার দিসনি নাকি ?
ও শান্তি ও স্বদেশ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২২৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
থকথক করে কেঁদে ফেলে ছেলেটি , আমি মোছলমান বলি মা আমারে বাঁচায় নাই স্যার— যাতি আসতি কতবার ভালো ভালো কলা দিছি দুগগা মার পায়ের তলায়—বলাইকাকার সাথি কতবার ডাকিছি মা, ওমা জগজ্জননী আমারে একটু বুদ্ধি দাও মা --
প্রাণ খুলে শ্বাস নেন নূরতাজ মন্ডল। যাক বলাই সাহা্রা তাহলে মিথ্যে বলেনি কাল মাঝরাতে। ছেলেটা সত্যি নিরীহ। বলাই সাহার বউ কি যেন বলেছিল, গোপাল। তা গোপালই বটে ! একটু বেশি ভালো মানুষ। সমাজের লোকেরা যাদের বোকা বলে তেমন সোজা সরল মানুষ।
কৃস্টালের পেপার ওয়েটটা টেবিলের কাঁচের উপর ঘুরাতে ঘুরাতে নূরতাজ মন্ডল উপলব্ধি করেন, এই ছেলেটার ভালোমানুষি মনে এবার পাপ ঢুকে পড়বে। জেল বাস হয়ত তিনি রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু ছেলেটা এবার সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে। ওর মনে মানুষকে সহজে বিশ্বাস করার সরলতা মুছে গিয়ে অন্যদের মত জেঁকে বসবে আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবানকে ভাগ করে নেবার শিক্ষা। জন্ম নিবে ঘৃণা । মানুষকে ধর্ম দিয়ে ভাগ করতে শিখে যাবে ছেলেটা।
এক হাতের চেটো দিয়ে অন্য হাত মুছে নিয়ে তিনি মনে মনে হাসেন, এই তো এই জগতের বাস্তব শিক্ষা। ছেলেটার বুদ্ধির কমতি ছিল। এবার তা পূর্ণ হলো
উপকূলীয় সুখ ও অসুখ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ মে ২০২২ | ১৮৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কূলের কিনার থেকে ডাক দেয় পরীবানু। মাঝির মতিগতি যেন কেমন কেমন লাগছে। এত কি কথা বলেশ্বরের সঙ্গে ! বাসুকীর মা মাসীমা এসেছিল গেল কাল সন্ধ্যায়। রোজা থেকে থেকে মিলনের মুখের রুচি চলে গেছে, খেতে স্বাদ পাচ্ছে না শুনে কলাপাতায় মুড়ে কতগুলো পুরনো টক তেঁতুল দিয়ে গেছে শরবত বানানোর জন্য। চোত বোশোখ মাসে রোজা করা মানে জাহান্নামের আগুনে সেদ্ধ হওয়ার সমান। জিভ শুকিয়ে খড়ি হয়ে যায়। খা খা করে শরীর। যাওয়ার সময় মাসী চুপিচুপি বলে গেছে, মাইয়েরে মাইয়ে, চক্ষু দুইহান চেতায়ে রাহিস। রোজার ধকল তাও সয়, সাগরের ডাক কিন্তুক মানানো যায় না রে মাইয়ে।
ঢনঢন করে ওঠে পরীবানুর বুক। রাগে দুঃখে গাল পাড়ে, ঢ্যামনা বলেশ্বর। মাইয়ে পোলাপানগো লাগান ছেনাল হইছিস হারামাজাদা তুই।
বলেশ্বর ঢেউ তুলে কতগুলো কচুরীপানা ভাসিয়ে দেয় কূলের কিনারে। মিলনের পেছনে দপদপিয়ে হেঁটে আসা পরীবানু কি বুঝে কে জানে। নিজের প্রৌঢ় চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে বার বার পেছনে তাকায়। কুলকুল করে হাসছে বলেশ্বর ! পানি ছিটোচ্ছে ওদের ফেলে আসা পদচিহ্নমাখা পথে।
আমার ধর্ম অধর্মবোধ—মুক্ত কর প্রাণ ১ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০২ আগস্ট ২০২২ | ২১৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
গায়ত্রী দীপালি এখন পশ্চিম বাংলার কোথাও আছে। ওর দু’ভাই ওকালতি আর পলিটিক্স নিয়ে বাংলাদেশেই থাকে। বুলু, টুলু, অঞ্জলিরাও নব্বই সালের দিকে চলে গেছে। খুব কম বেড়াতে আসে। বাংলাদেশে এ এক পরিচিত দৃশ্য। সবাই জানে, প্রতিটি হিন্দু পরিবারেরই একটি খুঁটি আছে ভারতে। রাতে গল্প করছে, চা খাচ্ছে যে বন্ধুদের সঙ্গে, তারা সকালে জানতে পারে বন্ধুটি পরিবারসহ চলে গেছে ইন্ডিয়া। ওদের বাড়িটি গোপনে বিক্রি করে গেছে কোনো মুসলমান পরিবারের কাছে।
কিন্তু কবে থেকে এ দৃশ্যের আরম্ভায়ন?
আমার ধর্ম অধর্মবোধ—মুক্ত কর প্রাণ ৩ : রুখসানা কাজল
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৯৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
নব্বই সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের আঘাত এত দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে বিশ্বের তাবড় বড় অনেক রাষ্ট্র ঝাপটে পড়েছে। অর্থনীতি মুচড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সীমানা আর জনগণের নাগরিকত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুঁজিবাদ নিপাত যাক বলে লাল ঝাণ্ডার পাণ্ডারা আর ফান্ডা দেখাতে পারছে না। বিপ্লব হিমঘরে। নেতাদের চরিত্র পালটে সম্পূর্ণ বিপরীতে এসে ঠেকেছে। সমাজতন্ত্র ভাগাড়ে আর ধর্মনিরপেক্ষতার মরণ হয়েছে। গণতন্ত্র সেজে উঠেছে ভোগবাদী আভিজাত্যে। এর সঙ্গে ধম্মো ধম্মো বোল উঠেছে আকাশ বাতাস মাটিতে, নদীতে। আজকাল দেখি অনেকেই স্ত্রী সহবাস, স্বামী সহবাসের দোআ মুখস্থ করার পাশাপাশি হাগতে যাওয়ার দোআও মুখস্থ করে ফেলছে। মন্দিরা শঙ্খ বাজিয়ে তিন বেলা সাড়ম্বরে পূজা করছে। পাঁচ বেলা পড়ে নামাজ পড়ে কপাল ঘষে ঈমানী ছাপ বসাচ্ছে। তবে ধর্ম যত জোরে শোরে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ঘরে ঘরে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দাঁত শূলাচ্ছে তারচে বেশী জোরে নৈতিকতা পালিয়ে গেছে। মানুষ বেশি বেশি মুসলমান হয়েছে। বেশি বেশি হিন্দু হয়ে গেছে।